সাধারণ মানুষের বিভ্রান্তি দূর করতে বাংলাদেশে দায়িত্বশীলদের আগে টিকা নেয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা, যদিও শুরুতে ‘তরুণদের’ টিকা দিয়ে পর্যবেক্ষণের পরিকল্পনা করছে সরকার৷
বিজ্ঞাপন
একজন নার্সকে প্রয়োগের মাধ্যমে আগামী ২৭ জানুয়ারি বাংলাদেশে কোভিড-১৯ টিকাদান কার্যক্রম শুরু হচ্ছে৷ পরদিন ঢাকার পাঁচটি হাসপাতালে কয়েকশ' জনকে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা৷ এরপর ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে সারাদেশে টিকাদান শুরু হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য সচিব আব্দুল মান্নান৷ তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৭ জানুয়ারি টিকা দেয়ার কার্যক্রম ভার্চুয়ালভাবে উদ্বোধন করবেন৷ কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে প্রথম টিকা দেওয়া হবে একজন নার্সকে৷ এছাড়া আরও ২৪ জনকে টিকা দেওয়া হবে৷ এদের মধ্যে করোনাভাইরাসের সময় কাজ করা সম্মুখযোদ্ধা স্বাস্থ্যকর্মী, বীর মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, চিকিৎসক এবং সাংবাদিকরা থাকবেন৷ পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে সারাদেশে টিকা কার্যক্রম চালু করা হবে৷
এরইমধ্যে ভারত উপহার হিসেবে ২০ লাখ ডোজ টিকা পাঠিয়েছে৷ আসছে চুক্তির মাধ্যমে কেনা টিকার চালানও৷ কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে বিভিন্ন অঙ্গনে টিকা নিয়ে মানুষের অনীহা ও সন্দেহ প্রকাশ পাচ্ছে৷ বিষয়টিকে সরকার কিভাবে দেখছে? জানতে চাইলে স্বাস্থ্য সচিব আব্দুল মান্নান বলেন, ‘‘এখানে বিভ্রান্তি বা অনীহার কিছু নেই৷ সরকার এই টিকা ফ্রি দিচ্ছে৷ যারা নিতে আগ্রহী হবে শুধু তাদেরই দেওয়া হবে৷ কাউকে জোর করে টিকা দেওয়া হবে না৷ পাশাপাশি দেশে সংক্রমণ তো কমে গেছে৷ এখন মানুষ মনে করছে, টিকা ছাড়াই যদি সুস্থ্য থাকা যায় তাহলে টিকা নেওয়ার দরকার কী? এ কারণেও হয়তো মানুষের মধ্যে টিকার প্রতি আগ্রহ কিছুটা কমেছে৷’’
আব্দুল মান্নান
টিকা নিয়ে এই অনাগ্রহ লক্ষ্য করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলামও৷ তিনি বলেন, ‘‘হঠাৎ করেই মানুষের মধ্যে আগ্রহ কেন কমে গেল সেটা বুঝতে পারছি না৷ তবে আমার মনে হয়, দায়িত্বশীলরা বিভ্রান্তি দূর করতে পারেন৷ তারা যদি আগে টিকা নেন তাহলে সাধারণ মানুষের মধ্যে ইতিবাচক ধারণার সৃষ্টি হবে৷ তখন তারাও টিকা নিতে আগ্রহী হবে৷’’
টিকা দেয়ার জন্য প্রাথমিকভাবে পাঁচটি হাসপাতালকে চিহ্নিত করা হয়েছে৷ এরমধ্যে আছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল, কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে টিকা দেওয়া হবে৷ জানা গেছে, ২৮ জানুয়ারি এসব জায়গায় ৪০০ থেকে ৫০০ জনের উপর টিকা প্রয়োগ করা হবে৷ তাদেরকে এক সপ্তাহ পর্যবেক্ষণে রাখার পর সারাদেশে টিকাদান শুরু হবে৷ টিকা বিতরণের পরিকল্পনাও ইতোমধ্যে করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য সচিব৷
কিন্তু অনীহা আর বিভ্রান্তির কারণে সরকারের পরিকল্পনা কতটা বাস্তবায়িত হবে তা নিয়েও আলোচনা চলছে৷ শুধু বাংলাদেশ নয় যেসব দেশে টিকা কার্যক্রম চালু করা হয়েছে সবখানেই শুরুতে টিকা নিয়ে জনগণের সন্দেহের বিষয়টি গণমাধ্যমগুলোতে উঠে এসেছে৷ তা দূর করার জন্য অনেক দেশে শুরুতে দায়িত্বশীল বা সরকার প্রধানদের টিকা নেয়ার নজিরও দেখা গেছে৷
