1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

টিকিটের আশায় রেলস্টেশনে রাতের পর রাত

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৩ জুলাই ২০২২

কমলাপুর রেলস্টেশনে এখন রাত আর দিন নেই৷ টিকিট না পেয়ে ঠায় দাড়ানো যাত্রীদের অনেকে৷ পরদিন যদি অন্য তারিখের টিকিট পাওয়া যায় সেই আশা তাদের৷

Bangladesh Eid al-Adha Festival
ছবি: Reuters/M. P. Hossain

ঈদে রেলের আগাম টিকিট নিয়ে এবারও যাত্রীদের অভিযোগের অন্ত নেই৷ অনলাইনে টিকিট পাচ্ছেন না৷ রাত জেগে স্টেশনে লাইন দিয়েও টিকিট মিলছে না৷ নির্ধারিত দিনের টিকিট না পেয়ে তারা আবারো রাত জেগে অপেক্ষা করছেন৷ পরের তারিখের টিকিট পেতে চান তারা৷

যাত্রীদের দাবি, অল্প কিছু টিকিট বিক্রির পর কাউন্টার থেকে বলা হচ্ছে যে, টিকিট শেষ৷ এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে, ট্রেনের টিকিট যাচ্ছে কোথায়?

তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, যাত্রীদের দাবি সঠিক নয়৷ তাছাড়া চাহিদার চেয়ে টিকিটও অনেক কম৷ 

এদিকে এবারও গত ঈদে টিকিট জালিয়াতির জন্য অভিযুক্ত সহজ ডটকমকে অনলাইন ও কাউন্টারে টিকেট ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেয়ায় প্রশ্ন উঠেছে৷

কোহিনুর বেগম ও তার এক বান্ধবী ঈদে দিনাজপুরে গ্রামের বাড়িতে যাবেন৷ চাকরির পড়াশোনার জন্য তারা ঢাকায় থাকেন৷ শনিবার রাত ১১টায় ট্রেনের অগ্রিম টিকিটের জন্য কমলাপুর রেলস্টেশনে লাইনে দাঁড়ান তারা৷ কিন্তু রোববার সকালে তারা টিকিট পাননি৷ তারা কাউন্টারে পৌঁছানোর আগেই টিকিটি শেষ হয়ে যায়৷

কোহিনুরের সঙ্গে কথা হয় রোববার বিকেল চারটার দিকে৷ তিনি জানান, ‘‘রাতে আমরা স্টেশনেই লাইন ধরে থাকি এখানেই ঘুমাই, খাওয়াদাওয়া করি৷ আগামীকাল (সোমবার) সকাল ৮টা পর্যন্ত এভাবে থাকব ৷ তখন এই লাইনে পরবর্তী তারিখের টিকিট দেয়া হবে, যদি পাই এই আশায়৷''

কোহিনুরের মত আরো অনেকেই ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টা ধরে টিকিটের আশায় স্টেশনে আছেন৷ একটি কাউন্টারে তিনশজন টিকিটের জন্য লাইনে আছেন৷

‘স্টেশনেই ঘুমাই, খাওয়াদাওয়া করি’

This browser does not support the audio element.

জানা গেছে, ওই কাউন্টার থেকে ৫০ জনকে টিকিটি দেয়ার পর বলা হচ্ছে টিকিট শেষ৷ বাকিরা অপেক্ষা করতে থাকেন পরবর্তী তারিখের টিকিটের জন্য৷

আরেক যাত্রী রাসেল আহমেদের অপেক্ষা আরো দীর্ঘ৷ তিনি শনিবার সকাল ৮টা থেকে টিকিটের জন্য  লাইনে আছেন৷ ঈদের ছুটিতে পরিবার নিয়ে ঠাকুরগাঁও যাবেন৷ তার পাঁচটি টিকিট দরকার৷  কিন্তু নির্ধারিত চারটিও পাবেন কি না তিনি নিশ্চিত নন৷ ৭ তারিখের টিকিট না পেয়ে ৮ তারিখের টিকিটের আশায় লাইনে দাঁড়ানো আছেন তিনি৷  

তার অভিযোগ, ‘‘অনলাইনে অনেক চেষ্টা করেও টিকিট কাটতে পারিনি৷ নির্ধারিত সময়ে সার্ভার বা অ্যাপে ঢুকা যায় না৷’’

তার কথা, ‘‘তারপরও অর্ধেক টিকিট যদি কাউন্টারে দেয়া হয় তাহলে আমাদের রুটে কাউন্টারে ৬০০ টিকিট দেয়ার কথা প্রতিদিন৷ কিন্তু ৫০-৬০টি টিকিট দেয়ার পর শেষ হয়ে যায় কীভাবে?''

