জার্মানির চ্যান্সেলর শলৎস, তার ডেপুটি হাবেকের তুলনায় এএফডি নেতাদের ফলোয়ারের সংখ্যা বেশি।
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার প্রকাশিত সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, জার্মানির পার্লামেন্টে যতগুলি দল আছে, তার মধ্যে টিকটক ব্যবহারের ক্ষেত্রে অতি-দক্ষিণপন্থি অলটারনেটিভ ফর জার্মানি বা এএফডি সবচেয়ে এগিয়ে।
অ্যান ফ্র্যাঙ্ক এডুকেশনাল সেন্টার এই সমীক্ষাটি করেছে। সংস্থার ডিরেক্টর স্নাবেল জানিয়েছেন, ''টিকটকে খোলাখুলিভাবে অতি-দক্ষিণপন্থি প্রতীক ও কোড ব্যবহার করা হচ্ছে। এই ধরনের বিষয় বারবার এএফডির নেতারাই দিচ্ছেন।''
এএফডি দলের নেতা অ্যালিস ভাইডেলটিকটকে প্রথম পাঁচ রাজনৈতিক ইনফ্লুয়েন্সারের মধ্যে আছেন। পূর্ব জার্মানির এএফডি নেতা উলরিখ সিগমুন্ড এক নম্বরে আছেন। তার ফলোয়ারের সংখ্যা চার লাখ।
জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসের ফলোয়ার সংখ্যা দুই লাখ ৬০ হাজার। তার ডেপুটি হাবেকের ফলোয়ার ৩০ হাজারের কম।
'সমান্তরাল বিশ্ব'
৬২ পাতার এই সমীক্ষায় বলা হয়েছে, এএফডি রাজনীতিকরা এবং চরম দক্ষিণপন্থিরা এই সামাজিক মাধ্যমকে তাদের মতাদর্শ প্রচারের ক্ষেত্রে একটা সমান্তরাল বিশ্ব হিসাবে ব্যবহার করেছে।
জার্মানির এএফডি নেতাদের কয়েকটি আলোচিত মন্তব্য
জার্মানির অভিবাসনবিরোধী অতি-ডানপন্থি এএফডি দলের নেতারা আক্রমণাত্মক ও উদ্ভট মন্তব্যের জন্য পরিচিত৷ ছবিঘরে এমন কয়েকজনের মন্তব্য থাকছে৷
ছবি: Britta Pedersen/dpa/picture alliance
বিয়র্ন হ্যোকে
টুরিঙ্গিয়া রাজ্যের এএফডি প্রধান হ্যোকে ২০১৭ সালে বার্লিনের হলোকস্ট মেমোরিয়ালকে ‘মনুমেন্ট অফ শেম’, অর্থাৎ ‘লজ্জার স্মৃতিসৌধ’ বলে আখ্যায়িত করে প্রথমবারের মতো শিরোনামে এসেছিলেন৷ নাৎসি অতীত নিয়ে প্রায়শ্চিত্ত করা বন্ধ করতেও বলেন তিনি৷ এরপর ২০২৩ সালে তিনি বলেন, ‘‘এই ইইউকে অবশ্যই মরতে হবে যেন সত্যিকারের ইউরোপ বাঁচতে পারে৷’’ ২০১৯ সালে আদালত বলেছিল, হ্যোকেকে ফ্যাসিস্ট বলা হলে সেটা অপবাদ দেওয়া হবে না৷
ছবি: picture-alliance/Arifoto Ug/Candy Welz
আলিস ভাইডেল
এএফডির অন্যতম পরিচিত মুখ দলের কো-চেয়ার ভাইডেল ২০১৮ সালে জার্মান সংসদে বলেছিলেন, ‘‘বোরকা, হেডস্কার্ফ পরা মেয়ে, ছুরি নিয়ে চলা মানুষ ও অলসেরা আমাদের সমৃদ্ধি, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সামাজিক রাষ্ট্রের সুফল পাবে না৷’’
ছবি: Sebastian Kahnert/dpa/picture-alliance
আলেক্সান্ডার গাউলান্ড
