মার্কিন ইলেকট্রিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন সাবেক কর্মীরা৷ কোনো পূর্ব নোটিশ ছাড়া গণছাঁটাই করায় ফেডারেল আইন ভঙ্গের অভিযোগ এনেছেন তারা প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে৷
বিজ্ঞাপন
গত রোববার টেক্সাসের আদালতে মামলাটি করা সাবেক দুই কর্মী জানিয়েছেন নেভাদায় গিগাফ্যাক্টরি থেকে জুনে তাদেরকে চাকরিচ্যুত করা হয়৷ মামলায় বলা হয়েছে, কারখানাটি থেকে ৫০০ জনের বেশি কর্মীকে ছাঁটাই করা হয়েছে৷ তাদের অভিযোগ, আইন অনুযায়ী ছাঁটাইয়ের ৬০দিন আগে তা জানানোর বাধ্যবাধকতা থাকলেও সেটি মানেনি টেসলা৷ বরং হঠাৎ করেই চাকরিচ্যুতির নোটিশ দিয়ে তা অবিলম্বে কার্যকরের কথা জানায় প্রতিষ্ঠানটি৷
গত মে ও জুনে যুক্তরাষ্ট্রে বিনা নোটিশে ছাঁটাই হওয়া সব কর্মীর হয়ে প্রতিকার চেয়েছেন৷ এদিকে কতজনকে ছাঁটাই করা হয়েছে সে বিষয়ে মুখ খোলেনি এখনও টেসলা৷ মামলা নিয়েও কোন প্রতিক্রিয়া জানানোর অনুরোধেও প্রতিষ্ঠানটি কোন সাড়া দেয়নি বলে উল্লেখ করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স৷
ইলন মাস্ক সম্পর্কে অজানা কিছু তথ্য
টেসলা, স্পেসএক্স, পেপ্যাল, বোরিং কোম্পানি ইত্যাদি প্রতিষ্ঠা করেছেন ইলন মাস্ক৷ বর্তমানে তিনি বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী৷
১৯৭১ সালের ২৮ জুন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রিটোরিয়াতে ইলন মাস্কের জন্ম৷ বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের পর হাইস্কুল শেষে মা আর ভাই-বোনকে নিয়ে ক্যানাডায় চলে যান মাস্ক৷ সেখানে অন্টারিও’র একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও পরে যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যা আর অর্থনীতিতে মাস্টার্স করেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/H. Guerrero
শেষ করেননি শিক্ষাজীবন
স্নাতকোত্তর শেষে পিএইচডি’র জন্য যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পান৷ কিন্তু অর্থ উপার্জনের নেশায় পিএচইডি অধরা থেকে যায়৷ বর্তমানে উদ্যোক্তা হিসেবে বিশ্বের তরুণদের আইকন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/AP/J. Raoux
প্রতিভাধর
মাত্র দশ বছর বয়সে কমোডর ভিআইসি-২০ কম্পিউটার ব্যবহার করতে গিয়ে কম্পিউটারের প্রতি আগ্রহ জন্মায়৷ শেখেন কম্পিউটার প্রোগ্রামিং৷ ১২ বছর বয়সে বেসিক প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার করে ব্লাস্টার নামে একটি ভিডিও গেম তৈরি করে ৫০০ ডলারে পিসি অ্যান্ড অফিস টেকনোলজি ম্যাগাজিনের কাছে বিক্রি করে দেন৷
ছবি: Ringo H.W. Chiu/AP Photo/picture alliance
জিপ-টু
উদ্যোক্তা হিসেবে ভাইকে সাথে নিয়ে তিনি জিপ-টু নামে একটি সফটওয়্যার কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন৷ ১৯৯৫ সালে এর পথচলা শুরু হলেও সফল হতে সময় লেগেছিল৷ সেসময় অ্যাপার্টমেন্টে থাকার খরচ না থাকায় অফিসেই ঘুমাতেন৷ ১৯৯৯ সালে কমপ্যাক কোম্পানির কাছে ২২ মিলিয়ন ডলারে জিপ-টু বিক্রি করেন তিনি৷
ছবি: Patrick Pleul/dpa/picture alliance
পেপ্যাল
