টিকা আমদানিসহ করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় পাঁচ হাজার ৬৫৯ কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়িয়েছে বাংলাদেশ সরকার৷ এই সংক্রান্ত একটি প্রকল্পের মোট বরাদ্দের আকার বেড়ে হয়েছে ছয় হাজার ৭৮৬ কোটি ৫৯ লাখ টাকা৷
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার ‘কোভিড-১৯ রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস’ প্রকল্পটি সংশোধন করে অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি-একনেক৷ বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম এমন তথ্য জানিয়েছে৷ প্রকল্পে টিকা কেনা, পরিবহন, সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা খরচ মিলিয়ে চার হাজার ২৩৬ কোটি ৪২ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
একনেক পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘‘গত এপ্রিল মাসে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় জরুরি ভিত্তিতে ১ হাজার ১২৭ কোটি ৫২ লাখ টাকায় প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল৷ আজকের বৈঠকে অতিরিক্ত ৫ হাজার ৬৫৯ কোটি টাকা বাড়িয়ে সংশোধন করা হল৷’’
২০২০ সালকে যেভাবে মনে রাখবে ভবিষ্যৎ
ক্যালেন্ডার বদলানো আর আট-দশটা বছরের মতো নয় ২০২০৷ শুধু নিকট ভবিষ্যৎ নয়, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বারবার গল্প হয়ে ফিরবে সালটি৷ সেই গল্পের বিষয়বস্তুগুলো কী হতে পারে দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: Reuters/J. Malone
‘অজানা’ এক ভাইরাস এসেছিল
২০১৯ সালের শেষে চীনের হুবেই প্রদেশের উহানের মানুষেরা অজানা অসুখে ভুগতে শুরু করে৷ গণমাধ্যমে একটু-আধটু সেই খবর আসতে শুরু করলেও কে ভেবেছিল পরবর্তী এক বছর গোটা বিশ্বকে তা নাড়িয়ে দেবে! ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ সালে উহানের স্বাস্থ্য কমিশন নিউমোনিয়া ছড়িয়ে পড়ার কথা জানায়৷ পাঁচ জানুয়ারি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই সংক্রান্ত প্রথম প্রতিবেদন প্রকাশ করে৷
ছবি: Getty Images/AFP/STR
নাম সার্স-কোভ-টু
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নতুন এই করোনা ভাইরাসের নাম দেয় সার্স-কোভ-টু৷ আর এর থেকে সৃষ্ট রোগের নাম কোভিড-১৯৷ ১২ জানুয়ারি ভাইরাসটির জিন রহস্য প্রকাশ করে চীন৷ তখন পর্যন্ত সেটি কিন্তু চীনবন্দিই ছিল৷ একদিন পরই প্রথমবারের মতো ধরা পড়ে থাইল্যান্ডে৷ এরপর আর আটকে রাখা যায়নি ক্ষুদে সেই দানবকে৷
ছবি: Reuters/NEXU Science Communication
নীরব ঘাতক
প্রথম ধরা পড়ার ৪৭ দিনের মাথায় চীনে ৬৬ হাজার মানুষকে ভাইরাস আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত করা হয়৷ মারা যান ১৫০০ জন৷ শহর থেকে শহরে, দেশ থেকে দেশে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে ছড়িয়ে পড়ে নভেল করোনা৷ সংক্রমণ বাড়তে থাকে লাফিয়ে লাফিয়ে৷ মৃত্যুর খাতায়ও দৈনিক যোগ হতে থাকে কয়েক হাজার সংখ্যা৷ স্মরণকালে এমন মহামারির মুখোমুখি হয়নি মানুষ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Maohua
কাছে আসতে মানা