এএফডির সাবেক সংসদীয় নেতা গাউলান্ড ২০১৮ সালে দলের তরুণ সদস্যদের সামনে দেওয়া এক বক্তব্যে বলেছিলেন, জার্মানির একটি দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে যেটা (হিটলারের) ১২ বছরের শাসনামলের চেয়ে বেশিদিন টিকে ছিল৷ ‘‘জার্মানির এক হাজারেরও বেশি বছরের সফল ইতিহাসে হিটলার আর নাৎসিরা পাখির বিষ্ঠার দাগ মাত্র,’’ বলেন তিনি৷
ক্রিস্টিয়ান ল্যুথ
বিতর্কিত মন্তব্য করে কয়েকবার পদ অবনমন হয়েছে সাবেক প্রেস অফিসার ল্যুথের৷ এরপরও তিনি ডানপন্থি এক ইউটিউব ব্লগারকে বলেছিলেন, ‘‘আমরা পরেও তাদের (অভিবাসীদের) গুলি করতে পারব, সেটা কোনো বিষয় নয়৷ বা গ্যাস দিতে পারব৷ আমার কাছে এটা কোনো বিষয় নয়৷
ছবি: Soeren Stache/dpa/picture-alliance
বেয়াট্রিক্স ফন স্টর্শ
ইউরোপীয় এই সাংসদ ২০১৬ সালে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘‘যারা আমাদের সীমান্তে দেয়া বাধা মানবে না, তারা আসলে হামলাকারী৷ তাদের বিরুদ্ধে নিজেদের রক্ষা করতে হবে- সেটি নারী ও শিশুদের গুলি করে হলেও৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Murat
ফ্রাউকে পেট্রি
২০১৬ সালে জার্মানির একটি আঞ্চলিক পত্রিকাকে এএফডির সেই সময়কার প্রধান পেট্রি বলেছিলেন, ‘‘অবৈধভাবে জার্মানিতে প্রবেশকারী শরণার্থীদের দিকে জার্মানির বর্ডার পুলিশের গুলি ছোড়া উচিত৷’’
ছবি: Getty Images/T. Lohnes
হারাল্ড ভায়এল
বুন্ডেসটাগ সদস্য ভায়এল ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে বলেছিলেন, তিনি আশা করছেন জার্মানিতে যেন ‘অনেক শীত’ পড়ে৷ তাহলে জ্বালানির জন্য অনেক খরচ হবে৷ ‘‘তা নাহলে সবকিছু এখন যেভাবে চলছে সেভাবেই চলতে থাকবে,’’ বলেন তিনি৷ অবশ্য এই কথা বলার সময় যে তার মাইক্রোফোন অন ছিল সেটি তিনি বুঝতে পারেননি৷
ছবি: Christoph Hardt /Future Image/imago images
7 ছবি1 | 7
সংস্থার ডিরেক্টর স্নাবেল জানিয়েছেন, ''টিকটকে এএফডি নিজেদের যুবদের মুখপাত্র হিসাবে নিজেদের তুলে ধরেছে। অন্য দলগুলির কাছে এর কোনো জবাব নেই।''
এএফডি নেতারা টিকটকে যা দেখান তা অনেক সময়ই স্বতঃস্ফূর্ত ও মজার হয়। গত এপ্রিলে প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, ১৪ থেকে ২৯ বছর বয়সিদের পছন্দের দল হলো এএফডি।
অন্য দল টিকটকে দুর্বল
এসপিডি-র সেক্রেটারি জেনারেল কেভিন কুনার্টের টিকটকে ফলোয়ারের সংখ্যা ১১ হাজার। আর এএফডি-র পার্লামেন্ট সদস্য সেবাস্তিয়ান মুনসেনমাইয়ারের ফলোয়ারের সংখ্যা ৮০ হাজার।
প্রচুর রাজনীতিক ও সরকারে থাকা মানুষের টিকটক অ্যাকাউন্ট আছে। স্নাবেল জানিয়েছেন, তাদের যোগাযেগের কৌশল বদলাতে হবে।
তিনি বলেছেন, ''টিকটকে শিক্ষামূলক ও পরিস্থিতির ব্যাখ্যা সংক্রান্ত ভিডিও পোস্ট করা যথেষ্ট নয়। তরণ ও যুবদের চাহিদা মেটাতে হবে। স্কুলে মিডিয়া স্কিল ও রাজনৈতিক শিক্ষাকে গুরুত্ব দিতে হবে।''