জার্মানিতে যারা করোনা ভাইরাস প্রতিরোধক টিকা নেবেন না তাদের চলাফেরার স্বাধীনতা কমে আসতে পারে বলে জানিয়েছে আঙ্গেলা ম্যার্কেল সরকার৷
বিজ্ঞাপন
জার্মান চ্যান্সেলরের জেষ্ঠ্য উপদেষ্টা হেলগে ব্রাউন বলেন, ‘‘সুযোগ থাকা সত্ত্বেও যারা টিকা নেবেন না তাদেরক্ষেত্রে যারা টিকা নিয়েছেন তাদের তুলনায় চলাফেরার স্বাধীনতা কমিয়ে আনা হতে পারে৷''
তিনি বলেন, ‘‘যারা টিকা নেবেন না তাদেরকে বার, সিনেমা হল কিংবা খেলার মাঠে প্রবেশ করতে বাধা দেওয়া হতে পারে৷’’
ইউরোপের দেশ জার্মানিতে করোনার তৃতীয় ঢেউ চলছে৷ এরমধ্যে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও গত দুই সপ্তাহ ধরে সংক্রমণের হার আবারও বাড়ছে৷ রবার্ট কখ ইনস্টিটিউটের তথ্য বিশ্লেষণ করে সংবাদমাধ্যম দ্যা লোকাল জানায়, জার্মানিতে গত শুক্রবার প্রতি লাখে সংক্রমণের হার ছিল ১৩ দশমিক দুই ভাগ৷ তার আগে সংক্রমণের হার ছিল ১২ দশমিক দুই ভাগ৷ আর ৬ জুলাই সংক্রমণের হার ছিল চার দশমিক নয় ভাগ৷
সংক্রমণের এমন ঊর্ধ্বগতির কারণে দেশটিতে করোনার চতুর্থ ঢেউয়ের শঙ্কা প্রকাশ করছে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা৷
এদিকে, করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সবাইকে টিকাদানের চেষ্টা করছে সরকার৷ সবর্শেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে প্রাপ্তবয়স্কদের শতকরা ৬০ ভাগ ইতিমধ্যে অন্তত এক ডোজ টিকা পেয়েছেন৷ তবে টিকাদান প্রক্রিয়া ধীর গতিতে চলছে বলে দাবি করেছেন সমালোচকরা৷
হেলগে ব্রাউন বলেন, ‘‘জার্মানিতে করোনা ভাইরাসের চতুর্থ ঢেউয়ের মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে৷ করোনা টেস্টে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি পাওয়া গেলে যারা টিকা নেননি তাদেরকে সামাজিক যোগাযোগ এড়িয়ে চলতে হবে৷’’
পেশায় চিকিৎসক এ উপদেষ্টা বলেন, ‘‘টিকার ফলে আমরা সংক্রমণ থেকে শতকরা ৯০ ভাগ সুরক্ষিত থাকি৷ আর তাই যারা টিকা পেয়েছেন তারা যারা পানননি তাদের তুলনায় বেশি স্বাধীনতা ভোগ করবে৷’’
আরআর/এসিবি (ডিপিএ, রয়টার্স)
জার্মানিতে করোনা ভাইরাসের টিকা আবিষ্কারে মুসলিম দম্পতি
করোনা ভাইরাসের টিকা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বায়োনটেকের প্রতিষ্ঠাতা তুরস্ক বংশোদ্ভূত এক দম্পতি৷ ছবিঘরে জানুন বিস্তারিত৷
ছবি: Stefan F. Sämmer/imago images
২০০৮ সালে শুরু
জার্মান শহর মাইনৎসে ১২ বছর আগে বায়োনটেকের পথচলা শুরু হয়৷ এই কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ উগুর জাহিন এবং তাঁর স্ত্রী ইমিউনোলজিস্ট উজলেম টুরেচি৷
ছবি: BioNTech SE 2020, all rights reserved
তুরস্ক বংশোদ্ভূত
তারা দুইজনই তুরস্ক বংশোদ্ভূত জার্মান নাগরিক৷ এই দম্পতির তৈরি বায়োনটেকে এখন কাজ করে ১৫শ’ কর্মী৷ ৫৫ বছর বয়সি জাহিনের জন্ম তুরস্কে৷ বাবা-মা’র সঙ্গে একসময় জার্মানিতে চলে আসেন তিনি৷ মেডিসিন এবং গণিত নিয়ে পড়ালেখা করেন কোলোন বিশ্ববিদ্যালয়ে৷
ছবি: Stefan F. Sämmer/imago images
ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই
জাহিন কোলোন এবং হামবুর্গে দীর্ঘদিন চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেছেন৷ এরপর জারল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন৷ ১৯৯২ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত একজন চিকিৎসক ও গবেষক হিসেবে সেখানে কাজ করেন৷ মলিকিউলার মেডিসিন এবং ইমিউনোলজি নিয়ে গবেষণা শুরু করেন৷ ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ব্যাপারে তিনি সবসময় আগ্রহী ছিলেন আর এ কারণেই ২০০৮ সালে বায়োনটেক প্রতিষ্ঠা করেন৷ ক্যান্সারের ওষুধ আবিষ্কারের জন্য এখানে মনোনিবেশ করেন তিনি৷
৫৩ বছর বয়সি টুরেচির জন্ম জার্মানিতে৷ কিন্তু তাঁর বাবা-মা তুর্কি৷ হামবুর্গে পড়ালেখা করে, সেখানেই চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেছিলেন তিনি৷ ইমিউনোলজিস্ট টুরেচি ক্যান্সার রোগীদের থেরাপি দিয়ে থাকেন৷
ছবি: BioNTech SE 2020, all rights reserved
ভ্যাকসিন তৈরির সিদ্ধান্ত
২০০০ সালের জানুয়ারিতে জাহিন করোনা ভাইরাস সম্পর্কে প্রথম জানতে পারেন৷ তখনই তাঁর আশঙ্কা হয় এটি মহামারি রূপ নেবে৷ সেসময়ই ভ্যাকসিন প্রস্তুতের সিদ্ধান্ত নেন তিনি৷
ছবি: BioNTech SE 2020, all rights reserved
করোনা প্রতিরোধে ভূমিকা
বায়োনটেকের প্রধান নির্বাহী উগুর জাহিন জানিয়েছেন, এই টিকার প্রতিরোধ ক্ষমতা অন্তত এক বছর স্থায়ী হবে৷ যৌথ বিবৃতিতে ফাইজারের চেয়ারম্যান ও তিনি জানিয়েছেন, ‘‘টিকার তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষার প্রাথমিক ফলে আমরা প্রমাণ পেয়েছি যে এটি কোভিড-১৯ প্রতিরোধ করতে পারে৷’’