ইথিওপিয়ায় কমবয়সি মেয়েদের জন্য একটি কমিক সিরিয়াল তৈরি করে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছেন এক নার্স, যিনি পেশায় আজ সমাজ সংস্কারক তথা টেলিভিশন প্রযোজক৷
‘টিবেব গার্লস’এর চরিত্রছবি: Bruktawit Tigabu
বিজ্ঞাপন
আদ্দিস আবাবার বিভিন্ন স্কুলের ছাত্রীদের ‘টিবেব গার্লস’ কমিক সিরিজের প্রথম এপিসোডটি দেখানো হচ্ছে৷ আমহারিক ভাষায় টিবেব কথাটির অর্থ হল জ্ঞান বা বিজ্ঞতা৷ সিরিয়ালটিতে তিনজন অতি বুদ্ধিমতী নায়িকা মেয়েদের সমানাধিকারের জন্য লড়াই করছে৷
‘টিবেব গার্লস’-এর স্রষ্টা ব্রুকটাউইট টিগাবু জানালেন, ‘‘ইথিওপিয়ার প্রতি পাঁচটি মেয়ের মধ্যে একজনের ১৫ বছর বয়স হবার আগেই বিয়ে হয়ে যায় আর তাদের অধিকাংশই আর কখনো স্কুলে ফিরে আসে না৷ এর অর্থ, তারা জীবনে সফল হবার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়৷’’
‘টিবেব গার্লস’ এই পরিস্থিতি বদলাতে চায়৷ প্রোগ্রামটির উদ্ভাবকরা চান যে, ছোট ছোট মেয়েরা সিরিয়ালটির মধ্যে নিজেদের আশা-আকাঙ্ক্ষা-বেদনাকে খুঁজে পাক৷ কাজেই পাইলট এপিসোডগুলি প্রথমে স্থানীয় স্কুলগুলিতে দেখিয়ে যাচাই করা হয়, মেয়েদের সেটা ভালো লাগল কিনা৷ প্রকল্পের কর্মী ও জনস্বাস্থ্য বিষয়ের ছাত্রী রুথ ইটবারেক জানালেন, ‘‘আমরা ইথিওপিয়ার বিভিন্ন এলাকায় একই কাজ করছি৷ সেখানেও দেখা যায় অনেক মেয়ে কাঁদছে, কেননা তারা জানে সিরিয়ালের মেয়েটি কী কষ্ট সহ্য করেছে৷ আর তারা সেটা জানে বলেই, তার সঙ্গে একাত্ম বোধ করে৷’’
আশার আলো দেখাচ্ছে কমিক সিরিয়াল
03:56
This browser does not support the video element.
সিরিয়াল দেখার পর মেয়েদের লিখে রাখতে হয়, তাদের কী ভালো লেগেছে অথবা লাগেনি, আর গল্পটা কীভাবে এগোলে তাদের ভালো লাগবে৷ ১২ বছর বয়সের এডলাউইট বলল, ‘‘আমার খুব ভালো লেগেছে, কেননা সিরিয়ালটা মেয়েদের সমস্যা নিয়ে৷ আমি এরকম আগে কখনো দেখিনি৷’’
কমবয়সি মেয়েদের দুরবস্থা আর উপেক্ষা করতে পারেননি
‘টিবেব গার্লস’-এর স্রষ্টা হলেন ব্রুকটাউইট টিগাবু৷ পেশায় নার্স হলেও তিনি বলেন যে, তিনি ইথিওপিয়ায় কমবয়সি মেয়েদের দুরবস্থা আর উপেক্ষা করতে পারেননি৷ তিনি শোনালেন সেই কাহিনী: ‘‘কাজেই আমি ভাবলাম, আমি এতো বড় সমস্যাটার সমাধান করব কী করে? স্বভাবতই আমি সর্বত্র কিন্ডারগার্টেন তৈরি করতে পারি না; কাজেই আমি ভাবতে শুরু করলাম – কীভাবে আমি আমার দেশের লক্ষ লক্ষ ছেলেমেয়েদের কম খরচে উচ্চমানের শিক্ষা দিতে পারি৷’’
কমিক বলতে শুধু ব্যাটম্যান বা ডোনাল্ড ডাক বোঝায় না
