ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে শুক্রবার কনজারভেটিভ দলের প্রধানের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন৷ তবে নতুন প্রধান না আসা পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে যাবেন তিনি৷
বিজ্ঞাপন
২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত গণভোটে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়ার পক্ষে ভোট পড়ার পর প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন ডেভিড ক্যামেরন৷
এরপরই ব্রেক্সিট কার্যকরের দায়িত্ব নিয়ে প্রধানমন্ত্রী হন টেরেসা মে৷ কিন্তু ইইউর সঙ্গে আলোচনার পর তৈরি হওয়া ব্রেক্সিট চুক্তি সংসদে পাস করাতে ব্যর্থ হন তিনি৷ পরপর তিনবার চুক্তিটি সংসদে তুলেও সাংসদদের সমর্থন পাননি৷ এমনকি চুক্তি পাস হলে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর পদত্যাগের প্রস্তাব দিয়েও সফল হতে পারেননি টেরেসা মে৷
নিজ দলের সাংসদসহ মন্ত্রিসভার কয়েকজন সদস্যও মে'র ব্রেক্সিট চুক্তি মেনে নিতে পারেননি৷ ফলে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসনসহ কয়েকজন মন্ত্রী পদত্যাগ করেছিলেন৷
এই অবস্থায়, শুরুতে বিরোধী লেবার পার্টির সঙ্গে ব্রেক্সিট চুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে না চাইলেও শেষ পর্যন্ত তাদের কাছেও যান মে৷ কিন্তু সেই আলোচনাও সফল হয়নি৷
এভাবে একের পর এক চেষ্টা ভেস্তে যাওয়ায় শেষ পর্যন্ত ২৪ মে দলের প্রধানের পদ থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন টেরেসা মে৷
ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন যাঁরা
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে ৭ জুন কনজারভেটিভ দলের নেতার পদ থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন৷ এরপর অনেকেই সেই পদে যাবার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন৷ আর যিনি ঐ পদে যেতে পারবেন তিনিই হবেন ব্রিটেনের নতুন প্রধানমন্ত্রী৷
ছবি: picture-alliance/L. Neal
বরিস জনসন
নতুন প্রধানমন্ত্রী হতে বুকমেকারদের ফেভারিট তিনি৷ তিনি লন্ডনের সাবেক মেয়র ও টেরেসা মে সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবেও কাজ করেছেন৷ ৫৪ বছর বয়সি জনসন গতবছর বোরকা পরিহিত নারীদের নিয়ে বক্তব্য রেখে সমালোচনার জন্ম দিয়েছিলেন৷ তিনি বলেছিলেন, ‘‘এটা খুবই হাস্যকর যে, মানুষকে লেটার বক্সের মতো সেজে বের হতে হবে৷’’
ছবি: Reuters/A. Yates
ডমিনিক রাব
সাবেক ব্রেক্সিটমন্ত্রী রাব সম্ভবত বরিস জনসনের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে পারেন৷ রাব-এর বাবা ইহুদি শরণার্থী ছিলেন, যিনি নাৎসি জার্মানি থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Dunham
মাইকেল গোভ
ব্রেক্সিট ক্যাম্পেইনের অন্যতম নেতা ছিলেন৷ ২০১৬ সালে ডেভিড ক্যামেরনের পদত্যাগের পর তিনি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌঁড়ে শামিল হয়েছিলেন৷ অবশ্য সেবার তিনি প্রথমে বরিস জনসনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে পরে তা প্রত্যাহার করে নিজেই প্রার্থী হয়েছিলেন৷
ছবি: Getty Images/C. J. Ratcliff
জেরেমি হান্ট
৫২ বছর বয়সি বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হান্ট ব্রেক্সিটের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিলেন৷ পরে অবশ্য পক্ষ পরিবর্তন করেন৷ বরিস জনসনের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে হান্ট একবার বলেছিলেন, ব্রেক্সিট আলোচনার সময় ব্রাসেলস ‘উদ্ধত’ আচরণ করেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Pezzali