এই অভিযোগ প্রায় সবার৷ তাদের কথা, ‘‘অনলাইনে টিকিট পাচ্ছি না৷ কাউন্টারেও নাই৷ তাহলে টিকিট যাচ্ছে কোথায়?’’

কমলাপুর রেলস্টেশনের কাউন্টারে দিনে একবার টিকিট বিক্রি করা হয়৷ এ সময় টিকিট না পেলে আবার ২৪ ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়৷ অর্থাৎ পরেরদিনের জন্য অপেক্ষা করতে হয়৷

তাই যারা লাইনে দাঁড়ান তারা নিজেরাই সিরিয়াল নাম্বারের ব্যবস্থা করেন৷ সেই নাম্বার ধরে অপেক্ষার লাইন সামনে যেতে থাকে৷

আর এই লাইনে জায়গা ধরে রাখার জন্য ভাড়ায় লোক পাওয়া যায়৷ ২৪ ঘন্টা লাইনে দাঁড়ানোর জন্য একজনকে দিতে হয় এক হাজার টাকা থেকে দেড় হাজার টাকা৷ সঙ্গে খাওয়া দাওয়ার খরচ৷

জান্নাতুল আরশী অবশ্য এটা বুঝতে পারেননি৷ আর তাই বিপাকে পড়েছেন তিনি৷

তিনি শনিবার সন্ধ্যা ৭টায় এসে লাইন দাঁড়ান৷ কিন্তু রবিবার সকালে টিকিট পাননি৷ তার সর্বশেষ সিরিয়াল ছিলো ৫০৷ এরপর সোমবার সকালে টিকিট পাবেন এই আশায় তিনি অপেক্ষা করছিলেন৷ কিন্তু রোববার দুপুরে ফ্রেস হওয়ার জন্য লাইন ছেড়ে বাইরে গেলে ফিরে এসে দেখেন তার সিরিয়ালটি অন্যরা দখল করে ফেলেছে৷ তিনি যাবেন গাইবান্ধা৷

আরশী বলেন, ‘‘সারারাত লাইনে থেকে এখন আমি হতাশ৷ সোমবারও টিকিট পাব কি না জানি না৷ তবুও আবার লাইনের পেছনে দাঁড়িয়েছি৷ আজ (রোববার) রাতেও স্টেশনেই থাকব৷’’

১ জুলাই থেকে ট্রেনের আগাম টিকিট দেয়া শুরু হয়েছে, দেয়া হবে ৫ জুলাই পর্যন্ত৷ ১ তারিখে দেয়া হয়েছে ৫ তারিখের, ২ তারিখে ৬ তারিখের, ৩ তারিখে ৭ তারিখের, ৪ তারিখে ৮ তারিখের এবং ৫ তারিখে দেওয়া হচ্ছে ৯ তারিখের টিকিট৷

বাংলাদেশে পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে ১০ জুলাই৷

‘অনলাইনে পাচ্ছি না, কাউন্টারেও নাই, টিকিট যাচ্ছে কোথায়’

This browser does not support the audio element.

টিকিটের শতকরা ৫০ ভাগ অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে৷ অনলাইনে আবার অর্ধেক অ্যাপে এবং অর্ধেক ওয়েবসাইটে পাওয়া যাচ্ছে৷ একজন যাত্রী সর্বোচ্চ চারটি টিকিট কিনতে পারছেন৷ টিকিটি কিনতে জন্ম নিবন্ধন সনদ অথবা জাতীয় পরিচয়পত্র লাগছে৷

ঢাকায় মোট ৬টি জায়গা থেকে টিকিট দেয়া হচ্ছে৷ ঈদ উপলক্ষে ছয় জোড়া বাড়তি ট্রেন দেয়া হয়েছে৷ সব মিলিয়ে ট্রেন হলো ৪৪ জোড়া৷ তবে ছয় জোড়া বিশেষ ট্রেনের টিকিট অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে না৷ কাউন্টার থেকেই দেয়া হচ্ছে৷

