1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

টেস্ট সিরিজে পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করলো বাংলাদেশ

রাহেনুর ইসলাম
৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

পাকিস্তানের বিপক্ষে রাওয়ালপিন্ডিতে বাংলাদেশ দ্বিতীয় টেস্ট জিতল ৬ উইকেটে৷ ১৮৫ রানের লক্ষ্যটা নাজমুল হোসেনের দল পেরিয়ে যায় লাঞ্চের পর৷ তাতে ২-০ ব্যবধানে পাকিস্তানকে প্রথমবার টেস্টে হোয়াইটওয়াশ করলো বাংলাদেশ৷

বাংলাদেশ-পাকিস্তান ২য় টেস্ট
রাওয়ালপিন্ডিতে ৬ উইকেটে দ্বিতীয় টেস্ট জিতে ২-০ ব্যবধানে পাকিস্তানকে প্রথমবার টেস্টে হোয়াইটওয়াশ করল বাংলাদেশ৷ছবি: Aamir Qureshi/AFP/Getty Images

‘বাবুরাম সাপুড়ে কোথা যাস বাপুরে' সুকুমার রায়ের কবিতা ডিজে গান হয়ে বাজছিল রাওয়ালপিন্ডির গ্যালারিতে৷ ওভারের বিরতিতে কখনও ভেসে আসছিল ‘শাবাশ বাংলাদেশ' গানের সুর৷

বিদেশের মাটিতে এভাবে টেস্টের ফাঁকে বাংলা গান অপ্রত্যাশিত রীতিমতো৷ তেমনি অপ্রত্যাশিত ছিল পাকিস্তানের মাটিতে বাংলাদেশের মাথা উঁচু করা পারফর্ম্যান্স৷ কারণ, এই সিরিজের আগে পাকিস্তানে খেলা ২০টি আন্তর্জাতিক ম্যাচে জয়ের দেখা পায়নি বাংলাদেশ৷ আর পাকিস্তানের বিপক্ষে এই সিরিজের আগে টেস্টের ফল ছিল ০-১২!

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর টেস্টেও বিপ্লব হলো রীতিমতো৷ রাওয়ালপিন্ডিতে প্রথম টেস্টে ১০ উইকেটে পাকিস্তানকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ৷ সেই জয়টা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল না৷ একই ভেন্যুতে বৃষ্টিতে চার দিনে নেমে আসা ম্যাচে আজ (মঙ্গলবার) দ্বিতীয় টেস্টেও দাপটে ৬ উইকেটে জিতে সেটা প্রমাণ করল নাজমুল হোসেনের দল৷

বাংলাদেশের কাছে পাকিস্তান হোয়াইটওয়াশ হলো ২-০তে৷ ২০২২ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নিজেদের মাটিতে প্রথমবার ৩-০তে হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল পাকিস্তান৷ দেশের মাটিতে সেবারই প্রথম হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল তারা৷ দুই বছর না যেতে বাংলাদেশ সেই লজ্জা দিল দ্বিতীয়বার৷

নিজেদের ২৪ বছরের টেস্ট ইতিহাসে বাংলাদেশ এর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দুইবার ও জিম্বাবুয়েকে একবার হোয়াইটওয়াশ করেছে৷ এই তালিকায় এবার যোগ হলো পাকিস্তানের নাম৷ ২০০৯ সালে জয়টা ছিল দ্বিতীয় সারির ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে আর এবারের সাফল্য সময়ের অন্যতম সেরা দলের সঙ্গে৷

বাংলাদেশের দাপট এতটাই ছিল যে পেসার মির হামজা, খুররম শেহজাদরা নন বেশি ভয় ছিল বৃষ্টি আর কালো মেঘ নিয়ে৷ অথচ একটা সময় টেস্ট বাঁচাতে বৃষ্টির প্রার্থনাই করতেন বাংলাদেশি সমর্থকরা! রাওয়ালপিন্ডিতে শেষ দিন সকালে বজ্রসহ বৃষ্টির শঙ্কা থাকলেও শেষ পর্যন্ত সূর্য হেসেছে সকাল থেকে৷ সেই হাসি ছড়িয়ে পড়েছে বাংলাদেশিদের ব্যাটেও৷

২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিং গড় ছিল ৩২.৫৫, যা এই সময়ে যেকোনো টেস্ট খেলুড়ে দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ৷ তাই জয়ের পাল্লাটা ঝুঁকে ছিল বাংলাদেশের দিকেই৷ পাকিস্তানি বোলাররা পারেননি অঙ্কটা বদলে দিতে৷
চতুর্থ দিন শেষে দুই ওপেনার জাকির হাসান ও সাদমান ইসলাম অপরাজিত ছিলেন ৪২ রানে৷ শেষ দিন দরকার ছিল ১৪৩ রান৷ মঙ্গলবার দিনের শুরুতেই ভারতীয় তারকা স্পিনার রবীচন্দ্রন অশ্বিন ‘এক্স’-এ লিখেন, ‘‘বাংলাদেশ এগিয়ে আছে তবে পাকিস্তানও নিজেদের দিকে আনতে পারে ম্যাচটা৷’’ সেটা আর হয়নি শেষ পর্যন্ত৷

দশম ওভারে মোহাম্মদ আলীর বলে জাকির হাসানের ব্যাটের নিচের অংশ ছুঁয়ে গিয়েছিল উইকেটরক্ষক সরফরাজ আহমেদের গ্লাভসে৷ বিস্ময়করভাবে পাকিস্তান আউটের আপিলই করেনি, আম্পায়ারও আউট দেননি৷

