হেনড্রিক স্ট্রিক জার্মানির অন্যতম শীর্ষ ভাইরোলোজিস্ট বা সংক্রমণ বিশেষজ্ঞ৷ তার মতে, জার্মান মন্ত্রীর সাম্প্রতিক করোনা বিষয়ক মন্তব্য বাস্তবের সাথে সাংঘর্ষিক৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির বন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি ইনস্টিটিউটের পরিচালক প্রফেসর হেনড্রিক স্ট্রিক৷ সোমবার ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়েনস স্পানের করোনা বিষয়ক মন্তব্যের সাথে তিনি সম্পূর্ণ দ্বিমত পোষণ করেন৷
সোমবার একটি সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী বলেন, ‘‘কিছুটা নিষ্ঠুর শোনালেও, হয়তো এই শীত শেষ হবার সাথে সাথেই জার্মানির সবাই হয় টিকা পাবেন, বা করোনা থেকে সেরে উঠবেন, বা করোনায় মারা যাবেন৷''
বর্তমানে জার্মানি লড়ছে করোনা সংক্রমণের চতুর্থ ও সবচেয়ে বেশি প্রকট ঢেউয়ের বিরুদ্ধে৷ সোমবার একদিনে নতুন সংক্রমণের সংখ্যা ছিল ৩০ হাজার ৬৪৩৷ পাশাপাশি, হাসপাতালের আইসিইউগুলি দ্রুত ভরে উঠচে রোগীতে, যা এর আগের বছর এভাবে দেখা যায়নি৷
‘করোনাএভাবেবাড়েনা'
স্পানের মন্তব্যের সাথে করোনা ভাইরাসের বাস্তবিক চলনের কোনো মিল নেই বলে মনে করেন স্ট্রিক৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি একমত যে বর্তমান পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক৷ কিন্তু আমি মনে করিনা যে আসন্ন শীতের মধ্যে সবাই টিকা পাবেন বা করোনা থেকে সেরে উঠবেন বা মারা যাবেন৷ তা হলে তো এই ভাইরাস সারা দেশে প্রত্যেকের ঘরে ঘরে গিয়ে পৌঁছাবে৷''
জার্মানিতে করোনার চতু্র্থ ঢেউ
কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা এক লাখের কাছাকাছি৷ সংক্রমণের হার, দৈনিক মৃতের সংখ্যাও আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে জার্মানিতে৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব আসলে চতুর্থ ঢেউ আঘাত হানার ইঙ্গিত৷ ছবিঘরে বিস্তারিত...
ছবি: Philipp von Ditfurth/dpa/picture alliance
দৈনিক মৃত্যু বাড়ছে দ্রুত
ওপরের ছবিটি বন শহরের এক কবরস্থানের৷ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া স্ত্রীকে স্মরণ স্বামী৷ জার্মানির অনেক শহরেই এখন করোনায় মৃতের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে৷ রবার্ট কখ ইনস্টিটিউট (আরকেআই)- এর তথ্য অনুযায়ী, গত পহেলা অক্টোবর সারা দেশে করোনায় মারা গিয়েছিলেন ১৮ জন৷ ১৮ নভেম্বর সেই সংখ্যাটা বেড়ে হয়েছে ২০১ জন৷ একদিনে করোনায় সর্বোচ্চ মৃত্যুর নতুন রেকর্ড এটি৷
ছবি: Ute Grabowsky/photothek/imago images
কফিনেও সতর্কবার্তা
কবরস্থানে কফিনের সারি৷ একটি কফিনে জার্মান ভাষায় লেখা, ‘ইনফেকসিয়ন্সগেফার’, যার অর্থ ‘ইনফেকশনের ঝুঁকি’৷
ছবি: Robert Michael/dpa/picture alliance
ঝুঁকিতে বয়স্করা
ছবিতে এক ‘বৃদ্ধাশ্রমে’ একজনকে চিকিৎসাসেবা দেয়ার দৃশ্য৷ করোনায় বয়স্কদের প্রাণহানির শঙ্কা সবসময়ই বেশি৷ সাম্প্রতিক সময়ে বৃদ্ধাশ্রমে নতুন করে হানা দিয়েছে করোনা৷
ছবি: Jens Kalaene/dpa/picture alliance
শিশুরাও আক্রান্ত
