ট্রাকের মধ্যে পড়েছিল মৃতদেহগুলি। টেক্সাসের স্যান অ্যান্তোনিওতে বিমানঘাঁটির কাছে পাওয়া গেছে ট্রাকটি।
ঘটনাস্থলে পুলিশের গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্স। ছবি: Kaylee Greenlee Beal/REUTERS
বিজ্ঞাপন
স্থানীয় মিডিয়া প্রথমে এই খবর করে। পুলিশ জানিয়েছে, এই ধরনের এত বড় ঘটনা টেক্সাসে কখনো হয়নি। স্যান অ্যান্তোনিও থেকে মেক্সিকোর সীমান্ত ২৫০ কিলোমিটার দূরে।
১৬ জনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে স্থানীয় কর্মকর্তারা সোমবার রাতে জানিয়েছেন। পরে হাসপাতালে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে।
এখনও পর্যন্ত যা জানা গেছে
কর্মকর্তাদের মতে, মৃতরা সকলেই অভিবাসন-প্রত্যাশী। অ্যামেরিকা ও মেক্সিকোর সীমান্তে অপহরণ ও মানবপাচার নিত্যদিনের ঘটনা। তবে এত বড় মাপের ঘটনা কখনো ঘটেনি।
দমকল বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, দেহগুলি খুব গরম ছিল এবং দেখে মনে হচ্ছিল, তারা খুবই ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন। তবে তারা কোন দেশের নাগরিক তা সরকারি কর্মকর্তারা জানাননি।
পরে সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভয়ংকর গরমের জন্যই এই ঘটনা ঘটেছে। এখনো পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
যেখান থেকে ট্রাকে ৪৬টি মৃতদেহ পাওয়া গেছে, সেখানে পুরো রাস্তা বন্ধ করে দেয় পুলিশ। ছবি: Eric Gay/AP Photo/picture alliance
টেক্সাস ট্রিবিউনের রিপোর্ট অনুযায়ী. মার্কিন কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রোটেকশন এবং হোমল্যান্ড সিকিউরিটির কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গেছেন। তদন্তও শুরু হয়েছে। শহরের মেয়র রন নিরেনবার্গ বলেছেন, ''অভিবাসন-প্রত্যাশীদের আশ্রয় চাওয়ার বিষয়টি একটা মানবিক সংকট। কিন্তু এখানে যা হয়েছে তা হলো মানবিক ট্র্যাজেডি। তার অনুরোধ, সকলে যেন প্রার্থনা করেন, সহানুভূতির সঙ্গে বিষয়টি দেখেন, তাদের পরিবারের কথা চিন্তা করেন।''
টেক্সাসের ওই অঞ্চলে এখন খুবই গরম। সোমবার তাপমাত্রা ছিল ৩৯ দশমিক তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস। তারই মধ্যে ওই ব্যক্তিদের ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।
অভিবাসন প্রত্যাশীদের বিপজ্জনক অ্যামেরিকা যাত্রা
দক্ষিণ অ্যামেরিকার অভিবাসন প্রত্যাশীরা মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পথে পাড়ি দেন৷ যাত্রাপথে ভয়াবহ সব অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন তাঁরা৷
ছবি: Reuters/A. Meneghini
উন্মত্ত নদী পাড়ি
যুক্তরাষ্ট্র সীমান্তে পৌঁছানোর জন্য দক্ষিণ আ্যমেরিকার অভিবাসন প্রত্যাশীদের বিপজ্জনক এ নদীটি পাড়ি দিতে হয়৷ নদীটির মেক্সিকান নাম রিও ব্রাভো আর অ্যামেরিকান নাম রিও গ্রান্ডে৷ ছবিতে একজন অভিবাসন প্রত্যাশীকে তাঁর সন্তানসহ নদী পাড়ি দেয়ার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Reuters/A. Meneghini
ওপারে যেতে চায়, কিন্তু কীভাবে?
