ভোটের টিকিট না পেয়ে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন৷ তারা এখন বলছেন, টিকিট নয়, সম্মান পেতেই৷ ক্ষুব্ধ নেত্রী বলছেন, দলেই থাকতে পেতেন না ওই ‘বিশ্বাসঘাতকরা৷
বিজ্ঞাপন
মেদিনীপুরের প্রবীণ তৃণমূল কংগ্রেস নেতা শিশির অধিকারী যখন অমিত শাহর সভায় বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন, ক্ষিপ্ত তৃণমূল নেত্রী তখন বলছিলেন, দলেই রাখা হতো না ওনাদের৷ অর্থাৎ শিশির এবং শুভেন্দু অধিকারী৷ নন্দীগ্রাম আন্দোলনে মমতা ব্যানার্জির দুই বিশ্বস্ত সৈনিক৷ তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা ঘোষণার আগে যারা দল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন, যাদের কেউ কেউ এবার বিজেপির টিকিটে ভোটেও লড়বেন, তারা নাকি এবার তৃণমূলের টিকিট পেতেন না৷ নেত্রী নানা কারণে তাদের ওপর অসন্তুষ্ট ছিলেন৷ এমনটাই রাজনৈতিক মহলের খবর ছিল৷ ফলে তাঁরা আগেভাগেই দল ছাড়েন৷ আবার এমন কেউ কেউ আছেন, যারা দলের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা অবধি অপেক্ষা করেছিলেন৷ টিকিট না পেয়ে হতাশ হয়ে তারা দল বদলেছেন৷ এখন অবশ্য তারা বলছেন, ভোটের টিকিট নয়, দলে প্রাপ্য সম্মান জুটছিল না বলেই দল ছেড়েছেন৷ নতুন দলে প্রার্থীপদ না পেলেও প্রচারে থাকবেন৷
"যারা অসভ্যতা করে, তাদের সঙ্গে আমি থাকি না": জটু লাহিড়ি
যেমন হাওড়ার ডাকসাইটে নেতা জটু লাহিড়ি৷ তিনি এবং হাওড়ার প্রাক্তন মেয়র রথীন চক্রবর্তী, তৃণমূলের দুই হেভিওয়েট এবার শিবির বদলে বিজেপিতে৷ রথীনবাবু টিকিট পেয়েছেন, জটু লাহিড়ি পাননি৷ তবু তার দাবি, বিজেপির প্রচারে তাকে পাওয়া যাবে৷ কিন্তু পুরনো দল ছেড়ে যাওয়ার পর এখন কি আক্ষেপ হচ্ছে না? ডয়চে ভেলেকে তিনি সাফ বললেন, ‘‘না না, কোনও আক্ষেপ নেই আমার৷ আমি বিজেপিতে গিয়ে বলেছি, টিকিট দিলেও আমি থাকব, না দিলেও থাকব৷ আমার কোনও দুঃখ নেই৷ কারণ, যারা অসভ্যতা করে, তাদের সঙ্গে আমি থাকি না৷ টিকিটের কোনও প্রশ্নই নেই৷ কোনও শর্ত নেই আমার৷''
পশ্চিমবঙ্গে মুসলিম ভোটের লড়াই
পশ্চিমবঙ্গে ভোটদাতাদের মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ মুসলিম। একাধিক জেলায় অনেক আসনে ভোটের ফল প্রভাবিত করেন তারা।
ছবি: Getty Images/AFP/D. Sarkar
সব চেয়ে বেশি মুর্শিদাবাদে
পশ্চিমবঙ্গের সব জেলাতেই কমবেশি মুসলিম ভোটদাতা আছেন। তবে সব চেয়ে বেশি মুর্শিদাবাদে। সেখানে প্রায় ৬৭ শতাংশ ভোটদাতা মুসলিম। তারপরেই রয়েছে মালদহ। ৫১ শতাংশ। উত্তর দিনাজপুরে ৪৯ শতাংশ। কলকাতায় ২০ শতাংশ, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ৩৫ শতাংশ, উত্তর ২৪ পরগনায় ২৬ শতাংশের মতো মুসলিম ভোটদাতা আছেন।
ছবি: Reuters/R. De Chowdhuri
মুসলিম ভোটের দাবিদার
পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে মুসলিম ভোটের প্রধান দাবিদার হলো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস এবং বামেদের নেতৃত্বাধীন সংযুক্ত মোর্চা। গত নির্বাচনে মুসলিম ভোটের সিংহভাগ পেয়েছিলেন মমতাই। এবার বাম জোটও মুসলিম ভোট ফিরে পেতে চায়। ছবিতে জনসভায় ভাষণ দিচ্ছেন বাম জোটের শরিক দলের নেতা আব্বাস সিদ্দিকি।
ছবি: Naushad Bhai
আব্বাস সিদ্দিকি ভরসা
বামেদের নেতৃত্বাধীন সংযুক্ত মোর্চায় আছে কংগ্রেস এবং আব্বাস সিদ্দিকির নবগঠিত ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট বা আইএসএফ। ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকি সম্প্রতি তার দল গঠন করেছেন। বাম ও কংগ্রেসের আশা, সিদ্দিকি মুসলিম ভোটের একটা অংশ জোটের দিকে টানতে পারবেন।
