ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যাবি আহমেদ নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী। টিগ্রেতে যুদ্ধ বন্ধের জন্য তার কাছে আবেদন জানালো নোবেল কমিটি।
বিজ্ঞাপন
গত প্রায় এক বছর ধরে টিগ্রেকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ সংঘর্ষ চলছে ইথিওপিয়ায়। লড়াই হচ্ছে ইথিওপিয়ার সেনার সঙ্গে টিগ্রে পিপলস লিবারেশন ফ্রন্টের (টিপিএলএফ)। মাসখানেক আগে ইথিওপিয়ার সাধারণ মানুষকেও অস্ত্র হাতে তুলে নিতে বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী অ্যাবি। তারপরেই সমালোচনার ঢেউ ওঠে। সে সময় নোবেল কমিটি একবার তাকে সতর্ক করেছিল।
টিগ্রে: যুদ্ধের বলি নারীরা
মৃতের সংখ্যা বাড়ছে, নানা ধরনের অপরাধও বেড়ে চলেছে৷ টিগ্রে কেন্দ্র করে গৃহযুদ্ধ বিশেষ করে নারীদের ওপর যৌন নিপীড়ন একটি মানবিক বিপর্যয়ে রূপ নিয়েছে৷
ছবি: Ben Curtis/AP/picture alliance
পালাচ্ছেন লাখ লাখ মানুষ
প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদের টিগ্রে আঞ্চলিক সরকারের সঙ্গে ইথিওপিয়ার কেন্দ্রীয় সরকারের গৃহযুদ্ধ চলছে। প্রচণ্ড ক্ষুধা এবং যুদ্ধাপরাধের হুমকিতে দিন কাটাচ্ছেন সে এলাকার মানুষ।স্বঘোষিত টিগ্রে ডিফেন্স ফোর্সেস- টিডিএফ টিগ্রের আঞ্চলিক রাজধানী মেকেলে পুনরায় দখল করার পর লাখ লাখ মানুষ এখন পলাতক৷
ছবি: YASUYOSHI CHIBA/AFP
দুর্ভিক্ষের হুমকি
জাতিসংঘের হিসাবে, অঞ্চলটির চার লাখের বেশি মানুষ দুর্ভিক্ষে আক্রান্ত, আরো প্রায় ১৮ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে। আবি আহমেদ এমন তথ্য অস্বীকার করে ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছেন। ইউনিসেফ বলেছে, "খাদ্য, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, পানি এবং পয়ঃনিষ্কাষণ অবকাঠামো ধ্বংসের ফলে পুষ্টির সংকট দেখা দিয়েছে।"
ছবি: AP
ধ্বংসস্তূপ
ইথিওপিয়ার সেনাবাহিনী ইরিত্রিয়ার সৈন্যদের সঙ্গে মিলে যুদ্ধ করেছে৷ কিন্তু সে যুদ্ধে কেবল টিগ্রের বিচ্ছিন্নতাবাদী যোদ্ধাদেরই নয়, বেসামরিক জনগোষ্ঠীকেও লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আবি মনে করেন, টিগ্রে অঞ্চলে প্রতিরোধ গুঁডিয়ে দেয়ার জন্য এমন ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। যুদ্ধাপরাধ এবং গণহত্যার তথ্য জড়ো হচ্ছে। পুড়ে যাওয়া গাড়ি এবং ধ্বংস হওয়া বাড়ি এখানকার নিয়মিত চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ছবি: GIULIA PARAVICINI/REUTERS
যুদ্ধের অস্ত্র ধর্ষণ
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল একটি প্রতিবেদনে জানিয়েছে, পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার জন্য ধর্ষণ এবং যৌন সহিংসতাকে কাজে লাগানো হচ্ছে। সংস্থাটির মতে, ইরিত্রিয়ার সৈন্যরাও এই অপরাধে ব্যাপকভাবে জড়িত। এক নারী বলছিলেন, "তারা নিজেদের মধ্যে কথা বলেছিল। কেউ বলছিল, 'ওকে আমরা হত্যা করি।' অন্যরা বলছিল, 'না, না। ধর্ষণই তার জন্য যথেষ্ট৷'
ছবি: Ben Curtis/AP/picture alliance
গণহত্যা এবং অস্থায়ী কবর
দুই পক্ষের যোদ্ধাদের মরদেহ সর্বত্র ছড়িয়ে রয়েছে। কখনো কখনো তাদের অস্থায়ী কবরস্থানে কবর দেয়া হয়; কখনো মরদেহ নদীতে ফেলে দেওয়া হয়, অথবা ঘটনাস্থলেই ফেলে রাখা হয়। ছবিতে একজন ইথিওপীয় সৈন্যের অস্থায়ী কবর দেখা যাচ্ছে।
ছবি: GIULIA PARAVICINI/REUTERS
কিশোর যোদ্ধা
ইথিওপিয়ার এবং ইরিত্রিয়ার সম্মিলিত বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য আরো বেশি সংখ্যক কিশোর নাম লেখাচ্ছেন। টিডিএফ-এর নতুন যোদ্ধাদের অনেকেই কেবল কৈশোরে পা দিয়েছেন। একটি অনিশ্চিত এবং সম্ভাব্য রক্তাক্ত ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে তাদের জন্য।
ছবি: YASUYOSHI CHIBA/AFP
6 ছবি1 | 6
বৃহস্পতিবার নোবেল কমিটি জানিয়েছে, অ্যাবির পুরস্কার ফিরিয়ে নেওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। কিন্তু ইথিওপিয়ায় দ্রুত শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য সবরকম ব্যবস্থা করা উচিত প্রধানমন্ত্রীর। যত দ্রুত সম্ভব যুদ্ধ বন্ধ করা উচিত। কারণ, এতে প্রাণ যাচ্ছে সাধারণ মানুষের। একজন শান্তির দূত হিসেবে এই পরিস্থিতি বন্ধ করা উচিত অ্যাবির।
ইথিওপিয়ার রাজনৈতিক সংস্কার এবং প্রতিবেশী রাষ্ট্র এরিট্রিয়ার সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরির জন্য ২০১৯ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার যেতেন অ্যাবি। সেই অ্যাবি কীভাবে দীর্ঘদিন ধরে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে।
ইথিওপিয়ার পরিস্থিতি
বৃহস্পতিবারও টিগ্রেতে বিমান হামলা চালিয়েছে ইথিওপিয়ার সেনা। তাতে ৭০ এর বেশি সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে জানান গেছে। দিনের পর দিন টিগ্রেতে সাধারণ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। অর্থনৈতিক ব্লকেড তৈরি করে সেখানে খাবার পর্যন্ত পৌঁছাতে দিচ্ছে না ইথিওপিয়ার সেনা। ফলে শুরু হয়েছে অনাহার। বহু মানুষ পালানোর চেষ্টা করেছেন পার্শ্ববর্তী দেশে। হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন। কিন্তু যুদ্ধ বন্ধ করতে রাজি নন প্রধানমন্ত্রী। আলোচনার টেবিলেও বসতে চাইছেন না তিনি। পাল্টা আক্রমণ চালাচ্ছে টিপিএলএফ। ইথিওয়পিয়ার একাধিক শহর তারা দখল করে নিয়েছিল। পরে অবশ্য আফ্রিকান দেশগুলির মধ্যস্থতায় তারা সেখান থেকে ফিরে আসে।