টেলিযোগাযোগ ডেটা সংরক্ষণ সংবিধানবিরুদ্ধ : সর্বোচ্চ জার্মান আদালত
২ মার্চ ২০১০কার্লসরুহে শহরে সাংবিধানিক আদালতের দেয়া রায়ে বলা হয়েছে, টেলিফোন আর ইন্টারনেট যোগাযোগের তথ্যউপাত্ত ব্যাপকভাবে সংরক্ষণের আইনি বিধি মানুষের টেলিযোগাযোগের গোপনীয়তা লঙ্ঘন করছে৷ এই বিধিনিয়মগুলো সংবিধানবিরোধী৷ ফলে ২০০৮ সালের গোড়া থেকে ল্যান্ড লাইন, মোবাইল অথবা ইন্টারনেট মারফত টেলিফোনের যাবতীয় ডেটা অর্থাৎ এসএমএস, ইমেল অথবা ইন্টারনেটে সার্ফিং-এর সব তথ্য এবার অবিলম্বে মুছে ফেলতে হবে৷
এই রায় ঘোষণা করতে গিয়ে সাংবিধানিক আদালতের বিদায়ী প্রধান হান্স-ইউর্গেন পাপিয়ার বলেন, ‘‘যোগাযোগের এই সব ডেটার অকারণ সংরক্ষণ নজরদারির এক ভয় দেখানো অনুভূতি সৃষ্টি করার সহায়ক৷ বহু ক্ষেত্রে এটা নিরপেক্ষতার সঙ্গে মৌলিক অধিকার রক্ষার কাজ ব্যাহত করছে৷''
নাইন-ইলেভেন পরবর্তী সময়ে সন্ত্রাসবিরোধী লড়াই-এর অনুষঙ্গেই দীর্ঘদিন ধরে টেলিযোগাযোগ ডেটা সংরক্ষণ করে রাখার ব্যবস্থা চালু করে জার্মানির বর্তমান সরকার৷ সাংবিধানিক আদালত এবার তাতে বাধ সাধল৷ বলে দিল যে, এটা ব্যক্তির গোপনীয়তার অধিকারে গুরুতর হস্তক্ষেপ৷ ফলে এই বিধির সংশোধন করতে হবে অবশ্যই৷
এখানেই শেষ নয়৷ আদালয়ের রায়ে আরও বলা হয়েছে, যেসব নাগরিকের সংশ্লিষ্ট ডেটা সংরক্ষণ করা হবে তাদের আগেভাগেই সে সম্পর্কে জানাতে হবে৷ কোন্ কর্তৃপক্ষ কোন্ কারণে একজন নাগরিকের ইন্টারনেট ও টেলিফোন ব্যবহার সংক্রান্ত তথ্য পরীক্ষা করবে, তার অনুমোদন নিতে হবে অবশ্যই একজন বিচারকের কাছ থেকে৷ কোন নাগরিকের টেলিফোনের গোপনীয়তা যদি কর্মকর্তারা লঙ্ঘন করেন তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নিতে হবে৷ ঐ নাগরিকের ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অধিকার থাকবে৷
এই ডেটা সংরক্ষণ আইনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিলেন যাঁরা তাঁদের সংখ্যা মোট ৩৫ হাজার৷ এ পর্যন্ত সাংবিধানিক আদালতে এটাই হল সবচেয়ে বড় মামলা৷ মামলা করেছেন যাঁরা, তাঁদের মধ্যে আছেন সবুজ দল, বাম দল ও উদারপন্থী দলের সদস্য৷ তাঁরা স্বভাবতই এই রায়ে খুশি৷ আইনমন্ত্রী, উদারপন্থী দলের রাজনীতিক সাবিনে লয়েটহয়জার-শ্নারেনব্যার্গার সন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন,‘‘ এটা মৌলিক অধিকার ও তথ্যসুরক্ষার জন্য দারুণ এক শুভদিন৷'' সবুজ দলের রাজনীতিক ফলকার বেক মনে করেন, এই রায় নাগরিক অধিকারের এক বড় জয়৷''
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, ক্রিস্টীয় গণতন্ত্রী ইউনিয়নের রাজনীতিক টোমাস দেমেজিয়ের অবশ্য বলেছেন, রায়টা অন্য রকম হলেই তাঁর ভাল লাগত৷ তবে কিনা শেষ কথা বলার অধিকার ফেডারেল সাংবিধানিক আদালতের৷ তিনি বলেন, কীভাবে সংবিধানের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সংশ্লিষ্ট বিধি বাস্তবায়িত করা যায়, সে পথ দেখিয়ে দিয়েছেন বিচারকরা৷ এবার বুদ্ধি দিয়ে আইন প্রণয়নের কাজ করার পালা৷
প্রতিবেদক : আব্দুল্লাহ আল-ফারূক
সম্পাদনা : আবদুস সাত্তার