বাচ্চাদের হামের টিকা না দিলে বাবা-মা-এর জন্য আড়াই হাজার ইউরো জরিমানার বিধান রেখে আইনের প্রস্তাব করেছেন জার্মান স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়েনস স্পান৷ হাম রোগ সমূলে ‘উৎপাটন' করার কথা বলছেন রক্ষণশীল এই আইনপ্রণেতা৷
বিজ্ঞাপন
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর প্রস্তাবিত ওই আইনে বলা হয়, যেসব বাবা-মা বাচ্চাদের হামের টিকা দেওয়ার বিরোধিতা করবেন, তাঁদেরকে ২৫০০ ইউরো জরিমানা গুণতে হবে৷ পাশাপাশি তাঁদের সন্তানদের কিন্ডারগার্টেন থেকে বের করে দেয়া হতে পারে৷
‘‘হামকে সমূলে দূর করতে চাই আমি'', জার্মানির ‘বিল্ড আম জোনটাগ' পত্রিকাকে বলেছেন মন্ত্রী স্পান৷ ‘‘প্রত্যেক বাবা-মা-কে নিশ্চিত হতে হবে, তাঁদের সন্তানরা হাম আক্রান্ত নয় এবং এর ঝুঁকিতে নেই৷''
৯৩ শতাংশ শিশু টিকার আওতায় রয়েছে বলে জার্মানির রবার্ট কোখ ইনস্টিটিউটের তথ্য, যদিও এটা প্রত্যাশিত ৯৫শতাংশ থেকে কম৷
স্পান বলছেন, কিন্ডারগার্টেনে নিষেধাজ্ঞা একেবারে খুদে বাচ্চাদেরও রক্ষা করতে সহায়তা করবে৷
জার্মানিতে প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষা বাধ্যতামূলক হওয়ায় টিকাবিহীন শিশুদেরও স্কুলের বাইরে রাখার সুযোগ নেই৷ সে কারণে তাদের বাবা-মায়েদের জরিমানা করার চিন্তা করা হচ্ছে৷
ইউরোপে ‘হাম’ রোগের প্রকোপ বাড়ছে
হাম রোগের প্রকোপ বাড়ার কথা জানা যায় গতবছর প্রকাশিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি রিপোর্ট থেকে৷ অবশ্য চলতি বছরে সারা ইউরোপে হাম রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে গত বছরের চেয়েও বেশি৷ বিস্তারিত থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মাত্র ছ’মাসে...
২০১৮ সালের প্রথম ছ’মাসে ইউরোপে ৪২,০০০ মানুষ হামের ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন৷
ছবি: imago stock&people
টিকা না নেওয়ার কারণে
হামের বিরুদ্ধে টিকা না নেওয়াই হামে আক্রান্ত হওয়ার প্রধান কারণ বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ডাব্লিউএইচও৷
ছবি: picture-alliance/dpa
জার্মানিতে টিকার হার
বর্তমানে জার্মানিতে হামের টিকা নেওয়ার হার শতকরা ৯৩ ভাগ৷
ছবি: Sean Gallup/Getty Images
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সতর্কবাণী
হাম ভাইরাস নিয়ে ২০১৭ সালেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্কবাণী দিয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/Keystone/U. Flueeler
ডাব্লিউএইচও-র লক্ষ্য হাম নির্মূল করা
ওয়ার্ল্ড হেল্থ অরগ্যানাইজেশন বা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার লক্ষ্য হাম নির্মূল করা৷ অ্যামেরিকা মহাদেশ এবং স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলিতে ইতিমধ্যেই এটি করতে সফল হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/Keystone/U. Flueeler
জার্মানি
হাম একটি ছোঁয়াচে রোগ৷ অনেক মা-বাবা এই রোগকে তেমন গুরুত্ব দেন না বলেই অনেক শিশু অন্যশিশুদের সাথে খেলার ফলে হামে সংক্রমিত হয়৷ তাই এ রোগটি সম্পর্কে সচেতনতা জরুরি, প্রয়োজন টিকা নেওয়াও৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Schlesinger