এস্থার ম্যাকভে
মে’র পদত্যাগের অনেক আগেই প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ইচ্ছার কথা জানিয়েছিলেন সাবেক এই টেলিভিশন উপস্থাপক৷ গত নভেম্বরে তিনি টেরেসা মে-র ব্রেক্সিট চুক্তির প্রতিবাদে কর্ম ও পেনশনমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন৷ অবশ্য মার্চে সংসদে ভোটাভুটির সময় তিনি ঐ বিলের পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন৷ কারণ হিসেবে তিনি বলেছিলেন, ব্রেক্সিট কার্যকর করার এটিই একমাত্র উপায়৷
ছবি: Getty Images/L. Neal
রোরি স্টুয়ার্ট
বরিস জনসন ও ডেভিড ক্যামেরনের মতো স্টুয়ার্টও এটন কলেজে পড়াশোনা করেছেন৷ বর্তমানে তিনি আন্তর্জাতিক উন্নয়নমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন৷ সাবেক এই কূটনীতিক দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে কয়েক হাজার কিলোমিটার ট্রেকিং করেছেন৷ কোনো চুক্তি ছাড়া ব্রেক্সিটের বিপক্ষে তিনি৷
ছবি: Reuters/H. Nicholls
ম্যাট হ্যানকক
টেরেসা মে’র পদত্যাগের ঘোষণার পরদিন তাঁর আগ্রহের কথা ঘোষণা করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী হ্যানকক৷ ব্রেক্সিট নিয়ে গণভোটের সময় তিনি ব্রিটেনের ইউরোপে থাকার পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছিলেন৷ তবে এখন তিনি মনে করেন, একটি চুক্তির আওতায় ব্রিটেনের ইউরোপ ত্যাগ করা উচিত৷
ছবি: Imago/P. Maclaine
আন্দ্রেয়া লিডসম
২০১৬ সালে টেরেসা মে’র প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন তিনি৷ তবে তখনকার একটি মন্তব্যের ব্যাপক বিতর্কের মুখে পড়েছিলেন তিনি৷ লিডসম বলেছিলেন, একজন মা হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর দৌড়ে তিনি বাড়তি সুবিধা পাবেন৷ উল্লেখ্য, টেরেসা মে অতীতে মা না হতে পারায় যন্ত্রণার কথা বলেছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/NurPhoto/W. Szymanowicz
সাজিদ জাভিদ
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জাভিদের বাবা পাকিস্তান থেকে যুক্তরাজ্যে গিয়েছিলেন৷ সেখানে তিনি বাস চালক হিসেবে কাজ করেছেন৷ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনিও প্রার্থিতা ঘোষণা করতে পারেন বলে জানিয়েছেন৷ এছাড়া প্রতিরক্ষামন্ত্রী পেনি মোর্ডন্ট, প্রীতি প্যাটেল, লিজ ট্রুস, স্টিভ বেকারের নামও শোনা যাচ্ছে৷
ছবি: Reuters/T. Melville
9 ছবি1 | 9
ফলে এখন কনজারভেটিভ দলের প্রধান কে হবেন, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে৷ বরিস জনসনসহ বেশ কয়েকজন নেতা তাঁদের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন৷ এঁদের মধ্য থেকে ভোটাভুটির মাধ্যমে সাংসদরা প্রথমে দুজনকে নির্বাচন করবেন৷ তারপর দলের সদস্যদের ভোটে একজন নির্বাচিত হবেন, এবং তিনিই ব্রিটেনের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হবেন৷
জুলাইয়ের শেষ নাগাদ নতুন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে৷
কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নতুন হলেই কি ব্রেক্সিট চুক্তিতে কোনো পরিবর্তন আসবে? সারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্রেক্সিট বিশ্লেষক সাইমন আশারউড বলছেন, ‘‘না, আসলে তা হবে না৷ কারণ মূল বিষয়গুলোতো একই থাকবে৷ সংসদে টোরি পার্টির এখন যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই, তাতেতো কোনো পরিবর্তন আসবে না৷''
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২৯ মার্চ ব্রেক্সিট কার্যকর হওয়ার কথা ছিল৷ পরে তা বাড়িয়ে প্রথমে ১২ এপ্রিল এবং পরে ৩১ অক্টোবর করা হয়েছে৷