বাংলাদেশে এক কোটি পরিবারকে কার্ডের মাধ্যমে টিসিবির পণ্য দেয়া শুরু হয়েছে৷ শুধু ঢাকা ও বরিশালে কার্ড দেয়া হয়নি৷ এই দুই সিটিতে আগের মতই পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে৷ এদিকে, কার্ড না পেয়ে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন৷
বিজ্ঞাপন
কয়েকটি এলাকায় অভিযোগ পাওয়া গেছে যে টিসিবির কার্ড কীভাবে পাওয়া যায় তারা তা জানেন না৷
দেশের বিভিন্ন এলকায় টিসিবির পণ্য বিক্রয়কেন্দ্রে কার্ড নেই এমন মানুষও ভিড় করেছেন৷ কিন্তু কার্ড না থাকায় তারা পণ্য না নিয়ে ফেরত গেছেন, যদিও সরকারের নীতিমালায় বলা হয়েছে কার্ডধারীদের দেয়ার পর যদি পণ্য থাকে তাহলে যাদের কার্ড নেই তারাও পাবেন৷
কার্ড না পাওয়া এবং কার্ড না থাকায় পণ্য না পাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে চট্টগ্রাম, খুলনা, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন জেলা থেকে৷ ভুক্তভোগীরা জানান, তারা চেষ্টা করেও কার্ড জোগাড় করতে পারেননি৷ আর কার্ড কারা দেয় তারা তাও জানেন না৷ তারপরও লাইনে দাঁড়িয়েছেন৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা পণ্য না পেয়ে খালি হতে ফিরে গেছেন৷
এবার টিসিবির মাধ্যমে একটি পরিবারকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত দুইবার করে দুই লিটার সয়াবিন তেল, চিনি ও মসুর ডাল দুই কেজি এবং পেঁয়াজ সর্বনিম্ন দুই কেজি কেনার সুযোগ দেয়া হচ্ছে৷ তাদের কাছে সয়াবিন তেল ১১০ টাকা লিটার, মসুর ডাল প্রতি কেজি ৬৫ টাকা, চিনি ৫৫ টাকা, পেঁয়াজ কেজি ৩০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে, যা বাজার দরের চেয়ে কম৷ বিশেষ করে সয়াবিন তেল এখন বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৬৮ টাকা প্রতি লিটার৷
পণ্য পাইনি, তাই বিক্রি করতে পারিনি: মোকাররম
ঢাকায় এই কর্মসূচি আগেই শুরু হয়েছে৷ গত ৬ মার্চ থেকে ঢাকা শহরে মোট ১৮৫টি ট্রাকে করে পণ্য বিক্রি শুরু হয়৷ ঢাকা শহরে ১২ লাখ পরিবারের কাছে এই পণ্য দেয়া হচ্ছে৷ ঢাকার বাইরে পাচ্ছে ৮৮ লাখ পরিবার৷
ঢাকার বাইরে করোনার সময় যারা প্রণোদনা হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর দুই হাজার ৫০০ টাকা পেয়েছেন, তারাসহ নিম্নবিত্ত আরো ৬১ লাখ ৫০ হাজার পরিবারকে কার্ড দেয়া হয়েছে বলে টিসিবি জানিয়েছে৷
