বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে পানির সংকট বেড়ে চলেছে৷ আজ যেখানে পর্যাপ্ত পানির সরবরাহ রয়েছে, আগামীকাল সেখানে তা নাও থাকতে পারে৷ টিউনিশিয়ার পাহাড়ি অঞ্চলে চাষিদের সে বিষয়ে সচেতন করার চেষ্টা করছে জার্মানির এক সংস্থা৷
বিজ্ঞাপন
অনেকেই মনে করেন, পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি রয়েছে৷ জলপাই ও শাকসবজির খেতের জন্য শেরিফ শেহাইবির অনেক পরিমাণ পানির প্রয়োজন হয়৷ সেই চাহিদা মেটাতে তাঁর তিনটি নিজস্ব জলাধার রয়েছে৷ কিছুটা গর্ব নিয়েই তিনি দায়িত্ব পালন করেন৷
শেরিফের মোট ৯০ হেক্টর জমি রয়েছে, যা কাইরুয়ান অঞ্চলে যথেষ্ট বেশি হিসেবে গণ্য করা হয়৷ এখনো পর্যন্ত তাঁকে পানি সাশ্রয়ের কথা ভাবতে হয় নি৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাদের খেতের জন্য সেকেন্ডে ছয় লিটার পানি পাম্প করতে পারি৷ গ্রীষ্মকালে দিনে ১৬ থেকে ১৭ ঘণ্টা পর্যন্ত প্লান্ট চালু রাখতে হয়৷ শীতকালে অবশ্যই এত পরিমাণ পানি প্রয়োজন হয় না৷ তখন আবহাওয়া শীতল থাকে৷ যথেষ্ট বৃষ্টি হয় বলে আমাদের কুয়াগুলিতে সবসময়ে যথেষ্ট পানি থাকে৷’’
পানি সংকট সমাধানে টিউনিশিয়ায় জার্মান প্রকল্প
05:43
পরিস্থিতি বদলাচ্ছে
সবার জীবন অবশ্য এমন আরামের নয়৷ মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে পাহাড়ের ওপারে মানুষের জীবনযাত্রা অনেক বেশি কঠিন৷ বেশিরভাগ পরিবারকে পানির সন্ধানে দিনে একাধিকবার বেশ কয়েক কিলোমিটার পাড়ি দিতে হয়৷ শুধু গৃহপালিত প্রাণীর তেষ্টা মেটাতে ও খেতে চাষের জন্য রিজাব জাগদুদিকে প্রায় ২৫০ লিটার পানি সংগ্রহ করতে হয়৷ তাছাড়া স্ত্রী ও তিন সন্তানসহ নিজস্ব পরিবারের প্রয়োজন মেটাতে ৪৯ লিটার পানীয় জল লাগে৷ পরিস্থিতি বর্ণনা করে রিজাব বলেন, ‘‘এই অঞ্চলে আমাদের অবস্থা কঠিন৷ শুধু পানি সংগ্রহ করতেই আমাদের অনেক সময় লাগে৷ প্রতিদিন সেই কাজ করতে করতে আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছি৷ শিশুরাও আর পারছে না৷ গোটা অঞ্চল দুর্বল হয়ে উঠছে৷ বাসায় এখনো কল থেকে পানি আসে না৷ জীবনযাত্রার মানের ক্ষতি হচ্ছে৷ অবস্থা বেশ কঠিন৷ এখানে আমরা সবাই এর সমাধানসূত্র খুঁজছি৷’’
জলাধারে কমপক্ষে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করে সমস্যার আংশিক সমাধানের চেষ্টা চলছে৷ জার্মানির আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা জিআইজেড সেখানে ১০০টি এমন জলাধার তৈরি করছে৷ কারণ এখনো পর্যন্ত বৃষ্টির পানির একটা বড় অংশ কাজে লাগানো হয় নি৷ সংস্থার প্রতিনিধি মানফ্রেড মাৎস বলেন, ‘‘বাসার সামনে জলাধারে পানি জমা হয়৷ সংসারের কাজে, খেতে পানি দিতে সেটা কাজে লাগানো যায়৷ চাষিরা এভাবে জলপাই, অ্যামন্ড বাদাম ও রোজমেরি চাষ করতে পারেন, যার জন্য কম পানির প্রয়োজন হয়৷’’
