জাহিদুল হক তথ্যসূত্র: ইএসপিএনক্রিকইনফো, ডেইলি স্টার
২০ মার্চ ২০১৭
একদিনের ও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশ সমীহ জাগানো অবস্থানে যেতে পারলেও টেস্টে এখনও তা পুরোপুরি সম্ভব হয়নি৷ তবে এরমধ্যেও বিশ্বকে কিছু রেকর্ড উপহার দিতে পেরেছে টাইগাররা৷ জিতেছে শততম টেস্টটিও৷
বিজ্ঞাপন
২০০০ সালের ১০ নভেম্বর ঢাকার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে প্রথম টেস্ট খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশ৷ প্রতিপক্ষ ছিল ভারত৷ শুরুতে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ইনিংসে সব উইকেট হারিয়ে ৪০০ রান করেছিল টাইগাররা৷ বাংলাদেশের পক্ষে আমিনুল ইসলাম বুলবুল করেছিলেন ১৪৫ রান৷ প্রথম টেস্ট খেলতে নেমে প্রথম ইনিংসের সেই সাফল্য চমকে দিয়েছিল সবাইকে৷ কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে সেই সাফল্য ধরে রাখা যায়নি৷ ফলে মাত্র ৯১ রানেই গুটিয়ে গিয়েছিল দুর্জয় বাহিনী৷
তারপর থেকে গত ১৬ বছরে ১০০টি টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ৷ শ্রীলঙ্কায় কলম্বোর পি সারা ওভালের টেস্টটি ছিল টাইগারদের শততম টেস্ট৷ হিসেবে অভিষেকের ১৬ বছর ৪ মাস ৬ দিন পর বাংলাদেশ শততম টেস্ট খেলতে নেমেছিল৷ ক্রিকেট বিষয়ক ওয়েবসাইট ইএসপিএনক্রিকইনফো-র দেয়া পরিসংখ্যান বলছে, টাইগাররাই সবচেয়ে কম সময়ে শততম টেস্ট খেলার সুযোগ পেয়েছে৷ শ্রীলঙ্কার সময় লেগেছিল ১৮ বছর তিন মাস ২৯ দিন৷
এখন পর্যন্ত খেলা ১০০টি টেস্টের ন’টিতে জিতেছে বাংলাদেশ৷ এক্ষেত্রে একমাত্র নিউজিল্যান্ডের চেয়ে এগিয়ে আছে টাইগাররা৷ কারণ একই সংখ্যক টেস্ট খেলে কিউইরা জিতেছিল মাত্র সাতটি টেস্টে৷ ভারত জিতেছিল ১০টি, আর জিম্বাবোয়ে ১১টিতে জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছিল৷ তবে পরাজয়ের হিসেবে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ৷ ১০০টি টেস্টের মধ্যে ৭৬টিতে হেরেছে তারা৷
এদিকে, সদ্য সমাপ্ত শততম টেস্টকে ঘিরে বাংলাদেশের টেস্ট অতীত নিয়ে আলোচনা হচ্ছে৷ ক্রিকেটের এই ফরম্যাটে কেন এখনও বাংলাদেশ আশানুরূপ ফল পায়নি তার কারণ বিশ্লেষণ করা হচ্ছে৷
বাংলাদেশের জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ফারুক আহমেদ টেস্ট ক্রিকেটকে ‘রিয়েল ক্রিকেট’ হিসেবে আখ্যায়িত করে এর উন্নয়নে ‘অনেক বড় পরিকল্পনা দরকার’ বলে মনে করছেন৷ তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন টেস্টে ‘মোটামুটি’ খেলছে৷ এই পর্যায় থেকে উপরে যেতে গেলে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের মান উন্নয়ন করতে হবে বলে জানান তিনি৷
Faruque Ahmed - MP3-Stereo
‘‘লংগার ভার্সন ক্রিকেটটা যতটা কম্পিটিটিভ হওয়া দরকার, আমি বলতে চাচ্ছি, যত ভালো কন্ডিশনে খেলা দরকার, ততটা আমরা এখনও তৈরি করতে পারিনি,’’ ডয়চে ভেলেকে বলেন ফারুক আহমেদ৷ তিনি বলেন, বাংলাদেশে উইকেটগুলো খুবই ‘ব্যাটিং ফ্রেন্ডলি' করে তৈরি করা হয়, সেখানে বোলারদের জন্য কিছুই থাকে না, বিশেষ করে পেস বোলারদের জন্য৷ এছাড়া পর্যাপ্ত মাঠের অভাব রয়েছে বলেও মনে করেন তিনি৷