প্রশ্ন-উত্তরে করোনার টিকা
করোনার টিকা কি হালাল, শিশু ও গর্ভবতীরা কি টিকা নিতে পারবে, টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কি, কতদিন স্বাস্থ্য়বিধি মানতে হবে- এমন সব প্রশ্নের উত্তর থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: Leon Neal/Getty Images
কতগুলো টিকা অনুমোদন পেয়েছে
ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন বায়োনটেক-ফাইজার, মডার্না ও অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা, এই তিন টিকার অনুমোদন দিয়েছে৷ এর বাইরে রাশিয়া স্পুটনিক ৫ ও চীন সিনোভ্যাক টিকার অনুমোদন দিয়েছে৷
ছবি: Sven Hoppe/dpa/picture alliance
পার্থক্য
বায়োনটেক-ফাইজার ও মডার্নার টিকা হচ্ছে এমআরএনএ টিকা৷ মডার্নার টিকা ঘরের রেফ্রিজারেটরে সর্বোচ্চ ৩০ দিন পর্যন্ত রাখা যায়৷ বায়োনটেক-ফাইজারের টিকার মতো মডার্নার টিকাকে পরিবহনের সময় মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখতে হয় না৷ আর অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাটি ভেক্টর ভাইরাস টিকা, যা সাধারণ রেফ্রিজারেটরে রাখা যায়৷
ছবি: ULMER Pressebildagentur/picture alliance
দ্বিতীয় ডোজে অন্য টিকা?
তিনটি টিকার ক্ষেত্রেই দুটো করে ডোজ দিতে হয় এবং ডোজ দুটো একই টিকার হতে হবে৷ কারণ দুই ডোজে দুই ধরনের টিকা নিলে কী হতে পারে সে বিষয়ে এখনও কোনো তথ্য নেই৷
ছবি: TASR/dpa/picture alliance
করোনা হলেও টিকা নিতে হবে?
হ্যাঁ, নেয়া ভালো৷ কারণ একবার সংক্রমিত হলে পরে আর হবে না, এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই৷
ছবি: Abdesslam Mirdass/Hans Lucas/imago images
কী অবস্থায় টিকা নেয়া যাবেনা?
করোনায় আক্রান্ত অবস্থায় এবং সাধারণ সর্দি, কাশি ও জ্বর থাকলে সেই সময় টিকা নেয়া যাবে না৷ কোয়ারান্টিনে থাকার সময়ও টিকা নেয়া যাবে না৷ যাদের কোনো বিষয়ে অ্যালার্জি আছে তাদের বেশিরভাগই টিকা নিতে পারবেন৷
ছবি: Markus Schreiber/AP Photo/picture alliance
শিশুদের টিকা?
টিকাগুলো ১৬ বছর বা তার বেশি বয়সিদের দেয়ার জন্য অনুমোদন পেয়েছে৷ শিশুদের টিকা দেয়ার বিষয়ে গবেষণা চলছে বলে জানিয়েছে জার্মানির রবার্ট কখ ইনস্টিটিউট৷
ছবি: Getty Images/S. Gallup
গর্ভবতীরা টিকা নিতে পারবেন?
‘জার্মান স্ট্যান্ডিং কমিশন অন ভ্য়াকসিনেশন’ বা স্টিকো গর্ভবতীদের টিকা নেয়ার পরামর্শ দিচ্ছেনা৷ আবার না-ও করছেনা৷ তবে গর্ভবতী মায়েদের মধ্যে যাদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে তারা ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে ঝুঁকি-লাভ বিবেচনা করে টিকা নিতে পারেন বলে জানিয়েছে স্টিকো৷ এদিকে, এমআরএনএ টিকা গর্ভবতী মা ও গর্ভের শিশুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিশ্বাস করেননা বিশেষজ্ঞরা৷ তবে এ বিষয়ে এখন প্রাণীর উপর গবেষণা চলছে৷
টিকা নেয়ার পর তিনদিনের মধ্যে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে৷ যেমন টিকার স্থান ফুলে যাওয়া, মাথাব্য়াথা, জ্বর, দুর্বল লাগা ইত্যাদি৷ তবে দুদিনের মধ্যে এগুলো সেরে যাবার কথা৷
ছবি: Imago Images/M. Eichhammer
অন্য টিকা নিতে কতদিন অপেক্ষা?
