ইথিওপিয়ার টিগ্রেতে একটি আটাকলে ড্রোন হামলা। মৃত ১৭, আহত বহু।
বিজ্ঞাপন
সোমবার এই ড্রোন হামলায় যারা মারা গেছেন তাদের অধিকাংশই নারী। স্থানীয় এক ত্রাণ কর্মী সংবাদসংস্থা এএফপি-কে বলেছেন, প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, একটি ড্রোন থেকে কয়েকটি বোমা ফেলা হয়। তারপরই প্রচণ্ড আওয়াজ, চিৎকার, হুড়োহুড়ি। মানুষ দিশেহারা হয়ে ছোটাছুটি করতে থাকেন।
গত শুক্রবারই একটি ত্রাণশিবিরে ড্রোন হামলা হয়েছিল, সেখানে ৫৯ জন মারা যান। আহত হন ১৪০ জন। তারপরই আটা কলে ড্রোন হামলা হলো।
জাতিসংঘের মুখপাত্র জানিয়েছেন, তারা এই ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানাতে পারবেন না। কারণ, ওই এলাকা পুরোপুরি বন্ধ করে রাখা হয়েছে। টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থাও বন্ধ রাখা হয়েছে। আদ্দিস আবাবায় ইথিওপিয়া সরকারের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, তাদের কাছে এই ধরনের কোনো খবর নেই।
টিগ্রে: যুদ্ধের বলি নারীরা
মৃতের সংখ্যা বাড়ছে, নানা ধরনের অপরাধও বেড়ে চলেছে৷ টিগ্রে কেন্দ্র করে গৃহযুদ্ধ বিশেষ করে নারীদের ওপর যৌন নিপীড়ন একটি মানবিক বিপর্যয়ে রূপ নিয়েছে৷
ছবি: Ben Curtis/AP/picture alliance
পালাচ্ছেন লাখ লাখ মানুষ
প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদের টিগ্রে আঞ্চলিক সরকারের সঙ্গে ইথিওপিয়ার কেন্দ্রীয় সরকারের গৃহযুদ্ধ চলছে। প্রচণ্ড ক্ষুধা এবং যুদ্ধাপরাধের হুমকিতে দিন কাটাচ্ছেন সে এলাকার মানুষ।স্বঘোষিত টিগ্রে ডিফেন্স ফোর্সেস- টিডিএফ টিগ্রের আঞ্চলিক রাজধানী মেকেলে পুনরায় দখল করার পর লাখ লাখ মানুষ এখন পলাতক৷
ছবি: YASUYOSHI CHIBA/AFP
দুর্ভিক্ষের হুমকি
জাতিসংঘের হিসাবে, অঞ্চলটির চার লাখের বেশি মানুষ দুর্ভিক্ষে আক্রান্ত, আরো প্রায় ১৮ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে। আবি আহমেদ এমন তথ্য অস্বীকার করে ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছেন। ইউনিসেফ বলেছে, "খাদ্য, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, পানি এবং পয়ঃনিষ্কাষণ অবকাঠামো ধ্বংসের ফলে পুষ্টির সংকট দেখা দিয়েছে।"
ছবি: AP
ধ্বংসস্তূপ
ইথিওপিয়ার সেনাবাহিনী ইরিত্রিয়ার সৈন্যদের সঙ্গে মিলে যুদ্ধ করেছে৷ কিন্তু সে যুদ্ধে কেবল টিগ্রের বিচ্ছিন্নতাবাদী যোদ্ধাদেরই নয়, বেসামরিক জনগোষ্ঠীকেও লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আবি মনে করেন, টিগ্রে অঞ্চলে প্রতিরোধ গুঁডিয়ে দেয়ার জন্য এমন ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। যুদ্ধাপরাধ এবং গণহত্যার তথ্য জড়ো হচ্ছে। পুড়ে যাওয়া গাড়ি এবং ধ্বংস হওয়া বাড়ি এখানকার নিয়মিত চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ছবি: GIULIA PARAVICINI/REUTERS
যুদ্ধের অস্ত্র ধর্ষণ
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল একটি প্রতিবেদনে জানিয়েছে, পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার জন্য ধর্ষণ এবং যৌন সহিংসতাকে কাজে লাগানো হচ্ছে। সংস্থাটির মতে, ইরিত্রিয়ার সৈন্যরাও এই অপরাধে ব্যাপকভাবে জড়িত। এক নারী বলছিলেন, "তারা নিজেদের মধ্যে কথা বলেছিল। কেউ বলছিল, 'ওকে আমরা হত্যা করি।' অন্যরা বলছিল, 'না, না। ধর্ষণই তার জন্য যথেষ্ট৷'
ছবি: Ben Curtis/AP/picture alliance
গণহত্যা এবং অস্থায়ী কবর
দুই পক্ষের যোদ্ধাদের মরদেহ সর্বত্র ছড়িয়ে রয়েছে। কখনো কখনো তাদের অস্থায়ী কবরস্থানে কবর দেয়া হয়; কখনো মরদেহ নদীতে ফেলে দেওয়া হয়, অথবা ঘটনাস্থলেই ফেলে রাখা হয়। ছবিতে একজন ইথিওপীয় সৈন্যের অস্থায়ী কবর দেখা যাচ্ছে।
ছবি: GIULIA PARAVICINI/REUTERS
কিশোর যোদ্ধা
ইথিওপিয়ার এবং ইরিত্রিয়ার সম্মিলিত বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য আরো বেশি সংখ্যক কিশোর নাম লেখাচ্ছেন। টিডিএফ-এর নতুন যোদ্ধাদের অনেকেই কেবল কৈশোরে পা দিয়েছেন। একটি অনিশ্চিত এবং সম্ভাব্য রক্তাক্ত ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে তাদের জন্য।
ছবি: YASUYOSHI CHIBA/AFP
6 ছবি1 | 6
রাজনৈতিক সমাধানের জন্য চাপ
যেদিন এই ড্রোন হামলা হয়েছে, সেদিনই মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যাবি আহমেদ। বাইডেন জানিয়েছেন, ইথিওপিয়ায় টিগ্রে পিপলস লিবারেশন ফোর্স(টিপিএলএফ) ও সেনার মধ্যে সংঘাতে প্রচুর সাধারণ মানুষ মারা গেছেন ও যাচ্ছেন। লাখ লাখ মানুষ গৃহহীন। তাই তিনি উদ্বিগ্ন। বাইডেন আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানের উপর জোর দিয়েছেন।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী অ্যাবি আহমেদ ২০১৮ সালে ক্ষমতায় এসেছিলেন। তার আগে ৩০ বছর ধরে ইথিওপিয়ায় কেন্দ্রীয় সরকার টিপিএলএফের প্রশ্নাতীত নিয়ন্ত্রণ ছিল।