বাংলাদেশের প্রথম টেস্টের অধিনায়ক নাঈমুর রহমান দুর্জয়ও প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের উন্নতির কথা বললেন৷ ‘‘আমাদের লঙ্গার ভার্সনকে আরো গুরুত্ব দিতে হবে৷ এটাকে আরো প্রতিযোগিতামূলক করলে আমরা আরো ভালো করব৷ আমাদের বুঝতে হবে লঙ্গার ভার্সন ভালো খেললেই আমরা শর্ট ভার্সনে ভালো খেলব৷ টি-টোয়েন্টিতে ভালো খেললে কিন্তু লংগার ভার্সনে ভালো খেলার স্কোপ নেই,’’ ডয়চে ভেলেকে বলেন দুর্জয়৷ এছাড়া ফারুক আহমেদের মতো দুর্জয়ও টেস্ট উপযোগী উইকেট তৈরির পরামর্শ দিয়েছেন৷
এই দুই সাবেক ক্রিকেটারই বেশি বেশি টেস্ট খেলার উপর গুরুত্ব আরোপ করলেও বিভিন্ন কারণে অন্যান্য দেশ বাংলাদেশের সঙ্গে টেস্ট খেলতে আগ্রহী হচ্ছে না বলে মন্তব্য করেন৷ ফারুক আহমেদ বলেন, ‘‘ক্রিকেটিং নেশন হিসেবে আপনি যদি ছোট হন, তাহলে বড় দেশগুলো আপনার সঙ্গে অত বেশি খেলতে চায় না৷ এখানে একটা আর্থিক ব্যাপার থেকে যায়৷ ধরুন, অস্ট্রেলিয়া যদি বাংলাদেশের সঙ্গে খেলে তাহলে টিভিস্বত্ত্ব বলেন, দর্শক সংখ্যা বলেন, এগুলো বেশি আসে না৷’’ তবে তিনি আশা করছেন বাংলাদেশ ভবিষ্যতে টেস্টে ভালো পারফরম্যান্স দেখাতে পারলে এই সমস্যার সমাধান হবে৷
যেসব টেস্ট জিতেছে বাংলাদেশ
সেই ২০০০ সালে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ১৪৩ টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছে টাইগাররা৷ তার মধ্যে জয় এসেছে ২১টিতে৷ চলুন জেনে নিই সেই টেস্টগুলোর কথা৷
ছবি: Anjum Naveed/AP/picture alliance
আগস্ট ৩০-সেপ্টেম্বর ০৩, প্রতিপক্ষ পাকিস্তান: বাংলাদেশ ৬ উইকেটে জয়ী
পরপর ২ টেস্ট পাকিস্তানকে নিজেদের মাটিতে হোয়াইট ওয়াশ করেছে বাংলাদেশ৷ রাওয়ালপিন্ডিতে বাবর আজমদের দুই ইনিংসে ২৭৪ ও ১৭২ রানে অলআউট করে ৬ উইকেটের জয় তুলে নেন শান্তরা৷ লিটনের সেঞ্চুরি, মিরাজের অর্ধশতক ও ৫ উইকেট, হাসান মাহমুদের ৫ উইকেট এই জয়ে বড় ভূমিকা রাখে৷ এর মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথমবারের মধ্য সিরিজ জয় পায় বাংলাদেশ৷
ছবি: Anjum Naveed/AP Photo/picture alliance
আগস্ট ২১-২৫, ২০২৪, প্রতিপক্ষ পাকিস্তান
টেস্টে বাংলাদেশের প্রথম ১০ উইকেটের জয়। এর আগে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৩ টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। ১৪তম টেস্টে ঐতিহাসিক জয়। টেস্টে নবম দল হিসেবে পাকিস্তানকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। বাকি থাকলো শুধু ভারত ও সাউথ আফ্রিকা। দেশের বাইরে বাংলাদেশের এটা সপ্তম জয়। ৬ উইকেটে ৪৪৮ রান তুলে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে পাকিস্তান। জবাবে বাংলাদেশ তাদের প্রথম ইনিংসে ৫৬৫ রানের বড় সংগ্রহ তোলে। পাকিস্তানের ২য় ইনিংস গুটিয়ে যায় ১৪৬ রানে।
