বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের করোনার টিকা নেয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে৷ এ নিয়ে ডয়চে ভেলের কাছে ব্যাখ্যা তুলে ধরেছেন তিনি৷
ফাইল ছবিছবি: M. Haque
বিজ্ঞাপন
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটির মাধ্যমে এমন বার্তা ছড়িয়েছে যে ‘মন্ত্রী করোনার টিকা না নিয়েই ফটোসেশন করেছেন’৷ এ বিষয়ে জানতে চাইলে আ ক ম মোজাম্মেল হক ডয়চে ভেলেকে জানান, তিনি যে টিকা নিয়েছেন, সেই প্রমাণ তার কাছে আছে৷ তবে ‘সাংবাদিকদের অনুরোধে’ ছবির জন্য ‘টিকা নেয়ার পোজ’ দিয়েছিলেন তিনি৷ মন্ত্রীর টিকা নেয়ার বিষয়টি জানিয়েছেন দায়িত্বরত চিকিৎসক ও সেসময় সেখানে উপস্থিত কয়েকজন সাংবাদিকও৷
আ ক ম মোজাম্মেল হক
This browser does not support the audio element.
ডয়চে ভেলেকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, ‘‘আমি ১৭ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ের ক্লিনিকে টিকা নিয়েছি৷ সেখানে সাংবাদিকরাও ছিলেন৷ তারা অনেকেই ছবি ও ভিডিও নিয়েছেন৷ তারা আমাকে টিকা নিতে দেখেছেন৷ আর টিকা নেয়ার প্রমাণপত্রও আমার কাছে আছে৷ তারপরও যদি কেউ মিথ্যাচার করে তাহলে কী বলার আছে!’’
তিনি জানান, তিনি নিজেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়ার কথা শুনেছেন৷ অনেকে তাকে ফোন করেছে৷ কিন্তু ভিডিওটি তিনি দেখেননি, তাই বিষয়টি বুঝতে পারছেন না৷
তিনি আরো বলেন, ‘‘টিকা নেয়ার সময় অনেক সাংবাদিক থাকলেও পরে কেউ কেউ বলেন তারা ছবি পাননি৷ তাদের অনুরোধে আমি আবার পোজ দিই৷’’
মন্ত্রী জানান, বিভ্রান্তি নিরসনে দুই ধরনের ভিডিও তিনি শনিবার সন্ধ্যায় ইউটিউবে দিয়েছেন৷ এরপরও কেউ ‘বিভ্রান্তি’ ছড়ালে আইনগত ব্যবস্থা নিবেন৷
এদিকে, সচিবালায় ক্লিনিকের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াস চৌধুরীও মন্ত্রীর টিকা গ্রহণের কথা জানান৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘মন্ত্রী টিকা নিয়েছেন৷ তার দ্বিতীয় ডোজ নেয়ারও সময় চলে এসেছে৷ তবে যে ভিডিওর কথা বলা হচ্ছে এটা টিকা দেয়ার পরে নেয়া৷ টিকা নেয়ার পর কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের অনুরোধে মন্ত্রী পরে আবার টিকা নেয়ার পোজ দেন৷ এটা অনেকের ক্ষেত্রেই হয়েছে৷’’
ক্লিনিকে সিনিয়র স্টাফ নার্সের দায়িত্বে থাকার স্বপ্না রানীর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আমার ঠিক মনে নাই, তবে আমি তিনজন মন্ত্রীকে টিকা দিয়েছি৷ সম্ভবত তার মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীও ছিলেন৷’’ তিনি বলেন, ‘‘বুথে জামা খুলে অনেকেই টিকা নেন৷ তাই বাইরে এসে জামা পরে আবার পোজ দেন ছবি তোলার জন্য৷ এরকম অনেকেই করেছেন৷ তখন আমরা ছবি নেয়ার সময় টিকা দেয়ার মত ডেমো করি৷’’
স্বপ্না রানী
This browser does not support the audio element.
