সরকারি অফিসে নিকাব পড়া নিষিদ্ধ করেছে টিউনিশিয়া৷ উত্তর আফ্রিকার দেশটিতে বেশ কিছু সন্ত্রাসী ও জঙ্গি হামলার পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী এ সিদ্ধান্ত নেয়ার ঘোষণা দেন৷
বিজ্ঞাপন
টিউনিস প্রধানমন্ত্রী ইউসেফ চাহেদ শুক্রবার এই সরকারি বিবৃতিতে সাক্ষর করেন৷ বিবৃতিতে ‘‘মুখ ঢাকা কোনো ধরনের পোশাক পড়ে সরকারি অফিস ও প্রতিষ্ঠানে প্রবেশে'' নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে৷ মুসলিম নারীদের বিশেষ এক ধরনের পোশাক নিকাব, যাতে শুধু চোখ ছাড়া বাকি পুরো মুখ ঢাকা থাকে৷
২৭ জুন দুটি আত্মঘাতি বোমা হামলায় দুজন মারা যান এবং আরো বেশ কয়েকজন আহত হন৷ এর পরপরই এই নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা এলো৷ আর আগে গত বছরের অক্টোবরে রাজধানী টিউনিসের পাশে মুখ ঢাকা এক নারীর আত্মঘাতি হামলায় পুলিশ সদস্যসহ অনেকে আহত হন৷
দেশটির সরকার আশঙ্কা করছে, অনেকেই ছদ্মবেশ ধারণ করে বিচারের হাত থেকে বাঁচতে এ ধরনের পর্দা ব্যবহার করতে পারে৷
তবে নিকাব নিষিদ্ধের এ সিদ্ধান্তটিতে রাজধানী টিউনিসে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে৷ কেউ কেউ সন্ত্রাসী হামলার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার রয়েছে বললেও অনেকে এমন সিদ্ধান্তকে দেখছেন ব্যক্তিগত স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ হিসেবে৷
দেশটির লিগ ফর দ্য ডিফেন্স অফ হিউম্যান রাইটস অবশ্য বলছে, এটি একটি সাময়িক ব্যবস্থা৷ সংস্থাটির প্রেসিডেন্ট জামেল এমসালেম জানিয়েছেন, ‘‘পোশাকে ব্যক্তিগত পছন্দের পক্ষে আমরা৷ কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে এবং জঙ্গি হামলার হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে আমরা এ সিদ্ধান্তকে যৌক্তিক মনে করছি৷''
কয়েক দশক ধরে স্বৈরশাসক জাইন আল আবেদীন বেন আলীর শাসনামলে প্রকাশ্য়ে কোনো ধরনের ধর্মীয় পোশাক পড়ার ব্যাপারে বিধিনিষেধ ছিল৷ ২০১১ সালে এক গণঅভ্যূত্থানে তার পতনের পর প্রকাশ্যে হিজাব ও নেকাব পড়ার অনুমতি পান টিউনিশিয়ার নারীরা৷
কিন্তু এখন বিভিন্ন হামলায় মুখ ঢাকা পোশাক পড়া নারীরে জড়িত থাকার অভিযোগের মধ্যে আবার জোরেশোরে উঠতে শুরু করেছে এমন দাবি৷
যেসব দেশে বোরকা নিষিদ্ধ, যেখানে চলেছে আলোচনা
ইউরোপের বেশ কিছু দেশে বোরকা ও নেকাব নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ কিছু কিছু দেশে আবার পুরো মুখ ঢাকা বোরকা নিষিদ্ধ করা নিয়ে চলছে আলাপ-আলোচনা৷ প্রশ্ন উঠেছে, ধর্মীয় স্বাধীনতা না থাকায় এসব অঞ্চলে কি জঙ্গি তৎপরতা বাড়ছে?
