1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

টিমবাকটু-পাণ্ডুলিপি সংরক্ষণ

ডিয়র্ক ক্যোপ/আরবি৬ জুলাই ২০১৪

কট্টর ইসলামিস্টরা এগুলিকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল৷ কিন্তু কিছু স্বেচ্ছাসেবী গোপনে মালির উত্তরাঞ্চল থেকে রাজধানী বামাকোতে নিয়ে আসেন এই মূল্যবান সম্পদগুলি৷ এগুলো হলো টিমবাকটুর পাণ্ডুলিপি৷

Bildergalerie Timbuktu Restauration jahrhundertealter Manuskripte
ছবি: CSMC

ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকশ বছরের পুরানো এই ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলিকে জার্মান গবেষকদের একটি টিম সংস্কার ও রক্ষা করার চেষ্টা করছেন৷ এদের একজন এফা ব্রোৎসোভস্কি৷ তাঁকে এখন ঘন ঘন জার্মানি ও মালির রাজধানী বামাকোতে যাতায়াত করতে হচ্ছে৷ ৩৪ বছর বয়সি এফা পুনরুদ্ধার ও কাগজ বিশেষজ্ঞ৷

এক গুরুত্বপূর্ণ সংগ্রহশালা

এই পাণ্ডুলিপিগুলি পশ্চিম আফ্রিকার ঐতিহাসিক দলিলের এক গুরুত্বপূর্ণ সংগ্রহশালা৷ ১৯৮৮ সালে বিশ্ব সংস্কৃতিক ঐতিহ্যের আওতায় আনা হয়েছে৷

রাজধানী বামাকো থেকে প্রায় ১০০০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত টিমবাকটু শহর৷ মধ্যযুগে ইসলামধর্মের এক আধ্যাত্মিক কেন্দ্র ছিল এটি৷ ১২০০ বছরের পুরানো পাণ্ডুলিপিগুলিতে আলকেমি, জ্যোতির্বিদ্যা ও চিকিৎসাবিদ্যার নিদর্শন পাওয়া যায়৷ কোরান ও ইতিহাসের নানা বিষয়ের ব্যাখ্যাও পাওয়া যায় এতে৷

এগুলি যেন সংস্কৃতির এক রত্নভাণ্ডারছবি: CSMC

আর্কাইভ ভবনে স্থানান্তর

এগুলি যেন সংস্কৃতির এক রত্নভাণ্ডার৷ জার্মানির সব গ্রন্থাগারের সংগ্রহের সঙ্গে তুলনা করা উচিত এই নিদর্শনগুলিকে৷ উচ্ছ্বসিত হয়ে বলেন এফা ব্রোৎসোভস্কি৷ এই লিপিগুলির সংখ্যা হবে ২৮০,০০০ থেকে ৫০০০,০০০-এর মতো ৷ এগুলিকে টিমবাকটু থেকে বামাকোর একটি আর্কাইভ ভবনে স্থানান্তর করার পরিকল্পনা করা হয়েছে৷ সেখানে ক্যাটালগ ও ডিজিটালকরণ করা হবে এই ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলিকে৷ সুগম করা হবে মালি ও আন্তর্জাতিক গবেষকদের জন্য৷ ‘‘দুঃখের বিষয় প্রায় অর্ধেকের বেশি লিপিই এতই ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে, যে ডিজিটালকরণের আগে এগুলিকে প্রথমে স্থিতিশীল করতে হবে৷'' বলেন এফা৷

অনেকাংশ ধ্বংস হয়ে গিয়েছে

টিমবাকটুতে মরুভূমির শুকনো আবহাওয়ায় অনেক পাণ্ডুলিপির কাগজ ভেঙে ভেঙে পড়ছে৷ উঁইপোকা ও অন্যান্য পতঙ্গ খেয়ে ফেলেছে কিছু কাগজ৷ এতে ক্ষতি হয়েছে কালিরও৷ যেসব সামগ্রী পোকা খেয়ে ফেলেছে, সেগুলিকে পুনরুদ্ধার করা সম্ভব নয়৷ সতর্ক করে বলেন বিশেষজ্ঞ এভা ব্রোৎসোভস্কি৷ তিনি পাণ্ডুলিপিগুলিকে রক্ষা করার ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের প্রতি পর্যাপ্ত অর্থ প্রদানের আহ্বান জানান৷ তাঁর কথায়, ‘‘এই লিপিগুলির জন্য অতি দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে৷ এই ধরনের ভুলে যাওয়া সম্পদের মতো আর কিছু এতো বিপদগ্রস্ত নয়৷''

