করোনা সংকটে এক ধরনের দোটানায় আছে জার্মানি৷ স্বাস্থ্যবিধির কড়াকড়ি থাকলে ভালো, নাকি পুরোপুরি তুলে দিলে? টুরিঙ্গিয়া রাজ্য ঝুঁকি নিয়েই দোটানা কাটানোর ঘোষণা দিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Schutt
বিজ্ঞাপন
জার্মানিতে লকডাউন ধীরে ধীরে শিথিল হচ্ছে৷ দোকানপাট, রেস্তোরাঁ, স্কুল, গির্জা খুলেছে৷ ৫ জুন পর্যন্ত এ অবস্থা চলবে৷ তারপর ম্যার্কেল সরকার পরিস্থিতি দেখে সিদ্ধান্ত নেবে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মানার অবস্থায় ফিরে যাওয়া ঠিক হবে কিনা৷
কিন্তু টুরিঙ্গিয়ার প্রধানমন্ত্রী বোডো রামেলো জানিয়েছেন, তার রাজ্যে আগামী ৬ জুন থেকে মাস্ক পরা বা সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার বাধ্যবাধকতা থাকবে না৷ বাম দলের এই নেতা বলেছেন, ‘‘এতদিন কড়া নিয়ম মেনে চলে আমরা যে সফল তা প্রমাণিত৷ এ সাফল্যই আমাদের বাস্তবানুগ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করতে বলছে৷’’ তার মতে, সাবেক পূর্ব জার্মানির অংশ ওই রাজ্যে এখন করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে, সুতরাং খুব কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আর দরকার নেই৷ অবশ্য কোনো এলাকায় পরিস্থিতির অবনতি হলে, সেখানে নতুন করে স্বাস্থ্যবিধি মানার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি৷
কড়াকড়ি উঠে গেলেও জার্মানিতে কী কী বন্ধ থাকবে?
করোনা সংকটের কারণে জার্মানিতে কড়াকড়ির মেয়াদ আপাতত ৩ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে৷ এই সময়ে বা তারপরেও কিছু ক্ষেত্রে বাধানিষেধ তুলতে চাইছে না সরকার৷ এমনই কিছু দৃষ্টান্তের দিকে নজর দেওয়া যাক৷
ছবি: JACQUES COLLET/AFP/Getty Images
কমপক্ষে দেড় মিটার দূরত্ব
সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে প্রকাশ্যে মানুষের মধ্যে কমপক্ষে দেড় মিটার দূরত্ব বজায় রাখতে হবে৷ একা, দুইজন অথবা পরিবার বা বাসার অন্য বাসিন্দাদের সঙ্গে বার হওয়ার অনুমতি রয়েছে৷ সব ক্ষেত্রেই কড়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে৷ করোনায় আক্রান্ত কোনো মানুষ যাতে বড়জোর একজনের বেশি মানুষকে সংক্রমিত করতে না পারে, সেই লক্ষ্যেই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Sommer
বন্ধ থাকবে কিন্ডারগার্টেন
স্কুলের নির্দিষ্ট কয়েকটি ক্লাস আবার চালু করার সিদ্ধান্ত নিলেও সরকার এখনো কিন্ডারগার্টেন খুলতে সাহস পাচ্ছে না৷ শিশুদের কাছে সামাজিক দূরত্ব ও কড়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রত্যাশা করা কঠিন বলেই মূলত এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ তবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পেশার মানুষ যাতে কাজে যেতে পারেন, সেই লক্ষ্যে তাদের শিশুদের দেখাশোনার জন্য জরুরি ব্যবস্থা করা হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/I. Fassbender
