বাংলাদেশের সম্ভাবনা অনেক৷ আর সেই সম্ভবনা কাজে লাগিয়ে দারিদ্র পুরোপুরি দূর করা অসম্ভব নয়৷ সমস্যা হচ্ছে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, যা দেশটির উন্নয়নে বড় বাধা৷
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটি আকাঙ্খা প্রবল৷ একবার ক্ষমতায় যেতে পারলে যে কোনো উপায়ে সেটা ধরে রাখা৷ জনগণের ইচ্ছা, আকাঙ্খা বা দেশ পরিচালনায় দলটির সাফল্য, ব্যর্থতা এক্ষেত্রে বিবেচ্য নয়৷ আর তাই একটি সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার সময় হলে দেশটিতে শুরু হয় এক ধরনের রাজনৈতিক অস্থিরতা৷ ক্ষমতাসীনদের চেষ্টা থাকে ক্ষমতা ধরে রাখা, আর বিরোধী দল চায় যেকোন উপায়ে তাদের টেনে নামাতে৷ ফলাফল: অবরোধ, হরতালে অসংখ্য প্রাণহানি আর সম্পদের বিপুল ক্ষতি৷
সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনের কথাই ধরুন৷ ২০১৪ সালের পাঁচ জানুয়ারির সেই নির্বাচনের আগে দেশটির বিরোধী দল দাবি করলো, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে৷ কিন্তু বাধ সাধলো ক্ষমতাসীনরা৷ তারা নিজেরাও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনেই শেষবার ক্ষমতায় এসেছিল৷ কিন্তু পরে তাদের মনে হয়েছে, সে ব্যবস্থা ঠিক নয়৷ তাই সংসদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার সুযোগ নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দিলেন ক্ষমতাসীনরা৷
বাংলাদেশের সংসদ নির্বাচনের ইতিহাস
স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে ১১ বার সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ ছবিঘরে থাকছে সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য৷
ছবি: Anupam Nath/AP/picture alliance
প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন
স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ প্রথম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল৷ সে সময় ৩০০ আসনে সরাসরি নির্বাচন হয়৷ আর সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংখ্যা ছিল ১৫টি৷ ঐ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসেছিল ৭ এপ্রিল, তেজগাঁওয়ে অবস্থিত তখনকার জাতীয় সংসদ ভবনে৷ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৯৩টিতে জয়লাভ করে৷ বঙ্গবন্ধু সে সময় ঢাকা-১২ আসন থেকে বিজয়ী হয়েছিলেন৷
ছবি: AP
দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচন, প্রথম নারী সাংসদ
প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আমলে ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণ হয়৷ সেবার সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংখ্যা ছিল ৩০টি৷ তবে ঐ সংসদেই প্রথমবারের মতো প্রত্যক্ষ ভোটে একজন নারী সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন৷ খুলনা-১৪ থেকে নির্বাচিত হন সৈয়দা রাজিয়া ফয়েজ৷ প্রথম অধিবেশন বসেছিল ২ এপ্রিল৷ নির্বাচনে মাত্র মাস ছয়েক আগে প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপি ২০৭টি আর আওয়ামী লীগ ৫৪টি আসন পেয়েছিল৷
ছবি: imago stock&people
তৃতীয় সংসদ নির্বাচন
ভোটগ্রহণ হয় ১৯৮৬ সালের ৭ মে৷ জাতীয় পার্টি ১৫৩টি, আওয়ামী লীগ ৭৬টি আর জামায়াতে ইসলামী ১০টি আসন পায়৷ বিএনপি এই নির্বাচন বর্জন করেছিল৷
ছবি: http://www.parliament.gov.bd
চতুর্থ সংসদ নির্বাচন
১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ এই নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছিল৷ আওয়ামী লীগ, বিএনপি সহ বেশ কয়েকটি দল এই নির্বাচন বর্জন করেছিল৷ জাতীয় পার্টি আসন পেয়েছিল ২৫১টি৷ সংরক্ষিত মহিলা আসন সংক্রান্ত আইনের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় এই সংসদে মোট আসন সংখ্যা ছিল ৩০০টি৷
ছবি: http://www.parliament.gov.bd
পঞ্চম সংসদ নির্বাচন
তৎকালীন প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদকে প্রধান উপদেষ্টা করে গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপি ১৪০টি, আওয়ামী লীগ ৮৮টি আর জাতীয় পার্টি ৩৫টিতে জয়লাভ করে৷ এছাড়া নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের ভোটের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে ৩০ জন মহিলাকে সাংসদ নির্বাচিত করা হয়৷ অবশ্য তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাটি সংবিধানের অংশ ছিল না৷ পরের সংসদে সেই বিল পাস হয়েছিল৷