ইনফ্লুয়েঞ্জা, হাম, রুবেলা কিংবা টিটেনাসের টিকা নিতে চাইলে করোনার টিকা নেয়ার আগে বা পরে ১৪ দিন অপেক্ষা করার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: imago/blickwinkel
টিকা হালাল?
ফাইজার, মডার্না ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার মুখপাত্ররা টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে নিশ্চিত করেছেন তাদের টিকায় শূকরের কিছু নেই৷
ছবি: Dominic Lipinski/picture-alliance
টিকা নেয়ার পরও হাত ধোঁয়া, মাস্ক পরতে হবে?
টিকা আপনাকে কতদিন রক্ষা করতে পারে সে বিষয়ে এখনও কোনো গবেষণা নেই৷ তাই টিকা নিলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, মাস্ক পরা চালিয়ে যেতে হবে৷
ছবি: Michel Kappeler/REUTERS
11 ছবি1 | 11
ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) সাবেক মহাসচিব ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘‘করোনার টিকা যেহেতু নতুন এসেছে, তাই মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি থাকাটাই স্বাভাবিক৷ আমরা যেমনটা দেখি, ইপিআই'র টিকা যখন দেওয়া হয়, তখন প্রধানমন্ত্রী একটি শিশুকে টিকা খাইয়ে এটার উদ্বোধন করেন৷ এভাবে এখানেও যদি দায়িত্বশীলরা আগে টিকা নেন, তাহলে মানুষের আস্থার সংকট দূর হবে৷ অর্থমন্ত্রী প্রথমে টিকা নিতে আগ্রহ দেখালেও স্বাস্থ্যমন্ত্রী কিন্তু এখন পর্যন্ত কিছুই বলেননি৷ অথচ উনারই তো আগে ঘোষণা দেওয়া উচিৎ ছিল যে, তিনিই প্রথম টিকা নেবেন৷’’ তার মতে এমন উদ্যোগ নেয়া হলে মানুষের মধ্যে আস্থাহীনতা দূর হয়৷ তিনি মনে করেন অক্সফোর্ডের টিকার মান নিয়ে হয়তো প্রশ্ন নেই, কিন্তু কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন থাকতেই পারে৷ এই টিকা নেওয়ার পর শতভাগ নিরাপদ থাকা যাবে, এমন কথা কেউ বলতে পারবেন না৷ কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তো আছেই৷
বিশেষজ্ঞরা যেটা বলছেন, দায়িত্বশীলরা আগে টিকা নিলে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি কমবে, সরকারি পরিকল্পনায় কি এমন কিছু আছে? জানতে চাইলে স্বাস্থ্য সচিব আব্দুল মান্নান বলেন, ‘‘প্রথমদিন আমরা চাচ্ছি অপেক্ষাকৃত তরুণদের দিতে৷ এই তরুণের ক্যাটাগরিতে হয়তো অর্থমন্ত্রী পড়বেন না বা ষাটোর্ধ্ব যারা তারা পড়বেন না৷ আমরা যখন ট্রায়ালে যাব তখন যারা যারা আগ্রহ প্রকাশ করবেন তাদের দেয়া যেতে পারে৷’’ সেকারণে অর্থমন্ত্রী যে টিকা নেওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছেন সেখানে হয়তো প্রথমে তাকে টিকা দেওয়া যাবে না৷ দ্বিতীয় ধাপে তিনি টিকা পেতে পারেন বলে উল্লেখ করেছেন সচিব৷
মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি থাকাটাই স্বাভাবিক
ভারত সরকারের উপহার হিসেবে গত বৃহস্পতিবার সেরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ২০ লাখ ডোজ টিকা দেশে পৌঁছে৷ আগামী দু'একদিনের মধ্যেই দেশে আরও ৫০ লাখ করোনা টিকা আসবে বলে জানিয়েছেন বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান পাপন৷ শনিবার তিনি জানান, ‘‘ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে চুক্তির তিন কোটি ডোজ টিকা আমদানির চুক্তি হয়েছে৷ আগামী দুই-একদিনের মধ্যেই চুক্তির প্রথম চালান ৫০ লাখ টিকা বাংলাদেশে আসবে৷’’
