যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে একটি গির্জায় বন্দুকধারীর হামলায় কমপক্ষে ২৬ জন নিহত হয়েছে৷ হামলার কিছুক্ষণ পর মারা যায় বন্দুকধারীও৷ রবিবার সাড়ে ১১টায় উইলসন কাউন্টির সাদারল্যান্ড স্প্রিংসের ফার্স্ট ব্যাপটিস্ট চার্চে এ হামলা হয়৷
বিজ্ঞাপন
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, রবিবার গির্জায় প্রার্থনা চলাকালীন সময়ে ওই বন্দুকধারী সেখানে প্রবেশ করে এলোপাথারি গুলি শুরু করে৷ সেসময় সেখানে অন্তত ৫০ জন প্রার্থনা করছিলেন৷ পুলিশ জানায়, হামলাকারীর নাম ডেভিন প্যাট্রিক ক্যালি৷ ২৬ বছর বয়সি এই শ্বেতাঙ্গের গুলিতে নিহত হয় অন্তত ২৬ জন, যার মধ্যে রয়েছে গির্জার যাজকের পাঁচ বছর বয়সি মেয়েও৷
আহত আরো অন্তত ২০ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে৷ হামলাকারী নিজেও পালিয়ে যাওয়ার সময় মারা যায়৷ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে অবশ্য নিশ্চিত করা হয়েছে যে, পুলিশের গুলিতে মারা যায়নি ক্যালি৷ গুলি শেষে পালিয়ে যাওয়ার সময় তাকে ধাওয়া করে স্থানীয় এক অধিবাসী৷ পুলিশও হামলাকারীর পিছু ধাওয়া করে৷ কিছুক্ষণ পর গুয়াদেলুপে কাউন্টিতে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় ক্যালিকে৷ ২৬ জন নিহতের ঘটনা নিশ্চিত করে টেক্সাসের গভর্নর গ্রেগ অ্যাবোট এক সংবাদ সম্মেলনে জানায়, টেক্সাসের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় হামলার ঘটনা এটি৷
কনসার্টে, ক্লাবে নির্বিচারে গুলি চালানোর সাত ঘটনা
কনসার্ট বা পার্টিতে গুলি চালানোর ঘটনা লাস ভেগাসেই প্রথম নয়৷ সাম্প্রতিক সময়ে ফ্রান্স, তুরস্ক এবং ব্রিটেনেও এভাবে মানুষ হত্যার ঘটনা ঘটেছে৷ চলুন জেনে নিই এরকম সাতটি আলোচিত হত্যাকাণ্ডের কথা৷
ছবি: Reuters/M.Blake
লাস ভেগাস, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
গত পহেলা অক্টোবর আধুনিক মার্কিন ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর নির্বিচারে গুলি চালিয়ে মানুষ হত্যার ঘটনা ঘটেছে৷ নাভাডার এক অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তি লাস ভেগাসের ‘রুট নাইন্টিওয়ান হার্ভেস্ট মিউজিক ফেস্টিভ্যালে’ নির্বিচারে গুলি চালায়৷ এতে প্রাণ হারান কমপক্ষে ৫৯ ব্যক্তি, আহত হন আরো কয়েকশত মানুষ৷
ছবি: picture-alliance/AP Images
অরল্যান্ডো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
তবে লাস ভেগাসের হত্যাকাণ্ডের আগ অবধি মার্কিন ইতিহাসের সবচেয়ে প্রাণঘাতি হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ছিল অরল্যান্ডোতে৷ গত বছরের ১২ জুন সেখানে সমকামীদের এক নাইটক্লাবে হামলার ঘটনায় কমপক্ষে ৪৯ ব্যক্তি নিহত হন, আহত হন আরো বেশ কয়েকজন৷ ২৯ বছর বয়সি এক বন্দুকধারী সেই হত্যাকাণ্ড ঘটায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G. George Wilson
প্যারিস, ফ্রান্স