প্রতিদিন অনলাইন ও কাউন্টার মিলিয়ে ২৮ হাজার টিকিট দেয়া হচ্ছে৷

এর আগের ঈদে বিতর্কিত প্রতিষ্ঠান সহজ ডটকমকে দিয়ে এবারও কাউন্টার ও অনলাইন সব ধরনের টিকেট ব্যবস্থাপনা করা হচ্ছে৷ গত ঈদ-উল-ফিতরের সময় সহজ ডটকমের সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার মো. রেজাউল করিমকে টিকিট জালিয়াতির অভিযোগে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব৷

তিনি অনলাইনের তিন হাজার টিকিট জালিয়াতির মাধ্যমে উচ্চ মূল্যে বিক্রির কথা স্বীকার করেন তখন৷ প্রতি ঈদেই সহজ ডটকমের সার্ভার ব্যবহার করে তিনি এই জালিয়াতি করে আসছিলেন বলে স্বীকার করেন৷

তবে র‌্যাব তখন আরো অনেক বেশি টিকিট জালিয়াতির আলামত উদ্ধারের কথা বলেছিল৷

তবে সহজ ডটকমের মুখপাত্র ফরহাদ আহমেদ দাবি করেন, ‘‘রেলের টিকিট নিয়ে কোনো দুর্নীতি বা অব্যবস্থাপনা হচ্ছে না৷ মানুষ বুঝতে ভুল করছে৷’’

তার দাবি, ‘‘অনলাইনে প্রতিদিন সকাল ৮টায় টিকিটি দেয়া শুরুর দুই-এক মিনিটের মধ্যেই ওই দিনের টিকিট শেষ হয়ে যাচ্ছে৷ তাই অন্যরা পাচ্ছেন না৷ আর যাদের ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক দুর্বল তারা ঢুকতে পারছেন না৷ ভিড়ের মধ্যে বসে অনলাইনে যারা টিকিট কাটার চেষ্টা করেন তারাই পান না৷ কারণ তাদের নেটওয়ার্ক দুর্বল থাকে৷ কাউন্টারেও আমাদের ব্যবস্থাপনায় টিকিট দেয়া হয়৷ আমরা তো নির্ধারিত টিকিটের বেশি দিতে পারব না৷ যত টিকিট তার চেয়ে চাহিদা অনেক বেশি৷ ফলে যারা টিকিট পান না তারা অভিযোগ করেন৷’’

কোনো দুর্নীতি বা অব্যবস্থাপনা হচ্ছে না, মানুষ বুঝতে ভুল করছে: সহজ ডটকমের মুখপাত্র ফরহাদ আহমেদ

This browser does not support the audio element.

গত ঈদে সহজ ডটকমের সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ারকে টিকিট জালিয়াতির অভিযোগে গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘আসলে তিনি আমাদের সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার নন৷ তিনি একজন স্টেশন সাপোর্ট স্টাফ৷ আমাদের সার্ভারে তার কোনো অ্যাকসেস ছিলো না৷ কোনো টিকিট জালিয়াতি হয়নি৷ র‌্যাব বিষয়টি ভুলভাবে ব্যাখ্যা করেছিল৷ আমরা অভিযুক্তকে চাকরিচ্যুত করেছি৷’’

তিনি জালিয়াতি না করে থাকলে তাকে চাকরিচ্যুত করেছেন কেন প্রশ্ন করলে সহজ ডটকমের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘‘১০ জন লোককে লাইনে বসিয়ে রাখলে একজন চারটি করে ৪০টি টিকিট পাওয়া যায়৷ তিনি হয়তো এভাবে কিছু করেছেন৷’’

এদিকে কমলাপুর রেল স্টেশন ম্যানেজার মাসুদ সারওয়ার দাবি করেন, ‘‘যাত্রীরা যেসব অভিযোগ করছেন এখন পর্যন্ত তার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি৷ আসল বিষয় হলো চাহিদার চেয়ে টিকিট অনেক কম৷’’

গত ঈদে জালিয়াতির অভিযোগে সহজ ডটকমের সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ারকে আটকের পর এবারো তাদের কেন টিকিট ব্যবস্থাপনায় রাখা হলো জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘এটা রেল মন্ত্রণালয়ের বিষয়৷ তারাই ঠিক করেন৷’’

আর সহজ ডটকম বলেছে, ‘‘প্রতিষ্ঠান হিসেবে তারা জড়িত নন৷ ওই কর্মচারীর বিরুদ্ধে যদি আদালতে অভিযোগ প্রমাণ হয় তাহলে সে শাস্তি পাবে৷’’

এ বিষয়ে চেষ্টা করেও রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