টিসিবির ডিলার অ্যাসেসিয়েশনের সভাপতি জুয়েল আহমেদ বলেন, ‘‘ঢাকা শহরে কোনো কার্ড দেয়া হয়নি৷ আগের মতই আগে আসলে আগে পাবেন ভিত্তিতে বিক্রি করা হচ্ছে৷ রবিবার থেকে পণ্য ও স্পট বাড়ানো হয়েছে৷ ঢাকা শহরে রবিবার ১০০টি স্পটে পণ্য বিক্রি করা হয়েছে৷ প্রতিটি ট্রাকে সয়াবিন তেল ৫০০ লিটার, চিনি ও ডাল ৫০০ কেজি করে এবং পেঁয়াজ ৬০০ কেজি করে বিক্রি করা হচ্ছে৷ সোমবার থেকে এক হাজার কেজি ছোলা যুক্ত হবে৷’’
তিনি বলেন, ঢাকা ও বরিশাল শহরে ৩০ মার্চ পর্যন্ত প্রতিদিন আর এর বাইরে দুই দিন বিক্রি করা হবে৷
এদিকে বরিশালে সব এলাকায় একসঙ্গে নয়, ওয়ার্ড ভাগ করে টিসিবির পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে৷ টিসিবির কার্ড বরিশাল শহরে না দেয়া হলেও পণ্য কিনতে ন্যাশনাল আইডি কার্ড লাগছে৷ ওয়ার্ড ভাগ করে দেয়ায় বিশৃঙ্খলা হচ্ছে৷ সবাই ওই ওয়ার্ডগুলোতে ভিড় করছেন৷ কিন্তু ওয়ার্ডের ভোটার না হওয়ায় অনেককে ফিরে যেতে হচ্ছে৷ রবিবার মোট চারটি ওয়ার্ডে টিসিবির পণ্য বিক্রি করা হয়৷ মোট ওয়ার্ড ৩০টি৷
ঢাকায় রবিবার ১০০টি স্পটে পণ্য বিক্রি হয়েছে: জুয়েল
দেশের অনেক এলাকায় এখনো কার্ড বিতরণ সম্পন্ন হয়নি বলে জানাগেছে৷ টিসিবির পণ্যও পৌঁছায়নি৷ নোয়াখালী সদরের ডিলার মোকাররম হোসেন বলেন, ‘‘আজকে (রবিবার) আমি টিসিবির পণ্য পাইনি, তাই বিক্রি করতে পারিনি৷ আর এখনো কার্ড বিতরণ বাকি আছে৷ কার্ড কিছু বাড়ানো হয়েছে, তাই দেরি হচ্ছে৷''
তিনি আরো জানান, ‘‘যেসব এলাকায় স্যাররা বিক্রি উদ্বোধন করেছেন সেখানে কার্ড দেয়া হয়েছে এবং পণ্য বিক্রি করা হয়েছে৷'' তার কথা, ‘‘ওইসব এলাকায় কার্ডের বাইরেও অনেকে পণ্য কিনতে এসে ফিরে যান৷''
এদিকে গাজীপুরসহ দেশের কিছু এলাকায় টিসিবির পণ্য ডিলারদের বাদ দিয়ে মেম্বার, চেয়ারম্যান ও কাউন্সিলরদের কাছে দেয়া হয়েছে৷ তাতে জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানা গেছে৷
টিসিবির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, সোমবার থেকে চারটি পণ্যের পাশাপাশি ৫০ টাকা কেজি দরে জনপ্রতি চার কেজি করে ছোলা বিক্রি করা হবে৷ আর রমজানের শুরুতেই খেজুর যুক্ত হবে বলে জানা গেছে৷
টিসিবির মুখপাত্র হুমায়ুন কবির জানান, ‘‘দেশের এক কোটি পরিবার ১০ দিনের মধ্যে দুইবার পণ্য কিনতে পারবেন৷ তাই একদিনে যেসব এলাকায় টিসিবির পণ্য বিক্রি হবে তা নয়৷ ভাগ ভাগ করে বিক্রি করা হচ্ছে৷ যারা কার্ড পেয়েছেন তারা সবাই পণ্য পাবেন৷''
তিনি দাবি করেন, ‘‘ঢাকায় অনেক ভাসমান মানুষ থাকায় কার্ড করা সম্ভব নয়৷ বরিশালেও কার্ড হবে না৷ তবে বরিশালে এনআইডি বাধ্যতামূলক করার বিষয়টি আমাদের জানান নাই৷ এনআইডি লাগার কথা না৷''