হামকে অনেকে তেমন গুরুত্ব দেন না
অনেকে মনে করেন, হাম তেমন ক্ষতিকর কোনো অসুখ নয়৷ তবে হাম সম্পর্কে জার্মানির রবার্ট কখ ইন্সটিটিউট জানায় যে, হাম থেকে মস্তিষ্কে সংক্রমণ পর্যন্ত হতে পারে৷ তবে তা হাজারে মাত্র একজনের হয়ে থাকে এবং এদের প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজনের মৃত্যু ঘটে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Gambarini
7 ছবি1 | 7
এদিকে, নবজাতকদের পাশাপাশি এমন কিছু শিশুও আছে, লিউকেমিয়াসহ বিভিন্ন কারণে যাদেরকে টিকা দেওয়া সম্ভব হয় না৷ এই শিশুদের টিকার বাইরে রাখার জন্য বাবা-মায়েদের তাদের ডাক্তারি পরীক্ষার প্রমাণ দিতে হবে৷
সবার জন্য হামের টিকা নিশ্চিত করতে ২০২০ সালের জুলাই পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হচ্ছে জার্মানিতে৷ এ সময়ে যেসব বাবা-মা সন্তানদের স্কুলে বা কিন্ডারগার্টেনে পাঠাবে, তাদেরকে সন্তানের টিকার বিষয়টি অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে৷
একইসঙ্গে হাসপাতাল ও প্রাইভেট মেডিকেলের কর্মীদের সন্তানদের জন্যও হামের টিকা দেওয়ার বিষয়ে বাধ্যবাধতা আরোপ করা হচ্ছে৷
মন্ত্রিসভায় আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে এই আইন৷ চলতি বছর আইনটি পাস এবং ২০২০ সাল থেকে কার্যকর হতে পারে৷
বিশ্বব্যাপী হাম ছড়িয়ে পড়ায় কঠোর উদ্যোগের আহ্বান জানিয়ে আসছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)৷ কেবল গতবছরই বিশ্বে হাম রোগে ১ লাখ ৩৬ হাজার মানুষ মারা যায়৷
অটিজম হতে পারে এমন কুসংস্কার উন্নত দেশগুলোতে হামের টিকা প্রদানের ক্ষেত্রে বড় বাধা৷ এর মধ্যে জার্মানিতে চলতি বছরের প্রথম দুই মাসেই ১৭০ জন হাম আক্রান্ত রোগী নিবন্ধিত হয়৷
এমবি/এসিবি (ডিপিএ, এএফপি)
শিশুরোগের লক্ষণ চিনুন, মারাত্মক ক্ষতি থেকে দূরে থাকুন
প্রতিটি মা-বাবার কাছে সন্তানের সুস্থতার চেয়ে মূল্যবান বোধহয় আর কিছু নেই৷ তাই শিশুরোগের লক্ষণগুলো জানা থাকলে সন্তানের জীবন সহজ ও সুন্দর হতে পারে৷ ছবিঘরে থাকছে এ বিষয়েই বিশেষজ্ঞের দেওয়া কিছু পরামর্শ৷
ছবি: Fotolia
শিশুর টিকা
শিশুর জন্মের এক বছরের মধ্যে হুপিং কাশি, দিপথেরিয়া, টিটেনাস, পোলিও, হাম, মাম্স এবং জলবসন্তের টিকা ইত্যাদি অবশ্যই দিতে হবে৷ তাছাড়া আরো কিছু টিকা রয়েছে যেগুলো পরে কিশোর বয়সে আবারও নতুন করে দিতে হয়৷ শিশুর স্বাস্থ্যের নিরাপত্তার জন্য প্রতিটি টিকাই নির্দিষ্ট সময়ে দেয়া প্রয়োজন৷ তবে এ বিষয়ে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/K.J. Hildenbrand
রোগের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
কিছু শিশুরোগের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে মারাত্মক৷ যেমন হাম৷ জার্মানির শিশু-কিশোর অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক ডা. এসারের ভাষায়, ‘‘অনেকের ধারণা হাম ক্ষতি করে না৷ অথচ এটি একটি সংক্রমণ রোগ, যা নার্ভ বা স্নায়ু সিস্টেমকে আক্রমণ করতে পারে৷ হামের পর শতকরা ১০ জন শিশুর মস্তিষ্কের তরঙ্গে পরিবর্তন হয় আর অন্তত একজনের মাথায় থেকে যায় মানসিক ব্যাধির লক্ষণ৷
