টেলিগ্রাম অ্যাপের স্থগিতাদেশ তুলে নিলো ইরাক
১৩ আগস্ট ২০২৩এই পদক্ষেপের ফলে ইরানপন্থি দলগুলোর সমালোচনার মুখে পড়েছিলো ইরাক।
রোববার সকাল থেকে অ্যাপটি ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (ভিপিএন) ছাড়াই ব্যবহার করা যাচ্ছে। বাগদাদের এএফপি বার্তাসংস্থার সাংবাদিকেরা এ কথা জানিয়েছেন।
ইরাকের যোগাযোগ মন্ত্রণালয় শনিবার সন্ধ্যায় ঘোষণা করে, "রোববার থেকে টেলিগ্রামের উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হবে।"
টেলিগ্রাম ইরাকে খুবই জনপ্রিয়। চলতি বছরের জানুয়ারিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ইরাকের চার কোটি ৩৩ লাখ জনসংখ্যার মধ্যে এক কোটি ৬০ লাখ নাগরিক টেলিগ্রাম ব্যবহার করেন।
বিশেষ করে সশস্ত্র উপদল এবং ইরানপন্থি রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে যুক্ত গোষ্ঠীগুলোর কাছে টেলিগ্রাম হলো অন্যতম প্রচারের মাধ্যম।
সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট একসময়ের ইরাকের বড় অংশ নিয়ন্ত্রণে রেখেছিল। সেই গোষ্ঠী এবং ইরাকের প্রতিবেশী দেশে সিরিয়ার অনেকেই টেলিগ্রাম ব্যবহার করেন।
ইরানপন্থি শিয়া মুসলিম দলগুলোর একটি জোট ইরাকের পার্লামেন্টেরয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শিয়া আল-সুদানীকে সমর্থন করেছিলো তারা।
যখন এটি অ্যাপটি নিষিদ্ধ করা হয়, সরকার জানিয়েছিল, টেলিগ্রাম "রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিগত ডেটা ফাঁস করতে পারে, যা জাতীয় নিরাপত্তা এবং সামাজিক শান্তি বিঘ্নিত করতে পারে।"
নতুন বিবৃতিতে মন্ত্রণালয় বলেছে, অ্যাপটির কর্তৃপক্ষ "নাগরিকদের ডেটা ফাঁস করে দেয়া ব্যক্তিদের শনাক্ত করেছে। তাদের সম্পূর্ণ 'অ্যাভেইলেবেলিটি' জানিয়ে কর্তৃপক্ষের দাবি অনুযায়ী সাড়া দিয়েছে তারা।"
একটি ইরাকি টেলিগ্রাম চ্যানেলের সমালোচনা করেজানিয়েছিলো, স্থগিতাদেশটি বাকস্বাধীনতাবিরোধী। মন্ত্রণালয় যদিও বলেছে এটি "মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিরোধী নয়"।
তারা অ্যাপ কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করেছে যাতে, "ব্যবহারকারীর ডেটাকে সম্মান করা হয়, আইনি সুরক্ষার দিকটিও মাথায় রাখা হয়।''
বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে প্রতিক্রিয়ায় টেলিগ্রামের প্রেস টিমের একজন সদস্য বলেন, "ব্যক্তিগত তথ্য অনুমতি ছাড়া পোস্ট করা টেলিগ্রামের পরিষেবার শর্তাবলীর কারণেই নিষিদ্ধ। নিয়মিতভাবে এ জাতীয় বিষয় মডারেটরদের মাধ্যমে অ্যাপ থেকে মুছে দিই।"
তার কথায়, "আমরা নিশ্চিত করতে পারি যে আমাদের মডারেটররা বেশ কয়েকজনকে সরিয়ে দিয়েছে যারা চ্যানেল ব্যক্তিগত তথ্য ভাগ করে নিতো। নিশ্চিত করতে পারি যে টেলিগ্রাম থেকে কোনো ব্যক্তিগত ব্যবহারকারীর ডেটা চাওয়া হয়নি। কোথাও শেয়ার করা হয়নি।"
গত সপ্তাহে মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, সরকারি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান এবং নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হওয়ার পর প্ল্যাটফর্মটি বন্ধ করে দেয়ার অনুরোধে সাড়া মেলেনি।
গত কয়েক দশকের সংঘাতের পর ইরাক আপাতত স্থিতিশীল রয়েছে। কিন্তু অধিকার গোষ্ঠীগুলো নিয়মিতভাবে অভিযোগ করে আসছে, কর্তৃপক্ষ স্বাধীন মতামতে হস্তক্ষেপ করছে।
রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার ২০২৩ সালের প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সে অর্থাৎ সংবাদমাধ্যমের বাকস্বাধীনতা সূচকে ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৬৭ তম স্থানে রয়েছে ইরাক।
টেলিগ্রামের প্রতিষ্ঠাতা রাশিয়ান বংশোদ্ভূত উদ্যোক্তা পাভেল দুরভ। এর আগে আরও কয়েকটি দেশেও টেলিগ্রাম ব্লক করা হয়েছে।
আরকেসি/এআই (ডিপিএ, এএফপি, রয়টার্স)