জার্মানিতে শিশুরাও করোনায় সংক্রমিত হচ্ছে৷ পাঁচ থেকে ১৪ বছর বয়সিদের সংক্রমণের হার আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় তিনগুণ বেড়েছে৷ জার্মানির স্কুলে আগে থেকেই ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়মিত করোনা পরীক্ষা করানো হয়৷ এখন সব শিশুকে টিকা দেয়া শুরুর কথা ভাবা হচ্ছে৷
ছবি: Christian Charisius/dpa/picture alliance
আইসিইউ সংকট
লাইপসিশের এক হাসপাতালের আইসিইউতে করোনার চিকিৎসার দৃশ্য দেখা যাচ্ছে ওপরের ছবিতে৷ সংক্রমণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে রোগীর ভিড়ও বাড়ছে৷ আইসিইউ খালি পাওয়াও মুশকিল হয়ে যাচ্ছে অনেক হাসপাতালে৷
ছবি: Jan Woitas/dpa/picture alliance
কঠোর স্বাস্থ্যবিধি
হামবুর্গের এই স্টেশনের মতো জার্মানির সব শহরের গণপরিবহনে আবার ভিড় দেখা যাচ্ছে৷ তবে মাস্ক পরার পাশাপাশি স্বাস্থবিধির কঠোর অনুসরণও সবার জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে৷ দুই ডোজ টিকা নেয়া, করোনা পরীক্ষায় নেগেটিভ হওয়া কিংবা করোনা থেকে অতি সম্প্রতি সেরে ওঠা ব্যক্তিরাই কেবল ট্রেন, ট্রাম বা বাসে উঠতে পারেন৷
ছবি: Eibner/imago images
হোম অফিস
একটা সময় সংক্রমণ মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে চলে আসায় জার্মানিতে হোম অফিসের বাধ্যবাধকতা অনেক শিথিল করা হয়েছিল৷ কিন্তু ‘ফোর্থ ওয়েভ’-এর আশঙ্কা জাগতেই আবার নড়েচড়ে বসছে প্রশাসন৷ সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে ঘরে বসে কাজ করাকেই আবার অগ্রাধিকার দিচ্ছেন অনেকে৷৷
ছবি: Imago/S. Midzor
ক্রিসমাস মার্কেটে কঠোরতা
ওপরে ফ্রাইবুর্গ শহরের ক্রিসমাস মার্কেটের ছবি৷ স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে সীমিত সংখ্যক দর্শনার্থীর উপস্থিতিতে ক্রিসমাস মার্কেট চলছে সেখানে৷ জার্মানির বেশিরভাগ শহরেই এভাবে ক্রিসমাস মার্কেট বসেছে৷ তবে বাভারিয়া রাজ্য কর্তৃপক্ষ খুব কঠিন নিয়মে শুরু করেছে ক্রিসমাস মার্কেট৷ কোনো শহরে সপ্তাহে সংক্রমণ এক হাজার হবার সঙ্গে সঙ্গেই পুরো এলাকা লকডাউন করার সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে বাভারিয়া৷
ছবি: Philipp von Ditfurth/dpa/picture alliance
আবার বিনা পয়সায় করোনা পরীক্ষা
করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাওয়ায় সবাইকে নিজের খরচে করোনা পরীক্ষা করানোর কথা বলেছিল জার্মান সরকার৷ কিন্তু করোনার চতুর্থ ঢেউয়ের ইঙ্গিত দেখা দিতেই আবার বদলে গেছে নিয়ম৷ ফিরে এসেছে বিনে পয়সায় করোনা পরীক্ষা করানোর সুযোগ৷
ছবি: Julian Stratenschulte/dpa/picture alliance
9 ছবি1 | 9
এভাবে করোনা ভাইরাস কাজ করেনা বলে জানান তিনি৷ স্ট্রিকের মতে, ‘‘সংক্রমণের এই ঢেউ আকারে চলার অর্থ হচ্ছে যে ভাইরাসটি একটি সামাজিক গোষ্ঠী থেকে আরেকটি সামাজিক গোষ্ঠীতে ছড়ায়৷''
হেনড্রিক স্ট্রিক স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সাথে একমত যে, করোনা ঠেকাতে সবচেয়ে বেশি সুরক্ষা দিতে পারবে টিকাই৷ কিন্তু ২০২২ সালের বসন্তের আগেই অতিমারি শেষ হয়ে যাবে, তা মনে করেন না স্ট্রিক৷
তার বক্তব্য, ‘‘টিকাদানের হার না বাড়লে এই পরিস্থিতি আগামী শীতে ও তার পরের শীতেও বহাল থাকবে৷''
বাধ্যতামূলকটিকা?