মরুভূমিতে চাষাবাদ: পানি সাশ্রয়ে ভার্টিক্যাল ফার্ম
উচ্চ তাপমাত্রা এবং জলের সংকট। আরব আমিরাতকে এজন্য চাষাবাদের জন্য খুব একটা উপযোগী বলে মনে না হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন ও করোনা মহামারির ফলে খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি নতুন করে সামনে এসেছে।
ছবি: Aerofarms
মরুর দেশে
“আমি যখন মরভূমিতে টমেটো চাষের কথা বললাম, সবাই আমাকে পাগল ভেবেছিল”, বলছিলেন পিওর হারভেস্ট স্মার্ট ফার্মের প্রতিষ্ঠাতা স্কাই কুরৎস। দেশটিতে বছরে গড়ে মাত্র ১২ দিন বৃষ্টি হয়, মাত্র এক শতাংশ জমি চাষের যোগ্য। ফলে ৮০ শতাংশ খাবারই আমদানি করতে হয়। চাষাবাদের জন্যও একেবারেই অনুপযোগী বলে মনে করা হয় দেশটিকে।
ছবি: Pure Harvest
ভার্টিক্যাল ক্ষেতই সমাধান?
কিন্তু কুরৎসের মতো বেশ কয়েকজন নবীণ উদ্যোক্তা এ নিয়ে কাজ শুরু করেছেন। নতুন কৃষি প্রযুক্তিতে কোটি কোটি টাকাও বিনিয়োগ করছে আমিরাত সরকার। ভার্টিক্যাল ফার্মিং প্রযুক্তিও এর একটি।
ছবি: Pure Harvest
নির্দিষ্ট তাপমাত্রা, সাশ্রয়ী জল
গ্রিনহাউজের মধ্যে কয়েক ধাপে একটার ওপর আরেকটা গাছের স্তর চাষ করা হয়। এলইডি আলোর সাহায্যে তাপমাত্রা ও আলো নিয়ন্ত্রণ করা হয়৷ যাতে বাড়তি জল খরচ না হয়, সেজন্য ফোঁটায় ফোঁটায় জল দেয়ার ব্যবস্থা থাকে। তাছাড়া বাড়তি জল ওপরের স্তর থেকে নীচের গাছে যাওয়ায় অপচয় একেবারেই হয় না। এর ফলে তীব্র গরম বা কনকনে শীত, সারা বছরই চাষ করা সম্ভব হয়।
ছবি: Pure Harvest
জমির চেয়েও ভালো ফলন
আরেকটি ভার্টিক্যাল ফার্ম এরোফার্মের সহপ্রতিষ্ঠাতা মার্ক ওশিমা জানান, জমিতে যে ফসলের পাতা ছাড়তে ৩০ থেকে ৪০ দিন লাগে, এই পদ্ধতিতে সেটা ১০-১২ দিনেই করা সম্ভব। ২০২১ সালের মধ্যে রাজধানীর সবচেয়ে বড় ভার্টিক্যাল ফার্মে বিভিন্ন প্রজাতির ৮০০ ফসল ফলানোর জন্য আবু ধাবি বিনিয়োগ কার্যালয় থেকে বড় আকারের অনুদানও পেয়েছে এরোফার্ম।
ছবি: Aerofarms
খাদ্য নিরাপত্তা
২০১৮ সালে উচ্চপ্রযুক্তির খাদ্য উৎপাদনের কেন্দ্রে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যে নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করে। তখন থেকেই নানা প্রতিষ্ঠান ও বিনিয়োগকারী করমুক্ত সুবিধা নিয়ে দেশটিতে নানা উদ্যোগ নিচ্ছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে খাদ্য উৎপাদন ও সরবরাহে চাপ পড়ছে। মহামারির কারণে সব লকডাউনে থাকায় খাদ্য সংকটেও পড়েছিল দেশটি। ভার্টিক্যাল ফার্মের মাধ্যমে উৎপাদন বাড়িয়ে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার স্বপ্ন দেখছে মরুর দেশ আরব আমিরাত।
