1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

টিকা নিয়ে বাংলাদেশে আশা ও সংশয়

সমীর কুমার দে ঢাকা
৮ জানুয়ারি ২০২১

ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে কেন অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রোজেনকার তৈরি করোনার টিকা কিনছে বাংলাদেশ? কেন সরাসরি অক্সফোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি? এমন প্রশ্ন দেশের অনেক মানুষের৷

China Corona-Pandemie | Sinopharm
ছবি: picture-alliance/Xinhua/Zhang Yuwei

বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, শুধুমাত্র সেরামের দিকে তাকিয়ে না থেকে বিকল্প অন্তত আরো একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করা উচিত ছিল৷ কোনো কারণে সেরাম থেকে এখন টিকা না এলে বাংলাদেশের টিকা পেতে আরো অন্তত ৬ মাস লেগে যাবে৷

তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ‘‘শুধু সেরাম নয়, একাধিক বিকল্প আমরা ঠিক করে রেখেছি৷ কোভাক্সের কাছ থেকে টিকা পেতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তহবিলে বাংলাদেশ ৫০ লাখ ইউরো জমা দিয়েছে৷ ফলে ওই টিকা যে আমরা পাবো সেটা নিশ্চিত৷ পাশাপাশি যেদিন খবর ছড়িয়ে পড়লো সেরাম থেকে টিকা আসবে না, সেদিনই আমরা রাশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করেছি৷ তারা আমাদের ১৭ কোটি ডোজ টিকা দিতেও সম্মত হয়েছিল৷ কিন্তু ভারত সরকার আমাদের আশ্বস্ত করেছে, ওদের দেশে যেদিন টিকা দেওয়া শুরু হবে, সেদিন বাংলাদেশও টিকা পাবে৷ ফলে রাশিয়া থেকে আমরা আপাতত টিকা আনার সিদ্ধান্ত বদলেছি৷''

অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রোজেনকার তৈরি করোনার টিকা কেন ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে আনতে হচ্ছে? জানতে চাইলে স্বাস্থ্য সচিব আব্দুল মান্নান বলেন, ‘‘আমরা অক্সফোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম৷ কিন্তু এই অঞ্চলে ওদের টিকার ডিস্ট্রিবিউটার সেরাম ইনস্টিটিউট৷ ফলে সেরাম থেকে আমাদের নিতে হচ্ছে৷ আমরা চাইলেই সব টিকা আনতে পারবো না৷ ফাইজার বা মর্ডানার টিকা সংরক্ষণের (মাইনাস ৭০ থেকে ৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সংরক্ষণ করতে হয়) কোনো ব্যবস্থাই আমাদের নেই৷ শুধু আমাদের না, পাশ্ববর্তী কোন দেশেরই নেই৷ আর সবাই যে বলছে, বিকল্প কোনো ব্যবস্থা রাখেনি, এটাও ঠিক না৷ আমরা তো চীনের সিনোভ্যাককে ট্রায়ালের জন্য অনুমোদন দিয়েছিলাম৷ কিন্তু তারাই তো পরে উল্টো আমাদের কাছে চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে ট্রায়ালের জন্য টাকা দাবি করলো৷ যারা শুরুতেই চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে তাদের উপর তো বিশ্বাস রাখা যায় না৷ আর বিকল্প সোর্স বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তো আছেই৷''

‘আমরা চাইলেই সব টিকা আনতে পারবো না’

This browser does not support the audio element.

কয়েকদিন আগে হঠাৎ করেই খবর ছড়িয়ে পড়লো ভারত সরকার নিজেদের প্রয়োজন না মিটিয়ে টিকা রপ্তানির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে৷ অথচ এ মাসেই সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে টিকা আসার কথা৷ তবে বিষয়টি সবাই অস্বীকার করেছে৷ সেরাম ইনস্টিটিউটের নির্বাহী প্রধান আদর পুনাওয়ালার এক টুইটে বলেছেন, সব দেশে করোনাভাইরাসের টিকা রপ্তানির অনুমতি রয়েছে৷ পাশাপাশি নয়াদিল্লিতে এক সংবাদ সম্মেলনে ভারতের স্বাস্থ্য সচিব রাজেশ ভূষণ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, কেন্দ্রীয় সরকার কোনো ভ্যাকসিন রপ্তানি নিষিদ্ধ করেনি এবং এ ব্যাপারে সবার নিশ্চিত থাকা উচিত৷

বাংলাদেশের বেক্সিমকো ফার্মার সঙ্গে সেরাম ইনস্টিটিউটের মধ্যকার চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ ও ভারত একই সময় সেরামের টিকা পাবে৷ বাংলাদেশ টিকার অনুমোদন দেওয়ার এক মাসের মধ্যে সেরাম বাংলাদেশকে টিকা দেবে৷ প্রথমে ৫০ লাখ টিকা দেবে৷ পরে প্রতি মাসে ৫০ লাখ করে মোট ৩ কোটি টিকা দেওয়ার কথা৷ বেক্সিমকো ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান বলেন, ‘‘আমরা আগেই  সেরামের টিকা বুকিং দিয়েছি৷ এটা আমরা পাবোই৷ এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই৷ তাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ রয়েছে৷’’

সেরাম থেকে টিকা পাওয়া না পাওয়ার খবরের মধ্যেই গত সোমবার বাংলাদেশে অক্সফোর্ডের টিকার জরুরি আমদানির অনুমতি দেয় সরকারের ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর৷ এরপর সেরামকে ৫০৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা পাঠানো হয়৷ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, ‘‘আমরা সেরামকে টাকা পাঠিয়েছি৷ এই টাকা শুধু টিকা বাবদ৷ বেক্সিমকোকে আমরা এখন কোনো টাকা দিচ্ছি না৷ তারা টাকা পাবে দেশে টিকা এসে পৌঁছার পর৷ আর সেরামকে আরেকধাপ টাকা পাঠানো হবে শিপমেন্টের সময়৷

