বাটার জুতো ও টেসলা গাড়ির মধ্যে মিল কী হতে পারে? বাটা ও টেসলা দুজনেই আজকের চেক প্রজাতন্ত্রের মানুষ৷ সে দেশেরই এক শিল্পী অভিনব পদ্ধতিতে এমন সব বিশ্ববিখ্যাত ব্যক্তিদের ভাস্কর্য সৃষ্টি করছেন৷
বিজ্ঞাপন
চোখে না দেখলে অ্যানামরফিক পোর্ট্রেটের বিস্ময়কর বৈশিষ্ট্য বোঝা কঠিন৷ এটা দৃষ্টিকোণ নিয়ে খেলা বটে৷ ত্রিমাত্রিক কোনো মূর্তি টুডি ছবি হয়ে উঠছে৷ যেমন লেখক ফ্রানৎস কাফকার একটি ছবির মধ্যে অনেক বস্তু ঢুকে গেছে৷ এই শিল্পকর্মের স্রষ্টা পাট্রিক প্রশকো৷ তিনি এই শিল্পশৈলির বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘‘অ্যানামরফিক শব্দটা আসলে গ্রিক৷ এর অর্থ ‘যার কোনো আকার-আকৃতি নেই’৷ এমন ছবি দেখলে প্রথমে বিকৃত মনে হবে৷ দৃষ্টিকোণ বদলালে তবেই তার আকৃতি সৃষ্টি হবে৷ ঘরের মধ্যে নির্দিষ্ট একটি বিন্দুতে দাঁড়ালে তবেই দর্শক ছবিটি চিনতে পারবেন৷’’
চেক শিল্পী পাট্রিক প্রশকো ইলিউশন বা বিভ্রম সৃষ্টির কাজে হাত পাকিয়েছেন৷ তাঁর অ্যানামরফিক ছবিগুলি বেশ কয়েক মিটার দীর্ঘ এবং গোটা ঘর দখল করে নেয়৷ বেশিরভাগ ছবির বিষয়বস্তু খ্যাতনামা চেক ব্যক্তিত্ব৷ যেমন বিশ্বের সবচেয়ে বড় জুতোর কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা বাটা, চেক ভাষায় যার পদবি বাটিয়া৷ পাট্রিক বলেন, ‘‘টোমাশ বাটিয়া আমার সর্বশেষ সৃষ্টিকর্মের একটি৷ এখানে প্রদর্শিত সব অ্যানামরফিক ভাস্কর্য এমন সব বস্তু দিয়ে তৈরি করা হয়েছে, যেগুলির সঙ্গে সেই ব্যক্তির কোনো সম্পর্ক রয়েছে৷ যেমন টোমাশ বাটিয়ার পোর্ট্রেট পুরোপুরি শুধু জুতো দিয়ে তৈরি করা হয়েছে৷’’
বিভ্রম সৃষ্টি করা যার কাজ
04:14
প্রায় ২০০ জুতোর সোল, পুরানো ও নষ্ট হয়ে যাওয়া জুতো, কাপড় ও চামড়ার অংশই পোর্ট্রেটের উপকরণ৷ প্রয়োজনীয় উপকরণ সাজানোর উদ্দেশ্যে বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে পাট্রিক সেই সব অংশ সংগ্রহ করেছেন৷ প্রত্যেকটি জুতো যেন তুলির আঁচড়৷ মূল ছবিটি টোমাশ বাটিয়ার৷ পাট্রিক বলেন, ‘‘এত বড় চ্যালেঞ্জ সম্ভবত ভাস্কর্যের অন্য কোনো শৈলির ক্ষেত্রে দেখা যায় না৷ বস্তুগুলি শুধু ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্কিত হলে চলবে না, সেগুলির নির্দিষ্ট মাপ থাকতে হবে, কারণ, সৃষ্টিকর্মের নির্দিষ্ট অংশে সেগুলি শোভা পাবে৷ আলো ও ছায়ার উপর নির্ভর করে আমি মডেল তৈরি করি বলে সঠিক রং থাকাও অত্যন্ত জরুরি৷ আমার সঠিক রং ও একেবারের মানানসই আকৃতির প্রয়োজন হয়৷’’
কম্পিউটার, আলো ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক যন্ত্রের স্তূপের পেছনে রয়েছেন নিকোলা টেসলা৷ ইলেকট্রনিক্সের ক্ষেত্রে তিনি পথিকৃত হিসেবে পরিচিত৷ এমন ভাস্কর্য সৃষ্টি করতে পাট্রিকের প্রায় দুই মাস সময় লাগে৷ সব বস্তু জোড়া দেবার ক্ষেত্রে অনুপাত ঠিক রাখা সবচেয়ে জরুরি৷ পাট্রিক জানালেন, ‘‘আমি যখন বিশ্ববিখ্যাত কোনো ব্যক্তির পোর্ট্রেট তৈরি করি, তখন আমাকে প্রত্যেক মিলিমিটারের দিকে নজর দিতে হয়, যাতে শেষে সেই ব্যক্তিকে সত্যি চেনা যায়৷ দর্শকের অবস্থানের বিন্দুতে বার বার দাঁড়িয়ে তা যাচাই করতে হয়৷’’