ছবি: Aerofarms
5 ছবি1 | 5
সমবেত উদ্যোগ
জিআইজেড স্থানীয় চাষিদের পরামর্শ দিচ্ছে৷ সেই সঙ্গে কয়েকটি তথাকথিত ‘ওয়াটার ফোরাম’ গড়ে তুলেছে এই সংস্থা৷ সেখানে পরিকল্পনা স্থির করা হয়৷ কম পানির চাহিদাওলা কোন গাছ লাগানো হবে, চাষিরা একসঙ্গে সে বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করেন৷ মানফ্রেড মাৎস মনে করেন, ‘‘আমরা এখন যে অঞ্চলে রয়েছি, সেখানকার পরিস্থিতি একেবারে ভিন্ন৷ বেলাগাম ব্যবহারের কারণে কয়েক বছর ধরে ভূগর্ভস্থ পানি আর নেই বললেই চলে৷ সে কারণে চাষিদের জমা করা পানি ব্যবহার করতে হচ্ছে৷’’
চাষিরা একটি বাঁধ থেকে পানি পাচ্ছেন৷ টিউনিশিয়ার প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ এই বাঁধের ফলে উপকৃত হচ্ছেন৷ তবে মানুষ বুঝতে পারছে, যে পানির পরিমাণ কমে চলেছে৷ পাম্পের সাহায্যে সেই পানি আনতে হচ্ছে৷ সেইসঙ্গে বৃষ্টির পরিমাণও কমছে৷ গত চার বছরে যথেষ্ট বৃষ্টি হয় নি৷ মানফ্রেড মাৎস বলেন, ‘‘আরও বাঁধ গড়ে তোলার লক্ষ্যে স্ট্র্যাটিজি বা নির্দিষ্ট কৌশলের প্রয়োজন৷ শুধু পানির স্থানান্তরের জন্য একটি বাঁধের প্রয়োজন৷ তাছাড়া গোটা অঞ্চলের জন্যও স্ট্র্যাটিজি প্রয়োজন, যেখানে এখন শুধু বৃষ্টির পানি রয়েছে৷ পানি সাশ্রয়ের জন্যও এক মৌলিক স্ট্র্যাটিজি থাকা উচিত৷ টিউনিশিয়ার মানুষকে বুঝতে হবে, যে আগের তুলনায় অনেক ভেবেচিন্তে পানি ব্যবহার করতে হবে৷’’
পানি সংকটের নানা দিক
শেরিফ শেবাইবির মতো যে সব চাষি এতকাল ভাবতেন যে তাদের কাছে যথেষ্ট পানি রয়েছে, তাদের উপর চাপ বাড়ছে৷ এর মধ্যে অনেক জায়গায় পানি চুরির ঘটনাও ঘটছে৷ শেরিফ বলেন, ‘‘ভূগর্ভস্থ পানি একেবারে কমে গেছে৷ দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রণালয় প্রতি বছর পরিমাপ করছে৷ পানির স্তর নেমেই চলেছে৷ এছাড়া আশেপাশে ৩৫টি বেআইনি কুয়া রয়েছে৷ সরকারি অনুমতি নিয়ে মাত্র চারটি কুয়া তৈরি হয়েছে৷ অবশ্যই সেটা ভালো নয়৷’’
গোটা দেশে আনুমানিক ২০,০০০ বেআইনি কুয়া রয়েছে৷ সে কারণে পানি সম্পর্কে সচেতনতা এত গুরুত্বপূর্ণ৷ এমন সচেতনতা সৃষ্টি না হলে ভবিষ্যতে চাষিরা সম্ভবত আর তাদের গবাদি পশু নিয়ে পাহাড়ি অঞ্চলে থাকতে পারবেন না৷ তখন গোটা অঞ্চল হয়তো জনমানবশূন্য হয়ে পড়বে৷
হাইনরিশমান/ডালালি/এসবি
৯ জানুয়ারির ছবিঘরটি দেখুন..