করোনা ভাইরাসের টিকাকে দেশে বাধ্যতামূলক করার বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনা করতে হবে বলে মনে করেন স্ট্রিক৷ তার মতে, যদি টিকার কার্যক্ষমতা ছয়মাস পরে কমতে থাকে, সেক্ষেত্রে ‘‘একটা দীর্ঘ সময় ধরে বছরে দুবার করে টিকা নেওয়া বাধ্যতামূলক'' করতে হবে৷
অনিশ্চয়তা আর আতঙ্কের আবহে জার্মানির ক্রিসমাস মার্কেট
করোনা পরিস্থিতির অবনতির কারণে জার্মানির কিছু শহর বড়দিন উদযাপনের আনুষ্ঠানিকতা স্থগিত রেখেছে৷ ক্রিসমাস মার্কেট বসছে না সেসব শহরে৷ তবে অনেক শহরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বসছে ক্রিসমাস মার্কেট৷ ছবিঘরে বিস্তারিত...
ছবি: Robert Michael/dpa-Zentralbild/picture alliance
ন্যুরেমবার্গে হচ্ছে না
আগামী ২৬ নভেম্বর থেকে ন্যুরেমবার্গে ক্রিসমাস মার্কেট বসার কথা ছিল৷ তবে বাভারিয়ার করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে ওঠায় রাজ্যের অনেক শহরেই ক্রিসমাস মার্কেট এ বছরের জন্য বাতিল করা হয়েছে৷ ন্যুরেমবার্গও যোগ হয়েছে সেই তালিকায়৷
ছবি: Daniel Karmann/dpa/picture alliance
ড্রেসডেনের ‘স্ট্রাইৎসেলমার্কট’ও হচ্ছে না
ড্রেসডেন শহরের ৫৮৭তম স্ট্রাইৎসেলমার্কট গতকাল (২২ নভেম্বর) শুরু হওয়ার কথা ছিল৷ তবে করোনা ভাইরাসের প্রাদূর্ভাব থেকে মানুষকে রক্ষা করতে ঐতিহ্যবাহী এ আয়োজন এ বছরের জন্য বাতিল ঘোষণা করেছে নগর কর্তৃপক্ষ৷ স্যাক্সনি রাজ্যের সব ধরনের মেলার আয়োজনই আপাতত বন্ধ৷
ছবি: Sebastian Kahnert/dpa/picture alliance
বার্লিনে গেনডারমেনমার্ক্ট
বাভারিয়া এবং স্যাক্সনি রাজ্যের পথ ধরে বার্লিন কিন্তু এখনো ক্রিসমাস মার্কেট বন্ধের ঘোষণা দেয়নি৷ তাই ২২ নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে গেনডারমেনমার্ক্ট ক্রিসমাস মার্কেট৷ অবশ্য যারা টিকা নিয়েছেন অথবা একবার করোনায় ভুগে সেরে উঠেছেন, শুধু তারাই যেতে পারছেন সেখানে৷
ছবি: Paul Zinken/dpa/picture alliance
হাইডেলবার্গেও চলছে ক্রিসমাস মার্কেট
হাইডেলবার্গে আরো কঠিন নিয়মে শুরু করা হয়েছে ক্রিসমাস মার্কেট৷ ১৮ নভেম্বর থেকে ‘থ্রি-জি’ নিয়ম কড়াকড়িভাবে মেনে চলছে এ আয়োজন৷ জার্মান ভাষার তিনটি শব্দের সংক্ষিপ্তরূপ থ্রি-জি-র মানে টিকাপ্রাপ্ত, রোগমুক্ত এবং পরীক্ষিত৷ হ্যাঁ, টিকা নেয়া অথবা করোনায় ভুগে ওঠা ব্যক্তি হলেও যাওয়া যাচ্ছে না সেখানে, ঢোকার সময় তাদেরও করাতে হচ্ছে করোনা পরীক্ষা৷