পেপ্যাল নামের টাকা লেনদেনের একটি ডিজিটাল সার্ভিস চালু করে তিনি সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছে যান৷ ১৯৯৯ সালে তিনি এক্স.কম নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন, যা পরে পেপ্যালের সাথে একত্রিত হয়৷ ২০০২ সালে ই-বে’র কাছে পেপ্যাল ১.৫ বিলিয়ন ডলারে বিক্রি করে দেন৷ এই বিক্রি থেকে তার লাভ থাকে ১৬৫ মিলিয়ন ডলার৷
ছবি: picture-alliance/AP Images/P. Sakuma
স্পেস এক্সের মঙ্গল অভিযান
রকেট নির্মাণপ্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স৷ গত ফেব্রুয়ারিতে স্পেসএক্সের তৈরি রকেট ফ্যালকন হেভির সফল উৎক্ষেপণের পর তুমুল আলোচিত হন মাস্ক৷ স্পেসএক্স থেকে ফ্যালকন ১ নামের রকেটটি উৎক্ষেপণ করতে গিয়ে বারবার ব্যর্থ হয়েছিলেন কিন্তু হাল ছাড়েননি৷ ২০৫০ সালের মধ্যে মঙ্গলে একটি পরিপূর্ণ শহর স্থাপনের পরিকল্পনা মাস্কের৷
ছবি: Gene Blevins/REUTERS
টেসলা
২০০৩ সালে যখন এই কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন এর সাথে ছিলেন না মাস্ক৷ পরবর্তীতে ২০০৪ সালে ইলন মাস্ক বোর্ড অফ ডিরেক্টরসে যোগ দিলে কোম্পানিতে আমূল পরিবর্তন আসে৷ বর্তমানে বৈদ্যুতিক গাড়ি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানটি র প্রধান নির্বাহী এবং পণ্য প্রকৌশলী তিনি৷
ছবি: picture-alliance/ZUMAPRESS/Tesla Motors
দ্য বোরিং কোম্পানি
২০১২ সালে এই হাইপারলুপ প্রযুক্তির দৈনন্দিন ব্যবহারে সর্বপ্রথম আগ্রহ দেখান ইলন মাস্ক৷ হাইপারলুপ-এর জন্য সুরঙ্গ খুঁড়তে তিনি ‘দ্য বোরিং কোম্পানি’ নামক একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছেন৷ সম্প্রতি ঘণ্টায় এক হাজার কিলোমিটার গতিবেগে চলা হাইপারলুপের প্রথম পরীক্ষা সফল হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Images/R. Beck
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠিয়েছে ইলন মাস্কের কোম্পানি স্পেস এক্স৷ স্পেস-এক্স-এর সবচেয়ে আধুনিক ফ্যালকন রকেটের মাধ্যমে ২০১৮ সালের মে মাসে বঙ্গবন্ধু-১ টেলিকম স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠানো হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP/R. Huber/O. Sentinel
নিউরালিঙ্ক
২০১৬ সালে মাস্কের প্রতিষ্ঠিত এই কোম্পানিটি সম্প্রতি একটি ব্রেইন-মেশিন ইন্টারফেস প্রকাশ করেছে, যা মানুষের মস্তিষ্কের সাথে কম্পিউটার ও মোবাইল ফোন যুক্ত করবে৷
ছবি: Patrick Pleul/dpa/picture alliance
বেতন
কোম্পানির সিইও হিসেবে বছরে বেতন নেন মাত্র এক ডলার৷ নিজের অংশীদারিত্ব থাকা বিভিন্ন কোম্পানি থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশসহ আরো কিছু সুবিধা পান মাস্ক, যার বেশিরভাগই আসে টেসলা থেকে৷ বছরে ১ ডলার বেতন নেয়াটা আসলে সিলিকন ভ্যালির একটা ট্রেন্ড৷
বিতর্কের জন্ম দিতে ভালোবাসেন মাস্ক৷ টুইটারে নানা বিতর্কিত টুইট করেন৷ নিজের প্রতিষ্ঠানের সহযোগীদের সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন নানা সময়৷ একবার কমেডিয়ান জো রোগান-এর সঙ্গে অংশ নেওয়া এক পডকাস্টে সরাসরি সম্প্রচারের সময় গাঁজা সেবন করেছিলেন৷
ছবি: YouTube/PowerfulJRE
12 ছবি1 | 12
