টিগ্রের হাসপাতালে অনাহারে শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটেই চলেছে। কারণ না দেখিয়ে জাতিসংঘের একাধিক কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে ইথিওপিয়ার প্রশাসন।
বিজ্ঞাপন
গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে কার্যত যুদ্ধক্ষেত্র হয়ে আছে ইথিওপিয়া। টিগ্রের বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনী টিগ্রে পিপলস লিবারেশন ফ্রন্টের (টিপিএলএফ) সঙ্গে লাগাতার লড়াই হয়েছে ইথিওপিয়ার সেনার। টিগ্রে আগেই দখল করে নিয়েছিল টিপিএলএফ। এখন তারা রাজধানীর কাছে পৌঁছে গেছে। যার জেরে ইথিওপিয়াতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে সরকার।
সম্প্রতি জাতিসংঘ ইথিওপিয়ার পরিস্থিতি নিয়ে যে রিপোর্ট পেশ করেছে, তা উদ্বেগজনক। বলা হয়েছে, কোনো কারণ না দেখিয়ে হাজারেরও বেশি টিগ্রের মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জাতিসংঘের ৩৫ জন স্থানীয় কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আটক করা হয়েছে জাতিসংঘে কাজ করা একাধিক গাড়ির চালককে। কেন তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তা বলা হয়নি।
সংকটের মুখে ইথিওপিয়া
ভয়ংকর অবস্থা ইথিওপিয়ায়। বিদ্রোহী টিপিএলএফ যোদ্ধারা এবার রাজধানী আদ্দিস আবাবার দিকে এগোচ্ছে। সাবেক সেনা কর্মীদের হাতে অস্ত্র নিতে বলছে সরকার।
ছবি: Yasuyoshi Chiba/AFP/Getty Images
আদ্দিস আবাবার কাছে
রাজধানী থেকে সাড়ে তিনশ কিলোমিটার দূরের শহর দখল করে নিয়েছে টিগ্রে পিপলস লিবারেশন ফোর্স (টিপিএলএফ)। তারপর তারা রাজধানীর দিকে এগোচ্ছে। এর আগে তারা সেনাবাহিনীর কাছ থেকে টিগ্রের দখল নিয়েছিল। উপরের ছবিটি টিগ্রের রাজধানী দখলের পর টিপিএলএফের সদস্যদের।
ছবি: YASUYOSHI CHIBA/AFP
সরকারের সমর্থনে
রাজধানী আদ্দিস আবাবায় সরকার ও সেনার সমর্থনে রাস্তায় নেমেছেন সাধারণ মানুষ। বিশাল জমায়েতে তারা সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
ছবি: Tiksa Negeri/REUTERS
গৃহযুদ্ধের সম্ভাবনা
পরিস্থিতি যেদিকে এগোচ্ছে, তাতে গৃহযুদ্ধের সম্ভাবনা প্রবল হচ্ছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, বিদ্রোহী টিপিএলএফ-কে ঠেকাতে না পারলে তারা রাজধানীর দখল নিয়ে নেবে। তখন রক্তগঙ্গা বইতে পারে। গৃহযুদ্ধের সম্ভাবনাও বাড়বে।
ছবি: Eduardo Soteras/AFP
সরকারের আবেদন
সরকার ইতিমধ্যেই সাবেক সেনা অফিসার ও জওয়ানদের হাতে অস্ত্র তুলে নিয়ে বিদ্রোহীদের মোকাবিলা করার অনুরোধ করেছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধ, সাধারণ মানুষও যেন হাতে অস্ত্র তুলে নেয় এবং দেশরক্ষার জন্য এগিয়ে আসে। কার কাছে কী অস্ত্র আছে, তাও নথিভুক্ত করা হচ্ছে।
ছবি: Ben Curtis/AP Photo/picture alliance
সাবেক সেনাকর্তা এগিয়ে এলেন
সাবেক সেনাকর্তা বর্তমান সেনার সমর্থনে এগিয়ে এসেছেন। তিনি ও বর্তমান সেনাপ্রধান সংঘর্ষে নিহত সেনার উদ্দেশ্যে শোকপ্রকাশ করছেন।
ছবি: AP/picture alliance
মোমবাতি মিছিল
টিপিএলএফের হাতে যেসব সেনার মৃত্যু হয়েছে, তাদের স্মরণে মোমবাতি মিছিল আদ্দিস আবাবায়। প্রচুর মানুষ এভাবে শোকপ্রকাশ করেছেন।
ছবি: AP/picture alliance
সামিল সেনারাও
বর্তমান ও সাবেক সেনারাও মৃত সৈনিকদের উদ্দেশ্যে শোকপ্রকাশ করেছেন।
ছবি: AP/picture alliance
বিদ্রোহীদের দখলে
আমহারা অঞ্চলে বিদ্রোহীরা একটি শহর দখল করে নিয়েছে। অক্টোবরে এই শহর সেনার হাতছাড়া হয়।
ছবি: Tiksa Negeri/REUTERS
টিগ্রের রাজধানীতে
টিগ্রের রাজধানীতে এভাবেই উড়ছে টিপিএলএফের পতাকা। এই শহর পুরোপুরি টিপিএলএফের দখলে।
ছবি: Yasuyoshi Chiba/AFP
গভীর সংকট
যেভাবে এখন টিপিএলএফ এবং আমহারা ফোর্স সেনাকে পরাস্ত করে এগিয়ে আসছে, তাতে পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হয়ে উঠছে। প্রশ্ন এখন রাজধানীর দখল কে নিজের কাছে রাখতে পারবে তা নিয়ে। ফলে গভীর সংকটের মুখে পড়েছে ইথিওপিয়া।
ছবি: Ben Curtis/AP Photo/picture alliance
10 ছবি1 | 10
বস্তুত, ইথিওপিয়ার আইন অনুযায়ী, যতদিন জরুরি অবস্থা থাকবে, ততদিন কারণ না দেখিয়ে সকলকে জেলে ভরে রাখা যাবে। সমস্যা এখানেই শেষ নয়। টিগ্রেতে কার্যত অর্থনৈতিক ব্লকেড তৈরি করা হয়েছে। ফলে অনাহারে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। জাতিসংঘের রিপোর্ট অনুযায়ী, অন্তত দেড়শ শিশুর মৃত্যু হয়েছে টিগ্রের হাসপাতালে। সকলেরই বয়স পাঁচ বছরের কম। অনাহারে আরো বহু শিশু হাসপাতালে ভর্তি। স্থানীয় সূত্র ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছে, দেড়শর অনেক বেশি শিশুর মৃত্যু হয়েছে গত কিছুদিনে।
টিপিএলএফ এবং ইথিওপিয়ার সরকার এখনো পর্যন্ত আলোচনায় বসতে রাজি হয়নি। তবে জাতিসংঘ এবং পশ্চিমা দেশগুলি তাদের আলোচনায় বসার অনুরোধ জানিয়েছে। আফ্রিকার দেশগুলিও একই অনুরোধ করেছে। গত এক বছরে কয়েক লাখ মানুষ টিগ্রে ছেড়ে প্রতিবেশী দেশে পালিয়ে গেছেন। যুদ্ধে বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তবে অনাহার এখন টিগ্রের সবচেয়ে বড় সমস্যা।