অবশেষে করোনা সংকটের মাঝে আর্থিক সহায়তা পেতে চলেছে জার্মানির মানুষ ও ব্যবসা-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান৷ ১লা এপ্রিলের আগেই টাকা দেয়া শুরু হবার কথা৷
বিজ্ঞাপন
শুক্রবার জার্মানির সংসদের উচ্চ কক্ষ সরকারের অর্থনৈতিক প্যাকেজ অনুমোদন করার পর অর্থের হস্তান্তর দ্রুত শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে৷ বুধবারই নিম্নকক্ষ এই প্রস্তাব অনুমোদন করার আগে উচ্চকক্ষ সম্মতি জানিয়েছিল৷ শুক্রবার আনুষ্ঠানিকতা পূর্ণ হলো মাত্র৷
লকডাউনের ফলে অনেক মানুষের আয় বন্ধ হয়ে গেছে৷ দোকানপাট বন্ধ থাকায় বিক্রি হচ্ছে না৷ আয়ের অভাবের কারণে ভাড়া মেটানো কঠিন৷ জার্মানির সরকার সেই ঘাটতি অন্তত কিছুটা মেটাতে এগিয়ে আসছে৷ যদিও সেই উদ্যোগে গাফিলতির কারণে অনেক ভাড়াটের সমস্যা হবে বলে সমালোচনা হচ্ছে৷ অনেক বিশেষজ্ঞ সংশোধনের ডাক দিচ্ছেন৷
সরকারের প্যাকেজের আওতায় বেকারত্ব মোকাবিলারও ব্যবস্থা রয়েছে৷ করোনা সংকটের ফলে বিপর্যস্ত কোম্পানিগুলির অস্তিত্ব রক্ষা করে কর্মীদের বেতন নিশ্চিত করতে চায় সরকার৷ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া পর্যন্ত কৃত্রিমভাবে অর্থনীতি যতটা সম্ভব চাঙ্গা করে মন্দা প্রতিরোধ করাই জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সার্বিক লক্ষ্য৷ বাস্তবে সেই প্রচেষ্টা কতটা কার্যকর হবে, সে বিষয়ে অবশ্য সংশয় রয়েছে৷ তবে ছোট কোম্পানি ও স্বনির্ভর ব্যক্তিদের জন্য সরাসরি যে ৫০০ কোটি ইউরো ধার্য করা হয়েছে, তার সুফল নিয়ে আশার আলো দেখা যাচ্ছে৷
বড় কোম্পানির জন্য অন্যরকম ব্যবস্থা করছে জার্মান সরকার৷ রাষ্ট্রীয় পুনর্গঠন ব্যাংক ৬০,০০০ কোটি ইউরো মূল্যের এক বিশেষ তহবিল সৃষ্টি করছে৷ বড় আকারের কোম্পানি সেখান থেকে সহজে ও দ্রুত ঋণ নিতে পারবে৷ প্রয়োজনে সরকার কোম্পানির আংশিক বা পূর্ণ মালিকানাও গ্রহণ করতে পারবে৷
এদিকে জার্মানিতে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ আরো বেড়ে চলেছে৷ শুক্রবার আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৪২,০০০ ছাড়িয়ে গেছে৷ মৃতের সংখ্যা আড়াইশোর বেশি৷ রবার্ট কখ ইনস্টিটিউট করোনা পরিস্থিতি সম্পর্কে দৈনিক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ জার্মান স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়েন্স স্পান এখনো কড়াকড়ি শিথিল করতে প্রস্তুত নন৷
করোনা ভাইরাসের কারণে স্তব্ধ ইউরোপ
সামাজিক দূরত্ব ও ভ্রমণের উপর নিষেধাজ্ঞার কারণে ইউরোপের বড় শহরগুলির রাজপথ প্রায় খালি৷ করোনা ভাইরাসের প্রসার থামাতে ইউরোপে একের পর এক কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/T. Camus
প্যারিসে লকডাউন
গত মঙ্গলবার দেশজুড়ে লকডাউন জারি করার পর প্যারিসের ব্যস্ত রাজপথ জনশূন্য হয়ে পড়েছে৷ কেনাকাটা, ডাক্তারের কাছে বা কাজে যাওয়া ছাড়া বাসার বাইরে যাবার নিয়ম নেই৷ বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বেড়ে চলায় প্যারিসের মেয়র অবশ্য আরও কড়া পদক্ষেপের ডাক দিয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/T. Camus
জার্মানির রাজধানীতে জনজীবন স্তব্ধ
চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল রবিবার জার্মানিতে আরও কড়া পদক্ষেপের ঘোষণা করেছেন৷ প্রকাশ্যে দুই জনের বেশি একসঙ্গে চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সরকার৷ নয় দফার এই পদক্ষেপের আওতায় মানুষের মধ্যে কমপক্ষে দেড় মিটার দূরত্ব বজায় রাখতে হবে৷ রেস্তোরাঁ, সেলুন ইত্যাদি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে৷ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত এক ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগের কারণে রোববার ম্যার্কেল নিজে কোয়ারেন্টাইনে যেতে বাধ্য হয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Schreiber
