অ্যামেরিকার টেক্সাসের ইউভ্যালডিতে প্রাথমিক স্কুলে ঢুকে নির্বিচারে গুলি। ১৮ শিশু সহ মৃত ২১ জন। আক্রমণকারী নিহত।
বিজ্ঞাপন
সাম্প্রতিক সময়ে অ্যামেরিকার স্কুলে এতবড় আক্রমণের ঘটনা ঘটেনি। এখানে আক্রমণকারী একজন ১৮ বছর বয়সি তরুণ। সে ওই শহরেরই বাসিন্দা। তার কাছে একটি রাইফেল ও একটি হ্যান্ডগান ছিল। সে ঘটনাস্থলে গাড়ি চালিয়ে যায়। তারপর গাড়িটি ফেলে রেখে স্কুলে ঢুকে গুলি চালাতে থাকে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নির্দেশ দিয়েছেন, হোয়াইট হাউস, সেনা ঘাঁটি, নৌবাহিনীর জলযান, মার্কিন দূতাবাসে দেশের পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। এশিয়া সফর শেষে দেশে ফিরছিলেন বাইডেন। ১৭ ঘণ্টার দীর্ঘ বিমানযাত্রার মধ্যে বাইডেন বলেছেন, ''বিশ্বের অন্যত্র তো এই ধরনের আক্রমণের ঘটনা বিরল। তাহলে আমরা কেন এই হত্যালীলার মধ্যে থাকব? কেন এই রকম ঘটনা ঘটতেই থাকবে? ঈশ্বরের নাম নিয়ে মেরুদণ্ড সোজা রেখে আমরা সাহসের সঙ্গে কেন এর মোকাবিলা করতে পারব না? এখনই সময়, বেদনাকে কাজে রূপান্তরিত করার।''
মার্কিন কংগ্রেসে একাধিকবার বন্দুক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ আইন রূপায়ণ করার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু শক্তিশালী ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন লবির চাপে শেষপর্যন্ত সেই বিল পাস হয়নি।
ঘটনা সম্পর্কে যা জানা গেছে
ইউভ্যালডি শহর মেক্সিকো সীমান্তের কাছে। এই ছোট শহরে ১৬ হাজার মানুষের বাস। সেখানেই ১৮ বছর বয়সি অভিযুক্ত প্রাথমিক স্কুলে ঢুকে এই তাণ্ডব চালায়। টেক্সাসের গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট জানিয়েছেন, অভিযুক্তের নাম স্যালভাডোর রামোস। সে মার্কিন নাগরিক। স্কুলে ঢুকে সে নির্মমভাবে ও নির্বিচারে গুলি চালায়।
টেক্সাস ডিপার্টমেন্ট অফ পাবলিক সেফটির কর্মকর্তারা সিএনএনকে জানিয়েছেন, বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে রামোস তার দিদিমাকে গুলি করে। তারপর রাইফেল ও হ্যান্ডগান নিয়ে সে গাড়ি চালিয়ে স্কুলে আসে। তার শরীরে ছিল বুলেটের বেল্ট। নিরাপত্তারক্ষীর গুলিতে সে মারা যায়। তার আগে অবশ্য তার গুলিতে ২০ জন মারা যান।
যে বাচ্চারা মারা গেছে তারা দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে পড়তো। তাদের বয়স সাত থেকে ১০ বছরের মধ্যে।
অ্যামেরিকা-জুড়ে শোকের ছায়া
টেক্সাসের স্কুলে গুলি চালানোর ঘটনায় ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। শোকের ছায়া সর্বত্র।
ছবি: Marco Bello/REUTERS
টেক্সাসের স্কুলে গুলি
টেক্সাসের ইউভ্যালডির একটি প্রাথমিক স্কুলে ঘটনাটি ঘটে মঙ্গলবার। ১৮ বছরের এক তরুণ গায়ে বুলেটের বেল্ট লাগিয়ে স্কুলে ঢুকে পড়ে। নির্বিচারে গুলি চালিয়ে সে ছাত্রছাত্রীদের হত্যা করে। ঘটনায় ১৮ জন শিশু নিহত হয়েছে। মোট মৃত ২১। এর আগে বাড়িতে নিজের দিদিমাকেও গুলি করে হত্যা করে ওই যুবক। পরে নিরাপত্তারক্ষীদের গুলিতে তার মৃত্যু হয়। গুলি চালানোর কারণ এখনো অস্পষ্ট।
ছবি: Allison Dinner/AFP
বাইডেনের প্রতিক্রিয়া