ছবি: Getty Images
ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচন
অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি৷ আওয়ামী লীগ সহ অধিকাংশ বিরোধী রাজনৈতিক দল নির্বাচনটি বর্জন করেছিল৷ ফলে মোট ভোট গৃহীত হয়েছিল মাত্র ২১ শতাংশ৷ ৩০০টি আসনের মধ্যে বিএনপি ২৭৮টিতে জয়লাভ করেছিল৷ মাত্র চার কার্যদিবসে সংসদ বসার পর তা বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়৷ এই সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাস হয়৷
ছবি: picture-alliance/Dinodia Photo
সপ্তম সংসদ নির্বাচন
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ১৯৯৬ সালের ১২ জুন অনুষ্ঠিত প্রথম নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ১৪৬, বিএনপি ১১৬ ও জাতীয় পার্টি ৩২টি আসনে জয়লাভ করে৷ পরে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী করে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ৷
ছবি: Reuters
অষ্টম সংসদ নির্বাচন
ভোটগ্রহণ হয় ২০০১ সালের ১ অক্টোবর৷ অষ্টম সংসদের মোট সদস্য সংখ্যা ছিল ৩০০টি৷ কারণ সংরক্ষিত মহিলা আসন সংক্রান্ত আইনের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় শুরুতে কোনো মহিলা আসন ছিল না৷ পরে আইন করে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসনের সংখ্যা ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৪৫ এ উন্নীত করা হয়৷ নির্বাচনে বিএনপি ১৯৩ আর আওয়ামী লীগ ৬২টি আসনে জয়ী হয়েছিল৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
নবম সংসদ নির্বাচন
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার অধীনে অনুষ্ঠিত সবশেষ নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হয় ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর৷ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোট সরকার পেয়েছিল ২৬৩টি আসন৷ আর বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট পায় ৩৩টি আসন৷
ছবি: picture-alliance/A.A./N. Kumar
দশম সংসদ নির্বাচন
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচন বর্জন করেছিল বিএনপি৷ ফলে ১৫৩ জন সাংসদ কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই সাংসদ নির্বাচিত হন৷
ছবি: DW/M. Mamun
একাদশ সংসদ নির্বাচন
বাংলাদেশের সবশেষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০১৮ সালে৷ আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে হওয়া এই নির্বাচনে সংসদের ৩০০ আসনের ২৮৮টিই পেয়েছিল ক্ষমতাসীন দল ও মহাজোট৷ সেই নির্বাচনে নৌকার পক্ষে ভোট পড়েছে পাঁচ ভাগের চার ভাগ৷ ঘটেছে নজিরবিহীন ঘটনাও৷ ২১৩টি কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়েছে৷ প্রায় আট হাজার কেন্দ্রে পড়েছে ৯০ শতাংশের বেশি৷
ছবি: Anupam Nath/AP/picture alliance
11 ছবি1 | 11
দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্তে অনড় বিরোধী দল নির্বাচন বর্জন করলো৷ শুধু বর্জন নয়, তাদের ডাকা হরতাল, অবরোধের সময় প্রাণহানি ঘটলো প্রচুর, সম্পদের ক্ষতিও হয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকার, অর্থনীতি মুখ খুবড়ে পড়েছে৷ তাতে অবশ্য ক্ষমতাসীনরা তাদের অবস্থান থেকে সরে আসেনি৷ বরং এমন এক একতরফা নির্বাচন তারা করেছে, যেখানে ১৫৩টি আসনে, অর্থাৎ সংসদের অর্ধেকের বেশি আসনে ভোটাভুটিই হয়নি৷
নৈতিকভাবে দুর্বল সেই নির্বাচন জয় করার পর অবশ্য ক্ষমতাসীনরা মোটামুটি নিজের অবস্থান পোক্ত করে নিয়েছে৷ ক্রসফায়ার আর মামলা, মোকাদ্দমায় জড়িয়ে বিরোধী দলকে কোনঠাসা করে দিয়েছে৷ অবস্থা এমন যে, বাংলাদেশে বর্তমানে কার্যত কোনো বিরোধী দল নেই৷ অথচ সদিচ্ছা থাকলে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের আয়োজন করা যেত, যা বাংলাদেশের রাজনীতিতে স্থিতিশীল অবস্থা নিশ্চিত করতো৷
সাসটেনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল বা এসডিজির মূল কথা হচ্ছে টেকসই উন্নয়ন৷ যে ১৭টি লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে, তা অর্জন অসম্ভবও নয়৷ তবে সেটা তখনই সম্ভব হবে, যখন বাংলাদেশের রাজনৈতিকক্ষেত্রে একটি টেকসই ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যাবে৷ প্রশ্ন হচ্ছে, সেটা কি আদৌ সম্ভব?