বার, রেস্তোঁরা খুলছে না
বার বা রেস্তোরাঁর বদ্ধ ঘরে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি বলে এই সব স্থাপনাও আপাতত বন্ধ রাখছে জার্মানির সরকার৷ তবে কিছু রেস্তোঁরা রান্না করা খাবার কেনার ব্যবস্থা শুরু করেছে৷ বাইরে নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে অর্ডার দিয়ে মোড়কবন্দি খাবার কিনছেন অনেক মানুষ৷ বাসায় খাবার পৌঁছে দেবার ব্যবস্থা করলেও বাধা নেই৷
ছবি: picture-alliance/D. Kubirski
বড় আকারের অনুষ্ঠানের উপর নিষেধাজ্ঞা
কনসার্ট, উৎসব, খেলার ম্যাচ ইত্যাদি যে সব অনুষ্ঠানে অনেক মানুষের সমাবেশ হয়, সেগুলি আগস্ট মাসের শেষ পর্যন্ত বন্ধ রাখছে জার্মানির সরকার৷ ভিড় যেখানে অনিবার্য, সেখানে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা কার্যত অসম্ভব৷ আয়োজকদের পক্ষেও এমন গ্যারেন্টি দেওয়া সম্ভব নয়৷ একই কারণে বন্ধ থাকছে মিউজিয়াম, গ্যালারির মত স্থাপনাও৷
ছবি: picture-alliance/dpa
প্রার্থনা করা যাবে না উপাসনালয়ে
গির্জা, মসজিদ, সিনাগগ, মন্দির – কোনো ধর্মের মানুষই আপাতত সমবেত হয়ে প্রার্থনা করতে পারবেন না৷ সরকারের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্কের পর ধর্মীয় সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়েছে৷ উপাসনালয়ে কড়া বিধিনিয়ম নিশ্চিৎ করে প্রার্থনার ব্যবস্থা করতে পারলে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার কথা চিন্তা করবে সরকার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Gentsch
ভ্রমণ, পর্যটনের জন্য আরও অপেক্ষা করতে হবে
ভ্রমণেও বহাল থাকছে নিষেধাজ্ঞা৷ এমনকি দেশের মধ্যে আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবদের কাছে যাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞাও তুলে নিচ্ছে না সরকার৷ খুব জরুরি ক্ষেত্রে অনুমতি দেওয়া হচ্ছে৷ পর্যটকের অভাবে বেশিরভাগ হোটেলও বন্ধ থাকছে৷ সীমান্তবর্তী অঞ্চলের নিত্যযাত্রীদের জন্য শুধু কয়েকটি হোটেল খোলা রাখা হচ্ছে৷ তবে ১৪ দিনের কোয়ারান্টিনের নিয়ম মেনে বেশি মানুষ সেই সুযোগ গ্রহণ করছেন না৷
ছবি: JACQUES COLLET/AFP/Getty Images
6 ছবি1 | 6
লকডাউন শিথিল করার পর থেকে জার্মানিতে নতুন করে সংক্রমণ বৃদ্ধির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে৷ রেস্তোরাঁ এবং গির্জায় গিয়ে মানুষ সংক্রমিত হচ্ছেন৷ আগামী গ্রীষ্মের ছুটিতে করোনা ভাইরাস আবার আঘাত হানতে পারে এবং সে আঘাত সামলানো জার্মানির জন্যও মুশকিল হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা৷
এই পরিস্থিতিতে বোডো রামেলোর ঘোষণা শুনে বিস্মিত অনেকে৷ এসপিডি দলের নেতা কার্ল লাউটারবাখ মনে করেন, টুরিঙ্গিয়া পুরোপুরি ভুল করছে৷ তার মতে, এতদিন নিয়ম কঠোরভাবে মানার সুফলই পেয়েছে জার্মানি, তাই অসময়ে উল্টো পথে চললে ফল ভয়াবহ হতে পারে৷