মন্ত্রীর টিকা নেয়ার সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন জাগো নিউজের প্রতিবেদক ইসমাইল হোসেন রাসেল৷ তিনি বলেন, ‘‘মন্ত্রী টিকা নিয়েছেন৷ কিন্তু কয়েকটি টিভি স্টেশনের ক্যামেরা পার্সন একটু পরে আসায় তারা ফুটেজ পাননি৷ তখন মন্ত্রী তাদের অনুরোধে আবার পোজ দেন৷’’
এটিএন নিউজের ক্যামেরা পার্সন সোহেল রানা সেরকমই একজন৷ তিনি জানান, মন্ত্রী যখন টিকা নেন তার ভিডিও চিত্র একমাত্র বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন বিটিভি পেয়েছিল৷ ‘‘তিনি টিকা নেয়ার পর উঠেও গিয়েছিলেন৷ আমাদের অনুরোধে তিনি আবার বসে পোজ দেন৷ তখন তো তাকে আবার টিকা দেয়া যায় না৷ সেই ভিডিও নিয়ে হয়তো কেউ বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে,’’ বলেন রানা৷
উল্লেখ্য, ফেসবুক ও ইউটিউবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর ‘টিকা নেয়া’ ও ‘পোজ দেয়া’ সংক্রান্ত দু'টি ভিডিওই দেখা গেছে৷ তবে ডয়চে ভেলের পক্ষে কোনটিই স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি৷
যেভাবে চলছে করোনার টিকা দেয়ার কার্যক্রম
বাংলাদেশে প্রথম পর্যায়ে ৩৫ লাখ মানুষকে করোনা ভাইরাসের টিকা দেওয়ার লক্ষ্যে গত ২৭ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় কার্যক্রম। সারাদেশে এক হাজার পাঁচটি কেন্দ্রে চলছে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার এই টিকা দেয়া। দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Mortuza Rashed/DW
অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা
প্রাথমিক পর্যায়ে করোনা ভাইরাসের টিকা নেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষ সরকারি কর্মচারি, চল্লিশোর্ধ্ব ব্যক্তি এবং সম্মুখসারির যোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে নিবন্ধনের সুযোগ দিচ্ছে।
ছবি: Mortuza Rashed/DW
ভয় কেটে যাচ্ছে
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের করোনা টিকাদান কেন্দ্রের ইনচার্জ হামিদা বেগম বলেন, “শুরুতে মানুষের মাঝে অনেক শঙ্কা এবং ভয় ছিল। কিন্তু গত ১০ তারিখ থেকে প্রচুর মানুষ কেন্দ্রে আসছে। গড়ে আমরা দৈনিক ১৫০০-র চেয়েও বেশি মানুষকে টিকা দিচ্ছি৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
নেই সামাজিক দূরত্বের বালাই
একাধিক টিকাদান কেন্দ্রে ঘুরে কোথাও টিকা দিতে আসা মানুষদের মাঝে সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করতে দেখা যায়নি। একটি কেন্দ্রের কর্তব্যরত একজন নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন “সীমিত পরিসরে শুরু করায় এখন সব ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না। তাছাড়া সাধারণ মানুষের এ বিষয়ে সচেতনতার অভাবও রয়েছে৷”
ছবি: Mortuza Rashed/DW
চলছে কাউন্সেলিং
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভ্যাকসিন গ্রহণের পর পর্যবেক্ষন কক্ষে বিশ্রাম করছেন মিরপুর থেকে আসা এম শামসুল হক। টিকার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে তাকে বুঝিয়ে দিচ্ছেন কর্তব্যরত সেবিকা। টিকা নেওয়ার পর কেমন লাগছে- জানতে চাওয়ায় তিনি বলেন. ‘‘আলাদা কোনো শারীরিক অনুভূতি নেই৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
ক্ষোভ
