টিএনএজদের নিয়োগ দেয়া নিয়ে বিপাকে জার্মান সেনাবাহিনী
২৬ নভেম্বর ২০১৬
জার্মানির সামরিক বাহিনী বুন্ডেসভের চলতি বছর আঠারো বছরের কম বয়সিদের কাছে দশ লাখের বেশি নিয়োগ প্রচারপত্র পাঠিয়েছে৷ অধিকার বিষয়ক সংগঠন এবং বিরোধী দলের এমপিরা এই ঘটনায় বেশ চটেছেন৷
বিজ্ঞাপন
নিজের ১৬ বছর বয়সি মেয়ে জার্মান সামরিক বাহিনীর কাছ থেকে ডাকে নিয়োগপত্র পাওয়ার পর বেজায় চটেছেন একজন জার্মান এমপি৷ এর আগে জাতিসংঘ অল্পবয়সিদের কাছে বুন্ডেসভেরের বিজ্ঞাপন প্রচারের নীতির সমালোচনা করেছিল৷ গ্রিন পার্টির নেতা ও্যজকান মুতলু ‘টাৎস' পত্রিকাকে এই বিষয়ে বলেন, ‘‘এটা কলঙ্কজনক যে অপ্রাপ্তবয়স্কদের টার্গেট করা হচ্ছে৷ আমার মতে, এটা প্রভাব তৈরির এক অগ্রহণযোগ্য উপায়৷''
পত্রিকাটিতে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী প্রচারপত্রে লেখা হয়েছিল, ‘‘আপনি ইতোমধ্যে জানেন আপনি কোথায় পৌঁছাতে চান? তাহলে নির্দিষ্ট মেয়াদের সৈনিক হিসেবে যোগ দিন! আমাদের সমাজে এবং আমাদের নিরাপত্তায় নিজেকে সম্পৃক্ত করার যোগ্যতা অর্জনে এটাই হচ্ছে সম্ভাব্য সর্বোত্তম উপায়৷''
প্রচারপত্রে সঙ্গে বেশ কিছু ছবিও যোগ করা হয়েছে যেখানে জার্মানির সশস্ত্র বাহিনীর বিভিন্ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরা হয়েছে৷ পাশাপাশি প্রাথমিক ট্রেনিং শুরুর সময় মাসিক বেতন ৮৩৭,৩০ ইউরো বলেও উল্লেখ করা হয়েছে৷ এই বিষয়ে মুতলু বলেন, ‘‘চিঠিটিতে পরিষ্কারভাবে বুন্ডেসভেরের বিজ্ঞাপন করা হয়েছে৷ কিন্তু অপ্রাপ্তবয়স্ক অল্পবয়সিদের নিরাপত্তা প্রয়োজন৷''
আফগানিস্তানে জার্মান সেনা
এক্ষুনি আফগানিস্তান থেকে ফিরছে না জার্মান সেনারা৷ আফগানদের নিরাপত্তার স্বার্থেই সেনা সদস্যদের আরো কিছুদিন সেখানে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জার্মানি৷ ছবিঘরে থাকছে আফগানিস্তানে জার্মান সেনাদের অবদান ও তৎপরতা নিয়ে কিছু তথ্য৷
ছবি: picture alliance / JOKER
যেখানে প্রশিক্ষণ দেয় জার্মানরা
এই ক্যাম্প মারমালেই আফগান সেনাদের প্রশিক্ষণ দেয় জার্মান সেনাবাহিনীর সদস্যরা৷ এই মুহূর্তে ৬৫০ জন জার্মান সেনাসদস্য সেখানে প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Gambarini
শুরু যেভাবে
২০০২ সালের ১১ই জানুয়ারি আফগানিস্তানে প্রথম দফা সৈন্য পাঠায় জার্মানি৷ সেবার ৭০ জন সেনা সদস্যকে কাবুলে পাঠিয়েছিল জার্মান সরকার৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সেই প্রথম ইউরোপের বাইরে যায় জার্মানির সৈন্য৷ আফগানিস্তানে এক সময় জার্মান সৈন্যের সংখ্যা বেড়ে ৫৩৫০ হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আফগানিস্তানে জার্মান সেনাদের অবদান