বিশ্বের তুলনায় বাংলাদেশের মুদি বাজার
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মুদি বাজারের মধ্যে তুলনা করা কঠিন৷ মার্কিন এক কোম্পানি সীমিত আকারে সেই চেষ্টা করেছে৷ তাদের দেয়া তথ্য থেকে বাংলাদেশের অবস্থান বোঝার চেষ্টা করা হয়েছে এই ছবিঘরে৷
ছবি: David McNew/Getty Images
গ্রোসারি সূচক ২০২১
ব্যক্তিগত লোন দেয়ার মার্কিন অনলাইন কোম্পানি ‘নেটক্রেডিট’ গতবছর ৯ নভেম্বর ২০২১ সালের গ্রোসারি সূচক প্রকাশ করে৷ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুপারমার্কেটের ওয়েবসাইট থেকে নেয়া তথ্যের ভিত্তিতে এটি তৈরি করা হয়৷ প্রথমে, বাজারের একটি তালিকা তৈরি করে সেগুলোর দাম কোন দেশে কেমন, তা জানার চেষ্টা করা হয়৷ সূচকটি দেখতে উপরে (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: David McNew/Getty Images
১০টি পণ্যের তথ্য
সূচক তৈরিতে যে ১০টি পণ্যের তথ্য নেয়া হয়েছে সেগুলো হলো সকালের নাস্তার জন্য সিরিয়াল, ১২টি ডিম, ৫০০ গ্রাম হাড় ছাড়া মুরগীর বুকের মাংস, ৫০০ গ্রাম মাখন, ১ লিটার বোতলজাত ভেজিটেবল তেল, ৫০০ গ্রাম সাদা পাউরুটি, ১ লিটার দুধ, ১ কেজি আলু, ১ কেজি টমেটো, ১ কেজি কলা, ১৪০ গ্রাম ক্যানড টুনা ও বোতলজাত দেড় লিটার পানি৷
ছবি: Oliver Berg/dpa/picture alliance
বাংলাদেশে খরচ
উপরের পণ্যগুলো কিনতে বাংলাদেশে ১৯৯০ টাকা খরচ হতো বলে জানিয়েছে নেটক্রেডিট৷ বিশ্বব্যাংকের তথ্য ব্যবহার করে নেটক্রেডিট দেখেছে, এই পরিমাণ অর্থ বাংলাদেশের দৈনিক গড় বেতনের ৩৪০ শতাংশ৷
ছবি: DW
সবচেয়ে বেশি সুইজারল্যান্ডে, কম জিবুতিতে
এই ১০টি পণ্য কিনতে সুইজারল্যান্ডে খরচ পড়তো প্রায় সাড়ে চার হাজার টাকা৷ আর জিবুতিতে মাত্র ৬০০ টাকা৷
ছবি: ZDF
বাংলাদেশ চার নম্বরে
পণ্য কেনার খরচ বের করার পর নেটক্রেডিট বিশ্বব্যাংকের তথ্য ব্যবহার করে প্রতিটি দেশের মানুষের গড় দৈনিক আয় জানার চেষ্টা করেছে৷ এরপর এই দুই তথ্য দিয়ে ‘অ্যাফোরডিবিলিটি পার্সেন্টেজ’ বা সক্ষমতার হার বের করেছে৷ এতে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের মানুষের সক্ষমতার হার ৩৪০ শতাংশ৷ অর্থাৎ ঐ ১০ পণ্য কিনতে খরচ হওয়া ১৯৯০ টাকা একজনের দৈনিক গড় বেতনের ৩৪০ শতাংশ৷ তালিকায় বাংলাদেশের উপরে আছে কম্বোডিয়া, কেনিয়া ও নিকারাগুয়া৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