পাট্রিক মনে করেন, কোনো বস্তু সঠিক জায়গায় না থাকলে পোর্ট্রেটের বদলে সেটি কার্টুন বা ব্যঙ্গচিত্রে পরিণত হবে৷
চেক প্রজাতন্ত্রের রাজধানী প্রাগের পুরানো অংশের মাঝেই ‘ইলিউশন আর্ট মিউজিয়াম’-এ তাঁর ভাস্কর্য প্রদর্শিত হয়৷ পাট্রিক বলেন, ‘‘এই ভাস্কর্য সব দিক থেকেই দেখে চেনা যায়৷ কিন্তু অবস্থান অনুযায়ী মোটিফ বদলে যায়৷ চারিদিকে ঘুরে এটি দেখতে হয়৷ এটা আমার সবচেয়ে জটিল কাজগুলির মধ্যে একটি৷’’
পাট্রিক প্রশকো এরই মধ্যে ছটি অ্যানামরফিক ভাস্কর্য তৈরি করেছেন৷ চলতি বছরেই সপ্তম সৃষ্টিকর্মের কাজ শেষ হবার কথা৷
আন্টিয়ে বিন্ডার/এসবি
বিশ্বের দামি কিছু শিল্পকর্ম
বিখ্যাত শিল্পীদের আঁকা ছবি ও ভাষ্কর্যের জন্য সংগ্রাহকরা বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে থাকেন – ৪০ কোটি ডলারের বেশি দাম ওঠাও আশ্চর্যের কিছু নয়৷ দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: picture alliance/ZUMAPRESS/R.Tang
সালভাদর মুন্ডি
লিওনার্দো দা ভিঞ্চির আঁকা ২০টি অক্ষত ছবির একটি এটি৷ ধারণা করা হয়, ১৫০০ সালে এ ছবিটি আঁকা হয়৷ ১৯৫৮ সালে ছবিটিকে অনুলিপি ভেবে নিলামে মাত্র ৬০ মার্কিন ডলারে এটি বিক্রি হয়৷ যিশুখ্রিষ্টের এ ছবিটি ২০১৭ সালে ১০ কোটি মার্কিন ডলারে বিক্রি হবে ধারণা করা হলেও অজ্ঞাত এক ক্রেতা ৪৫ কোটি ডলার দিয়ে কেনেন এটি৷
ছবি: picture alliance/ZUMAPRESS/R.Tang
ইন্টারচেঞ্জ
ডাচ-অ্যামেরিকান শিল্পী উইলেম ডে কুনিং-এর আঁকা ইন্টারচেঞ্জ নামে একটি তৈলচিত্র ২০১৫ সালে ৩০ কোটি ডলারে বিক্রি হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
তাস খেলায় মগ্ন
উত্তর অভিব্যাক্তিবাদ ঘরানার ফরাসি শিল্পী পল সেজানের আঁকা এ ছবিটির নাম ‘দ্যা কার্ড প্লেয়ার’৷ ২০১১ সালে ২৫ কোটি ডলারে ছবিটি বিক্রি হয়৷
ছবি: picture-alliance/akg-images
‘যখন তুমি বিয়ে করবে’
এ ছবিটি আঁকা হয়েছিল ১৮৯২ সালে৷ শিল্পী ফ্রান্সের পল গগাঁ৷ ‘হোয়েন উইল ইউ মেরি’ শিরোনামের এ ছবিটির দাম ২১ কোটি ডলার৷
ছবি: picture-alliance/akg-images/E. Lessing
‘নাম্বার ১৭এ’
অ্যামেরিকান শিল্পী জ্যাকসন পোলোকের আঁকা ‘নাম্বার ১৭এ’ নামের একটি চিত্রকর্ম ২০১৫ সালে ২০ কোটি ডলারে বিক্রি হয়৷ উপরের ছবিটি পোলোকের আঁকা, যার নাম নাম্বার ৭৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘বিয়ের ছবি’
নেদারল্যান্ডসের বিখ্যাত মার্টেন ও ওপইয়েন এর ১৬৩৪ সালের অনুষ্ঠিত বিয়ের ছবি এটি৷ চিত্রকর ডাচ শিল্পী রেমব্রান্ট হারমেনসুন ফান রিন৷ ২০১৫ সালে বিক্রি হওয়া এ ছবিটির দাম পড়েছে ১৮ কোটি ডলার৷
ছবি: gemeinfrei/DW Montage
আলজিয়ার্সের মহিলারা
লেডি অব আলজিয়ার্স শিরোনামে ছবিটি স্পেনের জগদ্বিখ্যাত চিত্রকর পাবলো পিকাসোর ১৯৫৫ সালে আঁকা৷ নিলামে ছবিটির দাম উঠে ১৭ কোটি ৯৪ লাখ ডলারে৷
ছবি: Reuters
‘ন্যু কুশে’
