ইথিওপিয়ার যুদ্ধবিধ্বস্ত টিগ্রের ৯১ শতাংশ মানুষের জরুরি ভিত্তিতে খাবার দরকার। জানাল জাতিসংঘ।
বিজ্ঞাপন
সাত মাস ধরে টিগ্রেতে লড়াই চলছে। সেনাবাহিনী ও টিগ্রে ন্যাশনাল ফোর্সের মধ্যে। সেই লড়াইয়ের ফলে টিগ্রের মানুষ খেতে পাচ্ছেন না। ৯১ শতাংশ মানুষের জরুরি ভিত্তিতে খাদ্যসাহায্য দরকার বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম(ডাব্লিউএফপি)। তারা জানিয়েছে, সেখানে ক্ষুধা মেটাতে গেলে ২০ কোটি ৩০ লাখ ডলার দরকার।
ডাব্লিউএফপি-র মুখপাত্র টমসন ফিরি জানিয়েছেন, ''টিগ্রের ৫২ লাখ বা সেখানকার ৯১ শতাংশ মানুষ অভুক্ত। এত মানুষের কাছে পুষ্টিকর খাবার পৌঁছে দেয়া একটা বড় চ্যালেঞ্জ। আমরা খুবই চিন্তিত।''
খাবার না পেলে কী হবে
গত সপ্তাহেই জাতিসংঘের এক প্রবীণ কর্মকর্তা নিরাপত্তা পরিষদকে জানিয়েছিলেন, টিগ্রেতে দুর্ভিক্ষ এড়াতে এখনই ব্যবস্থা নেয়া দরকার। জাতিসংঘের এমার্জেন্সি রিলিফ কো-অর্ডিনেটর মার্ক লোকক সংবাদসংস্থা এএফপি-কে জানিয়েছেন, ''মাস দুয়েকের মধ্যে সাহায্যের পরিমাণ বাড়াতে না পারলে দুর্ভিক্ষের সম্ভাবনা প্রবল। ৯০ শতাংশ ফসল লুট হয়েছে বা ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। ৮০ শতাংশ গবাদি পশু চুরি হয়েছে বা মেরে ফেলা হয়েছে।''
টিগ্রে: যেখানে বিপন্ন মানুষ, বিধ্বস্ত গির্জা ও মসজিদ
ইথিওপিয়ার টিগ্রে অঞ্চলে যু্দ্ধ চলছে ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে৷ টিগ্রের রাজধানী মেকেলের এই হাসপাতালটিতে শত শত মানুষ এসেছে গুলিবিদ্ধ হয়ে৷ বোমা বিস্ফোরণের ক্ষত নিয়েও এসেছেন অনেকে৷ বিদ্যুৎ বিভ্রাট, অপ্রতুল ওষুধ এবংঅপর্যাপ্ত লোকবল নিয়েই চলছে চিকিৎসা৷
ছবি: Maria Gerth-Niculescu/DW
ভুলের কারণে রক্ষা
যুদ্ধে অনেক মানুষের মৃত্যু হয়েছে৷ আহতের সংখ্যাও অনেক৷ ছবির এই ব্যক্তি গির্জা থেকে ফেরার সময় ইরিত্রিয়ার সেনাবাহিনীর হামলার শিকার হন৷ তিনি জানান, সেদিন অন্তত ৩০ জন পাদ্রিকে গুলি করা হয়েছে৷ তাকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় মৃত ভেবে সেনা সদস্যরা চলে না গেলে সেদিন মৃত্যু অবধারিত ছিল বলেও জানালেন তিনি৷
টিগ্রের রাজধানী মেকেলেতে এখনো কোনো হামলা হয়নি৷ ফলে সেখানে আতঙ্ক থাকলেও জনজীবন কিছুটা স্বাভাবিক বলেই জানা গেছে৷
ছবি: Maria Gerth-Niculescu/DW
গৃহহীনদের দুর্গতি
যুদ্ধের কারণে পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ ঘরছাড়া৷ তাদের কারো আশ্রয় মিলেছে স্কুলে, কারো বা স্বগোত্রীয়দের ঘরে৷ কারো আবার কোনো আশ্রয়ই জোটেনি৷ রাস্তার পাশে খোলা আকাশের নীচেই দিন কাটছে তাদের৷
ছবি: Maria Gerth-Niculescu/DW
