1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দায়িত্বশীলদের আগে টিকা নেয়ার পরামর্শ

সমীর কুমার দে ঢাকা
২৩ জানুয়ারি ২০২১

সাধারণ মানুষের বিভ্রান্তি দূর করতে বাংলাদেশে দায়িত্বশীলদের আগে টিকা নেয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা, যদিও শুরুতে ‘তরুণদের’ টিকা দিয়ে পর্যবেক্ষণের পরিকল্পনা করছে সরকার৷

Brasilien Coronavirus Impfung
ছবি: Amanda Perobelli/REUTERS

একজন নার্সকে প্রয়োগের মাধ্যমে আগামী ২৭ জানুয়ারি বাংলাদেশে কোভিড-১৯ টিকাদান কার্যক্রম শুরু হচ্ছে৷ পরদিন ঢাকার পাঁচটি হাসপাতালে কয়েকশ' জনকে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা৷ এরপর ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে সারাদেশে টিকাদান শুরু হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য সচিব আব্দুল মান্নান৷ তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৭ জানুয়ারি টিকা দেয়ার কার্যক্রম ভার্চুয়ালভাবে উদ্বোধন করবেন৷ কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে প্রথম টিকা দেওয়া হবে একজন নার্সকে৷ এছাড়া আরও ২৪ জনকে টিকা দেওয়া হবে৷ এদের মধ্যে করোনাভাইরাসের সময় কাজ করা সম্মুখযোদ্ধা স্বাস্থ্যকর্মী, বীর মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, চিকিৎসক এবং সাংবাদিকরা থাকবেন৷ পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে সারাদেশে টিকা কার্যক্রম চালু করা হবে৷

এরইমধ্যে ভারত উপহার হিসেবে ২০ লাখ ডোজ টিকা পাঠিয়েছে৷ আসছে চুক্তির মাধ্যমে কেনা টিকার চালানও৷ কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে বিভিন্ন অঙ্গনে টিকা নিয়ে মানুষের অনীহা ও সন্দেহ প্রকাশ পাচ্ছে৷ বিষয়টিকে সরকার কিভাবে দেখছে? জানতে চাইলে স্বাস্থ্য সচিব আব্দুল মান্নান বলেন, ‘‘এখানে বিভ্রান্তি বা অনীহার কিছু নেই৷ সরকার এই টিকা ফ্রি দিচ্ছে৷ যারা নিতে আগ্রহী হবে শুধু তাদেরই দেওয়া হবে৷ কাউকে জোর করে টিকা দেওয়া হবে না৷ পাশাপাশি দেশে সংক্রমণ তো কমে গেছে৷ এখন মানুষ মনে করছে, টিকা ছাড়াই যদি সুস্থ্য থাকা যায় তাহলে টিকা নেওয়ার দরকার কী? এ কারণেও হয়তো মানুষের মধ্যে টিকার প্রতি আগ্রহ কিছুটা কমেছে৷’’

আব্দুল মান্নান

This browser does not support the audio element.

টিকা নিয়ে এই অনাগ্রহ লক্ষ্য করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলামও৷ তিনি বলেন, ‘‘হঠাৎ করেই মানুষের মধ্যে আগ্রহ কেন কমে গেল সেটা বুঝতে পারছি না৷ তবে আমার মনে হয়, দায়িত্বশীলরা বিভ্রান্তি দূর করতে পারেন৷ তারা যদি আগে টিকা নেন তাহলে সাধারণ মানুষের মধ্যে ইতিবাচক ধারণার সৃষ্টি হবে৷ তখন তারাও টিকা নিতে আগ্রহী হবে৷’’

টিকা দেয়ার জন্য প্রাথমিকভাবে পাঁচটি হাসপাতালকে চিহ্নিত করা হয়েছে৷ এরমধ্যে আছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, মুগদা  জেনারেল হাসপাতাল, কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে টিকা দেওয়া হবে৷ জানা গেছে, ২৮ জানুয়ারি এসব জায়গায় ৪০০ থেকে ৫০০ জনের উপর টিকা প্রয়োগ করা হবে৷ তাদেরকে এক সপ্তাহ পর্যবেক্ষণে রাখার পর সারাদেশে টিকাদান শুরু হবে৷ টিকা বিতরণের পরিকল্পনাও ইতোমধ্যে করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য সচিব৷

কিন্তু অনীহা আর বিভ্রান্তির কারণে সরকারের পরিকল্পনা কতটা বাস্তবায়িত হবে তা নিয়েও আলোচনা চলছে৷ শুধু বাংলাদেশ নয় যেসব দেশে টিকা কার্যক্রম চালু করা হয়েছে সবখানেই শুরুতে টিকা নিয়ে জনগণের সন্দেহের বিষয়টি গণমাধ্যমগুলোতে উঠে এসেছে৷ তা দূর করার জন্য অনেক দেশে শুরুতে দায়িত্বশীল বা সরকার প্রধানদের টিকা নেয়ার নজিরও দেখা গেছে৷

ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) সাবেক মহাসচিব ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘‘করোনার টিকা যেহেতু নতুন এসেছে, তাই মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি থাকাটাই স্বাভাবিক৷ আমরা যেমনটা দেখি, ইপিআই'র টিকা যখন দেওয়া হয়, তখন প্রধানমন্ত্রী একটি শিশুকে টিকা খাইয়ে এটার উদ্বোধন করেন৷ এভাবে এখানেও যদি দায়িত্বশীলরা আগে টিকা নেন, তাহলে মানুষের আস্থার সংকট দূর হবে৷ অর্থমন্ত্রী প্রথমে টিকা নিতে আগ্রহ দেখালেও স্বাস্থ্যমন্ত্রী কিন্তু এখন পর্যন্ত কিছুই বলেননি৷ অথচ উনারই তো আগে ঘোষণা দেওয়া উচিৎ ছিল যে, তিনিই প্রথম টিকা নেবেন৷’’ তার মতে এমন উদ্যোগ নেয়া হলে মানুষের মধ্যে আস্থাহীনতা দূর হয়৷ তিনি মনে করেন অক্সফোর্ডের টিকার মান নিয়ে হয়তো প্রশ্ন নেই, কিন্তু কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন থাকতেই পারে৷ এই টিকা নেওয়ার পর শতভাগ নিরাপদ থাকা যাবে, এমন কথা কেউ বলতে পারবেন না৷ কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তো আছেই৷

বিশেষজ্ঞরা যেটা বলছেন, দায়িত্বশীলরা আগে টিকা নিলে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি কমবে, সরকারি পরিকল্পনায় কি এমন কিছু আছে? জানতে চাইলে স্বাস্থ্য সচিব আব্দুল মান্নান বলেন, ‘‘প্রথমদিন আমরা চাচ্ছি অপেক্ষাকৃত তরুণদের দিতে৷ এই তরুণের ক্যাটাগরিতে হয়তো অর্থমন্ত্রী পড়বেন না বা ষাটোর্ধ্ব যারা তারা পড়বেন না৷  আমরা যখন ট্রায়ালে যাব তখন যারা যারা আগ্রহ প্রকাশ করবেন তাদের দেয়া যেতে পারে৷’’ সেকারণে অর্থমন্ত্রী যে টিকা নেওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছেন সেখানে হয়তো প্রথমে তাকে টিকা দেওয়া যাবে না৷ দ্বিতীয় ধাপে তিনি টিকা পেতে পারেন বলে উল্লেখ করেছেন সচিব৷ 

মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি থাকাটাই স্বাভাবিক

This browser does not support the audio element.

ভারত সরকারের উপহার হিসেবে গত বৃহস্পতিবার সেরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ২০ লাখ ডোজ টিকা দেশে পৌঁছে৷ আগামী দু'একদিনের মধ্যেই দেশে আরও ৫০ লাখ করোনা টিকা আসবে বলে জানিয়েছেন বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান পাপন৷ শনিবার তিনি জানান, ‘‘ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে চুক্তির তিন কোটি ডোজ টিকা আমদানির চুক্তি হয়েছে৷ আগামী দুই-একদিনের মধ্যেই চুক্তির প্রথম চালান ৫০ লাখ টিকা বাংলাদেশে আসবে৷’’

প্রথম সারির যোদ্ধা হিসেবে সাংবাদিকরাও পাবেন এই টিকা৷ জাতীয় প্রেসক্লাব ইতিমধ্যে যারা টিকা নিতে চান তাদের নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়েছে৷ সাংবাদিকদের মধ্যে টিকা নেওয়ার আগ্রহ কেমন? জানতে চাইলে ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘‘সিনিয়রদের মধ্যে আগ্রহ ব্যাপক৷ ইতিমধ্যে শতাধিক সাংবাদিকের একটি তালিকাও প্রস্তুত করা হয়েছে৷ এদের সবাই বয়স্ক৷ তরুণদের মধ্যে আগ্রহ তুলনামূলক কম৷’’ তরুনদের মধ্যে আগ্রহ কম কেন, জানতে চাইলে প্রেসক্লাব সভাপতি বলেন, ‘‘এখানে তরুণরা চান আগে সিনিয়রদের দেওয়া হোক৷ তারপরই তারা টিকা নেবেন৷ কারণ সিনিয়রদেরই তো আগে প্রয়োজন৷’’

এদিকে শনিবার দেশে করোনা ভাইরাসে আরও ২২ জনের মৃত্যুতে বাংলাদেশে মৃতের সংখ্যা ৮ হাজার ছাড়িয়েছে৷ অন্যদিকে ২৪ ঘণ্টায় নতুন রোগী শনাক্তের সংখ্যা এপ্রিলের পর প্রথম পাঁচশ’র নিচে নেমে এসেছে৷ সব মিলিয়ে দেশে করোনা ভাইরাসে মোট মৃতের সংখ্যা আট হাজার তিন জনে দাঁড়িয়েছে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