ছবি: Farooq Naeem/AFP/Getty Images
২৮ নভেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর, ২০২৩, প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড
সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৫০ রানের বিশাল এক জয় পায় অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর দল। বাংলাদেশের হয়ে ৬ উইকেট নেন তাইজুল। নিউজিল্যান্ড : ৩১৭ ও ১৮১, বাংলাদেশ:৩১০ ও ৩৩৮৷
ছবি: Munir uz Zaman/AFP
জুন ১৪-১৮ (২০২৩), প্রতিপক্ষ আফগানিস্তান
মিরপুরে ইতিহাস গড়ে বাংলাদেশ৷ ৫৪৬ রানের বিশাল ব্যবধানে ম্যাচ জেতে বাংলাদেশ, যা টেস্ট ইতিহাসে সর্বোচ্চ রানের ব্যবধানে জয়ের তিন নম্বরে আছে। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ ৩৮২ রানে অল-আউট হয়। পালটা ব্যাট করতে নেমে আফগানিস্তান ১৪৬ রান তুলেছিল। দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেটে ৪২৫ রান তুলে ব্যাটিং ছেড়ে দেয় বাংলাদেশ। শেষ ইনিংসে আফগানিস্তান অল-আউট হয় ১১৫ রানে।
ছবি: Munir uz Zaman/AFP
এপ্রিল ৩-৭ (২০২৩), প্রতিপক্ষ আয়ারল্যান্ড
মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে ৭ উইকেটের জয় পায় টাইগাররা৷ আয়ারল্যান্ড ১ম ইনিংসে ২১৪ এবং ২য় ইনিংসে ২৯২ করে৷ বাংলাদেশ ১ম ইনিংসে ৩৬৯ এবং ২য় ইনিংসে ৩ উইকেটে ১৩৮ রান করে ৭ উইকেটের জয় পায়৷
ছবি: Farooq Naeem/AFP/Getty Images
জানুয়ারি ১-৫ (২০২২), প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড
নিউজিল্যান্ডকে তাদেরই মাটিতে হারিয়ে টেস্টে ঐতিহাসিক এক জয় পায় বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে যেকোনো ফরম্যাটেই এটি বাংলাদেশের প্রথম জয়। মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে প্রথম টেস্টের শেষ দিনে ৮ উইকেটের বড় জয় পেয়েছে মুমিনুলবাহিনী।
ছবি: Marty Melville/Photospor/AP/picture alliance
জুলাই ৭-১১ (২০২০) প্রতিপক্ষ জিম্বাবোয়ে
হারারের একমাত্র টেস্ট ২২০ রানে জিতেছে সফরকারীরা। বাংলাদেশের দেওয়া ৪৭৭ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে পঞ্চম দিনে দ্বিতীয় ইনিংসে জিম্বাবোয়ে অলআউট হয় ২৫৬ রানে। এই জয়ের অন্যতম রূপকার মেহেদী হাসান মিরাজ।
মুশফিকুর রহিমের দ্বিশতক (২০৩) আর মুমিনুলের শতকে (১৩২) ভর করে বাংলাদেশ জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে এক ইনিংস ও ১০৬ রানের জয় পায়৷ প্রথমে ব্যাট করতে নেমে জিম্বাবোয়ে ২৬৫ রান করেছিল৷ এরপর বাংলাদেশ খেলতে নেমে ছয় উইকেটে ৫৬০ রান তোলে৷ পরের ইনিংসে জিম্বাবোয়ে ১৮৯ রান করে অলআউট হয়ে যায়৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. U. Zaman
নভেম্বর ৩০-ডিসেম্বর ২, ২০১৮ প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ
মিরপুর টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ইনিংস ও ১৮৪ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ৷ এই প্রথম প্রতিপক্ষকে ফলো অন করানো ও ইনিংস ব্যবধানে জয়ের অনির্বচনীয় দুটি স্বাদ দল পেল একদিনেই৷ দুই ম্যাচের সিরিজে ২-০তে জয়৷ ম্যাচে বাংলাদেশের জয়ের নায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ৷ ১১৭ রানে ১২ উইকেট, বাংলাদেশের হয়ে এক ম্যাচে সেরা বোলিংয়ের কীর্তি৷ ম্যান অব দা ম্যাচ মেহেদী হাসান মিরাজ৷ ম্যান অব দা সিরিজ সাকিব আল হাসান৷
ছবি: Picture-alliance/AP Photo/A.M. Ahad
নভেম্বর ২২-২৪, ২০১৮ প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ
প্রতিপক্ষকে দুই ইনিংস মিলিয়ে সবচেয়ে কম বলে দুবার অলআউট করে জেতা ম্যাচের নতুন রেকর্ড গড়ে বাংলাদেশ৷ আড়াই দিনে টেস্ট জিতেছিল টাইগাররা৷ সাড়ে সাত সেশনের মতো খেলা হয়েছে এই টেস্টে৷ এটিই টেস্টে বাংলাদেশের দ্রুততম জয়৷ নাঈম হাসান প্রথম ইনিংসে পেয়েছেন ৫ উইকেট৷ দ্বিতীয় ইনিংসে তাইজুল পেয়েছেন ৬ উইকেট৷ মুমিনুল হক পেয়েছেন ম্যাচসেরার পুরস্কার৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. U. Zaman
নভেম্বর ১১-১৫, ২০১৮ প্রতিপক্ষ জিম্বাবোয়ে
জিম্বাবোয়ের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে ২১৮ রানের জয় পেয়েছে বাংলাদেশ৷ সিরিজ ১-১ ড্র৷ ৪৪৩ রানের লক্ষ্য তাড়ায় দ্বিতীয় সেশনে জিম্বাবুয়ে থামে ২২৪ রানে৷ ৩৮ রানে ৫ উইকেট নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের সফলতম বোলার মেহেদী হাসান মিরাজ৷ দ্বিশত হাঁকিয়ে ম্যাচ সেরা মুশফিকুর রহিম৷ সিরিজ সেরা হয়েছেন তাইজুল ইসলাম৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
জানুয়ারি ৬-১০, ২০০৫, প্রতিপক্ষ জিম্বাবোয়ে: বাংলাদেশ ২২৬ রানে জয়ী
টাইগাররা প্রথমবারের মতো টেস্ট জয়ের স্বাদ পায় চট্টগ্রামে৷ ২০০৫ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত সেই ম্যাচে প্রথম ইনিংসে ৪৮৮ রান তোলে স্বাগতিকরা৷ আর দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করে ৯ উইকেটে ২০৪ রান করে৷ প্রথম ইনিংসে জিম্বাবোয়ের স্কোর ছিল ৩১২ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ১৫৪ রান৷
ছবি: Getty Images/AFP
জুলাই ৯-১৩, ২০০৯, প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ: বাংলাদেশ ৯৫ রানে জয়ী
দেশের বাইরে বাংলাদেশ প্রথম টেস্ট জয়ের দেখা পায় ২০০৯ সালের ১৩ জুলাই৷ কিংসটাউনে সেই টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৯৫ রানে হারায় টাইগাররা৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Samad
জুলাই ১৭-২০, ২০০৯, প্রতিপক্ষ ওয়েস্টইন্ডিজ: বাংলাদেশ চার উইকেটে জয়ী
সেবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর ছিল সাফল্যে ঠাসা৷ দ্বিতীয় টেস্টে সেন্ট জর্জেসে স্বাগতিকদের হারায় টাইগাররা, সেবার জিতেছিল চার উইকেটে৷
ছবি: Getty Images/AFP/R. Brooks
