1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

টাঙ্গাইলের চর অঞ্চলের নারী মুক্তিযোদ্ধা হেলেন করিম

৫ অক্টোবর ২০১১

তিন মাসের ছোট্ট শিশুকে রেখে স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেন মির্জা হেলেন করিম৷ নানা কৌশলে পাকিস্তানি সেনা এবং রাজাকারদের উপর হামলা চালাতে মুক্তি সেনাদের সাহায্য করেন৷ দাবি করেন একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও শাস্তির৷

Titel 2: Mirja Helen Karim, Dhaka, Bangladesch Bildunterschrift: Mirja Helen Karim, Dhakal, Bangladesch Text: Mirja Helen Karim, Dhaka, Bangladesch, Datum: 19.11.2007 Eigentumsrecht: Zinat Rahman, Dinajpur, Bangladesch Stichwort: Mirja, Helen, Karim, Freiheitskrieg, Tangail, Bangladesch, Freiheitskämpferin, 1971, Freedom, Fighter, War, Liberation, Bangladesh,
নারী মুক্তিযোদ্ধা মির্জা হেলেন করিমছবি: Zinat Rahman

১৯৫৮ সালে টাঙ্গাইলে সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম মির্জা হেলেন করিমের৷ পিতা মির্জা শুকুর আহমেদ এবং মা আনোয়ারা খাতুন৷ টাঙ্গাইলে জন্ম হলেও পরিবারের কর্তাদের চাকুরির সুবাদে ঢাকাতেই বড় হয়েছেন এবং বাস করছেন হেলেন৷ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরুর সময় বদরুন্নেসা কলেজের ছাত্রী ছিলেন তিনি৷ কলেজ জীবন থেকেই ছাত্র ইউনিয়নের সাথে সক্রিয়ভাবে কাজ করতেন৷ তবে বিয়ে হয়ে যাওয়ার কারণে মহিলা পরিষদের সাথ কাজ শুরু করেন৷ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ তাঁকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে সবচেয়ে বেশি করে অনুপ্রেরণা জোগায়৷ এরপর টাঙ্গাইলে যুদ্ধের জন্য স্বেচ্ছাসেবী দল তৈরির ডাক আসলে ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল চলে আসেন তিনি৷

তিন মাসের পুত্র সন্তানকে বাড়িতে রেখে মুক্তিযুদ্ধের জন্য অস্ত্র চালনা প্রশিক্ষণ নেন হেলেন৷ টাঙ্গাইলের গয়লাহোসেন চরে এপ্রিলের শেষের দিকে প্রশিক্ষণ শুরু করেন তিনি৷ সেখানে ছেলেদের পাশাপাশি পাঁচ জন মেয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন৷ যুদ্ধের নয় মাস টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জ অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন হেলেন৷ প্রথমদিকে পুরুষ মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে বন্দুক নিয়ে চর অঞ্চল এবং নদীর তীরবর্তী এলাকায় সতর্ক পাহারা দিতেন তাঁরা৷ পাক সেনা এবং রাজাকারদের গতিবিধি লক্ষ্য করতেন৷ এর মধ্যে রাজাকারেরা জানতে পারে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এসব নারী যোদ্ধার তথ্য৷ ফলে সিরাজগঞ্জের বেলকুচি থানায় অবস্থিত পাকিস্তানি সেনাদের ঘাঁটি থেকে আট-দশটা গানবোট নিয়ে এসে একদিন ঐ চর এলাকা ঘিরে ফেলে৷ সেদিন আত্মরক্ষার জন্য পুরুষ যোদ্ধাদের সাথে ফায়ার করতে করতে নারী যোদ্ধারাও এলাকা থেকে সরে পড়েন৷ কিন্তু মনোয়ারা নামের এক নারী যোদ্ধা পাকিস্তানি সেনাদের হাতে ধরা পড়ে এবং ধর্ষিত হন৷ এই ঘটনার পর কোম্পানি কমান্ডার ইদ্রিস আলী মেয়েদের নিরাপত্তার জন্য তাদের কাছ থেকে বন্দুকগুলো নিয়ে নেন৷ শুধুমাত্র হেলেনের উপর দায়িত্ব পড়ে সিরাজগঞ্জ এবং টাঙ্গাইলের চর অঞ্চলে গ্রেনেড পারাপার করার৷