‘কমিক কন’ ফেস্টিভালের শুরু মার্কিন মুলুকে৷ তার ঢেউ এসে লেগেছে জার্মানিতে৷ জুন মাসের ২৫-২৬ তারিখে অনুষ্ঠিত হলো জার্মানির প্রথম কমিক কন, স্টুটগার্টে৷ এসেছিলেন পঞ্চাশ হাজার কমিক ফ্যান৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ব্যাক টু দ্য রুটস
জার্মান ছড়া-লিখিয়ে ভিলহেল্ম বুশকে কমিক চিত্রণের আদিপুরুষ বলা হয়ে থাকে৷ নিউ ইয়র্কের প্রথম কমিক চিত্রকররা, এমনকি স্বয়ং ওয়াল্ট ডিজনি বুশকে গুরু বলে মনে করতেন৷ বিশেষ করে বুশের লিখিত ও চিত্রিত দুই পাজি ছেলের কাহিনি জার্মান শিশুসাহিত্যে আজও অমর – ম্যাক্স ও মরিটৎস৷
কমিকের আবির্ভাব সংবাদপত্রে
বিংশ শতাব্দীর সূচনায় কাগজের দাম পড়ায় আর মুদ্রণ প্রক্রিয়ার ব্যাপক উন্নতি ঘটায় সংবাদপত্রের কাটতি বাড়তে থাকে; সেই সঙ্গে বাড়তে থাকে পত্রিকাগুলির মধ্যে প্রতিযোগিতা৷ পাঠকদের মন জয় করার প্রচেষ্টায় একটি বড় হাতিয়ার ছিল কমিক৷ এমনকি পত্রিকার সাফল্য-অসাফল্য নির্ভর করতো তার কমিক সাপ্লিমেন্টের ওপর৷
ছবি: Privatsammlung/Schirn Kunsthalle Frankfurt
সুপারম্যান
আদি সুপারম্যানের দুই স্রষ্টা হলেন জেরি সিগেল ও জো শুস্টার৷ ১৯৩৩ সালে ১৪ বছরের এই দুই কিশোর ‘কাল-এল’ নামের চরিত্রটি সৃষ্টি করেন, হিব্রু ভাষায় যার অর্থ হলো ‘ঈশ্বরের কণ্ঠ’৷ প্রকাশক পেতে পেতে পাঁচ বছর গড়িয়ে যায়৷ অবশেষে ১৯৩৮ সালে ডিসি কমিকস প্রথম সুপারম্যান কমিকটি প্রকাশ করে তাদের ‘অ্যাকশন কমিকস’ সিরিজে৷ ২০১৪ সালের একটি নিলেমে সেই প্রথম এডিশনের দাম উঠেছিল ৩২ লাখ ডলার বা ২৪ লাখ ইউরো৷
ছবি: picture-alliance/dpa
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেও হাজির ছিলেন সুপারম্যান!
সুপারহিরোদের কাজই হলো ‘ব্যাড গাই’, মানে গুণ্ডা-বদমায়েশদের সঙ্গে লড়াই করা৷ সুপারম্যানের সতীর্থ জুটতে বেশি সময় লাগেনি, বাজারে এসে পড়েছেন ব্যাটম্যান, ক্যাপ্টেন অ্যামেরিকা, ওয়ান্ডারউওমান, দ্য ফ্ল্যাশ ও আরো অনেকে৷ তাদের সকলেই মার্কিন সৈন্যদের পকেটে করে ইউরোপের রণাঙ্গণেও পৌঁছেছেন ও সেই হিসেবে অ্যাডল্ফ হিটলারের সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন৷
ছবি: Getty Images/Hulton Archives
ডোনাল্ড ডাক
সুপারহিরো না হলেও, কমিকের ইতিহাসে এই হাঁসটির জনপ্রিয়তা অন্য যে কোনো চরিত্রের চেয়ে বেশি৷ওয়াল্ট ডিজনি কমিকস ডোনাল্ড ডাককে বাজারে আনে ১৯৪৩ সালে৷ তার পরের বিশ বছর ধরে চিত্রণশিল্পী কার্ল বার্কস মাসের পর মাস ডিজনি কমিকসের অলঙ্করণ করে গেছেন৷
ছবি: imago/United Archives
ইউরোপই বা কম যায় কিসে?
