1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

টানা ছয় হারে সেমিফাইনালের আশার সমাধি

রাহেনুর ইসলাম
৩১ অক্টোবর ২০২৩

ইডেনে বাংলাদেশকে ৭ উইকেটে হারিয়ে সেমিফাইনালের মৃদু আশা বাঁচিয়ে রাখলো পাকিস্তান।

পাকিস্তানের বিপক্ষে বিশ্বকাপের ম্যাচে হেরেছে বাংলাদেশ৷
সেমিফাইনালে যাওয়া হলো না টাইগারদেরছবি: DIBYANGSHU SARKAR/AFP/Getty Images

ইডেনে ম্যাচ শুরুর আগে ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ভন বলছিলেন, ‘‘বাংলাদেশের এই দলটায় কিছু একটা ঠিক নেই।'' সেটা অনেক কিছুই হতে পারে। তবে আত্মবিশ্বাস যে তলানিতে দেখা গেল আরও একবার। প্রথম তিন ওভারে নেই দুই উইকেট। পাওয়ার প্লে'র ১০ ওভার শেষ হতে স্কোর ৩ উইকেটে ৩৭।

চাপটা কাটিয়ে মাহমুদুল্লাহ ,লিটন দাস, সাকিব আল হাসানরা একটা সময় আশা জাগিয়েছিলেন চ্যালেঞ্জিং স্কোরের। কিন্তু শাহীন শাহ আফ্রিদি, মোহাম্মদ ওয়াসিম, হারিস রউফদের গতিতে খেই হারিয়ে বাংলাদেশ অলআউট ২০৪ রানে। ইডেনে এত কম পুঁজি নিয়ে লড়াই করা কঠিন। পারেনি বাংলাদেশও। পাকিস্তান ৭ উইকেটের দাপুটে জয় পেয়েছে ১০৫ বল হাতে রেখে। মেহেদি হাসান মিরাজ ৩ উইকেট পেলেও পাকিস্তানের সহজ জয়কে তা একটুও কঠিন করতে পারেনি৷

২০১৯ বিশ্বকাপে ৬ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে গুঁড়িয়ে দিয়েছিলেন শাহীন শাহ আফ্রিদি। আজও ৩ উইকেট নিয়ে পাকিস্তানের জয়ের অন্যতম নায়ক তিনি। এবারের বিশ্বকাপে বাঁ-হাতি এই পেসারের উইকেট এখন যৌথ সর্বোচ্চ ১৬টি। 

বাংলাদেশের সেমিফাইনালের স্বপ্ন প্রায় ভেসে গিয়েছিল আগেই। আজকের হারে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম দল হিসাবে শেষ চারের দৌড় থেকে ছিটকে পড়লো সাকিবের দল। তবে বিশ্বকাপে সেরা আটে থেকে চ্যাম্পিয়নস লিগের টিকিট নিশ্চিত করার চ্যালেঞ্জটা শেষ হয়ে যায়নি। আজকের হারে সেটা কঠিন হলো আরো। ৭ ম্যাচে ২ পয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশ আছে ৯ নম্বরে। নেট রান রেট ইংল্যান্ডের চেয়ে সামান্য বেশি। সেরা আটে থাকতে শেষ দুই ম্যাচে হারাতেই হবে শ্রীলঙ্কা আর অস্ট্রেলিয়াকে। নইলে গত চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনাল খেলা বাংলাদেশ দর্শক হয়ে থাকবে এবার।

আজকের জয়ে ৭ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে পাকিস্তান এখন পয়েন্ট টেবিলের ৫ নম্বরে। শেষ দুই ম্যাচে নিউজিল্যান্ড ও ইংল্যান্ডকে হারাতে পারলে বাবর আজমদের আশা জাগবে সেমিফাইনাল খেলার।
২০৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দুই ওপেনার ফখর জামান ও আব্দুল্লাহ শফিকের ১২৮ রানের জুটিতে দাপুটে জয়ের ভিত পেয়ে যায় পাকিস্তান। এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বোচ্চ উদ্বোধনী রানের জুটি এটা। প্রথম ওভারে রান আউট থেকে রক্ষা পাওয়া শফিক ৬৯ বলে ৬৮ করে এলবিডাব্লিউ হন মেহেদি হাসান মিরাজের বলে। ৯ রান করা বাবর আজমকেও ফেরান মিরাজ। তবে অপর ওপেনার ফখর জামান ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। এ বছর এপ্রিলে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টানা তিন সেঞ্চুরি পাওয়া ফখর হারিয়ে ফেলেছিলেন ছন্দ। বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে একটা মাত্র ম্যাচ খেলে বাদ পড়েন এই ওপেনার। আজ বাংলাদেশের সঙ্গে দেখা মিলেছে পুরোনো ফখরের। ৭৪ বলে ৩ বাউন্ডারি ৭ ছক্কায় খেলেছেন ৮১ রানের ইনিংস। তাঁর একটি ছক্কা ছিল ৯৯ মিটারের, যা এই বিশ্বকাপে তৃতীয় সর্বোচ্চ দূরত্বের। মিরাজকে স্লগ সুইপ করতে যেয়ে ওয়াইড লং অনে তাওহিদ হৃদয়কে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। এটা ছিল ওয়ানডেতে মিরাজের ১০০তম উইকেট (৮৯ ম্যাচ)। ফখর ফেরার পর বাকি কাজটা সারেন মোহাম্মদ রিজওয়ান ও ইফতিখার আহমেদ। শততম ওয়ানডে খেলা মুস্তাফিজুর রহমান রাঙাতে পারেননি উপলক্ষ্যটা। ৪৭ রান দিয়ে উইকেটহীন ছিলেন তিনি।

