সাবেক ব্যবসায়ী, বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে মাইক্রোব্লগিং সাইট টুইটারে নিষিদ্ধ করার লক্ষ্যে অনলাইনে অর্থ সংগ্রহ করছেন এক সাবেক গোয়েন্দা৷ ইতোমধ্যে তাঁর উদ্যোগে সাড়া দিয়ে টাকাও দিয়েছেন কেউ কেউ৷
বিজ্ঞাপন
সাবেক সিআইএ গুপ্তচর ভ্যালেরি প্লামি উইলসন ইতোমধ্যে প্রায় ৪০ হাজার মার্কিন ডলার সংগ্রহ করে ফেলেছেন৷ তাঁর লক্ষ্য, এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার৷ এই টাকা দিয়ে তিনি টুইটারের বেশ বড় এক শেয়ার কিনতে পারবেন৷ এবং সেই শেয়ার কেনার পর মাইক্রোব্লগিং সাইটটিতে ট্রাম্পকে নিষিদ্ধ করা সম্ভব হবে বলে আশা তাঁর৷
‘গোফান্ডমি' ওয়েবসাইটে বুধবার শুরু করা তাঁর এই উদ্যোগ বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে৷ প্লামি ইংরেজিতে #বাইটুইটার এবং #ব্যানট্রাম্প নামের দু'টি হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে তাঁর উদ্যোগের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন৷ কেন ট্রাম্পকে নিষিদ্ধ করা উচিত সে বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যাও দিয়েছেন তিনি৷ ‘‘ট্রাম্প শেতাঙ্গ আধিপত্যবাদীদের সাহস দিচ্ছেন'' এবং ‘সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতায়' উৎসাহ জোগাচ্ছেন বলেও মনে করেন প্লামি৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘তাঁকে (ট্রাম্প) বন্ধ করার এখনই সময়৷''
বলা বাহুল্য, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নীতিগত বিষয়াদি নিয়ে জনগণের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য আনুষ্ঠানিক টুইটার অ্যাকাউন্টের বদলে নিজের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করেন৷
ডোনাল্ড ট্রাম্পের কিছু বিতর্কিত টুইট বার্তা
হোয়াইট হাউস ও নিজের প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে শলাপরামর্শ না করেই ‘স্বতঃস্ফূর্ত’ টুইট বার্তা প্রকাশ করে বার বার বিতর্কের মুখে পড়েন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ তারই কিছু দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হলো৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Pleul
বার্সেলোনা হামলা, সন্ত্রাসবাদের দাওয়াই
স্পেনে একাধিক সন্ত্রাসী হামলার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প চরম ইসলামপন্থিদের শায়েস্তা করতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় এক মার্কিন জেনারেলের নৃশংস পদ্ধতি থেকে শিক্ষা নেবার পরামর্শ দেন৷ শুকরের মাংসে ডোবানো বুলেট দিয়ে জেনারেল পার্শিং ফিলিপাইন্সে ইসলামি বিদ্রোহীদের কীভাবে শায়েস্তা করেছিলেন, ট্রাম্প পরোক্ষভাবে সেই কাহিনির উল্লেখ করেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Barrena
শার্লটসভিলে তাণ্ডব
নব্য নাৎসি ও চরম দক্ষিণপন্থি গোষ্ঠীগুলির হিংসাত্মক তাণ্ডবের পর অ্যামেরিকাসহ গোটা বিশ্বে যখন সমালোচনার ঝড় উঠেছে৷ ট্রাম্প তখন তাণ্ডবকারী ও প্রতিবাদকারীদের ঢালাওভাবে হিংসার জন্য দায়ী করেন৷ চরম বিতর্কিত কনফেডারেট নেতাদের মূর্তি সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তেরও প্রবল সমালোচনা করেন তিনি৷