ঔষধ নেই, প্রতিষেধক নেই৷ কিভাবে রোখা যাবে এই ভাইরাসকে, সেটি বড় প্রশ্ন হয়ে উঠে৷ দেয়া হয় মানুষে-মানুষে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার পরামর্শ৷ ব্যবধান রাখতে হবে দেড় থেকে দুই মিটার, যার নাম দেয়া হয় ‘সামাজিক দূরত্ব’৷ গোটা পৃথিবীর চেহারা আর যোগাযোগের ধরনটাই রাতারাতি বদলে যায় তাতে৷
ছবি: Reuters/A. Kelly
হ্যান্ডশেকে বাধা
সৌজন্য হিসেবে হ্যান্ডশেক বা হাত মেলানোর রীতিকে বিদায় জানায় মানুষ৷ তার বদলে সৌজন্য আর উষ্ণতা প্রকাশের অভিনব সব উপায়ও তারা বের করে৷ কেউ মুষ্টিবদ্ধ হাত মেলায়, কেউবা কনুই, আবার হাতের বদলে পায়ে-পায়ে স্পর্শেরও চল দেখা যায়৷ তবে দূরে দাঁড়িয়ে মৌখিকভাবে সৌজন্য প্রকাশই নিরাপদ হিসেবে বিবেচিত হয়৷
ছবি: Reuters/FIDE/M. Emelianova
মাস্ক যখন পরিধেয়
মাস্ক পরলে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি কমানো যায় কিনা শুরুতে এ নিয়ে বিতর্ক উঠেছিল৷ কিন্তু একে একে সব দেশ জনপরিসরে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করে৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও সবার মাস্ক পরার পক্ষে মত দেয়৷ সংস্কৃতি ভেদে পোশাকে ভিন্নতা থাকলেও সারা বিশ্বেই মাস্ক হয়ে উঠে অপরিহার্য পরিধেয়৷
ছবি: Getty Images/NYFW - The Shows
যারা সুপারহিরো
করোনার বিরুদ্ধে এক অসম লড়াইয়ে নামতে হয় চিকিৎসকদের৷ দেশে দেশে নিরাপত্তা সরঞ্জামের অভাবের মধ্যেই অচেনা শত্রুর বিরুদ্ধে কঠিন এক যুদ্ধের মুখোমুখি হন স্বাস্থ্যকর্মীরা৷ অন্যকে বাঁচানোর সেই চ্যালেঞ্জে অনেকেই জীবন দেন৷ লকডাউনে তাদের প্রতি নানা উপায়ে ধন্যবাদ আর ভালোবাসা জানাতে ভোলে না বিভিন্ন দেশের কৃতজ্ঞ মানুষেরা৷
ছবি: Reuters/S. Vera
বিচ্ছিন্ন পৃথিবী
এত কিছুর পরও ঠেকানো যায়নি সংক্রমণ, থামছিল না মৃত্যুর মিছিলও৷ লাগাম ধরতে দেশে দেশে চলে লকডাউন৷ সীমান্তে আরোপ করা হয় কড়াকড়ি৷ বন্ধ হয়ে যায় ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ অর্থনৈতিক আর বিনোদনমূলক সব কর্মকাণ্ড৷ ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক মন্দার পর পুঁজিবাজারগুলোর লেনদেনে লাগে সবচেয়ে বড় ধাক্কা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/T. Camus
ব্যালকনি বা অনলাইন কনসার্ট
আশাহীন সময়েও মানুষ আনন্দে বাঁচার উপায় ঠিক খুঁজে নেয়৷ স্পেন, ইটালিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশের ঘরবন্দি মানুষেরা ব্যালকনিতে কনসার্ট জমিয়ে ফেলে৷ অনলাইনে ডুব দেয়া মানুষকে নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে নানাভাবে বিনোদিত করার চেষ্টা করেন তারকারাও৷
ছবি: AFP/P. Singh
প্রকৃতির ফুরসত
আধুনিক জীবনযাত্রার চাপে কোণঠাসা প্রকৃতি যেন এই দফা হাঁফ ছেড়ে বাঁচে৷ বিশ্বের অর্ধেকের বেশি মানুষ যখন ঘরবন্দি, তখন নিজেকে নতুন করে ফিরে পাওয়ারই তো তার সময়৷ কোনো কোনো নির্জন মহানগরীর বুকে এমনকি বুনো প্রাণীরাও নেমে আসে৷ আর গবেষণায় দেখা যায়, ২০২০ সালে বিশ্বের কার্বন নিঃসরণ সাত ভাগ কমেছে, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে নতুন রেকর্ড৷
ছবি: picture-alliance/empics/P. Byrne
পড়তি ঢেউ