বিশ্বকাপ জুড়ে ওয়াসিম আকরাম, মিসবাহ উল হকরা এ স্পোর্টসে রীতিমতো গলা ফাটিয়েছেন মাহমুদউল্লাহকে উপরে খেলানোর জন্য। একমাত্র বাংলাদেশি হিসাবে এবারের বিশ্বকাপে সেঞ্চুরি করা মাহমুদুল্লাহর ৭-৮ নম্বরে খেলার কোনো কারণই খুঁজে পাচ্ছিলেন না তাঁরা। সেই আওয়াজটা অবশেষে পৌঁছেছে বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্টের কানে। বিপর্যয়ের মুখে আজ পাঁচ নম্বরে নেমে ত্রাতা সেই তিনিই।

৭০ বলে ৬ বাউন্ডারি ১ ছক্কায় ৫৬ রানের ইনিংসে বিশ্বকাপে নিজের একটা রেকর্ড আরও সমৃদ্ধ করেছেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটার। ২০১৫ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে বিশ্বকাপে টানা ১৭ ইনিংসে অন্তত ২০ বা এর বেশি রান করলেন তিনি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৩ ইনিংসে এমন কীর্তি ছিল অস্ট্রেলিয়ার ম্যাথু হেইডেনের। এবারের বিশ্বকাপে মাহমুদুল্লাহর আগের চারটি ইনিংস অপরাজিত ৪১, ৪৬, ১১১ ও ২০। অথচ এমন একজন কিনা বিশ্বকাপ দলে এসেছেন একেবারে শেষবেলায় নাটকীয়ভাবে!

শাহীন শাহ আফ্রিদির প্রথম ওভারেই কোনো রান না করে এলবিডাব্লিউ ওপেনার তানজিদ হাসান। ভেতরে ঢোকা বলে ফুটওয়ার্ক ছিল না তাঁর। রিভিউ নিয়ে তাই কাজ হয়নি। ওয়ানডেতে এটা আফ্রিদির শততম উইকেট,যা পেসারদের মধ্যে দ্রুততম। ওয়ানডে ইতিহাসেই তৃতীয় দ্রুততম বোলার হিসাবে ১০০ উইকেটের মাইলফলকে পা রাখলেন তিনি। নেপালের সন্দীপ লামিচানে ৪২ ম্যাচে, আফগানিস্তানের রশিদ খান ৪৪ আর আফ্রিদি ৫১তম ম্যাচে নিলেন ১০০ উইকেট।

নিজের পরের ওভারে আবারও ছোবল আফ্রিদির। নিজেকে হারিয়ে খোঁজা নাজমুল হোসেন শান্ত (৪ রান) ফ্লিক করতে যেয়ে শর্ট মিডউইকেটে ক্যাচ দেন উসামা মীরকে। প্রথম ম্যাচে ৫৯ রানে অপরাজিত ছিলেন নাজমুল। অথচ পরের ছয় ম্যাচে রান ২৮, গড় ৪.৬৬, স্ট্রাইক রেট ৫৮.৩৩!

দ্রুত দুই উইকেট হারানোর পর চারে আসেন মুশফিকুর রহিম। এ বছরের মার্চে সর্বশেষ নিজের প্রিয় পজিশন চার নম্বরে খেলেছিলেন মুশফিক। তাওহিদ হৃদয়ের উত্থানে জায়গাটা ছেড়ে নেমতে হয় ছয়ে। ২০ ম্যাচ পর প্রিয় জায়গায় ফিরলেও রান পাননি মুশফিক। ৫ করে হারিস রউফের গুড লেংথ বলে ক্যাচ দেন উইকেটরক্ষক মোহাম্মদ রিজওয়ানের গ্লাভসে।

এবারের বিশ্বকাপে সাত ম্যাচে প্রথম ১০ ওভারে ১৬ উইকেট হারালো বাংলাদেশ,যা সর্বোচ্চ। প্রথম ১০ ওভারে ইংল্যান্ড ১৩ আর নেদারল্যান্ডস হারিয়েছে ১১ উইকেট।

২৩ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে পথ হারাতে বসেছিল বাংলাদেশ। তখনই শক্ত হাতে হালটা ধরেন লিটন দাস ও মাহমুদউল্লাহ। প্রথম চার ম্যাচে ৮, ৭, ৬ ও ৭ নম্বরের পর আজ ৫-এর নামেন মাহমুদুল্লাহ। সেই আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন ভালোভাবে। লিটন দাসের সঙ্গে চতুর্থ উইকেটে ৭৯ রানের জুটি গড়ে কাটান শুরুর চাপটা।