ইটালির চিত্রকর আমেদেও মোদিগলিয়ানি এই ছবিটি আঁকেন ১৯১৭ সালে, তার মৃত্যুর তিন বছর আগে৷ ১৭কোটি চার লাখ ডলারে ২০১৫ সালে বিক্রি হয় ছবিটি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
‘মাস্টারপিস’
অ্যামেরিকান পপ আর্টিস্ট রয় লিচটেনস্টাইনের ১৯৬২ সালে একেছিলেন বিখ্যাত এ ছবিটি৷ ২০১৭ সালে ১৬ কোটি ৫০ লাখ ডলারে ছবিটি বিক্রি হয়৷
ছবি: Dan Kitwood/Getty Images
লুসিয়ান ফ্রয়েডের তিনটি প্রতিকৃতি
আইরিশ চিত্রকর ফ্রান্সিস বেকন এই তিন খণ্ডের ছবিটি আঁকেন ১৯৬৯ সালে৷ ছবিতে যার আলেখ্য, তিনি হলেন ব্রিটিশ চিত্রকর লুসিয়ান ফ্রয়েড, পক্ষান্তরে মনস্তত্বের জনক সিগমুন্ড ফ্রয়েডের পৌত্র৷ ২০১৩ সালে ক্রিস্টি’স-এর নিলামে ছবিটির দাম ওঠে ১৪ কোটি ২৪ লাখ মার্কিন ডলার৷ রয়েছে মার্কিন শিল্পকলা সংগ্রাহক এলেইন ওয়াইনের সংগ্রহে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
অঙ্গুলিনির্দেশ
সুইস ভাস্কর আলবের্তো জাকোমেত্তির সৃষ্টি এই মানুষ-সমান ব্রোঞ্জ মূর্তিটি নিউ ইয়র্কে ক্রিস্টি’স-এ নিলাম করা হয় ২০১৫ সালে, কেনেন স্টিভ কোহেন নামের এক হেজফান্ড ম্যানেজার৷ মূর্তিটি আজ বিশ্বের সবচেয়ে দামি ক্রয়যোগ্য ভাস্কর্য বলে গণ্য৷ এটি বিক্রি হয়েছেল ১৪ কোটি ১৩ লাখ মার্কিন ডলারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/V. Hatfield/Christies
সোনার আডেলে
অস্ট্রিয়ার চিত্রকর গুস্তাফ ক্লিম্ট আডেলে ব্লখ-বাউয়ারের এই প্রতিকৃতিটি আঁকেন ১৯০৭ সালে৷ ম্যানহ্যাটানের ‘নয়ে গ্যালেরি’ নামের সংগ্রহশালার জন্য ২০০৬ সালে ছবিটি কেনেন মার্কিন ব্যবসায়ী রোনাল্ড লডার৷ ছবিটি ১৩ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলারে কেনার ব্যবস্থা করে ক্রিস্টি’স সংস্থা৷
ছবি: AUSSCHNITT: picture-alliance/Heritage Images
চিৎকার
নরওয়েজীয় চিত্রকর এডভার্ড মুঞ্চ ‘চিৎকার’ ছবিটি এঁকেছেন একাধিক বার ৷ দা ভিঞ্চির মোনালিসা ও ফান গখ-এর সূর্যমুখি ফুলের পরেই মুঞ্চের এই ছবিটিকে বিশ্বের খ্যাততম চিত্রকর্ম বলে গণ্য করা হয়৷ ছবিটির প্যাস্টেল রঙে আঁকা এই সংস্করণ নিলাম করা হয় ২০১২ সালে, নিউ ইয়র্কের সথেবি সংস্থায়৷ মার্কিন শিল্পপতি লিয়ন ব্ল্যাক ১১ কোটি ৯৯ লাখ মার্কিন ডলারে কিনেন এটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নগ্নমূর্তি, সবুজ পাতা, আবক্ষ
পাবলো পিকাসো এই তেলরঙের ছবিটি এঁকেছিলেন মাত্র একদিনে – দিনটা ছিল ৮ই মার্চ, ১৯৩২৷ প্রায় অজ্ঞাত ছবিটি নিউ ইয়র্কের নিলামে বিক্রি হয় ১০ কোটি ডলারের বেশি মূল্যে, কেনেন এক অজ্ঞাত ক্রেতা৷ ব্যক্তিগত মালিকানায় থাকলেও, ছবিটি লন্ডনের টেট মডার্ন গ্যালারিকে ধার দেওয়া হয়েছে ২০১১ সালে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
রুপোলি গাড়ি দুর্ঘটনা
মার্কিন চিত্রকর অ্যান্ডি ওয়ারহল ১৯৬৩ সালে এই সিল্ক স্ক্রিন প্রিন্টটি সৃষ্টি করেন – যার বিষয়বস্তু হল একটি গাড়ি দুর্ঘটনা৷ ২০ বছর ধরে ব্যক্তিগত সংগ্রহে থাকার পর ২০১৩ সালে সথেবি-তে ছবিটি নিলাম করা হয়৷ ক্রেতা অজ্ঞাতই থাকেন; তবে ছবিটি পপ আর্ট শিল্পী ওয়ারহলের সবচেয়ে দামী ছবি বলে গণ্য করা হয়৷