ছবি: imago stock&people
শিশুর জ্বর
প্রায়ই দেখা যায় কোনো অসুখ হওয়ার আগে শিশুদের জ্বর হয়৷ তাই জ্বরকে মোটেও হালকাভাবে নেয়া বা নিজে থেকে জ্বরের ওষুধ দেয়া কখনোই উচিত নয়৷ তবে এক শিশুর জ্বর হওয়ার আগে যদি তার বড় বা ছোট ভাই-বোনের ভাইরাস ঘটিত সংক্রমণ হয়ে থাকে, তাহলে দু-একদিন অপেক্ষা করা যেতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/Agencia Estado
পান করতে না চাইলে
শিশুদের শরীরে তরল মজুদ রাখার সীমাবদ্ধতা রয়েছে৷ তাই শিশু জল বা অন্য কোনো পানীয় পান করতে না চাইলে, খুব তাড়াতাড়ি শিশুদের শরীরের ভেতরটা শুকিয়ে গিয়ে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে৷ তাই শিশু পান করতে না চাইলে বা অনেকটা সময় কোনো তরল পদার্থ পান না করে থাকলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত৷
ছবি: Fotolia/Zsolt Bota Finna
কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন?
কথা না বলা, না হাঁটা, খেলা না করা বা কানে কম শুনছে মনে হলে খুব বেশি চিন্তা না করে ডাক্তারের কাছে যাওয়াই স্রেয়৷ কারণ সব শিশু একই বয়সে একই কাজ করে না৷ কেউ হয়ত ১০ মাস বয়সেই হাঁটতে শুরু করে আবার কেউ ১৪ মাসেও হাঁটে না৷ তাছাড়া অনেক শিশু হামগুড়ি না দিয়েই হাঁটতে শুরু করে৷ এ বিষয়গুলো অনেক সময় বংশগত কারণেও হয়ে থাকে৷
ছবি: Fotolia/deber73
অযথা অসুখ খুঁজবেন না!
‘‘অকারণে শিশুকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবেন না৷ তবে কোনো কিছু অন্যরকম মনে হলে বা কোনো দ্বিধা থাকলে প্রয়োজনে নিজের মা বা মুরুব্বিদের কাছ থেকে জেনে নিতে পারেন৷ সারাক্ষণ শিশুকে অসুস্থ মনে করলে বা সে কথা তাকে বললে, তা শিশুমনে প্রভাব ফেলে৷ এবং পরবর্তীতে শিশুকে তা সত্যিই মানসিকভাবে অসুস্থ করে তুলতে পারে৷’’ বলেন শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. এসার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Schlesinger
নিজের মতো চলতে দিন
নিজের ৩১ বছরের অভিজ্ঞতা থেকে ডা. এসার বলেন, ‘‘ছোটখাটো ব্যাপারে শিশুকে বিরক্ত না করে, তাকে তার মতো চলতে এবং অন্য শিশুদের সাথে খেলতে দিন৷ খেলার মধ্য দিয়ে শিশুদের ব্যক্তিত্ব গড়ে ওঠে, ওরা হয় ওঠে আত্মবিশ্বাসী৷ লক্ষ্য রাখুন শিশুর আগ্রহ কোন দিকে৷ কারণ বেশি জোড় করলে শিশু মনে তার প্রভাব পড়ে এবং মনোজগতে ক্ষতচিহ্ন থেকে যায়৷’’
ছবি: Fotolia/Fotofreundin
মানসিক দ্বন্দ্ব থেকে দূরে রাখুন
একটা শিশু কিন্তু বুঝতে পারে না, কী কারণে তার মা অন্যের সাথে টেলিফোনে বা সরাসরি বাবার বদনাম বা সমালোচনা করছেন৷ শিশুরা এ সব নিয়ে কোনো প্রতিবাদ বা আলোচনা করতে পারে না ঠিকই, তবে শিশুমনে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে এবং এর ফলে সৃষ্টি হয় মানসিক দ্বন্দ্ব৷ তাই দাম্পত্য কলহ কখনই শিশুদের সামনে নয়! মা-বাবার ঝগড়া সন্তানের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে৷