এমনিতে টুরিঙ্গিয়ায় করোনা পরিস্থিতি ভালো৷ খুব ছোট এবং খুব কম ঘনবসতির এ রাজ্যে এ পর্যন্ত মাত্র দু হাজার ৮৮২ জনের দেহে সংক্রমণ ধরা পড়েছে, মারা গেছেন মাত্র ১৫৪ জন৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন রাজ্যের অর্থনৈতিক অবস্থা বেশি ভালো নয় বলে সেখানে পর্যটক খুব বেশি যায় না৷ ফলে লকডাউন পুরোপুরি তুলে দিলেও সেখানে এর প্রভাব খুব দ্রুত হয়ত নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাবে না৷ বিশেষজ্ঞরা আরো বলছেন, টুরিঙ্গিয়ায় এক-চতুর্থাংশ মানুষের বয়স ৬৫ বছরের বেশি৷ বাইরে ঘোরাফেরা খুব কম করেন তারা৷ তাই সংক্রমিত হন কম এবং এ কারণে সেখানে মৃত্যুহারও কম৷
কেট ব্র্যাডি/ এসিবি
জার্মানিতে রেস্তোরাঁ আর বার আবার খুলেছে
কোভিড-১৯-এর জন্য কয়েক সপ্তাহ বন্ধ থাকার পর জার্মানিতে বার আর রেস্তোরাঁগুলো আবার খুলতে শুরু করেছে। সেখানে শুরু হয়েছে খানাপিনা। তবে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হচ্ছে সবাইকে। দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Dedert
ফিরছে স্বাভাবিক ছন্দ
স্যাক্সনি রাজ্যের ড্রেসডেন শহরের এক রেস্তোরাঁর টেবিল পরিষ্কার করছেন এক কর্মী। বার্লিন, ব্রাণ্ডেনবুরগ, হেসে, স্যাক্সনি এবং থুরিঙিয়ার বার এবং রেস্তোরাঁগুলো খোলার অনুমতি পেয়েছে ১৫ মে থেকে। মেকলেনবুর্গ, ওয়েস্টার্ন-পমারানিয়া, নর্থ রাইন-ওয়েস্টফালিয়া, লোয়ার স্যাক্সনি, হামবুর্গ এবং রাইনল্যান্ড পালাটিনাটের রেস্তোরাঁ আর বার তার আগেই খুলেছে।
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Michael
পুতুলের সঙ্গে পানাহার
পাশাপাশি বসে পানাহার করা যাবে না। সোশ্যাল ডিসট্যান্স বজায় রাখতে অনেক আসনে মানুষের জায়গায় বসানো হয়েছে পুতুল।সুতরাং আপনার পাশে মানুষের আকৃতির কোনো-না-কোনো পুতুল থাকবেই।
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Stratenschulte
সব জীবাণুমুক্ত
স্বাস্থ্যবিধি মানার বাধ্যবাধকতা মেনেই খুলতে হচ্ছে রেস্তোরা, বার। খেতে বসলে অনেক টেবিলে দেখা যাবে 'দয়া করে সব জীবাণুমুক্ত করুন’ লেখা বিজ্ঞপ্তি। অর্থাৎ, খাওয়া শুরুর আগে হাত খুব ভালো করে ধুয়ে নেয়া একান্ত কর্তব্য।
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Sauer
খোলা আকাশের নীচে খাওয়া-দাওয়া
বার্লিনের এক রেস্তোরাঁর বাইরে চলছে খাবার পরিবেশনের প্রস্তুতি। করোনায় সংক্রমণ এড়াতে অনেকরেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষকে শুধু খোলা আকাশের নীচে খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য সরকার।
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Kalaene
সংখ্যা খুব গুরুত্বপূর্ণ
খাওয়া শুরুর আগে মাস্ক পরে থাকলে ভালো। সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে দরকার হতে পারে ভেবে অনেক রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষ ক্রেতাদের টেলিফোন নাম্বার এবং বাড়ির ঠিকানা জানতে চায়। এক ঘর থেকে সর্বোচ্চ দুজন অতিথি নেয়ার নিয়মও রয়েছে কিছু রেস্তোরাঁয়।