প্রথম সারির যোদ্ধা হিসেবে সাংবাদিকরাও পাবেন এই টিকা৷ জাতীয় প্রেসক্লাব ইতিমধ্যে যারা টিকা নিতে চান তাদের নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়েছে৷ সাংবাদিকদের মধ্যে টিকা নেওয়ার আগ্রহ কেমন? জানতে চাইলে ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘‘সিনিয়রদের মধ্যে আগ্রহ ব্যাপক৷ ইতিমধ্যে শতাধিক সাংবাদিকের একটি তালিকাও প্রস্তুত করা হয়েছে৷ এদের সবাই বয়স্ক৷ তরুণদের মধ্যে আগ্রহ তুলনামূলক কম৷’’ তরুনদের মধ্যে আগ্রহ কম কেন, জানতে চাইলে প্রেসক্লাব সভাপতি বলেন, ‘‘এখানে তরুণরা চান আগে সিনিয়রদের দেওয়া হোক৷ তারপরই তারা টিকা নেবেন৷ কারণ সিনিয়রদেরই তো আগে প্রয়োজন৷’’
এদিকে শনিবার দেশে করোনা ভাইরাসে আরও ২২ জনের মৃত্যুতে বাংলাদেশে মৃতের সংখ্যা ৮ হাজার ছাড়িয়েছে৷ অন্যদিকে ২৪ ঘণ্টায় নতুন রোগী শনাক্তের সংখ্যা এপ্রিলের পর প্রথম পাঁচশ’র নিচে নেমে এসেছে৷ সব মিলিয়ে দেশে করোনা ভাইরাসে মোট মৃতের সংখ্যা আট হাজার তিন জনে দাঁড়িয়েছে৷
করোনা ভ্যাকসিনের যত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
বিশ্বের অনেক দেশে শুরু হয়েছে করোনার টিকাদান৷ তবে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কী সেটি নিয়ে এখনও অনেকের মনে প্রশ্ন রয়েছে৷ ছবিঘরে থাকছে সে সম্পর্কে কিছু তথ্য৷
ছবি: Robin Utrecht/picture alliance
সাধারণ প্রতিক্রিয়া
যেকোন টিকারই সাধারণ কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে৷ যেমন, শরীরে ইনজেকশন দেয়ার স্থানটি লাল হয় বা ফুলে যায়৷ তিনদিনের মধ্যে অবসাদ, জ্বর, মাথা ব্যাথা, শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ব্যাথা হতে পারে৷ তবে এর কোনটিই দীর্ঘস্থায়ী নয়৷ শরীরে টিকার কার্যকারিতা শুরু হলে অ্যান্টিবডি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হওয়ায় এমন প্রতিক্রিয়া স্বাভাবিক৷ অনুমোদন পাওয়া করোনা ভ্যাকসিনগুলোর ক্ষেত্রেও এমন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে৷
ছবি: Mark Lenninhan/AFP/Getty Images
গুরুতর প্রতিক্রিয়া
বিরল হলেও কিছু ক্ষেত্রে গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ঘটার সম্ভাবনা থাকে৷ যেমন, যুক্তরাজ্যে টিকা কর্মসূচি চালুর পর ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দুইজনের অ্যালার্জি দেখা দেয়৷ দেশটির কর্তৃপক্ষ এ ধরনের সমস্যা যাদের আছে তাদেরকে সতর্ক করেছে৷ তবে সার্বিকভাবে নিরাপদ হিসেবে বিবেচিত হওয়ার কারণেই করোনার বিভিন্ন টিকার অনুমোদন দিয়েছে ইউরোপীয় মেডিসিন এজেন্সি, যুক্তরাজ্যের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা৷
ছবি: Robin Utrecht/picture alliance
টিকার উপাদান