শুরুতে নিজেকে গুটিয়ে রাখা লিটন খোলস থেকে বের হচ্ছিলেন ধীরে ধীরে। কিন্তু ইফতিখার আহমেদের সাদামাটা অফস্পিন বলটা চিপ করতে যেয়ে ক্যাচ তুলে দেন মিডউইকেটে। ৬৪ বলে ৬ বাউন্ডারিতে ৪৫ করা লিটনেরই যেন বিশ্বাস হচ্ছিল না আউটটা। হতাশায় ফেরার সময় ব্যাট দিয়ে হেলমেটে আঘাত করেছিলেন লিটন।

একটা প্রান্ত আগলে মাহমুদুল্লাহ ভরসা দিয়ে গেছেন শুরু থেকে। তিনি ফিফটি করেন ৫৮ বলে। সাকিব আল হাসানের সঙ্গে বড় রানের জুটি গড়তে না দিতে বাবর আক্রমণে আনেন আফ্রিদিকে। স্বপ্নের এক বলে মাহমুদুল্লাহকে বোল্ড করে বাবরের মুখে হাসি ফেরান বাঁহাতি এই পেসার। রাউন্ড দ্য উইকেটে করা বলটা কিছুটা উল্টো দিকে ঘুরে ভাঙে মাহমুদুল্লাহর উইকেট।

দুই ম্যাচ পর ফেরা তাওহিদ হৃদয় (৩ বলে ৭) ব্যর্থ আরও একবার। উসামা মিরকে স্লগ সুইপে ছক্কা মারার পরের বলেই স্লিপে ক্যাচ তুলে দেন ইফতিখার আহমেদের হাতে। 

উইলো ক্রিকেট ব্যাটের ভবিষ্যৎ কি সংকটে?

01:14

This browser does not support the video element.

প্রথম ২০ বলে কেবল ৬ রানই করেছিলেন সাকিব। ২১তম বলে মোহাম্মদ ওয়াসিমকে বাউন্ডারি মেরে কাটান চাপটা। ইফতিখার আহমেদের করা ৩৭তম ওভারের প্রথম তিন বলে বাউন্ডারিও মারেন সাকিব। কিন্তু হারিস রউফের শর্ট বলে পুল করতে যেয়ে মিডউইকেটে ক্যাচ দেন আগা সালমানকে। শেষ হয় ৬৪ বলে ৪ বাউন্ডারিতে ৪৩ রানের ইনিংসটা।

এবারের বিশ্বকাপে শর্ট বলে পঞ্চমবার আউট হলেন সাকিব। সব মিলিয়ে পেসারদের বলে আউট ষষ্ঠবার। পেসারদের ৮৯ বলে ডট দিয়েছেন ৫৬টি, রান করেছেনব ৫০। গড় কেবল ৮.৩৩। বাউন্ডারি ৩টি, ছক্কা ১টি।

মেহেদি হাসান মিরাজ (২৬ রান) ও তাসকিন আহমেদকে (৬) একই ওভারে বোল্ড করে বাংলাদেশের স্কোরটা বড় হতে দেননি মোহাম্মদ ওয়াসিম। শেষ ৪ উইকেট ১৯ রানের ব্যবধানে হারায় বাংলাদেশ।

ইডেনে নামার আগে টালমাটাল ছিল দুই দেশের ক্রিকেটই। ম্যাচ শুরুর ২৪ ঘন্টা আগে পদত্যাগ করেন পাকিস্তানের প্রধান নির্বাচক ইনজামাম উল হক। পিসিবি প্রধান জাকা আশরাফ ফাঁস করে দিয়েছিলেন অধিনায়ক বাবর আজমের হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ। আর বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান বিশ্বকাপ শুরুর আগে থেকেই বিতর্কে তামিম ইকবালের বাদ পড়ার ইস্যুতে। দলের ব্যর্থতা নিয়ে ‘তামিমপন্থি' ক্রিকেটারদের দিকেও তিনি আঙুল তুলেছেন নেদারল্যান্ডসের কাছে হারের পর। তবে সব ভুলে আশা করেছিলেন ভালো ক্রিকেট খেলে ঘুরে দাঁড়ানোর। সেটা আর হলো কোথায়? টানা ছয় ম্যাচ হেরে উল্টো ব্যর্থতার চোরাবালিতে আরো তলিয়ে গেল বাংলাদেশ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর: বাংলাদেশ ৪৫.১ ওভারে ২০৪/১০ (মাহমুদুল্লাহ ৫৬, লিটন ৪৫,সাকিব ৪৩ ; আফ্রিদি ৩/২৩, ওয়াসিম ৩/৩১)

পাকিস্তান ৩২.৩ ওভারে ২০৫/৩ (ফখর ৮১, শফিক ৬৮, রিজওয়ান ২৬*; মিরাজ ৩/৬০, তাসকিন ০/৩৬)

ফল: পাকিস্তান ৭ উইকেটে জয়ী
ম্যাচসেরা: ফখর জামান

রাহেনুর ইসলাম সাংবাদিক
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