ছবি: Naushad Bhai
ওয়েইসি এখনো প্রার্থী দেননি
এমআইএম(মিম) নেতা আসাদুদ্দিন ওয়েইসি বিহারের বিধানসভা নির্বাচনে ভালো ফল করেছিলেন। তিনি অনেক আসনে আরজেডি-কংগ্রেসের মুসলিম ভোটে ভাগ বসাতে পেরেছিলেন। তাতে অবশ্য নীতীশ কুমার ও বিজেপি-র জয়ের পথ প্রশস্থ হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে অনেকদিন ধরে প্রস্তুতি নিয়েও প্রথম দফার নির্বাচনে প্রার্থী দেননি তিনি।
ছবি: Imago/Hindustan Times/S. Mehta
ওয়েইসির দলে ক্ষোভ
পশ্চিমবঙ্গে মিমের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা জাহিরুল হাসান পদত্যাগ করেছেন। ওয়েইসি প্রার্থী না দেয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি ইস্তফা দিয়েছেন। মুর্শিদাবাদের ১৩টি আসনে প্রার্থী দেয়ার কথা ছিল। সেটাও ঘোষণা করা হয়নি। ওয়েইসির সভাও বাতিল হয়েছে। ফলে ওয়েইসি কী করবেন তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
ছবি: Ians
তৃণমূলের আশা
তৃণমূল নেতাদের আশা, গতবারের মতো তারা এবারেও মুসলিম ভোটের সিংহভাগ পাবেন। তবে গতবারের তুলনায় মমতা এবার ১০ জন মুসলিম প্রার্থী কম দিয়েছেন। বিজেপি-র মোকাবিলায় তিনি হিন্দুত্বের তাসও খেলছেন। কিন্তু তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, গত দশ বছরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুসলিমদের জন্য অনেক কাজ করেছেন এবং করার চেষ্টা করেছেন।
ছবি: Indranil Aditya/NurPhoto/picture alliance
মুসলিম ভোট কোনদিকে
পশ্চিমবঙ্গে একসময় মুসলিম ভোট ভাগ হতো বাম ও কংগ্রেসের মধ্যে। মমতা বন্দ্যেপাধ্যায় তৃণমূল করার পর পরিস্থিতির বদলায়। বিজেপি-র দিকে মুসলিম ভোট বিশেষ যায় না। সে কথা মাথায় রাখলে মুসলিম ভোটদাতার কাছে বিকল্প তৃণমূল ও বাম জোট। দুই মুসলিম প্রধান জেলা মুর্শিদাবাদ ও মালদহ হলো কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি। তাদের জয় নির্ভর করছে, মুসলিমরা কতটা পাশে থাকবেন তার উপর। বাকি জেলাতে মুসলিম ভোট পাওয়ার ব্যাপারে তৃণমূল আশাবাদী।
ছবি: Getty Images/AFP/D. Sarkar
7 ছবি1 | 7
আর যিনি একদা মমতা ব্যানার্জির ঘনিষ্ঠতম সহযোগী ছিলেন, বহু মিছিলে, বহু জনসভায়, অনশন-মঞ্চে যাকে নেত্রীর পাশে দেখা যেতই, সেই সোনালী গুহ এখন কী বলছেন? অভিমান, না ক্ষোভ, কীসের তাড়না তাকে দল ছাড়তে বাধ্য করল? এক মুহূর্ত সময় না নিয়ে সোনালী বললেন, ‘‘ক্ষোভ নয়, অভিমান৷' তা হলে সেই অভিমান কাটিয়ে কি আবার পুরনো দলে ফিরবেন? কারণ নতুন দলও তো তাকে টিকিট দিল না৷ সিদ্ধান্ত কি পুনর্বিবেচনা করবেন? সোনালীর অভিমানী মন্তব্য, ‘‘পুনর্বিবেচনা তো তার (মমতা) করার কথা ছিল৷ আমি চার বারের এমএলএ৷ হেরে তো যাইনি৷ আমার বাড়িতে সিবিআই রেডও হয়নি৷ (তৃণমূলের) প্রার্থী তালিকায় এমন অনেকে আছেন, যারা সিবিআই-এর কেস খাওয়া এবং সিবিআই তাদের তলব করেছে৷''
"হেরে যাইনি, আমার বাড়িতে সিবিআই রেড–ও হয়নি": সোনালী গুহ
ক্ষোভ হোক বা অভিমান, দলত্যাগীদের ব্যাপারে কিন্তু অত্যন্ত কঠোর মনোভাব নিয়েছেন মমতা ব্যানার্জি৷ দু'দিন আগেই নন্দীগ্রামে তার চ্যালেঞ্জার, বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারীর নাম না করে বলেছেন, বাংলায় মীরজাফররা কখনও সরকার গড়ে না৷ এই বিশ্বাসঘাতকদের যে আর কখনও দলে ফেরাবেন না, তৃণমূল নেত্রীর কথায় এবং কাজেই সেটা এখন স্পষ্ট৷