আবারো সংসদ নেতা নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা৷ দলীয় সংসদ সদস্যদের শপথ শেষে জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সংসদীয় সভায় তাকে সংসদ নেতা হিসেবে নির্বাচিত করা হয়৷
বিজ্ঞাপন
সভা সূত্র জানায়, সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে শেখ হাসিনার নাম প্রস্তাব করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের৷ বর্তমান চিফ হুইপ নূর- ই- আলম চৌধুরী লিটন ওই প্রস্তাবের সমর্থন জানান৷ পরে সর্বসম্মতিক্রমে তা গ্রহণ করা হয়৷ সংসদ নেতা নির্বাচনের পাশাপাশি বৈঠকে সংসদ উপনেতাও নির্বাচন করা হয়৷ একাদশে জাতীয় সংসদের উপনেতা মতিয়া চৌধুরীকেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদের উপনেতা নির্বাচিত করা হয়৷ এছাড়া বর্তমান স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীকে আবারও স্পিকার হিসেবে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত হয়৷ ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুও থাকছেন একই দাযিত্বে৷ এছাড়া নুর ই আলম চৌধুরীকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদে চিফ হুইপ হিসেবে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত হয়৷
সংসদ সদস্যদের শপথ
সংসদ নেতা, উপনেতা, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার এবং হুইপ নির্বাচনের আগে মঙ্গলবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জয়ী প্রার্থীরা সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেন৷ সকাল ১০টায় শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা শপথ নেন৷ স্বতন্ত্র এমপিরা শপথ নেন তারপর৷ স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী সবাইকে শপথ বাক্য পাঠ করান৷ পরে সবাই শপথপত্রে সই করেন৷ বেলা ১১টায় স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা এবং দুপুর ১২টায় জাতীয় পার্টি ও অন্য দল থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা শপথ নেন৷ নির্বাচন কমিশনের (ইসি) গ্যাজেট অনুযায়ী, এবারের নির্বাচনে ৬২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী হয়েছেন৷
এবারের নির্বাচনে ২৯৮ আসনের মধ্যে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ পেয়েছে ২২২ আসন৷ ফলে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ৷ এর আগে ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে ক্ষমতায় ছিল আওয়ামী লীগ৷ বিএনপিসহ ১৬টি রাজনৈতিক দল এবারের নির্বাচন বর্জন করেছে৷ আগামীকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটায় বঙ্গভবনে নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের শপথ অনুষ্ঠান হবে৷
ভোটের ফলে কার কী প্রতিক্রিয়া!
ভোটের ফলে কার কী প্রতিক্রিয়া!
ছবি: Indranil Mukherjee/AFP
'আমি বিশ্বাস করি আমি ঠিক কাজ করেছি'
গণভবনে নির্বাচন পর্যবেক্ষক ও দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এই কথা বলেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ''যারা সমালোচনা করতে চায়, তারা সমালোচনা করতে পারে। এটা তাদের স্বাধীনতা। আমার নিজস্ব বিশ্বাস রয়েছে, এটা ঠিক হয়েছে কিনা। আমি বিশ্বাস করি আমি ঠিক কাজ করেছি এবং নির্বাচন স্বাধীন ও সুষ্ঠু হয়েছে।''
ছবি: AFP
'আওয়ামী লীগ কথা রাখেনি'
নির্বাচন পুরোপুরি সরকার নিয়ন্ত্রিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের। তিনি বলেছেন সরকার যেখানে নিরপেক্ষ নির্বাচন চেয়েছে সেখানে হয়েছে, যেখানে চায়নি সেখানে পছন্দের প্রার্থীকে জিতিয়ে আনা হয়েছে। তিনি বলেন, ''বারংবার আমাদের আশ্বাস দেয়া হয়েছিল, এসব করা হবে না। যা ভোট হবে গণনা করা হবে এবং সেভাবে প্রার্থী জিততে পারলে জিতবে।''
ছবি: DW
'আরো ৫ বছর অপেক্ষা ছাড়া উপায় নেই বিএনপির'
তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এমন মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ''বারবার নির্বাচন বর্জন করে বিএনপির জন্য এখন আগামী পাঁচ বছর অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনো কিছুই করণীয় নেই। আমরা বলেছি. স্বাধীন নির্বাচন কমিশনই নির্বাচন করবে। আমাদের কথার সঙ্গে কাজের মিল আছে কিনা, গণতান্ত্রিক বিশ্ব সেটা প্রত্যক্ষ করুক।''
ছবি: DW
'ডামি নির্বাচন জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে'
নির্বাচন কমিশন, প্রার্থী, ভোটার এবং পর্যবেক্ষকদেরও ডামি বলে আখ্যা দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মঈন খান। ভোটের নিম্ন হারের উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘কৃত্রিম প্রতিযোগিতা তৈরি করেও সরকার নির্বাচনে ভোটার আনতে পারেনি। গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয় সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ''আজকে সাফাই গাইলেও, বাস্তবতা হচ্ছে ডামি নির্বাচন জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে।''
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP
'ভোটের হার নিয়ে বিতর্কের অবকাশ নেই'
ভোটের সবশেষ হার ৪১ দশমিক আট শতাংশ বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। ভোটের হার নিয়ে যে প্রশ্ন উঠছে তা কোনো ‘ইস্যু নয়' বলেও মনে করেন তিনি। ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে সিইসি বলেন, ‘‘ওরা (বিএনপি) যদি অংশগ্রহণ করতেন তাহলে ভোটটা আরো প্রতিদ্বন্বিতাপূর্ণ হতো এবং ভোটাররা অধিকতর হারে ভোটকেন্দ্রে আসতেন৷...বিদ্যমান ব্যবস্থায় আমার কাছে মনে হচ্ছে ৪২ শতাংশ ভালোই।’’
ছবি: Arafatul Islam/DW
5 ছবি1 | 5
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্রগুলো বলছে, ৪৫ সদস্যের মন্ত্রিসভা থেকে অন্তত ১৫ জন বাদ পড়তে পারেন৷ এর মধ্যে টানা তিন মেয়াদে মন্ত্রিসভায় আছেন এমন নেতাও বাদ পড়তে পারেন৷ এর বাইরে মন্ত্রিসভার তিনজন সদস্য নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন এবং তিনজন দলের মনোনয়নই পাননি৷ এবার যে তিনজন প্রতিমন্ত্রী পরাজিত হয়েছেন, তারা হলেন ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য ও বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী৷