আইনকানুন, বিধিনিয়মের ফাঁসে ইউরোপে এসে পদে পদে বাধার সামনে পড়ছেন শরণার্থীরা৷ ডাবলিন চুক্তির কারণে তাঁদের সামনে সীমাহীন ইউরোপে অবাধ চলাচলের পথ বন্ধ৷ রাষ্ট্রজোট হিসেবে ইইউ-র কোনো সার্বিক সমাধানসূত্রও নেই৷
বিজ্ঞাপন
অনেক শরণার্থীর গন্তব্যই জার্মানি৷ সেখানেই সবচেয়ে বেশি শরণার্থী আশ্রয় পাচ্ছেন৷ শুধু সরকার নয়, সাধারণ মানুষও তাঁদের প্রতি সংহতি দেখিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে৷ হাতে গোনা চরম দক্ষিণপন্থিদের তাণ্ডব নিয়ে তাই বেশিরভাগ মানুষই মাথা ঘামাচ্ছে না৷ হাঙ্গেরিতে আটকে পড়া শরণার্থীরা ‘জার্মানি, জার্মানি’ রব তুলছেন৷ এ বিষয়ে একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন শেরিং লামা শেরপা৷
মহম্মদ ইসমাইল জার্মানির একটি ট্রেনের গায়ে আরবি ভাষায় লেখা একটি গ্রাফিটির ছবি শেয়ার করেছেন৷ তাতে শরণার্থীদের স্বাগত জানানো হয়েছে৷
শরণার্থী সংকটের মাঝে জার্মানির অনেক মানুষের সংহতির অনেক দৃষ্টান্ত গোটা বিশ্বের নজর কাড়ছে৷ সেই বিষয়টিই তুলে ধরেছেন লান্স অ্যান্ডারসন৷
শরণার্থীদের নিয়ে সংকটে ইউরোপ
ইউরোপে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নিয়ে দেখা দেয়া সংকট দিনে দিনে বড় হচ্ছে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সীমান্ত সুরক্ষা কর্তৃপক্ষ ফ্রন্টেক্স-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী এ বছরের প্রথম সাত মাসে ৩ লক্ষ ৪০ হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী ঢুকেছে ইউরোপে৷
ছবি: Reuters/L. Balogh
জার্মানির ওপর বহুমুখী চাপ
শরণার্থীদের নিয়ে জার্মানিতে উদ্বেগ বাড়ছে৷ বেশ কিছুদিন ধরেই আঙ্গেলা ম্যার্কেল বলছেন, শরণার্থী সংকট ইউরোপের সবচেয়ে বড় সংকট হতে চলেছে৷ আশঙ্কা সত্যি হওয়ার কিছু লক্ষণ দেখা যাচ্ছে৷ এ বছর আট লাখেরও বেশি শরণার্থী জার্মানিতে আসবে বলে জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আশঙ্কা৷ শরণার্থীবিরোধী বিক্ষোভ দানা বাঁধছে৷ তার ওপর নতুন দুশ্চিন্তা হয়ে উঠেছে হাঙ্গেরি থেকে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের জার্মানির দিকে ঠেলে দেয়ার হিড়িক৷
ছবি: Reuters/L. Foeger
জার্মানি ও অস্ট্রিয়ায় ট্রেনবোঝাই শরণার্থী
সোমবার শরণার্থীতে ভরা ট্রেন ঢুকেছে জার্মানির হামবুর্গ ও অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা শহরে৷ ট্রেনগুলো এসেছে হাঙ্গেরি থেকে৷ যাত্রীদের বেশিরভাগই সিরিয়ার নাগরিক৷ তবে তাদের কাছে কোনো পাসপোর্ট, ভিসা বা বৈধ কাগজপত্র নেই৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Kisbenedek
শরণার্থীদের চাপে বুদাপেস্ট রেল স্টেশন বন্ধ
হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টের কেন্দ্রীয় রেল স্টেশন সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে৷ মঙ্গলবার কয়েক হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী ভিয়েনা এবং মিউনিখ যাওয়ার জন্য স্টেশনে হাজির হওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেয় রেল কর্তৃপক্ষ৷ ভিয়েনার পুলিশ জানায়, বুদাপেস্টের কেলেটি স্টেশনে ৩ হাজার ৬৫০ অভিবাসনপ্রত্যাশী প্লাটফর্মে অপেক্ষারত ভিয়েনা-মিউনিখগামী ট্রেনের দিকে এগোনোর চেষ্টা করে৷ পরে সবাইকে স্টেশন থেকে বের করে দেয়া হয়৷
ছবি: Reuters/L. Balogh
হাঙ্গেরিকে আর্থিক সহায়তার আশ্বাস
