ইথিওপিয়ায় টিগ্রের টোগোগা শহরের বাজারে বিমান হামলা। মৃত বহু।
বিজ্ঞাপন
দীর্ঘদিন ধরে টিগ্রের দখল নিয়ে ইথিওপিয়ার সেনা ও টিগ্রে পিপলস রেভলিউশনারি ফোর্স(টিপিএলএফ)-এর মধ্যে লড়াই চলছে। বুধবার টিগ্রের টোগোগা শহরে বিমান বাহিনী ব্যস্ত বাজার এলাকায় বোমা ফেলে। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, অন্ততপক্ষে ৪৩ জন মারা গেছেন। অভিযোগ, টিগ্রের রাজধানী থেকে এই শহরে আসার রাস্তা সেনা আটকে রেখেছিল। ফলে কোনো অ্যাম্বুলেন্স যেতে পারেনি।
প্রত্যক্ষদর্শী বিরহান জানিয়েছেন, ''এই ঘটনায় অনেকে আহত হয়েছেন। অনেকের আঘাত গুরুতর।'' সংবাদসংস্থা এএফপি-কে তিনি জানিয়েছেন, ''আমাকে রক্তের উপর দিয়েই হাঁটতে হচ্ছে।'' তার নিজের বাড়িও বিমান হামলায় ধ্বংস হয়ে গেছে।
ইথিওপিয়ার সেনার মুখপাত্র বলেছেন, ''কোনো অ্যাম্বুলেন্সকে আটকানো হয়নি।'' তবে বিমান-হামলা হয়েছে না হয়নি, তা নিয়ে তিনি কিছুই বলেননি।
তবে ইইউ-র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ''এই বিমান-হামলা খুবই উদ্বেগের বিষয়। আর অ্যাম্বুলেন্সের রাস্তা আটকে দেয়ার ঘটনা যদি সত্যি হয় তাহলে তা মর্মান্তিক বিষয়। এটা জেনিভা কনভেনশনের বিরোধী।''
যুদ্ধ নয়, খাদ্য চাই
ইথিওপিয়ার টিগ্রেতে সাড়ে তিন লাখ মানুষ অনাহারে মৃত্যুর অপেক্ষায়। ৫৫ লাখ মানুষ চরম খাদ্য সংকটে। জাতিসংঘের রিপোর্টে প্রকাশ।
ছবি: Omer Erdem/AA/picture alliance
মন্বন্তর পরিস্থিতি
জাতিসংঘের খাদ্য সংক্রান্ত সংস্থা একটি বিস্তারিত রিপোর্ট পেশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, টিগ্রের সাড়ে তিন লাখ মানুষ মন্বন্তর পরিস্থিতির মধ্যে আছে। ৫৫ লাখ॥ মানুষ খাদ্য সংকটে ভুগছেন। ২০১০ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে সোমালিয়ায় যে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল, বর্তমান পরিস্থিতি তার চেয়েও ভয়ংকর।
ছবি: AP
খাবার নেই শিশুদের
২০১০ থেকে ২০১২ সালের মন্বন্তরে সোমালিয়ায় মৃত্যু হয়েছিল প্রায় আড়াই লাখ মানুষের। তার মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি ছিল শিশু। টিগ্রের অবস্থা তার চেয়েও খারাপ বলে মনে করা হচ্ছে। শিশুদের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ বলে জানানো হয়েছে রিপোর্টে।
ছবি: Mahmoud Hjaj/AA/picture alliance
জি সেভেনে আর্জি
জাতিসংঘের মানবাধিকার সংগঠনের প্রধান মার্ক লোকক বৃহস্পতিবার একটি উচ্চপর্যায়ের ভারচুয়াল বৈঠক করেন। সেখানে জি সেভেন নেতাদের কাছে তিনি আর্জি জানান, টিগ্রে নিয়ে যেন আলোচনা করেন তারা। অনাহার কমানোর প্রস্তাব নেন।
ছবি: Baz Ratner/REUTERS
অর্থের প্রয়োজন
জাতিসংঘের বক্তব্য, টিগ্রের অবস্থা প্রতিদিন খারাপ হচ্ছে। তবে এখনো পরিস্থিতির পরিবর্তন করা সম্ভব। মানুষের কাছে খাবার এবং ওষুধ পৌঁছে দিতে হবে। কিন্তু তার জন্য বিপুল অর্থের প্রয়োজন। শক্তিশালী দেশগুলি যেন সেই অর্থের ব্যবস্থা করে। নইলে ২০ লাখ মানুষের মৃত্যু হতে পারে।
ছবি: Maria Gerth-Niculescu/DW
খাবার পৌঁছানো যাচ্ছে না
জাতিসংঘ জানিয়েছে, গ্রামের ভিতর এখনো খাবার পৌঁছে দেওয়া যাচ্ছে না। অস্ত্র নিয়ে গ্রামের বাইরে পাহারা দিচ্ছে সন্ত্রাসীরা। তাদের মোকাবিলা করার জন্যও এগিয়ে আসতে হবে শক্তিধর দেশগুলিকে।
ছবি: Minasse Wondimu Hailu/AA/picture alliance
ইথিওপিয়া সরকার এবং টিপিএলএফ
ইথিওপিয়ায় নতুন সরকার গঠনের আগে থেকেই টিগ্রের ক্ষমতা দখল করে রেখেছে টিগ্রে পিপলস লিবারেশন ফ্রন্ট। নতুন সরকারের সঙ্গে তাদের তীব্র লড়াই হচ্ছে। তারই জেরে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন লক্ষাধিক মানুষ। অনাহারে ভুগছেন লাখ লাখ মানুষ।
ছবি: Minasse Wondimu Hailu/AA/picture alliance
কবে থামবে যুদ্ধ
যুদ্ধ কবে থামবে, কেউ জানে না। পার্শ্বর্তী রাষ্ট্রগুলিও যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে মানুষকে বাঁচাতে হবে, এমনই সংকল্পের কথা বলা হয়েছে জাতিসংঘের রিপোর্টে। তার জন্য সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ছবি: Baz Ratner/REUTERS
7 ছবি1 | 7
গত নভেম্বরে টিগ্রের এই সংঘাত শুরু। টিপিএলএফ তখন সেনা ঘাঁটির উপর আক্রমণ চালিয়েছিল। টিপিএলএফই এই অঞ্চলে শাসক দল। গত বছর করোনার কারণে ভোট বাতিল হওয়ার পর টিপিএলএফের অভিযোগ ছিল প্রধানমন্ত্রী বেআইনিভাবে ক্ষমতায় আছেন। তারপরই টিগ্রেতে সেনা অভিযান হয়। সেই লড়াই এখনো চলছে।
গত সোমবারই ইথিওপিয়ায় নতুন সরকার বেছে নিতে ভোট হয়েছে। গণনা এখনো চলছে। তবে টিগ্রের মানুষ সেই ভোটে অংশ নিতে পারেননি।