এপ্রিল ২৫-২৯, ২০১৩, প্রতিপক্ষ জিম্বাবোয়ে: বাংলাদেশ ১৪৩ রানে জয়ী
জিম্বাবোয়ের হারারেতে স্বাগতিকদের আবার ‘বধ’ করে টাইগাররা৷ প্রথম ইনিংসে ৩৯১ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৯ উইকেটে ২৯১ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে বাংলাদেশ৷ জবাবে প্রথম ইনিংসে ২৮২ আর দ্বিতীয় ইনিংসে ২৫৭ রানেই গুটিয়ে যায় জিম্বাবোয়ে৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Njikizana
অক্টোবর ২৫-২৭, ২০১৪, প্রতিপক্ষ জিম্বাবোয়ে: বাংলাদেশ তিন উইকেটে জয়ী
ঢাকায় বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট জয়৷ তিন দিনে শেষ হওয়া সেই টেস্টে শুরুতে ব্যাট করতে গিয়ে প্রথম ইনিংসে ২৪০ রান করে জিম্বাবোয়ে৷ আর দ্বিতীয় ইনিংসে তাদের সংগ্রহ ছিল ১১৪৷ অন্যদিকে, প্রথম ইনিংসে ২৫৪ আর দ্বিতীয় ইনংসে ৭ উইকেটে ১০৭ রান তুলে জিতে যায় স্বাগতিকরা৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
নভেম্বর ৩-৭, ২০১৪, প্রতিপক্ষ জিম্বাবোয়ে: বাংলাদেশ ১৬২ রানে জয়ী
খুলনায় জিম্বাবোয়েকে হারায় বাংলাদেশ৷ সেই টেস্ট পাঁচ দিন পর্যন্ত গড়ালেও শেষমেশ তেমন একটা সুবিধা করতে পারেনি জিম্বাবোয়ে৷ ফলাফল স্বাগতিকদের ১৬২ রানের জয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
নভেম্বর ১২-১৬, ২০১৪, প্রতিপক্ষ জিম্বাবোয়ে: বাংলাদেশ ১৮৬ রানে জয়ী
আবারো চট্টগ্রামে জিম্বাবোয়েকে হারায় টাইগাররা৷ সেবার ব্যবধান ছিল ১৮৬ রানের৷
ছবি: Getty Images/AFP/Strdel
অক্টোবর ২৮-৩০, ২০১৬, প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড: বাংলাদেশ ১০৮ রানে জয়ী
এখন পর্যন্ত বড় কোনো ক্রিকেট শক্তির বিরুদ্ধে বাংলাদেশের একমাত্র টেস্ট জয় এটি৷ ঢাকায় ইংল্যান্ডকে নাস্তানাবুদ করে টাইগাররা৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Sarkar
মার্চ ১৫-১৯, ২০১৭, প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা: বাংলাদেশ ৪ উইকেটে জয়ী
একদিকে টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের শততম ম্যাচে জয়, অন্যদিকে প্রথমবারের মত শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে জয়-দুই দিক দিয়েই ঐতিহাসিক বাংলাদেশের এই টেস্ট ম্যাচটি৷ পঞ্চম দিনে ৪ উইকেটে জয় নিশ্চিত করে টাইগাররা৷ ম্যাচ সেরা হয়েছেন তামিম ইকবাল৷
ছবি: Getty Images/AFP/I. S. Kodikara
আগস্ট ২৭-৩০, ২০১৭, প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া: বাংলাদেশ ২০ রানে জয়ী
প্রথমবারের মত অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে বাংলাদেশ ইতিহাস গড়ে৷ এটা ছিল সাকিব ও তামিমের ৫০তম টেস্ট। সাকিব মোট ১০ উইকেট নিয়ে এবং তামিম দুই ইনিংসেই অর্ধশত করে স্মরণীয় করে রাখলেন এই টেস্টকে৷ ম্যাচ সেরা সাকিব আল হাসান৷ দ্রষ্টব্য: ইএসপিএন ক্রিকইনফো থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ছবিঘরটি তৈরি করা হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