পানি বাঁচাতে অস্ট্রেলিয়ায় ১০ হাজার উট হত্যা
পাঁচ দিন ধরে দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ায় প্রায় ১০ হাজার উট হত্যা করছে অস্ট্রেলিয়া৷ চলমান দাবানলের কারণে নিজেদের আবাসস্থল ছেড়ে আদিবাসীদের শহরে চলে আসছে উটের দল৷ এ অবস্থা ঠেকাতে নেয়া হয়েছে এ সিদ্ধান্ত৷
ছবি: Imago Images/Nature Picture Library
আদিবাসী এলাকা
দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার এপিওয়াই এলাকাটিতে প্রায় ২,৩০০ আদিবাসীর বাস৷ অস্ট্রেলিয়ায় চলমান দাবানল এখনো শহরটি থেকে বেশ কিছুটা দূরে৷ কিন্তু আগুন যেভাবে ছড়াচ্ছে, তাতে এই এলাকাও বেশিদিন নিরাপদ নয়৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/U. Preuss
কেন এ সিদ্ধান্ত
দাবানলের কারণে উটের পালের স্বাভাবিক বাসস্থানে দেখা দিয়েছে পানির সংকট৷ ফলে বিপুল সংখ্যক উট শহরের দিকে চলে আসছে, আদিবাসীদের পানি এবং খাবারে হামলা চালাচ্ছে৷ কোথাও কোথাও উটের মরদেহ পানি দূষিত করে ফেলছে৷
ছবি: Imago Images/UIG/N. Rains
উটের সংখ্যা
ধারণা করা হয় বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বুনো উটের আবাসস্থল অস্ট্রেলিয়া৷ সঠিক সংখ্যা জানা না থাকলেও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যবর্তী মরু এলাকায় প্রায় ১০ লাখ উট ঘুরে বেড়ায় বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের৷
ছবি: Getty Images/E. Shaw
অস্ট্রেলিয়ায় যেভাবে এলো উট
উট অস্ট্রেলিয়ার প্রাণী না৷ ফলে এ অঞ্চলে উটের কোনো স্বাভাবিক খাবারও নেই৷ একসময় ব্রিটিশ উপনিবেশ ছিল অস্ট্রেলিয়া৷ তখনই আফ্রিকায় ব্রিটিশ উপনিবেশ বর্তমানে স্বঘোষিত সোমালিল্যান্ড থেকে উট সেখানে নিয়ে যাওয়া হয় বলে মনে করা হয়৷ কেউ কেউ ভারত, আফগানিস্তান বা মধ্যপ্রাচ্য থেকে অস্ট্রেলিয়ায় উট নেয়া হয়েছে বলেও মনে করেন৷
ছবি: Imago Images/blickwinkel
কিভাবে চলছে অভিযান
হেলিকপ্টার থেকে স্নাইপার দিয়ে গুলি করে মারা হচ্ছে বুনো উট৷ প্রথম দিনে প্রায় দেড় হাজার উট মারা হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ৷ তবে এ প্রক্রিয়ায় উটকে কোনো কষ্ট দেয়া হচ্ছে না বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের৷ প্রশিক্ষিত স্নাইপারদের সহায়তা করছেন পরিবেশ বিভাগের কর্মকর্তারা৷
ছবি: Imago/B. Xuefei
সোমালিল্যান্ডের ক্ষোভ
অস্ট্রেলিয়ার এমন পদক্ষেপকে ‘নির্মম’ বলে আখ্যা দিয়েছে আফ্রিকার সোমালি উট পালক সমিতি৷ উট হত্যা না করে বরং তাদের যেখান থেকে নেয়া হয়েছিল, সেখানে ফিরিয়ে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সমিতির চেয়ারম্যান মোস্তাফে কালি দিক৷