কক্সবাজারের টেকনাফে সম্প্রতি ২৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন একটি সৌরপ্রকল্পের উদ্বোধন হয়েছে৷ ফলে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ দেশের মোট চাহিদার পাঁচ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে৷
বিজ্ঞাপন
জুলস পাওয়ার লিমিটেডের সাবসিডিয়ারি ‘টেকনাফ সোলারটেক এনার্জি লিমিটেড' ১১৬ একর জায়গার ওপর সোলার পার্কটি গড়ে তুলেছে৷ সেখানে থেকে উৎপাদিত ২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে৷
টেকনাফের মোট বিদ্যুৎ চাহিদার প্রায় ৮০ শতাংশের জোগান দেয়ার ক্ষমতা এই সোলার পার্কের আছে বলে জানিয়েছেন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুহের লতিফ খান৷
এর আগে যে সোলার প্রকল্পটি সবচেয়ে বড় ছিল, সেখান থেকে মাত্র ৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হতো৷
নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ শ্রেডা'র পরিচালক শেখ রিয়াজ আহমেদ জানিয়েছেন, বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৫৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে৷ এর মধ্যে প্রায় অর্ধেকই হচ্ছে জলবিদ্যুৎ থেকে৷
শুধু আগামী বছরেই নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম, এমন প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে৷
এছাড়া পরের দুই বছর, অর্থাৎ ২০২০ ও ২০২১ সালে আরো ১,১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পের কাজও চলছে বলে জানান শেখ রিয়াজ আহমেদ৷
অবশ্য এসব প্রকল্পের কয়েকটি জমি অধিগ্রহণসহ অন্যান্য সমস্যার মধ্যে আছে বলেও স্বীকার করেন শ্রেডার ঐ কর্মকর্তা৷
তবে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব হলে ২০২১ সালে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ২,২৩৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে বলে জানান তিনি৷
২০০৮ সালের নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিতে ২০২০ সালের মধ্যে দেশের মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের দশ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত করা হয়েছিল৷ ২০২০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতাসম্পন্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে৷
লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সরকারের পক্ষ থেকে নেয়া নানান উদ্যোগের মধ্যে একটি হচ্ছে, শিল্প কারখানা ও বাণিজ্যিক ভবনের ছাদে সৌর প্রকল্প বাস্তবায়নে সহায়তা করা৷
বড় আকারের সৌর প্রকল্প ছাড়াও বাংলাদেশের ঘরবাড়িতে ছোট আকারের ‘সোলার হোম সিস্টেম' ব্যবহার জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে৷
বাংলাদেশ সোলার অ্যান্ড রিনিউয়েবল এনার্জি অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট দীপাল সি. বড়ুয়া থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনকে জানিয়েছেন, বর্তমানে প্রায় ৫২ লক্ষ বাড়িতে সোলার হোম সিস্টেম ব্যবহৃত হচ্ছে৷ এর মাধ্যমে দেশের প্রায় ১২ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে বলে জানান তিনি৷
বাংলাদেশে বাড়ছে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার
খনিজ জ্বালানি শক্তির ভাণ্ডার দিনে দিনে ফুরিয়ে আসায় পৃথিবীজুড়ে নির্ভরযোগ্যতা বাড়ছে নবায়নযোগ্য জ্বালানি শক্তির৷ বাংলাদেশে এ শক্তির ব্যবহার বাড়ছে উল্লেখযোগ্য হারে৷ ছবিঘরে থাকছে তারই কিছু নমুনা৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
সোলার ইরিগেশন সিস্টেম
বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের বেশিরভাগ এলাকাতেই বিদ্যুতের সংযোগ পৌঁছেনি৷ যে জায়গাগুলাতে সংযোগ আছে সেখানে লোডশেডিং একটি বড় সমস্যা৷ সে কারণে দেশে ‘সোলার ইরিগেশন সিস্টেম’ জনপ্রিয় হচ্ছে৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
ধোঁয়া ও শব্দ দূষণ মুক্ত
সেচ কাজে ডিজেল ইঞ্জিন ব্যবহারে বিকট আওয়াজে একদিকে শব্দ দূষণ অন্যদিকে এর কালো ধোঁয়া পরিবেশের ভয়াবহ ক্ষতি করে৷ এ দুই ক্ষতির দিক বিবেচনায় জনপ্রিয় হচ্ছে সোলার ইরিগেশন সিস্টেম৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
বন্যা কবলিত এলাকায় সোলার জনপ্রিয়
বাংলাদেশের গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন চরাঞ্চলের বিভিন্ন বন্যাপ্রবণ এলাকায় বাড়ছে সৌর বিদ্যুতের ব্যবহার৷ এসব এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছানোও ব্যয়বহুল ও কষ্টসাধ্য৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
হোটেল-রির্সোটে
বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার হোটেল-রির্সোটে বাড়ছে সৌর শক্তির ব্যবহার৷ পানি গরম করার যন্ত্র চালাতে প্রচুর বিদ্যুৎ শক্তির খরচ হয়৷ সেক্ষেত্রে সোলার ওয়াটার হিটার ব্যবহারে খরচ অনেক কম৷
বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চলগুলোতে দিন দিন বাড়ছে সৌর বিদ্যুতের ব্যবহার৷ দেশের তিন পাবর্ত্য জেলার বেশিরভাগ এলাকা বিদ্যুৎহীন হওয়ায় সেসব এলাকার বাসিন্দাদের কাছে জনপ্রিয় হয়েছে সৌর বিদ্যুৎ৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
উপকূলীয় এলাকায়
বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকাগুলোতে সৌর বিদ্যুৎ বেশ জনিপ্রয়৷ প্রায়ই প্রাকৃতিক দুযোর্গে এসব এলাকা দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎহীন থাকে৷ ফলে সৌর বিদ্যুৎ জনপ্রিয় হয়েছে সেসব এলাকাগুলোতে৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
সৌরশক্তি ব্যবহারে শীর্ষে বাংলাদেশ
সৌরশক্তি ব্যবহারকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে৷ ‘রিনিউয়েবলস ২০১৭ গ্লোবাল স্ট্যাটাস রিপোর্ট' অনুযায়ী বিশ্বে ব্যবহৃত ৬০ লাখ সৌর প্যানেলের মধ্যে ৪০ লাখই ব্যবহার করা হচ্ছে বাংলাদেশে৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
বায়ু বিদ্যুতে পিছিয়ে বাংলাদেশ
সৌর বিদ্যুতের ব্যবহারে বাংলাদেশ বেশ এগিয়ে গেলেও পিছিয়ে রয়েছে বায়ু বিদ্যুৎ ব্যবহারে৷ কক্সবাজারের কুতুবদিয়া দ্বীপের ১ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকার পর সম্প্রতি চালু হলেও দেশের অন্যান্য প্রকল্প বন্ধ রয়েছে দীর্ঘ সময় ধরে৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
জনপ্রিয় হচ্ছে বায়োগ্যাস
বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে বেড়েছে বায়োগ্যাসের ব্যবহার৷ যেসব বাড়িতে গবাদি পশু রয়েছে তারা এখন ঝুঁকছেন বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপনে৷