টেসলার মালিক বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক চলতি মাসেই ব্যবসা নিয়ে হতাশা প্রকাশের পাশাপাশি ১০ শতাংশ কর্মী ছাঁটাইয়ের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন বলে এক ইমেইলের বরাতে জানিয়েছে রয়টার্স৷ টেসলার কর্মী পরিচয় দেয়া ২০ জনেরও বেশি ব্যক্তি বার্তা সংস্থাটিকে তাদেরকে ছাঁটাই করা বা নোটিশ দেয়ার কথা জানিয়েছেন৷
করোনা-পর্বেও উৎপাদনে টেসলা
বিশ্বের প্রথম সারির ইলেকট্রিক গাড়ি প্রস্তুতকারী সংস্থা টেসলার প্রধান এলন মাস্ক জানিয়েছেন শিগগিরই উৎপাদনে ফিরছে তারা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Chinatopix
অপেক্ষার অবসান
করোনা ভাইরাস সংক্রমণ সারা বিশ্বে ছড়ানোর আঁচ এসে পড়েছিল টেসলার জার্মানি ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কারখানাগুলিতেও৷ ২৩ মার্চ থেকে ক্যালিফোর্নিয়ার ফ্রেমন্ট শহরের এই কারখানাটি বন্ধ থাকার পর আবার চালু হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন এলন মাস্ক৷ এতদিন, এই কারখানা ছিল জনমানবশূন্য৷
চলতি সপ্তাহের শুরুতে এলন মাস্ক জানান, স্থানীয় বিধিনিষেধ উপেক্ষা করেই ক্যালিফোর্নিয়ার এই কারখানাটি চালু করা হচ্ছে৷ এই কারখানায় সাধারণত ১০ হাজার কর্মচারী কাজ করে৷ কারখানা চালু হবার পর সেখানের গাড়ির পার্কিং করার জায়গাটি পুরোপুরি ভর্তি ছিল৷
ছবি: Reuters/J. White
কড়া বার্তা দিলেন মাস্ক
ফ্রেমন্টের কারখানা চালু করার পর টেসলার সাথে কেমন আচরণ করে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এখন, সেটাই দেখার৷ যদিও ইতিমধ্যে টুইটারে এলন মাস্ক জানিয়েছেন যে, প্রয়োজন পড়লে এই কারখানা অন্যত্র সরিয়ে নিতেও পেছপা হবেন না তিনি৷ শুধু তাই নয়, তিনি বলেন যে, অবস্থার প্রয়োজনে টেসলার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ও সরিয়ে টেক্সাস বা নেভাডায় নিয়ে যেতে পারেন তিনি৷
বর্তমানে খবরের শীর্ষে ফ্রেমন্টের এই কারখানা উঠে এলেও পিছিয়ে নেই বার্লিনে টেসলার গিগাফ্যাক্টরি প্রকল্পের কাজও৷ জার্মান সরকারের করোনা বিষয়ক কড়া নীতি অবলম্বন সত্ত্বেও চলছে কাজ৷ কারখানার ঘর তৈরির অনুমতি এখনও না পাওয়া গেলেও জঙ্গল সাফাই করার কাজ সম্পূর্ণ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Pleul
প্রয়োজনে পিঁপড়ারও স্থান বদল
পরিবেশবিদদের পরামর্শে, টেসলার গিগাফ্যাক্টরি প্রকল্পের অঞ্চলে বসবাসরত বাদুড় ও পিঁপড়াকে সরাতে রাজি হয়েছেন এলন মাস্ক৷ তাদের সেখান থেকে সরিয়ে অন্য কোনো বাসযোগ্য স্থানে নিয়ে যাওয়া হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Pleul
টেসলার পাশেই জার্মানি
জার্মান অর্থনীতি মন্ত্রী পেটার আল্টামায়ার জানিয়েছেন যে, করোনা সংকট টেসলার এই প্রকল্পের জন্য কোনো বড় বিলম্ব বয়ে আনবে না৷ বার্লিনের পাশে গ্র্যুনহাইডে অঞ্চলে তৈরি হচ্ছে এই প্রকল্প৷ স্থানীয়দের কাছে এই প্রকল্প ইতিমধ্যে উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে৷
ছবি: DW/H. Graupner
২০২১ সালেই কি তৈরি হবে গাড়ি?
স্থানীয়দের বেশির ভাগ মানুষ টেসলার পাশে থাকলেও ৩৭৩টি নালিশও জমা পড়েছে, যার ফলে জার্মানিতে টেসলার ভবিষ্যৎ কিছুটা হলেও প্রশ্নের মুখে৷ ২০২১ সালের মধ্যে এই কারখানা থেকে গাড়ি বাজারে আসার কথা থাকলেও, বাড়তি খরচ ও পুরোদমে যানবাহনের ঝঞ্ঝাটের সম্ভাবনা গ্র্যুনহাইডের মতো ছোট অঞ্চলে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করছে৷