ছবি: Bildagentur-online/Widmann/picture alliance
চলছে ডর্টমুন্ডের ক্রিসমাস বাজার
টু-জি নিয়মে, অর্থাৎ টিকাপ্রাপ্ত এবং করোনা থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তিদের প্রবেশের সুযোগ রেখে ডর্টমুন্ডের ক্রিসমাস বাজারও শুরু হয়েছে গত ১৮ নভেম্বর থেকে৷
ছবি: Peter Schickert/picture alliance
শেষ হলো কোলনবাসীর অপেক্ষা
কোলনেও গতকাল (২২ নভেম্বর) থেকে শুরু হয়েছে ক্রিসমাস মার্কেট৷ সেখানেও টু-জি নিয়ম মানতে হচ্ছে সবাইকে৷
ছবি: Jochen Tack/picture alliance
স্টুটগার্টে বাতিল
গতবছর না হওয়ায় স্টুটগার্টবাসীও এ বছর ক্রিসমাস মার্কেটের জন্য মুখিয়ে ছিল৷ কিন্তু মেয়র ফ্রাঙ্ক নোপার শেষ মুহূর্তে আয়োজনটি বাতিল ঘোষণা করেছেন৷
ছবি: Eibner-Pressefoto/picture alliance
হামবুর্গেও টু-জি
হামবুর্গের শ্পিলবুডেনপ্লাৎসে ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে ক্রিসমাস মার্কেট৷ সেখানেও মানা হচ্ছে টু-জি নিয়ম, অর্থাৎ কেবল টিকা নেয়া অথবা করোনা থেকে সেরে ওঠাদেরই দেয়া হচ্ছে সেখানে যাওয়ার সুযোগ৷
ছবি: Marcus Brandt/dpa/picture alliance
ট্রিয়ারের সেরা ক্রিসমাস মার্কেট
ট্রিয়ারের ক্রিসমাস মার্কেটকে ‘২০২১ সালে জার্মানির সেরা ক্রিসমাস মার্কেট’-এর স্বীকৃতি দিয়েছে ট্যুরিজম প্ল্যাটফর্ম ‘ইউরোপিয়ান বেস্ট ডেস্টিনেশন্স’৷ ১৯ নভেম্বর থেকে টু-জি নিয়মেই চলছে আয়োজন৷
ছবি: Harald Tittel/dpa/picture alliance
9 ছবি1 | 9
স্ট্রিক বলেন, ‘‘রাজনীতিকরা জনগণকে বাধ্যতামূলক টিকা না করার আশ্বাস দিয়ে এসেছেন৷ এখন যদি তা করা হয়, তাহলে সেটা সরকারের ওপর মানুষের আস্থা কমিয়ে আনবে৷'' বর্তমান পরিস্থিতিতে জনগণের সরকারের ও প্রশাসনের ওপর আস্থা থাকা জরুরি বলে মনে করেন স্ট্রিক৷
তবে, প্রথমসারির করোনা যোদ্ধাদের ক্ষেত্রে যদি টিকা নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয় ও তার ফলে গণহারে স্বাস্থ্যকর্মীরা চাকরি ছেড়ে দেন, তবে হিতে বিপরীত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্ট্রিক৷ দেশজুড়ে সংকট চলাকালীন ‘‘এমনটা হলে অনেকেই হয়তো বাধ্যতামূলক টিকা নেবার বদলে কাজ ছেড়ে দেবে'' বলে তার মত, যা এই সংকটকে আরো গভীর করে তুলতে পারে৷