এই মুহূর্তে মোট ৮৭০ জন জার্মান সেনা আছে আফগানিস্তানে৷ তাঁদের মূল কাজ আফগান পুলিশ এবং সেনা সদস্যদের সামরিক প্রশিক্ষণ দেয়া৷ ২০১৪ সাল পর্যন্ত ৬০ হাজারের চেয়েও বেশি আফগান পুলিশ ও সেনা সদস্য সামরিক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন৷
ছবি: AFP/Getty Images/J. Eisele
প্রথম নিহত জার্মান সেনা
২০০২ সালের মার্চ মাসে কাবুলে এক বোমা হামলায় দু’জন জার্মান এবং তিনজন ডেনিশ সৈন্য মারা যায়৷ ওই দু’জনই আফগানিস্তানে প্রাণ দেয়া প্রথম জার্মান সৈন্য৷ তারপর অবশ্য মৃতের সংখ্যা বেড়েছে৷ এ পর্যন্ত মোট ৫৫ জন জার্মান সেনা মারা গেছেন আফগানিস্তানে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
উন্নয়ন কাজে জার্মানি
সেনা প্রশিক্ষণের পাশাপাশি অন্য কিছু উন্নয়ন কর্মেও ভূমিকা রাখছে জার্মানি৷ বিদেশি সেনা প্রত্যাহার শুরুর পর থেকে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সুযোগ এবং প্রয়োজন আরো বেড়েছে৷
ছবি: picture-alliance/Joker
আফগানিস্তানে জার্মান সেনাবাহিনীর কালো অধ্যায়
২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে দু’টি তেলের ট্রাক তালেবান দখল করে নিয়েছে শুনে জার্মান সেনাদের কুন্দুসে বিমান হামলা চালানোর নির্দেশ দেন কর্নেল গেওর্গ ক্লাইন৷ সেই হামলায় ৯১ জন সাধারণ নাগরিক মারা যায়৷
ছবি: DW/M. Saifullah
6 ছবি1 | 6
জার্মান সরকারের কাছ থেকে এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক এক প্রশ্নের জবাবে গ্রিন পার্টির এমপি জানতে পারেন, তাঁর মেয়েকে যে প্রচারপত্রটি পাঠানো হয়েছে সেটি চলতি বছর পাঠানো ১,০৩৩,০৪৩টি প্রচারপত্রের একটি৷
জার্মান সেনবাহিনীর টিনএজদের প্রতি এই আগ্রহ অনেকের চোখে পড়েছে৷ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সামরিক বাহিনী নিয়োগ দেয়ার জন্য উপযুক্ত প্রার্থী পাওয়ার ব্যাপারটি ক্রমশ দুরুহ হয়ে উঠছে৷ ১৮ বছর বয়সি নিয়োগ উপযোগীদের সংখ্যাও আগামী বছরগুলোতে কমে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে৷ জাতিসংঘ বিষয়টির সমালোচনা করে বলেছে, সেনাবিহিনী কিছুক্ষেত্রে শিশুদের লক্ষ্য করে প্রচারণা চালাচ্ছে, এমনকি তাদের প্রতিনিধিরা স্কুলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলছে এবং বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে৷
জাতিসংঘ এ ধরনের উদ্যোগ আইন করে বন্ধ করতে জার্মান সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, যদিও তাতে এখনো কোনো সাড়া মেলেনি৷ তবে জার্মানির বিভিন্ন স্কুলে ‘লেকচার' দেয়া এক সেনাসদস্য দাবি করেছেন, তাদের কাজের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা রয়েছে৷ তিনি বলেন, ‘‘স্কুলের শিক্ষার্থীদের বুন্ডেসভেরে যোগ দেয়া বা জার্মান সরকারের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে আমরা কোনো কথা বলি না৷''