বৈদেশিক দপ্তর, আন্তর্জাতিক অর্থদাতা, ও জার্মানির গ্যার্ডা-হেংকেল ফাউন্ডেশন এই প্রকল্পকে সহায়তা দিচ্ছে৷ ফাউন্ডেশনটি এই জন্য প্রায় ৫০০,০০০ ইউরো প্রস্তুত রেখেছে৷ ফাউন্ডেশনের প্রধান মিশায়েল হান্সলার এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘এই পাণ্ডুলিপিগুলির মাত্র দুই থেকে তিন শতাংশের মূল্যায়ন করা হয়েছে৷ বিশাল একটা অংশ এখনও গবেষণার বাইরে রয়ে গিয়েছে৷''

ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকশ বছরের পুরানো এই ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলিকে জার্মান গবেষকদের একটি টিম সংস্কার ও রক্ষা করার চেষ্টা করছেনছবি: CSMC

এক অমূল্য সম্পদ

হামবুর্গ ইউনিভার্সিটির পশ্চিম আফ্রিকা গবেষক দিমিট্রি বনদারেভ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, ‘‘অতীতকে ভালোভাবে জানতে হলে এই হস্তলিপিগুলি সত্যি এক অমূল্য সম্পদ৷'' বনদারেভ টিমবাকটু-লিপি রক্ষা প্রকল্পটি পরিচালনা করছেন৷ তিনি আরো জানান, এর মাধ্যমে ইতিহাসের অনেক অজানা পাতা খুলে যাবে৷ আফ্রিকার ইতিহাসকে আরো ভালোভাবে বুঝতে সহায়তা করবে৷''

বিজ্ঞান ও সংস্কৃতির কেন্দ্রবিন্দু

মধ্যযুগে টিমবাকটুতে আফ্রিকার নানা প্রান্ত থেকে গবেষকরা মিলিত হতেন, আসতেন পর্যটকরাও৷ এই অঞ্চলের বিজ্ঞান ও সংস্কৃতির কেন্দ্রবিন্দু ছিল টিমবাকটু৷ ‘‘ বিশেষজ্ঞরা এবিষয়ে একমত যে, এই পাণ্ডুলিপিগুলি প্রকাশ করা হলে আফ্রিকার ইতিহাস কোনো কোনো ক্ষেত্রে নতুন করে লিখতে হবে৷'' বলেন বনদারেভ৷

ইসলামের ইতিহাস ও উত্তর মালিতে ইসলামের উত্থান সম্পর্কেও সুষ্ঠু ব্যাখ্যা পাওয়া যাবে৷ এগুলি কট্টর ইসলামিস্টদের হাতে প্রায় ধ্বংস হয়ে যাচ্ছিল৷ ২০১২ সালে এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে টিমবাকটুসহ মালির গোটা উত্তরাঞ্চল দখল করে নেয় তারা৷ শুরু করে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ধ্বংস করা৷ এর মাধ্যমে পশ্চিমা বিশ্বকে একটা ‘শিক্ষা' দেওয়ার ইচ্ছা ছিল তাদের৷

এই পাণ্ডুলিপিগুলিকে যে আদৌ রাজধানী বামাকোতে আনা সম্ভব হয়েছে, তার জন্য আব্দেল কাদের হাইদারার মতো সৎসাহসী ব্যক্তি ও অসংখ্য স্বেচ্ছাসেবীকে প্রশংসা করতে হয়৷ আব্দেল কাদের টিমবাকটুর সবচেয়ে বড় গ্রন্থাগারটির পরিচালক৷ এছাড়া নগরের হস্তলিপির ঐতিহ্য সংরক্ষণের দায়িত্বে থাকা একটি সমিতির প্রধানও৷ আব্দুল কাদের স্মরণ করে বলেন, ‘‘এই অ্যাকশনটি ছিল অত্যন্ত কঠিন ও বিপজ্জনক৷'' ছয়মাস ধরে গোপনে গাড়ি ও ট্রাকে করে টিমবাকটু থেকে বামাকোতে এই সম্পদগুলি পার করতে হয়৷ আব্দেল কাদের হাইদারা আনন্দিত যে, এই মূল্যবান লিপিগুলিকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার চেষ্টা চলছে৷

টিমবাকটুতে মরুভূমির শুকনো আবহাওয়ায় অনেক পাণ্ডুলিপির কাগজ ভেঙে ভেঙে পড়ছেছবি: CSMC

শুরু হয়েছে প্রকল্পটির কাজ

পাণ্ডুলিপি পুনরুদ্ধার প্রকল্পটির কাজটি শুরু হয়েছে৷ তবে এখনও ক্ষুদ্র পদক্ষেপে৷ এ জন্য প্রয়োজন প্রচুর অর্থ, সময় ও লোকবল৷

‘‘যত বেশি মানুষ এই কাজে অংশ নেবে, যত বেশি অর্থ এক্ষেত্রে বিনিয়োগ করা হবে, স্বাভাবিকভাবেই তত তাড়াতাড়ি কাজটি করা যাবে৷ তবে সম্ভবত এক দশক কিংবা কয়েক দশকও লেগে যেতে পারে এই কাজটি সম্পন্ন করতে৷'' বলেন এভা ব্রোৎসোভস্কি৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