নেই আহার, নিদ্রার ব্যবস্থা
যুদ্ধের কারণে পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ ঘরছাড়া৷ তাদের কারো আশ্রয় মিলেছে স্কুলে, কারো বা স্বগোত্রীয়দের ঘরে৷ কারো আবার কোনো আশ্রয়ই জোটেনি৷ রাস্তার পাশে খোলা আকাশের নীচেই দিন কাটছে তাদের৷
ছবি: Maria Gerth-Niculescu/DW
হামলার শিকার গির্জা
ছবির এই প্রবীণ একজন পাদ্রী৷ পরিবার-পরিজনকে নিয়ে টানা একমাস হেঁটে টিগ্রের রাজধানী মেকেলে শহরে পৌঁছেছেন তিনি৷ নিজের এক আত্মীয়কে রাস্তায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মরতে দেখা এই পাদ্রী জানান, তার এলাকায় একটা গির্জাকে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে৷ তার মতে, ‘‘ইরিত্রিয়ার সেনাবাহিনী ধর্মবিশ্বাসের বিরুদ্ধে৷ তাই তারা সচেতনভাবেই গির্জায় হামলা চালায়৷’’
ছবি: Maria Gerth-Niculescu/DW
একজন মাহলেট
অভিযোগ রয়েছে, ঘর ছাড়তে বাধ্য হওয়া মানুষদের জন্য ইথিওপিয়া সরকার পর্যাপ্ত খাদ্য এবং চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে না৷ শুরুর দিকে বেসরকারি সংস্থাগুলোকেও দুর্গতদের পাশে দাঁড়াতে দেয়া হয়নি৷ তখন থেকেই আর্ত মানবতার সেবায় নিয়োজিত মাহলেট৷ সরকারের নিষ্ক্রিয়তা দেখে হতবাক এই স্বেচ্ছাসেবী সীমিত সামর্থ্য নিয়েই দাঁড়াচ্ছেন যুদ্ধের শিকার অসহায় মানুষদের পাশে৷
ছবি: Maria Gerth-Niculescu/DW
হামলার চিহ্ন
ডেঙ্গোলাট গ্রাম এখন জনশূন্য৷ ইরিত্রিয়ার সেনাবাহিনীর গুলিতে অনন্ত ১৫০ জনের মৃত্যু হয় সেখানে৷ খ্রিস্টানরা যখন সেন্ট মেরি দিবস উদযাপনে ব্যস্ত, ঠিক তখনই শুরু হয় হামলা৷
ছবি: Maria Gerth-Niculescu/DW
গণকবর
মারিয়াম ডেঙ্গোলাট গির্জার বাইরে দীর্ঘ সময় পড়ে ছিল শতাধিক মৃতদেহ৷ মৃতদেহ উদ্ধার করতে যাওয়া ব্যক্তিদেরও গুলি করে হত্যা করা হয়৷ গির্জার আশপাশেই গণকবরে অন্তিম ঠাঁই হয়েছে তাদের৷
ছবি: Maria Gerth-Niculescu/DW
হামলার শিকার মসজিদ
যুদ্ধ চলার সময় এই মসজিদেও হামলা হয়৷ ইথিওপিয়ার সবচেয়ে প্রাচীন এই মসজিদে চালানো হয় লুটপাট৷ সরকার অবশ্য মসজিদ মেরামতের আশ্বাস দিয়েছে৷
ছবি: Maria Gerth-Niculescu/DW
ধর্ষণ
অনেক নারীকে দল বেঁধে ধর্ষণ করেছে ইরিত্রিয়ার সেনাবাহিনি৷ এক নারীকে ২৩ জন মিলে ধর্ষণ করার অভিযোগও উঠেছে৷
ছবি: Maria Gerth-Niculescu/DW
12 ছবি1 | 12
ডাব্লিউএফপি জানিয়েছে, টিগ্রের অবস্থা এতটাই অস্থির যে সেখানে, বিশেষ করে গ্রামের দিকে মানুষের কাছে পৌঁছানোই যাচ্ছে না। মার্চ থেকে তারা ১০ লাখ মানুষের কাছে জরুরি ভিত্তিতে খাবার পৌঁছে দিয়েছে। কিন্তু এখন যে জায়গায় পরিস্থিতি পৌছেছে, তাতে তারা রীতিমতো উদ্বিগ্ন।