বন্ধু, আপনি কি লেখকের সঙ্গে একমত? জানান নীচের ঘরে৷
এসডিজির ১৭ লক্ষ্য: পরামর্শক দলে ইউনূস, মেসি
জাতিসংঘের এমডিজি (সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য) কর্মসূচি শেষ হয়ে এসেছে এসডিজি (টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য)৷ আগে লক্ষ্য ছিল আটটি, এবার ১৭টি৷
এমডিজি থেকে এসডিজি
২০০০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত চলা সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য বা এমডিজিতে লক্ষ্যমাত্রা ছিল আটটি৷ এমডিজি বাস্তবায়নে কয়েকটি ক্ষেত্রে ভালো সাফল্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ৷ এবার টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য বা এসডিজিতে ১৭টি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে৷
ছবি: Fotolia/ben_photos
কোনো দারিদ্র্য নয়
এসডিজির প্রথম লক্ষ্য বিশ্ব থেকে একেবারে চরম দারিদ্র্য দূর করা৷ ২০৩০ সালের মধ্যে সেটি করতে চায় জাতিসংঘ৷ বৈশ্বিক এই সংস্থার হিসাবে যাদের আয় দিনে সোয়া এক ডলার, অর্থাৎ প্রায় ১০০ টাকা তারাই চরম দরিদ্র৷
ছবি: Farjana K. Godhuly/AFP/Getty Images
ক্ষুধা দূর
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ক্ষুধা দূর করতে হবে এবং গরিব ও নবজাতক শিশু সহ যেসব মানুষ সংকটের মধ্যে আছে তাদের জন্য নিরাপদ, পুষ্টিকর ও পর্যাপ্ত খাবারের সংস্থান নিশ্চিত করতে হবে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A.G. Farran
মা ও নবজাতকের মৃত্যু সংখ্যা
এক লক্ষ শিশু জন্মের বিপরীতে মাতৃমৃত্যুর সংখ্যা ৭০ এর নীচে নামিয়ে আনতে হবে৷ আর এক হাজার শিশুর জন্মের বিপরীতে নবজাতকের মৃত্যুর সংখ্যা ১২-র নীচে নামাতে হবে৷ আর পাঁচ বছরের শিশু মৃত্যুর সংখ্যা প্রতি এক হাজারে ২৫ জনে নামিয়ে আনতে হবে৷
ছবি: Fotolia/poco_bw
শিক্ষা
২০৩০ সালের মধ্যে ছেলে ও মেয়ে উভয়ের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/ZB
লিঙ্গবৈষম্য দূর করা
নারী ও মেয়েদের ক্ষেত্রে সব ধরণের লিঙ্গবৈষম্য দূর করতে হবে৷ ব্যক্তিগত ও জনজীবনে নারী ও মেয়েদের বিরুদ্ধে সব রকমের (যেমন মানব পাচার, যৌন নির্যাতন) নির্যাতন বন্ধ করতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/D. Reinhardt
বিশুদ্ধ পানি
বিশ্বের সবাই যেন নিরাপদ ও বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করতে পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে৷ খোলা জায়গায় মলমূত্র ত্যাগ বন্ধ করতে হবে৷ নারী ও মেয়েদের জন্য মলমূত্র ত্যাগের স্থান ঠিক করার বিষয়ে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Y. Arhab
অন্য যেসব ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে
এর মধ্যে আছে সাশ্রয়ী ও টেকসই জ্বালানি, আর্থিক প্রবৃদ্ধি, অবকাঠামো, রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে অসমতা, নিরাপদ শহর, সম্পদ ভোগ, জলবায়ু পরিবর্তন, সামুদ্রিক সম্পদ, ইকোসিস্টেম, সুবিচার ও টেকসই উন্নয়ন৷ এ সব বিষয়ে বিস্তারিত জানতে উপরের ‘+’ চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: Fotolia/Ingo Bartussek
পরামর্শক গ্রুপে ইউনূস, মেসি, শাকিরা
এসডিজি কর্মসূচির পরামর্শক গ্রুপে আছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস, লিওনেল মেসি, শাকিরা সহ আরও ১২ জন৷ এই গ্রুপের দায়িত্ব হলো এসডিজি কর্মসূচির উন্নয়ন ও বাস্তবায়ন করা৷