এই মুহূর্তে হাঙ্গেরি খবরে এলেও, অভিবাসনপ্রত্যাশীরা এতদিন মূলত গ্রিস এবং ইটালি হয়েই ইউরোপের সমৃদ্ধ দেশগুলোতে প্রবেশের চেষ্টা করতো৷ এ বছর অন্তত ৩ লাখ অভিবাসনপ্রত্যাশী ঢুকেছে ইটালি ও গ্রিসে৷ এ কারণে দুটি দেশই ইইউর আর্থিক সহায়তা পেয়ে আসছে৷ ইইউর অভিবাসন বিষয়ক দূত জানিয়েছেন, হাঙ্গেরিকেও এ সহায়তা দেয়া হবে৷
ছবি: Reuters/B. Szabo
শরণার্থীদের বিক্ষোভ
গত সপ্তাহেই ৭১ জন শরণার্থীর গলিত লাশ পাওয়া গিয়েছিল হাঙ্গেরি সীমান্তবর্তী ভিয়েনার এক রাস্তায়৷ মর্মন্তুদ সেই ঘটনার পর শরণার্থীদের মাঝে ক্ষোভ দেখা দেয়৷ সোমবার ২০ হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশীর বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে ভিয়েনায়৷ বিক্ষুব্ধ শরণার্থীদের দাবি, ইউরোপে প্রবেশের বৈধ রুট খুলে দিতে হবে, কেননা, ‘মানবতাই সবচেয়ে বড়’৷ ওপরের ছবিতে ভিয়েনা রেল স্টেশনে আসা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Reuters/L. Foeger
শরণার্থী নিতে রাজি তবে মধ্যপ্রাচ্য বা আফ্রিকায় আপত্তি পোল্যান্ডের
মধ্যপ্রাচ্যের কোনো শরণার্থী নিতে রাজি নয় পোলিশ সরকার৷ সরকারের যুক্তি- ইউক্রেন সংকটের কারণে সেখান থেকে যাঁরা আসছে তাদের গ্রহণ করছে পোল্যান্ড, তাই আর শরণার্থী নেয়া সম্ভব নয়৷ পোল্যান্ড এতদিন সব মিলিয়ে মাত্র ২ হাজার ২০০ শরণার্থী নিতে রাজি ছিল৷ তবে ইইউ অঞ্চলে শরণার্থী সংকট বেড়ে যাওয়ায় পোল্যান্ড আরো বেশি শরণার্থী গ্রহণ করার চিন্তা করছে৷ ছবিতে পোল্যান্ডে আশ্রয় নেয়া এক চেচেন পরিবার৷
ছবি: WOJTEK RADWANSKI/AFP/Getty Images
সাইকেল চালিয়ে....!
সিরিয়া থেকে অনেকে নাকি সাইকেলেই পাড়ি দিচ্ছেন দীর্ঘ পথ৷ রাশিয়ায় প্রবেশ করেছেন অনেকে৷ কেউ কেউ ঢুকে পড়েছেন নরওয়েতে৷ নরওয়ের কিরকেনস শহরের পুলিশ কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানান, এ পর্যন্ত দেড়শ-র মতো সিরীয় সে দেশে ঢুকেছে৷ ইউরোপের দেশ হলেও নরওয়ে বা রাশিয়া ইইউ-র সদস্য নয়৷ তবে নরওয়ে সেঙেন অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত৷ তাই সেখান থেকে ইইউভুক্ত যে কোনো দেশে অনায়াসে ঢুকে পড়া যায়৷
ছবি: Reuters/J. Prakash
7 ছবি1 | 7
একদিকে জার্মানির সরকার ও মানুষের উদার মনোভাব, অন্যদিকে ব্রিটেনের সরকারের অনড় অবস্থান নিয়ে বিতর্ক দানা বাঁধছে৷ ‘অটো ইংলিশ’ নামের টুইটার ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘‘জার্মান সরকার শরণার্থীদের প্রতি যে আচরণ করছেন, তাতে আমাদের লজ্জা হওয়া উচিত৷ তারা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়েছে...’’
টম লিকিস লিখেছেন, এই মুহূর্তে ব্রিটেনের প্রতি তেমন ভালবাসা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না৷ জার্মানি ব্রিটেনের উপর চাপ বাড়াচ্ছে৷
ব্রাংকো মিলানোভিচ মনে করিয়ে দিচ্ছেন, যে নিয়তির এমনই পরিহাস যে জার্মানি ইরাক ও লিবিয়ার উপর হামলার বিরোধিতা করেছিল৷ এখন সে দেশই শরণার্থীদের জন্য সবচেয়ে বেশি কাজ করছে৷ অন্যদিকে ফ্রান্স ও ব্রিটেন শুধু পর্যবেক্ষণ করে চলেছে৷ আর অ্যামেরিকা তো অনেক দূরে৷
শরণার্থী সংকটকে কেন্দ্র করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্য গভীর বিভাজন আর গোপন কোনো বিষয় নয়৷ সাধারণ শরণার্থী নীতির খোঁজ চললেও সবাই তার সাফল্য চায় না৷ এ বিষয়ে লেখা ‘দ্য ইকোনমিস্ট’ পত্রিকার প্রতিবেদনটি শেয়ার করেছেন অনেকে৷