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে করোনা টিকা নিতে সস্ত্রীক এসেছিলেন মীর কবির হোসেন। পাঁচ তলায় লিফট ছাড়া উঠে তিনি ক্ষুব্ধ৷ জানালেন, তারা দু’জনই হৃদরোগ এবং শ্বাসকষ্টের রোগী। বয়স্ক রোগীদের কথা ভেবে বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে মনে করেন তারা৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
বন্ধ অন স্পট নিবন্ধন
করোনা ভাইরাসের টিকাদান কার্যক্রমে গত ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১০ লাখের বেশি নিবন্ধন হওয়ায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের এক ঘোষণার মাধ্যমে অন স্পট নিবন্ধন স্থগিত করা হয় এবং শুধু অনলাইনে নিবন্ধনের সুযোগ রাখা হয়। কবে আবার এ সুযোগ চালু করা হবে, সে সুম্পর্কে কিছু জানা যায়নি।
ছবি: Mortuza Rashed/DW
নেই আলাদা পর্যবেক্ষণ কক্ষ
রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল একটি ছোট কনফারেন্স কক্ষে টিকা দেওয়ার কার্যক্রম চলছে। নেই পৃথক কোনো টিকা পরবর্তী পর্যবেক্ষণ কক্ষ। এ কারণে অনেককে ভোগান্তিতে পড়তে দেখা যায়।
ছবি: Mortuza Rashed/DW
এসেছেন সপরিবারে
পরিবারের পাঁচজন সদস্যসহ টিকা কেন্দ্রে এসেছেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা খান মো. ইসহাক। ভ্যাকসিন নেওয়ার পর পর্যবেক্ষণ কক্ষে বিশ্রাম নিতে নিতে জানালেন, টিকা নিতে পেরে তিনি সন্তুষ্ট এবং সকলের প্রতি তার আবেদন, সবাই যেন কোনো শঙ্কা ছাড়াই টিকা নেন।
ছবি: Mortuza Rashed/DW
দ্বিতীয় ডোজ আট সপ্তাহ পর
প্রথম ডোজ নেওয়ার পরই আট সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার তারিখও নির্ধারণ করে দেয়া হচ্ছে। এর মাঝে কোনো ধরনের শারীরিক সমস্যায় নির্ধারিত ফোন নম্বরে যোগাযোগ করার অনুরোধও জানিয়ে রাখছেন টিকা দেয়ার কাজে সংশ্লিষ্টরা৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
অনলাইন নিবন্ধনে জটিলতা
করোনার টিকে নিতে নিবন্ধন করতে হচ্ছে ‘সুরক্ষা’ ওয়েবসাইটে। কিন্তু অনেকেই জানেন না OTP (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড) কী। খোদ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে কর্মকর্ত একজনও নাম না প্রকাশের শর্তে জানিয়েছেন, নিবন্ধনে তিনি নিজেও ভোগান্তিতে পড়েছেন এবং আরেকজনের মাধ্যমে করিয়ে নিয়েছেন। প্রযুক্তিতে পিছিয়ে থাকা সাধারণ মানুষকেও এ সমস্যায় পড়তে হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
ছবি: Mortuza Rashed/DW
ভিআইপি বুথ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)-তে গিয়ে ভিআইপি বুথ খোলা হয়েছে। কারা এর আওতায় পড়বেন জানতে চাইলে কর্তব্যরত ব্যক্তি জানান, মন্ত্রীপরিষদ, বিচারবিভাগ, সচিবালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের কর্তব্যরতরা এই বিশেষ বুথে টিকা নিতে পারবেন।
ছবি: Mortuza Rashed/DW
স্বেচ্ছাসেবক
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ একাধিক করোনা টিকা কেন্দ্রে গিয়ে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির স্বেচ্ছাসেবকদের কর্মসূচিতে সহযোগিতা করতে দেখা গেছে। টিম লিডার নাফিজ কালাম নিবিড় জানান, তাদের ২০ জনের একটি দল বিএসএমএমইউতে আসা টিকাগ্রহীতাদের রেজিস্ট্রেশন থেকে শুরু করে পর্যবেক্ষণ পর্যন্ত পুরোটা সময় সেবা দিচ্ছেন।