নদীটির উপর স্থাপিত দুটি সেতু মেক্সিকোর পিড্রাস নেগ্রাস শহর আর যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসকে যুক্ত করেছে৷ কিন্তু সেতুগুলো এই অভিবাসন প্রত্যাশীদের ব্যবহারের জন্য নয়৷ যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ভিসা যে তাঁদের নেই৷ আর তাই বাধ্য হয়েই তাঁরা পাড়ি দেন বিপজ্জনক এ নদীটি৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Cesar Aguilar
জীবনের ঝুঁকি
নদীটি পাড়ি দিতে গিয়ে মৃত্যুর ঝুঁকিও নিতে হয় অনেক অভিবাসন প্রত্যাশীকে৷ তবে অভিবাসন নিয়ে কাজ করা এনজিওগুলো তাঁদেরকে নিরাপদ থাকতে সহায়তা করেন৷ গ্রুপো বেটা নামে মেক্সিকোর একটি এনজিও’র কর্মীরা একজন অভিবাসন প্রত্যাশীকে নদী থেকে উদ্ধার করে মেক্সিকো সীমান্তে নিয়ে আসছেন৷
ছবি: Reuters/A. Meneghini
মারা যান অনেকেই
ঝুঁকি নিয়ে নদী পাড়ি দিতে গিয়ে কেউ কেউ পৌঁছান যুক্তরাষ্ট্র সীমান্তে৷ কেউ কেউ আবার ফিরে আসেন৷ তবে প্রতিকূল এ নদীটি পাড়ি দিতে গিয়ে জীবন দেন অনেকেই৷ নদীতে একটি মৃতদেহ দেখে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তারক্ষীদের উদ্ধারকাজে এগিয়ে যেতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Reuters/A. Meneghini
সীমান্তরক্ষীদের সহায়তা
অভিবাসন প্রত্যাশীদের অনেকেই সাথে নিয়ে যান পুরো পরিবার৷ যুক্তরাষ্ট্র সীমান্তে পৌঁছালে সেখানকার সীমান্তরক্ষীরা তাঁদের উদ্ধার করে নিয়ে যায় আশ্রয়কেন্দ্রে৷
ছবি: Reuters/A. Meneghini
নিস্তার নেই ওপারেও
সব বিপদ কাটিয়ে নদী পেরুলেও নিস্তার নেই৷ কড়া পাহাড়ায় দাঁড়িয়ে আছে যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তরক্ষীরা৷ ছবির এ অভিবাসন প্রত্যাশী ব্যক্তি নদী পাড়ি দিতে পাড়লেও সীমান্ত রক্ষীদের চোখ এড়াতে পারেননি৷ তাঁকে ধরতে রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে আছেন ওপারের সীমান্তরক্ষীরা৷
ছবি: Reuters/A. Meneghini
আটক হয় মেক্সিকোতে
অভিবাসন প্রত্যাশীদের অনেকেই আবার মেক্সিকোর নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে ধরা পরেন৷ অবৈধ এ অভিবাসন ঠেকাতে দেশটির পিড্রাস নেগ্রাস শহরের নিরাপত্তা রক্ষীদের সবসময়ই কড়া নজর রাখতে হয়৷
ছবি: Reuters/A. Meneghini
কমে আসছে অভিবাসীর সংখ্যা?
গত কয়েক বছরে যুক্তরাষ্ট্র সীমান্তে দক্ষিণ অ্যামেরিকার দেশগুলো থেকে যাওয়া অভিবাসন প্রত্যাশীর সংখ্যা কমে আসছে৷ যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তরক্ষীদের তথ্য অনুযায়ী, সীমান্তটিতে ২০০০ সালে প্রায় ১৬ লক্ষ অভিবাসন প্রত্যাশীকে আটক করা হয়েছিল৷ ২০১৮ সালে এ সংখ্যা ছিল চার লাখ৷
ছবি: Reuters/A. Meneghini
আশ্রয়কেন্দ্রে দীর্ঘ অপেক্ষা
মেক্সিকোর পিড্রাস নেগ্রাস শহরের একটি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ১৭’শ অভিবাসন প্রত্যাশী রয়েছেন৷ আশ্রয়কেন্দ্র থেকে আবেদন করে বৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে অনেক সময় লাগে৷ কেননা যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন বিভাগ প্রতিদিন মাত্র ২০টি আবেদন যাচাই বাছাই করতে পারে৷
ছবি: Reuters/S. Stapleton
9 ছবি1 | 9
কোন দেশের মানুষ
মেক্সিকোর কনসুলেট থেকে অফিসারদের ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, মোট ৫০ জন মারা গেছেন। তার মধ্যে ২২ জন মেক্সিকোর নাগরিক।
হন্ডুরাসও খোঁজখবর নিচ্ছে, তাদের দেশের কেউ মারা গেছেন কি না। কিন্তু এখনো মার্কিন কর্মকর্তারা জানাননি, ট্রাকে মৃত মানুষরা কোন দেশের।
বাইডেনের সমালোচনা
টেক্সাসের গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট টুইট করে বলেছেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেনের নীতির জন্যই এই ঘটনা ঘটেছে। তিনি ওপেন বর্ডার বা খোলা সীমান্ত নীতি নিয়ে চলছেন। যার ফল মারাত্মক হতে বাধ্য।