সবচেয়ে সক্ষম যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্রে ঐ ১০ পণ্য কিনতে খরচ পড়তো ২,২১২ টাকা, যা দেশটির দৈনিক গড় বেতনের মাত্র ১২ শতাংশ৷ এরপর আছে নেদারল্যান্ডস (খরচ ২১১৫ টাকা, সক্ষমতা ১৫ শতাংশ), লুক্সেমবার্গ (খরচ ২৯৩০ টাকা, সক্ষমতা ১৫ শতাংশ), ফিনল্যান্ড (খরচ ২১৪৬ টাকা, সক্ষমতা ১৬ শতাংশ), সিঙ্গাপুর (খরচ ২৯৩৩ টাকা, সক্ষমতা ১৮ শতাংশ) ও যুক্তরাজ্য (খরচ ২২২২ টাকা, সক্ষমতা ১৯ শতাংশ)৷
ছবি: Photoshot/picture alliance
তথ্য নেই
গ্রোসারি সূচকে ভারত, পাকিস্তান, জার্মানিসহ অনেক দেশের তথ্য দেয়া হয়নি৷
ছবি: Martin Wagner/imago images
চালের দাম
৯ মার্চ, ২০২২ সালে সার্বিয়ার ক্রাউড-সোর্সড ভিত্তিক বৈশ্বিক ডাটাবেজ কোম্পানি ‘নাম্বেও’র ওয়েবসাইটে ঢুকে দেখা যায় বাংলাদেশে এক কেজি চালের (সাদা) দাম ৬০ টাকা৷ জাপানে দাম সবচেয়ে বেশি ৩৬৯ টাকা৷ এছাড়া যু্ক্তরাষ্ট্রে ৩৪০, সুইজারল্যান্ডে ২৫১, জার্মানিতে ১৮১, যুক্তরাজ্যে ১২৫, পাকিস্তানে ৭৬, ভারতে ৫৯, নেপালে ৬০ ও শ্রীলঙ্কায় ৫১ টাকা৷
ছবি: DW/H. Ur Rashid
পেঁয়াজের দাম
১০ মার্চ নাম্বেওর ওয়েবসাইটে দেখা যায় বাংলাদেশে এক কেজি পেঁয়াজের দাম সাড়ে ৫৩ টাকা৷ ভারতে ৪০ টাকা, পাকিস্তানে ২৫ টাকা, শ্রীলঙ্কায় ৬৬ টাকা, নেপালে ৪৯ টাকা, যুক্তরাষ্ট্রে ২২০ টাকা, যুক্তরাজ্যে ১০৮ টাকা ও জার্মানিতে ১২১ টাকা৷
ছবি: Reuters/L. Niesner
নাম্বেওর গ্রোসারি সূচক
নিউইয়র্ক শহরের বাজারের সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বাজারমূল্যের তুলনা করে তালিকা প্রকাশ করে নাম্বেও৷ এতে দেখা যাচ্ছে, নিউইয়র্কে যে গ্রোসারির দাম ১০০ টাকা৷ বাংলাদেশে সেটা ৩০ টাকায় পাওয়া যায়৷ জার্মানিতে পাওয়া যায় ৫২ টাকায়, যুক্তরাজ্যে ৫৬ টাকা, ভারতে ২৬ টাকা, পাকিস্তানে ১৭ টাকা ও নেপালে ২৬ টাকায়৷ সূচকটি দেখতে উপরে (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: imago/Levine-Roberts
নাম্বেওর তথ্য বিশ্বাসযোগ্য?
বিশ্বের যে কেউ নাম্বেওর ডাটাবেজে তথ্য ঢোকাতে পারে৷ তাই কেউ চাইলে ইচ্ছেমতো তথ্য দিতে পারে৷ সে কারণে নাম্বেওর তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন আছে৷ এরপরও নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট, ইকোনমিস্ট, টাইম ম্যাগাজিনের মতো বিশ্বখ্যাত গণমাধ্যমে বিভিন্ন সময় নাম্বেওর তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে৷ নাম্বেও বলছে, গত ১২ মাসে ঢাকার বিভিন্ন জিনিসের দাম নিয়ে মোট ৩,১৩২ বার তথ্য যুক্ত করেছেন ২৭৪ জন নাম্বেও ব্যবহারকারী৷