বেন নাইট/এআই
জার্মান সেনাবাহিনীতে যত ত্রুটিপূর্ণ যন্ত্রপাতি
জার্মান সেনাবাহিনীতে প্রায় প্রতিদিনই হয় যুদ্ধবিমান, না হয় হেলিকপ্টার বা অন্য কিছুর সমস্যা দেখা দেয়৷ সেসব কথাই জানা যাবে ছবিঘরে৷
ছবি: AFP/Getty Images
ইউরোফাইটার
জার্মানি সবচেয়ে আধুনিক ফাইটার জেট এটি৷ নাম ইউরোফাইটার৷ তবে নির্মাণকালীন সময়ে ত্রুটির কারণে এই জেটের উড্ডয়ন-ঘণ্টা তিন হাজার থেকে কমে অর্ধেক, অর্থাৎ দেড় হাজার হয়ে গেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
টর্নেডো ফাইটার ও পরিবহণ বিমান
জার্মান সেনাবাহিনী প্রায় ৪০ বছর ধরে টর্নেডো ফাইটার ব্যবহার করে আসছে৷ বর্তমানে এরকম ৮৯টি ফাইটারের মধ্যে মাত্র ৩৮টি চালু আছে৷ ট্রানজাল সি-১৬০ পরিবহণ বিমানের একই পরিণতি হয়েছে৷ ৫৭টি বিমানের মধ্যে এখন মাত্র ২৫টি ব্যবহারের যোগ্য৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Udo Zander
ত্রুটিপূর্ণ হেলিকপ্টার
৩১টি আধুনিক টাইগার হেলিকপ্টারের মধ্যে মাত্র ১০টি এখন আকাশে উড়তে পারে৷ আর ২২টি ‘সি লিংক্স অ্যান্টি-সাবমেরিন হেলিকপ্টার’ এর মধ্যে এখন মাত্র চারটি ব্যবহারযোগ্য অবস্থায় আছে৷ এনএইচ৩০ এবং সিএইচ৫৩ পরিবহণ কপ্টারেরও একই অবস্থা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Carsten Rehder
ট্যাংক
জার্মান সেনাবাহিনীতে একসময় ১৮৯টি ‘বক্সার’ ট্যাংক ছিল৷ এখন সংখ্যাটা কমে দাঁড়িয়েছে ৭০-এ৷ আর ১৯৭১ সাল থেকে ব্যবহৃত হওয়া ‘মার্ডার’ এপিসি-র (আর্মার্ড পারসোনেল ক্যারিয়ার) সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে৷
ছবি: Johannes Eisele/AFP/Getty Images
সাগরে সমস্যা
২০০১ সালের ডিসেম্বরে পাঁচটি ‘কে১৩০’ করভেটে কেনার সিদ্ধান্ত নেয় জার্মান সেনাবাহিনী৷ ২০০৭ সাল থেকে সেগুলো ব্যবহারের কথা ছিল৷ কিন্তু ত্রুটিপূর্ণ গিয়ার, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ও সফটওয়্যারের কারণে নির্ধারিত সময়ে সেগুলোর ব্যবহার শুরু করা যায়নি৷ তারপর যখন শুরু হলো, তখন পাঁচটির মধ্যে মাত্র দুটি তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবহারযোগ্য ছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
প্রতিরক্ষামন্ত্রীর জন্য চ্যালেঞ্জ
২০১৩ সালের শেষের দিকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন উর্সুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন৷ দায়িত্ব নেয়ার পর তাঁর জন্য প্রথন চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হয় এসব ত্রুটিপূর্ণ যন্ত্রপাতি৷ এজন্য অবশ্য সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রীরা দায়ী৷ কারণ তাঁরাই খুচরা যন্ত্রাংশের জন্য অর্থ বরাদ্দ কমিয়েছিলেন৷