অ্যাস্টেরিক্স আর ওবেলিক্সের কথা ভাবুন৷ তাদের স্রষ্টা হলেন দুই ফরাসি শিল্পী রেনে গসিন্নি ও আলবের উদ্যার্জো (ছবিতে যাকে দেখা যাচ্ছে)৷ অ্যাস্টেরিক্সের সৃষ্টি ১৯৫৯ সালে – সে-যাবৎ ৩৬টি অ্যাস্টেরিক্স কমিক প্রকাশিত হয়েছে৷
ছবি: DPA
টিনটিন
বেলজিয়ামের চিত্রণশিল্পী এর্জ ১৯২৯ সালে এই ভ্রাম্যমান রিপোর্টারটিকে সৃষ্টি করেন৷ তারপর টিনটিন ও তাঁর কুকুর বিভিন্ন দেশে ঘুরে বেরিয়েছেন, তাদের নানা রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা ২৮টি কমিকে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
লাকি লিউক
বেলজিয়ামের এক কাউবয় যে বিশ্বজোড়া নাম করবে, তা কে ভাবতে পেরেছিল৷ সারাক্ষণ ঠোঁটের কোণে সিগারেট ঝোলানো এই মানুষটিকে প্রথম দেখা যায় ‘স্পিরু’ ম্যাগাজিনে, ১৯৪৬ সালে৷ লাকি লিউকের স্রষ্টা হলেন মরিস নামের এক চিত্রণশিল্পী৷ প্রথম লাকি লিউক কমিক বেরোয় ১৯৪৯ সালে৷ লাকি লিউককে নিয়ে ফিল্মও তৈরি হয়েছে – ছবিতে লাকি লিউকের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন টেরেন্স হিল৷
ছবি: picture alliance/United Archives/IFTN
গ্র্যাফিক নভেল
গ্র্যাফিক নভেল বলতে বোঝায় একটি চিত্রিত উপন্যাস বা চিত্রে বর্ণিত উপন্যাস৷ এগুলি বই হিসেবেই প্রকাশিত হয় ও বই হিসেবেই বিবেচিত হয়, যার প্রমাণ, ১৯৮৬ সালে মার্কিন চিত্রণশিল্পী আর্ট স্পিগেলম্যানের ‘মাউস’ বা ‘ইঁদুর’ নামধারী গ্র্যাফিক নভেলটি বেস্টসেলার লিস্টে স্থান পায়, এমনকি ১৯৯২ সালে পুলিৎজার পুরস্কার লাভ করে৷ ‘মাউস’ বইটিতে স্পিগেলম্যানের বাবার কাহিনি বর্ণনা করা হয়েছে, যিনি হলোকস্ট থেকে প্রাণে বেঁচে যান৷
ছবি: fischerverlage
9 ছবি1 | 9
ব্রুকটাউইট ইতিমধ্যেই তিনটি সফল রেডিও ও টেলিভিশন সিরিজ প্রযোজনা করেছেন, যেগুলি ইথিওপিয়া জুড়ে ছেলেমেয়েদের জ্ঞান বাড়িয়েছে, কিন্তু সেই সঙ্গে মজাও দিয়েছে৷ ‘টিবেব গার্লস’ আরেকটি সফল সিরিজ হয়ে সামাজিক বাধানিষেধকে চ্যালেঞ্জ করবে বলে তাঁর আশা৷ তিনি জানেন, ‘টিবেব গার্লস'-এর সাফল্যের কারণ কি:-
‘‘আমরা শিশু বিবাহ নিষেধের মতো কড়া বিষয় দিয়ে শুরু করেছি বটে – কিন্তু কার্টুনের একটা আশ্চর্য ক্ষমতা আছে৷ কার্টুন বলে, ও গল্পকাহিনি বলে, মানুষ তা দূর থেকে দেখতে পারে, তা নিয়ে স্বচ্ছন্দে কথা বলতে পারে – আর সেটাই আমরা চাই৷ বিষয়টি নিয়ে কথা বলা হল প্রথম পদক্ষেপ৷’’
তবে তিনি স্বীকার করলেন যে,‘‘মাঝেমধ্যে আমি হতাশ হয়ে পড়ি৷ এটুকু করতে আমার দশ বছর লাগা উচিৎ হয়নি, আমার আরো বেশি শিশুর কাছে পৌঁছানো উচিৎ ছিল, এতোদিনে আমার গোটা পূর্ব আফ্রিকা ছেয়ে ফেলা উচিত ছিল – এতো দেরি হয়ে যাওয়ার কারণ বড় বেশি আমলাতন্ত্র, পৃষ্ঠপোষকতার অভাব, দৈনন্দিন নানা বাধাবিপত্তি৷’’
টিভি প্রোগ্রামগুলি ডিস্ট্রিবিউট করা খুবই শক্ত আর অর্থবলও বেশি নেই৷ সামাজিক উদ্যোগ ইথিওপিয়ায় আজও প্রচলিত নয়৷ব্রুকটাউইট-এর ভাষ্যে: ‘‘সরকারের নীতি আমাদের সাহায্য করে না, কেননা আমাদের আজও ব্যবসায়ী বলে গণ্য করা হয়৷ কাজেই আমাদের একই রকম কর দিতে হয় – যার অর্থ, আমাদের ভেবেচিন্তে বিনিয়োগ করতে হয়৷ আমাদের সামর্থ্য কম, কিন্তু কর্তব্য অনেক৷’’
কিন্তু ‘টিবেব গার্লস’-এর পেছনে যে দলটি রয়েছে, তার সদস্যরা সাহসী ও অনুপ্রাণিত৷ বাধা দেখলে হাল ছাড়ার পাত্র তারা নন৷ টিভি সম্প্রচারকদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলেছে৷