আক্রান্ত আর মৃত্যুর রেখাচিত্র জুন নাগাদ নামতে শুরু করে৷ ধীরে ধীরে লকডাউন তুলে নেয় দেশগুলো৷ শুরু হয় ব্যবসা-বাণিজ্য, যাতায়াত৷ খুলে দেয়া হয় এয়ারপোর্ট৷ কিন্তু এর মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রে বেকারত্বের হার পৌঁছে যায় মহামন্দার সময়ের পর সর্বোচ্চ ১৪ দশমিক সাত ভাগে৷ বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর দারিদ্র্য বিমোচনে বিগত দেড় দশকের অর্জন ম্লান হয়ে যেতে থাকে৷
ছবি: picture-alliance/Zumapress/J. Merida
দর্শকবিহীন খেলা
আন্তর্জাতিক সিরিজ বা বিভিন্ন লিগের খেলা হবে, অথচ মাঠে দর্শক থাকবে না- অন্য সময় হলে এমন কথা বললে সেটি নির্ঘাত উদ্ভট শোনাতো৷ অথচ ২০২০ সালে ইউরোপীয় ফুটবল লিগ কিংবা আইপিএলসহ বিভিন্ন ক্রীড়া আসর অনুষ্ঠিত হয় স্টেডিয়ামে শূন্য বা সীমিত দর্শক উপস্থিতি নিয়ে৷
ছবি: Angel MartinezGES/picture alliance
দ্বিতীয় ঢেউ
শীতের মৌসুমে বিভিন্ন দেশে নভেম্বর থেকে নতুন করে বাড়তে শুরু করে করোনার প্রকোপ৷ এই ধাক্কায় আবার বিপর্যস্ত ইউরোপ৷ একে একে আবারো লকডাউনে ফিরে দেশগুলো৷ শুধু তাই নয় যুক্তরাজ্যে নতুন ধরনের করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়, যেটি আগের চেয়েও দ্রুত গতিতে সংক্রমণ ঘটায়৷এ কারণে নতুন করে ব্রিটেনের সঙ্গে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দেয় বিভিন্ন দেশ৷
ছবি: Sebastian Kahnert/dpa/picture alliance
অসম্ভবকে সম্ভব
একটি ভ্যাকসিন উদ্ভাবন থেকে শুরু করে পরীক্ষা- সবগুলো ধাপ পেরিয়ে সরবরাহ পর্যন্ত কমপক্ষে ১০ বছর সময় লাগে৷ কিন্ত এক বছরের কম সময়ে একাধিক ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের মাধ্যমে অসম্ভবকে সম্ভব করেন বিজ্ঞানীরা৷ ডিসেম্বর থেকেই কয়েকটির প্রয়োগ শুরু হয় দেশে দেশে৷ করোনার অন্ধকার এক টানেলের যাত্রা দিয়ে ২০২০ সালের সূচনা হলেও, বিদায়টা হয় শেষ প্রান্তে টিকার আলোতে৷
এফএস/এসিবি
ছবি: Robin Utrecht/picture alliance
14 ছবি1 | 14
অতিরিক্ত অর্থের মধ্যে বিশ্বব্যাংক ৫০ কোটি ডলার ও এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) ১০ কোটি ডলার দেবে৷ সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেবে ১৭২ কোটি টাকা৷
বাংলাদেশে টিকা পেতে ৫ নভেম্বর ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে চুক্তি করেছে৷ অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাস্ট্রাজেনেকা মিলে করোনা ভাইরাসের যে টিকা তৈরি করেছে, তার উৎপাদন ও বিপণনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি৷ চুক্তি অনুযায়ী তারা তিন কোটি ডোজ টিকা সরবরাহ করবে বাংলাদেশের বেক্সিমকোকে৷ এর মধ্যে বাংলাদেশ টিকাটিঅনুমোদন দেয়ার এক মাসের মধ্যে ৫০ লাখ ডোজের প্রথম চালানটি পাঠানোর কথা৷ সোমবার বাংলাদেশের ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর টিকার অনুমোদন দিলেও সেটি কবে নাগাদ পাওয়া যাবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে৷ এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘‘বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘চুক্তি অনুযায়ী টিকা পাওয়া যাবে৷ আমরা আশা করছি এবং বিশ্বাস করি, ভ্যাকসিন আমরা পাবো৷’’
অনুমোদিত প্রকল্প অনুযায়ী, ১৮ বছরের বেশি বয়সী ১৩ কোটি ৭৬ লাখ মানুষকে টিকার আওতায় আনা হবে।