বিদেশিরা অনাকাঙ্ক্ষিত, সীমান্ত বন্ধ
দেশের মধ্যে মানুষের চলাচলের উপর কড়া নিয়ম চালু করার পাশাপাশি জার্মানি দেশে বিদেশিদের প্রবেশ কার্যত বন্ধ করে দিয়েছে৷ সে কারণে দেশের ব্যস্ততম বিমানবন্দর ফ্রাংকফুর্টে কার্যকলাপ অনেক কমে গেছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Probst
বাভেরিয়ার মানুষ গৃহবন্দি
করোনা ভাইরাসের মোকাবিলা করতে জার্মানির দক্ষিণে বাভেরিয়া রাজ্যে গত সপ্তাহে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে৷ কমপক্ষে দুই সপ্তাহের জন্য নির্ধারিত পদক্ষেপের আওতায় মানুষের জমায়েত নিষিদ্ধ৷ রেস্তোরাঁসহ অনেক দোকানপাট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে৷
ছবি: Imago Images/Zuma/S. Babbar
ব্রিটেনে সামাজিক দূরত্বের আবেদন
করোনা ভাইরাসের হুমকি রুখতে ব্রিটেন সব বার, পাব ও রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে৷ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন সব নাগরিকের উদ্দেশ্যে অতি প্রয়োজনীয় নয়, এমন ভ্রমণ বন্ধ রাখার আবেদন করেছেন৷ সেইসঙ্গে অনির্দিষ্ট কালের জন্য মানুষে-মানুষে সরাসরি যোগাযোগ এড়িয়ে চলতে বলেছেন জনসন৷
ছবি: AFP/T. Akmen
মহামারির কেন্দ্রস্থল মিলান
সাম্প্রতিক কালে বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাসের কেন্দ্রস্থল চীন থেকে ইটালিতে স্থানান্তরিত হয়েছে৷ সে দেশে ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতদের সংখ্যা মারাত্মক হারে বেড়ে গেছে৷ ১০ই মার্চ ইটালিতে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/L. Bruno
ভ্যাটিকানের দরজা বন্ধ
ইটালির উত্তরে লম্বার্ডি অঞ্চলে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বাড়ার পর দেশের বাকি অংশেও জনজীবন স্তব্ধ হয়ে গেছে৷ রোম ও ভ্যাটিকান সিটিতে মানুষের সমাবেশের উপর কড়া নিষেধাজ্ঞা চাপানো হয়েছে৷ সেন্ট পিটার্স চত্বরের মতো পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় এলাকা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে৷
ছবি: Imago Images/Zuma/E. Inetti
স্পেনের অবস্থা গুরুতর
রোববার স্পেনের সরকার দেশে জরুরি অবস্থার মেয়াদ আগামী ১১ই এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে৷ ফলে ১৪ই মার্চ থেকে প্রায় এক মাস পর্যন্ত স্পেনেল জনজীবন স্তব্ধ থাকবে৷ ইউরোপে ইটালির পর স্পেনেই করোনা ভাইরাস সবচেয়ে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে৷ বিশেষ করে বার্সেলোনা ও মাদ্রিদ শহরে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বেড়ে চলেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/X. Bonilla
অস্ট্রিয়ায় সংক্রমণের হার কমছে
সপ্তাহান্তে অস্ট্রিয়ায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের সংখ্যা প্রায় ১৫ শতাংশ বেড়ে গেছে৷ তবে এর আগে ৪০ শতাংশ সংক্রমণের হারের তুলনায় তা অনেক কম৷ সরকার দেশজুড়ে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে কড়া পদক্ষেপ নেবার ফলে সুফল দেখা যাচ্ছে৷ আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে সংক্রমণের হার আরও কমানোর লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে কর্তৃপক্ষ৷