ছবি: Getty Images/D. Angerer
নিজের শিবিরই যখন লক্ষ্যবস্তু
শুধু ‘ফেক নিউজ’ নয়, ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজের রিপাবলিকান দলের একাধিক নেতা ও সংসদ সদস্যদের সমালোচনা বরদাস্ত করতে প্রস্তুত নন৷ শ্লেষাত্মক ও অপমানজনক টুইট বার্তার মাধ্যমে তিনি তাঁদের সরাসরি আক্রমণ করে আসছেন৷ ঘরের মধ্যেই অভাবে শত্রু বাড়িয়ে চললে চরম দুর্দিনে তিনি নিঃসঙ্গ হয়ে পড়বেন বলে মনে করিয়ে দিচ্ছেন অনেকেই৷
ছবি: Getty Images/W. McNamee
শিল্প-বাণিজ্য মহলের সঙ্গে সংঘাত
শার্লটসভিল কাণ্ডের পর দু’টি উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা নব্য নাৎসিদের প্রতি নরম মনোভাবের প্রতিবাদে প্রকাশ্যে ট্রাম্পের সমালোচনায় সোচ্চার হয়ে ওঠেন৷ তাঁরা পরিষদ ভেঙে দেবার উপক্রম করলে ট্রাম্প নিজেই টুইট বার্তায় সেই ঘোষণা করে লেখেন, তিনি ব্যবসায়ীদের চাপের মুখে ফেলতে চান না৷
ছবি: Imago/ZumaPress/O. Douliery
বেপরোয়া পররাষ্ট্র নীতি
নিজের প্রশাসনের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও সামরিক কর্মকর্তাদের মতামতের তোয়াক্কা না করেই অন্য দেশের বিরুদ্ধে তর্জন-গর্জন করতে ওস্তাদ ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে হুমকি ও ভেনেজুয়েলায় সামরিক হস্তক্ষেপের হুঙ্কার করে তিনি চরম অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সষ্টি করেছেন৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
5 ছবি1 | 5
তিনি মার্কিন সেনাবাহিনীতে হিজড়াদের নিষিদ্ধ করাসহ ওবামাকেয়ার পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন৷ এমনকি ভুল বানানের জন্যও অনেক সময় সমালোচনার মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ী থেকে রাজনীতিবিদ হওয়া এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট৷
প্লামি টুইটারের এক বিলিয়ন মার্কিন ডলারের শেয়ার কিনলেই অবশ্য সাইটটি নিয়ন্ত্রণের মতো ক্ষমতা পাবেন না৷ সেজন্য তাঁকে কিনতে হবে অন্তত ছয় বিলিয়ন মার্কিন ডলারের শেয়ার৷ তবে এক বিলিয়ন ডলারের শেয়ার তাঁকে প্রতিষ্ঠানটির নীতিগত বিষয়ে নিজের মতামত জানানোর সুযোগ করে দেবে৷ আর এককভাবে তিনি হবেন প্রতিষ্ঠানটির সবচেয়ে বেশি শেয়ারের মালিক, যা তাঁর মতামত টুইটারকে শুনতে কিছুটা বাধ্য করবে৷
টুইটার অবশ্য প্লামির এই উদ্যোগ সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেনি৷ তবে হোয়াইট হাউস চুপ থাকেনি৷ সাংবাদিকদের কাছে প্রেস সেক্রেটারির এক ই-মেলে লেখা হয়েছে যে, প্রেসিডেন্টের বাকস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের এক হাস্যকর উদ্যোগ এটি৷
এআই/ডিজি (এএফপি, এপি)
৬ মাস গেল, ৪ বছর টিকতে পারবেন তো ট্রাম্প?
ক্ষমতার প্রথম ৬ মাস কাটলো বিতর্ক, কেলেঙ্কারি, অভিযোগ ও সংকটের মধ্যে৷ অবশ্য রিপাবলিকান দলের মধ্যে এখনো তাঁর প্রতি অটুট সমর্থন রয়েছে৷ সব প্রতিকূলতা অগ্রাহ্য করে বাকি সাড়ে তিন বছর টিকে থাকতে পারবেন কি ডোনাল্ড ট্রাম্প?