ছবি: CLAUDE PARIS/AP/dapd
ফ্রান্স
ফ্রান্স ইউরোপের প্রথম দেশ, যেখানে বোরকা আইন করে নিষিদ্ধ করা হয়৷ ফ্রান্সে ৫০ লাখ মুসলমানের বাস৷ ২০১১ সালের ১১ এপ্রিল এই আইন কার্যকর হয়৷ বোরকা বা নেকাব পড়লে জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে আইনে৷
ছবি: Getty Images
বেলজিয়াম
২০১১ সালের জুলাইয়ে বেলজিয়ামেও নেকাব নিষিদ্ধ হয়৷ অর্থাৎ কোনো নারী তার পুরো মুখ কাপড়ে ঢেকে রাখতে পারবে না৷
ছবি: AP
নেদারল্যান্ডস
নেদারল্যান্ডসে ২০১৫ সালে আইন করে বোরকা নিষিদ্ধ করা হয়৷ বিশেষ করে জনসমক্ষে, অর্থাৎ স্কুল, হাসপাতাল ইত্যাদির মতো জায়গায বোরকা ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে৷
ছবি: AP
স্পেন
পুরো স্পেনে নয়, বার্সেলোনা শহর কর্তৃপক্ষ সেখানে বোরকা নিষিদ্ধ করেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ব্রিটেন
ব্রিটেনে প্রচুর মুসলিমের বাস, তাই সেখানে কোনো ইসলামি পোশাকের ওপর নিষেধাজ্ঞা নেই৷ তবে স্কুলগুলোতে নির্দিষ্ট পোশাক পরতে হয়৷ ২০০৭ সালে বেশ কয়েকটি মামলার পর স্কুল কর্তৃপক্ষ ঠিক করে, স্কুলে কেউ বোরকা বা নেকাব পরতে পারবে না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Jensen
সুইজারল্যান্ড
২০১৩ সালে সুইজারল্যান্ডের ইটালীয় ভাষাভাষীদের এলাকা টিসিনোতে বোরকা নিষিদ্ধের ওপর ভোট হয়৷ নিষিদ্ধ করার পক্ষে পড়ে ৬৫ শতাংশ ভোট৷ এরপর ২৬টি শহরে বোরকা নিষিদ্ধ হয়৷ চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে লুগানো, লোকারনো, মাগাদিনোসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় বোরকা নিষিদ্ধ হয়৷ কেউ জনসমক্ষে বোরকা পড়লে ৯ হাজার ২০০ ইউরো পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে তাঁর৷
ছবি: imago/Geisser
ইটালি
ইটালির বেশ কয়েকটি শহরে নেকাব নিষিদ্ধ৷ উত্তর পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর নোভারা কর্তৃপক্ষ সেখানে আইন করে বোরকা নিষিদ্ধ করেছে৷ ৭০-এর দশকেই মুখ ঢেকে রাখা সব ধরনের ইসলামিক পোশাকের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে ইটালি৷
ছবি: picture alliance/dpa/Rolf Haid
অস্ট্রিয়া
দেশটির ক্ষমতাসীন জোট সরকার প্রকাশ্য স্থানে পুরো মুখ ঢাকা নিকাব নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে একমত হয়েছে৷ স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালতে নিকাব পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে একমত হয়েছে সরকারের শরিক দলগুলোও৷ এছাড়া যাঁরা সরকারি চাকরি করেন, তাঁদের মাথায় স্কার্ফ, হিজাব কিংবা অন্যান্য ধর্মীয় প্রতীক পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথাও বিবেচনা করছে সরকার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Roessler
জার্মানি
জার্মানির রক্ষণশীল রাজনীতিকদের মধ্যে বোরকা নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছে৷ সিডিইউ দলের একাধিক রাজনীতিক স্কুল, সরকারি অফিস, আদালতকক্ষ ও গাড়ি চালানোর সময় বোরকা ও গোটা মুখ ঢাকা নিকাব পরা নিষিদ্ধ করতে চান৷ সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, প্রায় তিন-চতুর্থাংশ জার্মানও প্রকাশ্যে বোরকাধারী মহিলাদের দেখতে নারাজ৷ এমনকি সম্প্রতি চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলও পুরো মুখ ঢাকা নিকাব নিষিদ্ধ করার পক্ষ তাঁর সায় দিয়েছেন৷