জার্মানির অন্যতম দৈনিক স্যুড ডয়চে সাইটুং রোববার জানিয়েছে, ২০২৪ সালে টানা দ্বিতীয় বছরের মতো মন্দার আশঙ্কা করছে জার্মান সরকার৷ দেশটির অর্থনীতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় বুধবার পূর্বাভাস কমানোর ঘোষণা দেবে বলেও জানিয়েছে পত্রিকাটি৷
বিজ্ঞাপন
২০২৪ সালে ০.৩ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির আশা করেছিল জার্মানি৷ তবে এর পরিবর্তে অর্থনীতি ০.২ শতাংশ সংকুচিত হবে বলে এখন মনে করছে সরকার৷ বুধবার এই তথ্য প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছে স্যুড ডয়চে সাইটুং পত্রিকা৷
রপ্তানি ও কারখানা আদেশ কমে যাওয়া এবং জ্বালানির উচ্চমূল্য এর কারণ বলে মনে করা হচ্ছে৷
জার্মানির পরিসংখ্যান অফিস ডেস্টাটিস সোমবার জানিয়েছে, আগস্ট মাসে ফ্যাক্টরি অর্ডার বা কারখানা আদেশ কমেছে ৫.৮ শতাংশ৷
তবে জার্মান সরকার ২০২৫ সালে ১.১ শতাংশ ও ২০২৬ সালে ১.৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি আশা করছে বলে জানিয়েছে পত্রিকাটি৷ সরকারের প্রস্তাব করা ‘প্রবৃদ্ধি উদ্যোগ' কর্মসূচি এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে বলে স্যুড ডয়চে সাইটুংকে জানিয়েছেন অর্থনৈতিক বিষয়ক মন্ত্রী রব্যার্ট হাবেক৷ এসব কর্মসূচির মধ্যে আছে কর ছাড়, শিল্পখাতের জন্য জ্বালানি মূল্যে ছাড়, লাল ফিতার দৌরাত্ম কমানো, বয়স্ক ব্যক্তিদের কাজ চালিয়ে যেতে প্রণোদনা দেওয়া, বিদেশি কর্মী আকর্ষণ করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ ইত্যাদি৷
জার্মানি : ধনী দেশের গরিবেরা যেমন
করোনা মহামারির সময় ধনী আর গরিবের ব্যবধান বাড়তে না দেয়ার উদ্যোগ নেয়া সত্ত্বেও জার্মানিতে এ ব্যবধান বেড়েছে৷ এ দেশের মানদণ্ডে গরিবদের আরো গরিব হওয়ার নমুনা দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Markus C. Hurek/dpa/picture alliance
ধনী দেশে পথের পাশে দরিদ্র মানুষ
বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশ জার্মানি৷ এ দেশেও আছে গৃহহীন মানুষ৷ করোনা মহামারির সময় গৃহহীনের সংখ্যা বেড়েছে৷
ছবি: Rupert Oberhäuser/picture alliance
ব্যয় কমিয়ে বাঁচার চেষ্টা
করোনার পর ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ায় জ্বালানি এবং অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে৷ সন্তানের মুখে আহার তুলে দিতে জার্মানির অনেক মা এখন নিজে একবেলা না খেয়ে থাকেন বা খেলেও কম খান৷ অবসর ভাতায় চলতে পারেন না বলে অনেক প্রবীণ বোতল কুড়ান৷ তা বিক্রি করে সামান্য কিছু অর্থ আসে, তাতেই তারা খুশি!
ছবি: Rupert Oberhäuser/picture alliance
দারিদ্র্য বাড়ছে জার্মানিতে
জার্মানিতে দরিদ্রের সংখ্যা বাড়ছে- এ শুধু বিশ্লেষকদের অনুমান নয়, পারিট্যাটিশে ভলফারট্সফারবান্ড নামের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানও বলছে এ কথা৷ তাদের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে এ মুহূর্তে জার্মানির এক কোটি ৩৮ লাখের মতো মানুষ হয় দারিদ্র্যসীমার নীচে বাস করছেন, নয়তো দারিদ্র্যসীমার নীচে চলে যাওয়ার ঝুঁকিতে আছেন৷
ছবি: imago images/epd
২০তম ধনী দেশ জার্মানি
২০২১ সালে মাথাপিছু জিডিপির হিসেবে বিশ্বের ২০ তম ধনী দেশ হয়েছিল জার্মানি৷সে বছর জার্মানির মাথাপিছু বার্ষিক জিডিপি ছিল ৫২ হাজার ২০০ ইউরো (৫০ হাজার ৭০০ ডলার)৷ এক লাখ ৩৬ হাজার ৭০০ ইউরো মাথাপিছু বার্ষিক জিডিপি নিয়ে সবচেয়ে ধনী দেশের স্বীকৃতি পেয়েছিল লুক্সেমবুর্গ৷ সবচেয়ে কম মাত্র ২৭০ ইউরো বার্ষিক মাথাপিছু জিডিপি ছিল বুরুন্ডির৷ সে কারণে ২০২১ সালে আফ্রিকার এই দেশটিই ছিল বিশ্বের দরিদ্রতম৷