ছবি: picture-alliance/dpa/Consolidated/R. Sachs
নির্বাহী আদেশই পছন্দ
প্রথম ছ’মাসে পূর্বসূরি বারাক ওবামার আমলের বিশেষ করে পরিবেশ ও শিল্প সংক্রান্ত ১৪টি নিয়মকানুন বাতিল করে দিয়েছেন ট্রাম্প৷ তবে সংসদের উভয় কক্ষে রিপাবলিকান দলের নিয়ন্ত্রণ থাকা সত্ত্বেও তাদের উপর ভরসা না করে নির্বাহী আদেশ জারি করতেই বেশি পছন্দ করেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Consolidated/R. Sachs
সংসদে ব্যর্থতা
রিপাবলিকান দলের সংসদ সদস্যরা আনুগত্য দেখিয়ে চললেও প্রথম ছ’মাসে প্রেসিডেন্ট হিসেবে সংসদে কোনো উল্লেখযোগ্য আইন পাশ করাতে পারেন নি ট্রাম্প৷ এমনকি দু’বার চেষ্টা চালিয়ে ‘ওবামাকেয়ার’ বাতিল করে স্বাস্থ্য বিমার সংস্কার সংক্রান্ত আইনও অনুমোদন করাতে পারেন নি তিনি৷
ছবি: Getty Images/Chip Somodevilla
উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা
স্বাস্থ্য বিমা নিয়ে হাত পুড়িয়েও কর ও জনকল্যাণ ব্যবস্থার আমূল সংস্কার করতে বদ্ধপরিকর ট্রাম্প প্রশাসন৷ প্রথম এক বছরে প্রধান নির্বাচনি প্রতিশ্রুতিগুলি পূরণ করে ভোটারদের বাহবা কুড়াতে চান ট্রাম্প৷ তবে জটিল এই আইন সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও ঐকমত্যের অভাব দেখছেন সমালোচকরা৷
ছবি: Getty Images
অবকাঠামোর উন্নয়ন
নির্বাচনি প্রচারের সময় অ্যামেরিকার বিপর্যস্ত অবকাঠামো ঢেলে সাজাতে এক লক্ষ কোটি ডলার বিনিয়োগের অঙ্গীকার করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ রাস্তাঘাট, সেতু, পরিবহণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা বা সংস্কারের কাজে সেই অর্থ ব্যয় করতে চেয়েছিলেন তিনি৷ অথচ ২০১৮ সালের বাজেটে এই খাতে কত বরাদ্দ পাওয়া যাবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে৷
ছবি: Getty Images/R.Beck
আবার ভোটের পরীক্ষা
২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে কংগ্রেসের প্রায় অর্ধেক আসনের জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে৷ ততদিনে যথেষ্ট সাফল্য অর্জন করতে না পারলে রিপাবলিকান সংসদ সদস্যদের পক্ষে ভোটারদের মন জয় করা কঠিন হবে৷ সংসদের উভয় কক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখতে না পারলে ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষে বাকি দু’বছর দেশ শাসন করা কঠিন হয়ে উঠবে৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/D. Goldman
ক্ষমতা হারানোর আশঙ্কা?
প্রতীকী প্রতিরোধ হিসেবে বিরোধী ডেমোক্র্যাটিক দলের কয়েকজন সংসদ সদস্য অনাস্থা প্রস্তাব আনলেও প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ‘ইমপিচমেন্ট’ প্রক্রিয়ার জন্য যথেষ্ট সংখ্যক সদস্যের সমর্থন পাওয়া কঠিন৷ মারাত্মক কোনো ঘটনা বা সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে, যদিও আগেভাগে তার পূর্বাভাষ পাওয়া কঠিন৷