প্রগতিশীল আন্দোলনের সামনের সারিতে মুক্তিযোদ্ধা মির্জা হেলেন করিমছবি: Zinat Rahman

এসময় ঐ অঞ্চলে পাকিস্তানি সেনা এবং রাজাকারদের অবস্থান ও পরিকল্পনা জানার জন্য গোয়েন্দাগিরির কাজ করেছেন৷ এছাড়া পাতিলে গ্রেনেড ভর্তি করে তার উপর ডিম সাজিয়ে নিয়ে এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে পৌঁছে দিয়েছেন৷ দরিদ্র, গ্রামীণ মেয়ের ছদ্মবেশে নৌকা করে পাক সেনা এবং রাজাকারদের সাথে এক নৌকায় গ্রেনেড নিয়ে নদী পাড়ি দিয়েছেন হেলেন৷ শত্রুরা তাঁর পরিচয় এবং গন্তব্যস্থল জানতে চাইলে তাদের নানা কৌশলে উত্তর দিয়ে সফলভাবে লক্ষ্যে পৌঁছে গেছেন এই সাহসী নারী৷

ডয়চে ভেলের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে এসময়ের দুঃসাহসী ঘটনার কথা জানালেন হেলেন করিম৷ তিনি বলেন, ‘‘নৌকায় রাজাকারেরা আমাকে জিজ্ঞেস করতো ডিমের হালি কতো৷ আমি বলতাম৷ তখন জিজ্ঞেস করতো, ওপারে তোমার কে থাকে? আমি বলতাম, আমার স্বামী থাকে৷ তখন বলতো, ও সেজন্যই যাচ্ছো৷ আমি বলতাম, হ্যাঁ৷ তখন তারা আর কিছু বলতো না৷ একদিন দুই জন পাক সেনা আর তিন জন রাজাকার নৌকায় উঠেছে৷ আমিও নৌকায় আছি৷ ওরা আমাকে জিজ্ঞেস করলো, তুমি কোথায় নামবে? আমি মুক্তিসেনা ভাইদের আগেই বলে দেওয়া নির্দিষ্ট জায়গার কথা বললাম যে, সেখানে না নামলে তো আমি রাস্তা চিনতে পারবো না৷ ফলে তারা আমাকে সেখানে নামানোর জন্য তীরে নৌকা ভিড়ালো৷ আমি নামার সাথে সাথে সেখানে লুকিয়ে থাকা মুক্তিযোদ্ধারা তাদের উপর ব্রাশফায়ার করেন৷ ফলে দুই জন পাকিস্তানি সেনা এবং একজন রাজাকার সেখানেই মারা যায়৷ অন্য দু'জন রাজাকারকে ধরে আনা হয়৷ তারা পরে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে কাজ শুরু করে৷''

স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য প্রশিক্ষণরত সাহসী নারী হেলেন ও অন্যান্যরাছবি: Zinat Rahman

দিনের পর দিন এভাবে এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় ঘুরে ঘুরে শত্রুপক্ষের খবর এনে দিতেন হেলেন৷ তাঁর তথ্যের উপর ভিত্তি করে মুক্তিযোদ্ধারা সফল অভিযান চালাতেন৷ যুদ্ধের শেষের দিকে হেলেন করিমের সংকেত অনুসরণ করে বেলকুচি থানার শক্ত ঘাঁটিতে হামলা চালান মুক্তি সেনারা৷ সেদিন ৫-৭ জন পাক সেনা নিহত হয়৷ আনোয়ার নামের একজন সেনা আত্মসমর্পণ করে৷ এরপর থেকে ঐ অঞ্চল মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে৷

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক ও সামাজিক আন্দোলনের সাথে জড়িত রয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা হেলেন৷ তাঁর বাসাতেই গঠিত হয় বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী৷ উদীচীর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য তিনি৷ খেলাঘরের সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য৷ বর্তমানে মহিলা আওয়ামী লীগের ঢাকা উত্তরের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন হেলেন করিম৷

প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