জাপান থেকে অ্যামেরিকায় ফিরছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বিমানেই তিনি খবরটি পান। বিমানে বসেই তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। পরে টুইটও করেন। ওয়াশিংটনে নেমে ফের সাংবাদিক বৈঠক করেন বাইডেন। ঘটনায় নিজের ক্ষোভ চেপে রাখেননি প্রেসিডেন্ট। এর জন্য অস্ত্র আইনকে ফের দায়ী করেছেন তিনি।
ছবি: Kevin Lamarque/REUTERS
ক্ষুব্ধ কমলা হ্যারিস
টেক্সাসের ঘটনায় ক্ষুব্ধ ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। তিনিও জানিয়েছেন, এবার দ্রুত অস্ত্র আইন বদল করা উচিত। নির্বাচন পর্বে বাইডেন-হ্যারিস জুটি জানিয়েছিলেন, ক্ষমতায় এলে তারা অস্ত্র আইন কঠোর করবেন। কিন্তু রিপাবলিকানদের প্রতিরোধে সেই বিল আইনে পরিণত হয়নি। যা নিয়ে বার বার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাইডেন এবং হ্যারিস দুইজনেই।
ছবি: Alexandru Dobre/AP/picture alliance
পতাকা অর্ধনমিত
হোয়াইট হাউস, নৌবাহিনীর জলযান, সামরিক ঘাঁটি, দূতাবাস-সহ সমস্ত সরকারি ভবনে পতাকা অর্ধনমিত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট।
ছবি: Anna Moneymaker/Getty Images
বেসবল মাঠ
নিউইয়র্কে একটি বেসবল মাঠের ছবি। খেলা শুরুর আগে সেখানে নিহত শিশুদের স্মরণে নীরবতা পালন করা হচ্ছে।
ছবি: Frank Franklin II/AP Photo/picture alliance
স্কুলের চেহারা
মেক্সিকোর সীমান্তে অবস্থিত ইউভ্যালডি। ছোট্ট এই শহরে মাত্র ১৬ হাজার মানুষের বাস। সেখানেই এলিমেন্টারি স্কুলে আক্রমণ চালায় ১৮ বছরের স্যালভাডোর রামোস। গুলির আওয়াজ পাওয়ার পরেই সেখানে পৌঁছে যায় স্থানীয় পুলিশ। পুলিশের গুলিতে নিহত হয় আক্রমণকারী। তার আগে ২১ জনের প্রাণ নিয়ে নিয়েছে সে।
ছবি: San Antonio Express-News/ZUMA Press/IMAGO
ফাঁকা স্কুলবাস
এই স্কুলবাসে করেই বাড়ি ফেরার কথা ছিল নিহত শিশুদের। ফাঁকা স্কুলবাস দাঁড়িয়ে আছে স্কুলের বাইরে।
ছবি: Marco Bello/REUTERS
নিরাপত্তার বেষ্টনী
স্কুল চত্বর ঘিরে ফেলেছে নিরাপত্তাকর্মীরা। সবকিছু খতিয়ে দেখা হচ্ছে। স্কুলের বাইরে আতঙ্কিত বাবা-মায়েদের ভিড়।
ছবি: William Luther/The San Antonio Express-News/AP/picture alliance
ভেঙে পড়েছেন অভিভাবকরা
স্কুলের ভিতর থেকে তখনো সমস্ত মৃতদেহ বার করা হয়নি। স্কুলের বাইরে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন অভিভাবকরা।
ছবি: Marco Bello/REUTERS
একের পর এক ঘটনা
গত কয়েকবছরে একের পর এক গুলিচালানোর ঘটনা ঘটেছে অ্যামেরিকায়। স্কুলেও আক্রমণ হয়েছে। তবে এত বড় ঘটনা প্রায় ১০ বছর পরে ঘটল। এর আগে কানেকটিকাটের একটি স্কুলে বন্দুকধারীর হামলায় ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
ছবি: Dario Lopez-Mills/AP Photo/picture alliance
10 ছবি1 | 10
ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, ঘটনার পর পুলিশের প্রহরায় কাঁদতে কাঁদতে বাচ্চারা পার্ক করে রাখা গাড়ি ও বাসের দিকে যাচ্ছে।
এক দশক পর
এক দশক আগে কানেকটিকাটে স্যান্ডি হুকে স্কুলে বন্দুকধারীর গুলিতে ২৮ জন মারা গেছিলেন। তারপর ইউভ্যালডির ঘটনাই সবচেয়ে বড় ও নৃশংস স্কুলে আক্রমণের ঘটনা।
বাইডেন জানিয়েছেন, ''গত দশ বছরে নয়শর বেশি স্কুলে আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে।'' সেনেটার ক্রিস মারফি বলেছেন, ''আমাদের বাচ্চারা ভয়ে ভয়ে থাকছে। যখনই স্কুলে আক্রমণের ঘটনা ঘটে, তখনই তারা ভাবে, এরপর বোধহয় তাদের পালা।''