সাধারণত টিকায় দুর্বল বা মৃত ভাইরাস থাকে৷ যার মাধ্যমে শরীর সেই ভাইরাসের বিপরীতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে৷ তবে করোনার টিকাগুলোর মধ্যে কয়েকটি প্রথমবারের মতো এমআরএনএ প্রযুক্তিতে তৈরি৷ এতে কোন ভাইরাস থাকে না৷ তার বদলে কোভিড-১৯ এর জীবাণুর ব্লুপ্রিন্ট বা প্রতিরূপ থাকে৷ তাই দুই ধরনের টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দুই রকম হতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J. Cairns
বায়োনটেক-ফাইজার
অনুমোদন পর্যায়ে বায়োনটেক-ফাইজার উদ্ভাবিত টিকার গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি৷ কোন কোন ক্ষেত্রে টিকা গ্রহীতা সাময়িক অবসাদ আর মাথা ব্যাথায় ভুগেছেন৷ এমআরএনএ ভ্যাকসিনটির ব্যবহার শুরুর পর যুক্তরাষ্ট্রে একজন ও ব্রিটিনে দুইজনের ত্বক লাল হওয়া এবং শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা দেখা দিয়েছিল৷ যাদের অ্যালার্জি সমস্যা রয়েছে তাদেরকে সতর্ক করেছে বিট্রিশ মেডিসিনস অ্যান্ড হেলথকেয়ার প্রোডাক্টস রেগুলেটরি এজেন্সি৷
ছবি: Jacob King/REUTERS
মডার্না
বায়োনটেক-ফাইজারের মতোই এমআরএনএ ভিত্তিক মডার্নার টিকাটি৷ কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে এই টিকাগ্রহীতাদের তেমন কোন সমস্যা হয়নি৷ হালকা যেসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছে সেগুলো ছিল সাময়িক৷ তবে ১০ শতাংশ অবসাদে ভুগেছেন বলে জানিয়েছে একটি স্বাধীন পর্যবেক্ষক প্যানেল৷ অল্প কয়েকজন রোগী অ্যালার্জি ও মুখের স্নায়ু নিষ্ক্রিয় হওয়ার মতো জটিলতায় ভুগেছেন৷ তবে কারণ সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত কিছু জানা যায়নি৷
ছবি: Dado Ruvic/Reuters
অক্সফোর্ড-আস্ট্রাজেনেকা
অক্সফোর্ড-আস্ট্রাজেনেকার টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে একজন মেরুদণ্ডের প্রদাহে ভুগেছেন৷ সেপ্টেম্বরে এই ঘটনার পর কিছুদিন ট্রায়াল বন্ধ ছিল৷ কিন্তু পরে একটি স্বাধীন বিশেষজ্ঞ প্যানেল পরীক্ষার পর জানিয়েছে সেটির কারণ ভ্যাকসিন নয়৷ এছাড়া টিকাটি নেয়ার পর ইনজেকশনের স্থানে ও পেশিতে ব্যথা, মাথাব্যাথা ও অবসাদগ্রস্ততার মতো সাধারণ প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে৷ তবে বয়স্কদের ক্ষেত্রে তা তুলনামূলক কম ছিল৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/J. Porzycki
স্পুটনিক ফাইভ
তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল শুরুর আগে গত আগস্টেই নিজেদের টিকা স্পুটনিক ফাইভ এর অনুমোদন দেয় রাশিয়া৷ দুই ধরনের পরিবর্তিত অ্যাডেনোভাইরাস ব্যবহার করা হয়েছে এতে৷ রুশ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, জ্বর, মাথাব্যাথার মতো টিকাটির কিছু সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে৷ তবে কোন গুরুতর প্রতিক্রিয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি৷ তবে এ বিষয়ে পর্যাপ্ত তথ্য প্রকাশ না করার অভিযোগ রয়েছে রাশিয়ার বিরুদ্ধে৷
ছবি: Sergei Karpukhin/TASS/dpa/picture alliance
দীর্ঘ প্রতিক্রিয়া
এখন পর্যন্ত যত তথ্য জানা গেছে সেগুলোর কোনটিই আসলে পরিপূর্ণ চিত্র তুলে ধরছে না৷ দীর্ঘ মেয়াদে টিকাগুলোর ব্যবহার মানবদেহে কী ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে তা অজানা৷ সেটি হয়ত সামনের মাস বা বছরগুলোতেই পরিস্কার হবে৷