21 ছবি1 | 21
টেস্টে বাংলাদেশের কয়েকটি রেকর্ড
সোহাগ গাজী: বিশ্বের একমাত্র ক্রিকেটার যিনি এক ম্যাচে সেঞ্চুরির পাশাপাশি হ্যাট্রিকও করেছেন৷ ২০১৩ সালে জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত টেস্টে এই সাফল্য পান তিনি৷
আবুল হাসান: ২০১২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে টেস্টে দশম ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতে নেমে নিজের অভিষেকে এক ইনিংসে ১১৩ রান করেন৷ ইতিহাসে এমন ব্যাটসম্যান আছেন আর মাত্র একজন৷
মোহাম্মদ আশরাফুল: সবচেয়ে কম বয়সি টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান৷ ২০০১ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অভিষেক করতে নেমে এই সাফল্য (১১৪ রান) পান তিনি৷ তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৭ বছর ৬১ দিন৷
মেহেদী হাসান মিরাজ: ২০১৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুই টেস্টের সিরিজে অভিষেক করতে নেমে ১৯ উইকেট নেন৷ এর চেয়ে বেশি উইকেট নেয়া (অভিষেকে ও দুই টেস্টের সিরিজে) আর কোনো ক্রিকেটার বিশ্বে নেই৷
এনামুল হক জুনিয়র: ২০০৫ সালে জিম্বাবোয়ের বিপক্ষে এক টেস্টে মাত্র ১৮ বছর ৪০ দিন বয়সে ১০ উইকেট নিয়েছিলেন এই বা-হাতি বোলার৷ এত কম বয়সে ১০ উইকেট নেয়ার সাফল্য বিশ্বে আর কারও নেই৷
টেস্টে বাংলাদেশের কয়েকটি প্রথম
প্রথম টেস্ট ম্যাচ: ২০০০ সালের ১০ নভেম্বর ঢাকার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশ৷ অধিনায়ক ছিলেন নাঈমুর রহমান দুর্জয়৷
প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি: প্রথম টেস্ট ম্যাচেই আমিনুল ইসলাম বুলবুল ১৪৫ রান করেছিলেন৷
প্রথম টেস্ট জয়: ২০০৫ সালে জিম্বাবোয়ের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে ২২৬ রানে জিতেছিল বাংলাদেশ৷
প্রথম টেস্ট সিরিজ জয়: ২০০৫ সালে জিম্বাবোয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের সিরিজ জিতেছিল ১-০তে৷
বিদেশে একমাত্র সিরিজ জয়: ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুই টেস্টের সিরিজ ২-০তে জয়৷
সর্বোচ্চ রান: ২০১৩ সালের মার্চে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ৬৩৮ রান৷
প্রথম দ্বিশতক: ২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২০০ রান করেছিলেন মুশফিক রহিম৷
সেঞ্চুরি ও ১০ উইকেট: ২০১৪ সালে বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে সাকিব আল হাসান জিম্বাবোয়ের বিপক্ষে এই সাফল্য পান৷
আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷
যে পাঁচ কারণে টেস্টে পিছিয়ে বাংলাদেশ
টেস্ট ক্রিকিটে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয় ২০০০ সালে৷ পরিসংখ্যানে এখনো বেশ পিছিয়ে সেদেশ৷ এখন পর্যন্ত খেলা ৯৯ টেস্টের মধ্যে হেরেছে ৭৬টিতে, জয় মাত্র আটটি৷ টেস্ট ক্রিকেটে টাইগারদের পিছিয়ে থাকার পাঁচ কারণ জানাচ্ছে এএফপি৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Sarkar