২০১৫ সালের ১৩ নভেম্বর রাতে প্যারিসের ব্যা ত্যঁ ক্ল’তে পারফর্ম করছিল মার্কিন ব্যান্ড ‘ইগলস অব ডেথ’৷ সেখানে বন্দুকধারীরা অতর্কিতে হামলা চালায়৷ সেই রাতে ১৩০ ব্যক্তি বন্দুকধারীদের গুলিতে নিহত হন৷ তাদের মধ্যে ৮৯ জন ছিলেন কনসার্টে৷ আর বাকিরা ফরাসি রাজধানীল আরো কয়েক জায়গায় সংগঠিত হামলায় প্রাণ হারান৷ তথাকথিত ‘ইসলামিক স্টেট’ সেই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Ruszniewski
ইস্তানবুল, তুরস্ক
২০১৭ সাল শুরুর রাতে ইস্তানবুলের রেইনা নাইটক্লাবে হামলায় প্রাণ হারান ৩৯ ব্যক্তি, আহত আরো বেশ কয়েকজন৷ উজবেকিস্তানের এক বন্দুকধারী নির্বিচারে গুলি চালিয়ে তাদের হত্যা করে৷ এই হামলারও দায় স্বীকার করেছে ‘ইসলামিক স্টেট’৷
ছবি: picture alliance/dpa/E.Gurel
ম্যানচেস্টার, ইউকে
২০১৭ সালের ২২ মে ম্যানেচস্টার অ্যারেনাতে আরিয়ানা গ্রান্ডের কনসার্টে ঘরে তৈরি বোমার বিস্ফোরণ ঘটে৷ এতে বোমা হামলাকারীসহ ২২ ব্যক্তি নিহত হয়৷ এছাড়া আহত হয় আরো ২৫০ ব্যক্তি৷ পুলিশ জানিয়েছে, ২২ বছর বয়সি সালমান আবেদি একা এই হামরা চালালেও আরো কয়েকজন তার এই পরিকল্পনা সম্পর্কে অবগত ছিল৷
গত বছরের ২৪ জুলাই জার্মানির আনসবাখে এক ‘ওপেন-এয়ার মিউজিক ফেস্টিভ্যালের’ গেটের কাছে এক সিরীয় শরণার্থী বোমা বিস্ফোরণ ঘটালে সে নিজেই মৃত্যুবরণ করে৷ এতে কয়েকজন আহতও হন৷ ২৭ বছর বয়সি সেই ব্যক্তির কাছে কনসার্টের কোনো টিকিট না থাকায় তাকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Karmann
ন্যুরবার্গ, জার্মানিতে বাড়তি সতর্কতা
জার্মানির বিখ্যাত ‘রক আম রিং’ মিউজিক ফেস্টিভ্যাল চলাকালে দুই স্থানীয় ইসলামিস্টকে খুঁজে না পাওয়ায় বাড়তি সতর্কতা গ্রহণ করে পুলিশ৷ কনসার্ট শুরুর রাতে, অর্থাৎ জুনের দুই তারিখে, পুলিশ কনসার্ট ভেন্যু থেকে ৮৭,০০০ মানুষকে সরিয়ে নেয়৷ পরবর্তীতে অবশ্য জানা যায় যে, হামলার আশঙ্কা সঠিক ছিল না৷ কেননা, সন্দেহভাজন দুই ব্যক্তির নামের বানানে ভুল করা হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T.Frey
7 ছবি1 | 7
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ১২ দিনের এশিয়া সফরে রয়েছেন৷ জাপান থেকে এ ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করে তিনি বলেন, পবিত্র স্থানে এমন হামলা শয়তানের কাজ৷
লাস ভেগাসে একটি গানের অনুষ্ঠানে বন্দুকধারীর হামলায় ৫৮ জন নিহত হওয়ার এক মাসের মাথায় এ হামলার ঘটনা ঘটল৷ গির্জায় এ হামলার পরপরই আবার সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে নতুন করে উঠে আসে যুক্তরাষ্ট্রে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন নিয়ে বিতর্ক৷ সাধারণ মানুষের পাশাপাশি অনেক রাজনীতিবিদও যোগ দেন এ বিতর্কে৷ ম্যাসাচুসেটস-এর সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন লেখেন, ‘‘চার্চ বা কনসার্ট বা স্কুলে আর কত মৃত্যু হলে আমরা এনআরএ-কে এ দেশের অস্ত্রের উপর নিয়ন্ত্রণের সুযোগ দেয়া বন্ধ করবো?'' তবে এ ঘটনা অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের সাথে সম্পর্কযুক্ত নয় দাবি করে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, এধরনের ঘটনা মানসিক সমস্যা থেকে ঘটেছে৷