ছবি: Markus C. Hurek/dpa/picture alliance
জার্মানিতে দরিদ্র কারা
কোনো ব্যক্তির মাসিক আয় এক হাজার ১৪৮ ইউরোর চেয়ে কম হলে তিনি দারিদ্র্যসীমার নীচে আছেন বলে ধরে নেয়া হয়৷তবে এক সন্তান আছে এমন ব্যক্তির ক্ষেত্রে মাসিক আয় কমপক্ষে এক হাজার ৪৯২ ইউরো হতে হয়, না হলে তাকেও দারিদ্র্যসীমাধীন বলে ধরে নেয়া হয়৷ দুই সন্তানের বাবা-মায়ের ক্ষেত্রে আয়সীমাটা দু হাজার ৪১০ ইউরো, অর্থাৎ আয় তার চেয়ে কম হলে জার্মানির মানদণ্ডে তারাও দারিদ্র্যসীমার নীচে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Skolimowska
দ্রব্যমূল্যের চাপে পিষ্ট মানুষ
জার্মানিতে কেউ চাকরি না পেলে বা কাজ করতে না পারলে সরকার তাকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দেয়৷ সেই প্রণোদনার অংশ হিসেবে ৪৪৯ ইউরো দেয়া হয় সারা মাসের খাদ্য, বস্ত্র, গৃহস্থালী নানা পণ্য কেনা এবং ঘরের যাবতীয় বিল পরিশোধের জন্য৷এছাড়া প্রতিটি শিশুর জন্য দেয়া হয় (বয়সভেদে) ২৮৫ থেকে ৩৭৬ ইউরো৷ কিন্তু দ্রব্যমূল্য এত বেড়েছে যে, ওলাফ শলৎস সরকার এ ভাতা ৪৪৯ থেকে বাড়িয়ে ৫০৩ ইউরো করার কথা ভাবছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/W. Steinberg
অপ্রতুল সরকারি উদ্যোগ
সমাজ বিজ্ঞানী এবং দারিদ্র্য গবেষক ক্রিস্টোফ বুটারভেগে মনে করেন, মাসিক সামাজিক নিরাপত্তা ভাতা কমপক্ষে ৬৫০ ইউরো না করলে দুর্মূল্যের এ বাজারে অনেক মানুষের জন্য তিনবেলা পর্যাপ্ত খাওয়া কঠিন হবে৷প্রসঙ্গত, জার্মানিতে রুটি, দুধ, ফল এবং শাকসবজির দাম ২০২০ সালের তুলনায় এ বছর শতকরা ১২ ভাগেরও বেশি বেড়েছে৷
ছবি: picture-alliance/imageBROKER
বার্ধক্যে দারিদ্র্যের জ্বালা
বের্টেলসমান ফাউন্ডেশনের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, জার্মানিতে প্রবীণদের মধ্যেও দারিদ্র্য বাড়ছে৷ কয়েক দশক কাজ করে যারা মাসিক অবসর ভাতায় আয়েশে জীবন যাপনের স্বপ্ন দেখেছিলেন, তাদের কেউ কেউ দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে পাল্লা দিতে না পেরে খণ্ডকালীন কাজে যোগ দিচ্ছেন৷ কাজ করেও নারীরা কুলাতে পারছেন না৷ পুরুষদের চেয়ে পারিশ্রমিক কম বলে অতিরিক্ত সময় কাজ করতে হচ্ছে তাদের৷
ফুলটাইম জব, অর্থাৎ দিনে আট ঘণ্টা কাজ করেও সেই আয়ে সংসার চালাতে পারছেন না- এমন মানুষের সংখ্যাও জার্মানিতে বাড়ছে৷এতদিন সন্তানহীন কোনো মানুষ ঘণ্টায় ১২ ইউরো হিসেবে দিনে আট ঘণ্টা করে সপ্তাহে মোট ৪০ ঘণ্টা কাজ করতেন৷ বিনিময়ে প্রতি মাসে পেতেন এক হাজার ৪৮০ ইউরোর মতো৷ দিব্যি চলে যেতো তাতে৷এখন তাতে চলছে না বলে অনেকেই আরেকটা খণ্ডকালীন কাজ করছেন৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/McPHOTOs
9 ছবি1 | 9
২০২৩ সালে বিশ্বের বড় অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র জার্মানির অর্থনীতি সংকুচিত হয়েছিল৷ কারখানা ও রপ্তানি আদেশ কমে যাওয়া এবং ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি এর কারণ ছিল সেই সময় মন্তব্য করেছিলেন বিশ্লেষকেরা৷
তবে মূল্যস্ফীতি কমায় এবং ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার কমানোয় চলতি বছর অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে পারে বলে আশা করা হয়েছিল৷
অর্থনৈতিক দুরবস্থা ছাড়াও জার্মানি আরও কিছু চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে৷ যেমন চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা, দক্ষ কর্মীর অভাব এবং জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানোর পথের নানান সমস্যা ইত্যাদি৷