কম টেস্ট খেলা
বিশ্বের ক্রিকেট পরাশক্তি হিসেবে বিবেচিত ভারত এবং ইংল্যান্ড যেখানে বছরে ২০টির মতো টেস্ট ম্যাচ খেলে, বাংলাদেশ সেখানে গড়ে ছয়টি টেস্ট খেলার সুযোগ পায়৷ মোটের উপর বড় দলগুলোর বিরুদ্ধে খেলার সুযোগ আরো সীমিত৷ গত ১৭ বছরের মধ্যে ভারতের মাটিতে একবারই টেস্ট খেলার সুযোগ পেয়েছে টাইগাররা, তাও গতমাসে৷ ফলে টেস্ট খেলার সুযোগ কম থাকায় খেলোয়াড়দের অভিজ্ঞতায় ঘাটতি থেকে যাচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/F. K. Godhuly
সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কা
গত জুলাইয়ের ঢাকায় সন্ত্রাসী হামলার পরও ইংল্যান্ড বাংলাদেশ সফর করেছিল, যা টাইগারদের জন্য এক ইতিবাচক ব্যাপার৷ সেই সফর না হলে বাংলাদেশের অবস্থা পাকিস্তানের মতো হওয়ার আশঙ্কা করা হয়েছিল৷ ২০০৯ সালে পাকিস্তানে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট টিমের উপর হামলার পর সেদেশ সফর করেনি কোনো বিদেশি ক্রিকেট দল৷ তবে ইংল্যান্ড ঢাকা সফর করলেও নিরাপত্তার শঙ্কায় আগের বছর অস্ট্রেলিয়া সেদেশ সফর করেনি৷ আরো কয়েকটি দল সফর সীমিত করেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Sarkar
খেলার মাঠের সংখ্যা কম
৫৫ হাজার বর্গ মাইল দেশের বাসিন্দা ১৬ কোটি মানুষ৷ আর শুধু ঢাকাতেই থাকেন প্রায় দেড় কোটি মানুষ৷ দেশটিতে খেলার মাঠের সংখ্যা ক্রমশ কমে যাচ্ছে৷ বিশেষ করে ঢাকাতে সাধারণ মানুষের খেলার মাঠ পাওয়া মুশকিল৷ ফলে তৈরি হচ্ছে না খেলোয়াড়৷ অবস্থা এমন যে, বর্তমান টেস্ট টিমে ঢাকার খেলোয়াড় শুধু একজন, তাসকিন আহমেদ৷
ছবি: Getty Images/Q. Rooney
ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচ আয়োজনে দুর্বলতা
যদিও বাংলাদেশে চারদিনের দু’টি ক্রিকেট প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়, কিন্তু সেগুলো বেশ দুর্বল পর্যায়ের৷ নির্দিষ্ট সময়ের ঠিক নেই, নেই প্রফেশনালিজমের ছোঁয়া৷ ফলে সেসব প্রতিযোগিতা আন্তর্জাতিক মানেরতো হয়ই না, অনেকক্ষেত্রে হয়ে পড়ে একপাক্ষিক৷ দেখা যায়, সেসব টুর্নামেন্টে ডাবল সেঞ্চুরি করা ব্যাটসম্যানও পরের সপ্তাহে আন্তর্জাতিক ম্যাচে বোল্ড আউট হন দ্রুত৷ টেস্টের মান বাড়াতে গেলে এসব আয়োজনের মানও বাড়াতে হবে৷
ছবি: Getty Images
স্পিনার থাকলেও পেসারের অভাব
বাংলাদেশ দলে আন্তর্জাতিক মানের স্পিনার থাকলেও টেস্ট জিততে ভালো মানের পেসারও প্রয়োজন৷ কিন্তু টিমে পেসারের ঘাটতি রয়ে গেছে৷ যারা সম্ভাবনা তৈরি করেছেন, যেমন মাশরাফি বিন মোর্তুজা, তারা ইনজুরির কবলে পড়েছেন৷ বর্তমানে দলে থাকা দুই পেসার মুস্তাফিজুর রহমান এবং তাসকিন আহমেদও ইনজুরির কবলে পড়েছেন একাধিকবার৷ ক্রিকেট বোর্ড অবশ্য টেস্টের জন্য পেসার তৈরিতে চেষ্টা করছে৷ তবে সেই চেষ্টার ফল এখনও পাওয়া যায়নি৷