শুধুমাত্র সেরামের উপর নির্ভর করা প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘‘একটি প্রতিষ্ঠানের উপর নির্ভর করাতে যেটা হয়েছে ওদের টিকা এখন আমরা না পেলে অন্য টিকা পেতে অনেক সময় লেগে যাবে৷ কারণ, এখন তো টিকার অনেক ডিমান্ড৷ সবাই কিনতে চাচ্ছে৷ কিন্তু আগে যারা বুকিং দিয়েছে, তারা আগে পাবে৷ একাধিক বিকল্প না হোক অন্তত আরো একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করা উচিত ছিল৷ কোভ্যাক্সের কাছ থেকে কবে টিকা পাওয়া যাবে সেটাও তো নিশ্চিত নয়৷ তারপরও বেশ কয়েকটি টিকা ইতিমধ্যে বাজারে এসেছে, কয়েকদিনের মধ্যে আরো কয়েকটি আসছে৷ ফলে টিকা পেতে খুব একটা সমস্যা হবে না৷ আর সরকার তো বড় অংকের টাকা টিকার জন্য বরাদ্দও রেখেছে৷ ফলে টাকা থাকলেও এখন টিকা প্রাপ্তি কিন্তু নিশ্চিত না৷’’

টিকা প্রাপ্তির বিষয়ে বাংলাদেশ কি সঠিক পথে আছে? রোগ তত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা মুস্তাক হোসেন মনে করেন, ‘‘বাংলাদেশ সঠিক পথেই আছে৷ এখন আপনি যত টিকা দেখছেন, সব টিকা কি আমাদের উপযোগী? উত্তর- না৷ তাহলে আমাদের দেশের জন্য যেটা উপযোগী, সেটাই তো কিনতে হবে৷ এই হিসেবে অক্সফোর্ডের টিকাই সবচেয়ে উপযোগী৷ এটা মাইনাস ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সংরক্ষণ করতে হয়৷ সেটার জন্য চুক্তি হয়েছে৷’’ আরো কোনো বিকল্প রাখা যেতো?  এ প্রসঙ্গে জনাব হোসেন বলেন, ‘‘আমি মনে করি আর প্রয়োজন নেই৷ ১৬-১৭ কোটি মানুষের দেশে কত কোটি টিকার প্রয়োজন? কোভ্যাক্স থেকে তো আমরা সাড়ে ৩ কোটি টিকা পাচ্ছি৷ সেরাম থেকে পাচ্ছি ৩ কোটি৷ এগুলো পেতে পেতে অন্য টিকাও বাজারে সহজলভ্য হয়ে যাবে৷ আমি মনে করি, সবকিছু ঠিক পথেই আছে৷’’

সেরাম ইনস্টিটিউট যদি চুক্তি ভঙ্গ করে এখন টিকা না দেয় তাহলে বাংলাদেশ কি করবে?  অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘‘এটা তো জি টু জি চুক্তি না৷ দু'টি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চুক্তি৷ ফলেভারত সরকার এই চুক্তিতে বাধা দিতে পারবে না৷ শুধুমাত্র রাষ্ট্রীয় জরুরি অবস্থা জারি হলেই চুক্তি ভঙ্গ হতে পারে৷ না হলে চুক্তি ভঙ্গ নিয়ে বেক্সিমো ভারতে আদালতে মামলা করতে পারে৷ এই ধরনের চুক্তি ভঙ্গ অনেক কঠিন৷ তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, শুধু দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চুক্তি না, এটা রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে দেখভাল করা হচ্ছে৷ আমরাও যোগাযোগ রাখছি, আশা করি নির্দিষ্ট সময়েই টিকা পেয়ে যাবো৷

‘অন্তত আরো একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করা উচিত ছিল’

This browser does not support the audio element.

সেরাম ইনস্টিটিউট ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প কি ছিল বাংলাদেশের সামনে? এখনই বা কী করছে স্বাস্থ্য অধিদফতর? স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, ‘‘সেরাম ও কোভ্যাক্স ছাড়াও বেশি কিছু উদ্যোগ রয়েছে আমাদের৷ ইতিমধ্যে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য দেশীয় প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেককে অনুমতি দেওয়া হয়েছে৷ পাশাপাশি বেক্সিকোর মতো দু'টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে টিকা আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে৷ তারা চীনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করছে৷ তারাও বেশ কিছু টিকা আনার ব্যবস্থা করছে৷ এখন গণহারে তো সবাইকে অনুমোদন দেওয়া যাবে না৷ পুরো বিষয়টি আমরা দেখভাল করছি৷ আমাদের নিয়ন্ত্রণে রেখেই ব্যবস্থা হচ্ছে।''

প্রসঙ্গত, ফাইজার-বায়োএনটেক ও মডার্নার টিকা বেশ আগেই অনুমোদন পেয়েছে৷ রাশিয়া ও চীনের টিকা একাধিক দেশে ব্যবহৃত হচ্ছে৷ এখন অন্তত ৩০টি দেশে বিভিন্ন কোম্পানির টিকা দেওয়া হচ্ছে৷ কোনো কোনো দেশে একাধিক কোম্পানির টিকা ব্যবহৃত হচ্ছে৷ আগামী দু'এক মাসের মধ্যে আরো কয়েকটি নতুন টিকা ব্যবহারের সম্ভাবনাও রয়েছে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