‘জীবন’ কাজে লাগিয়ে ইনিংসটা বড় করতে পারেননি জাকির৷ ৩৯ বলে ৪০ রান করা জাকিরকে বোল্ড করেন মির হামজা৷ গুড লেংথে পড়ে হালকা মুভমেন্টে বেরিয়ে যাওয়া বলটির লাইন মিস করে বোল্ড হন বাংলাদেশের এই ওপেনার৷

স্লিপে অপর ওপেনার সাদমান ইসলামের ক্যাচ ছেড়েছিলেন সালমান আগা৷ সাদমানও জীবন কাজে লাগাতে পারেননি৷ খুররম শেহজাদের করা পরের ওভারেই ফোর্থ স্টাম্পের হাফভলিতে ড্রাইভ খেলতে গিয়ে মিড অনে ক্যাচ দেন শান মাসুদকে (২৪ রান)৷

সিরিজ জুড়ে বিবর্ণ থাকা অধিনায়ক নাজমুল হোসেন এরপর মুমিনুল হকের সঙ্গে জুটি গড়ে জয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান বাংলাদেশকে৷ লাঞ্চ পর্যন্ত তৃতীয় উইকেটে দুজন গড়েন ৫২ রানের জুটি, বাংলাদেশের স্কোর ছিল ২ উইকেটে ১২২৷ জয়ের জন্য বাকি তখন ৬৩ রান৷

লক্ষ্য অল্প হলেও এই টেস্ট যেভাবে বারবার রং বদলেছে তাতে নিশ্চিত ছিল না কিছুই৷ প্রথম ইনিংসে ১ উইকেটে ১০৭ থেকে পাকিস্তান অলআউট হয়ে গিয়েছিল ২৭৪ রানে৷ মেহেদী হাসান মিরাজ নিয়েছিলেন ৫ উইকেট৷ জবাবে বাংলাদেশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল ২৬ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে৷

প্রথম ইনিংসে ১৩৮ রানের অনবদ্য এক সেঞ্চুরি করে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হন লিটন দাস৷ ছবি: Anjum Naveed/AP Photo/picture alliance

সেখান থেকে ফিনিক্স পাখির মতোই বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়ায় লিটন দাস ও মেহেদী হাসান মিরাজের সপ্তম উইকেটে ১৬৫ রানের জুটিতে৷ ৩০ রানের কমে ৬ উইকেট হারানোর পর টেস্ট ইতিহাসেই সপ্তম উইকেটে এই জুটিটা সর্বোচ্চ৷ লিটন দাস ১৩৮ আর মেহেদী হাসান খেলেন ৭৮ রানের ইনিংস৷ দলের স্কোর পঞ্চাশের কম থাকার সময় ব্যাটিং অর্ডারে পাঁচের নিচে নেমে লিটন করেছেন ক্যারিয়ারে তৃতীয় সেঞ্চুরি, টেস্ট ইতিহাসেই এমন কীর্তি গড়া প্রথম ব্যাটার তিনি৷ 

শোয়েব আখতারের শহর রাওয়ালপিন্ডিতে দ্বিতীয় ইনিংসে দাপট দেখান বাংলাদেশের পেসারা৷ ১০ উইকেটই নেন তিন পেসার হাসান মাহমুদ (৫ উইকেট), নাহিদ রানা (৪ উইকেট) ও তাসকিন আহমেদ (১ উইকেট)৷ টেস্টে এবারই প্রথম কোনো ইনিংসে ১০ উইকেটই নিয়েছেন বাংলাদেশের পেসাররা৷ নাহিদ রানা চতুর্থ দিন ঘণ্টায় একটি বল করেছিলেন ১৫২ কিলোমিটার গতিতে, যা বাংলাদেশি পেসারদের মধ্যে টেস্ট ইতিহাসেই সর্বোচ্চ৷

পেসারদের এমন দাপটের পর দায়িত্ব নিতে হতো ব্যাটসম্যানদের৷ দুই ওপেনারের বিদায়ের পর সেই দায়িত্বটা নেন তারা৷ নাজমুল হোসেন ও মুমিনুল হক তৃতীয় উইকেটে গড়েন ৫৭ রানের জুটি৷ লাঞ্চের পরই পার্টটাইম স্পিনার সালমান আগার বলে ৩৮ রানে ফেরেন নাজমুল হোসেন৷ একটু আগে শট খেলে শর্ট লেগে আব্দুল্লাহ শফিককে ক্যাচ দেন বাংলাদেশি অধিনায়ক৷

চতুর্থ দিন বাংলাদেশের হয়ে ফিল্ডিংয়ে নামেননি মুশফিকুর রহিম৷ তাঁর জায়গায় ফিল্ডিং করেছিলেন নাঈম হাসান৷ দ্বিতীয় দিনে কাঁধে আঘাত পাওয়া মুশফিক স্বাচ্ছন্দ্যই ছিলেন ব্যাট হাতে৷ আবরার আহমেদ টানা দুই বলে দুটি রিভিউ নিলেও দুবারই বল ব্যাটে লেগেছিল মুশফিকের৷

মুমিনুল হককে নিয়ে বাকি পথটা পাড়ি দিতে চেয়েছিলেন মুশফিক৷ কিন্তু জুটিটা ভাঙে ২৬ রানে৷ আবিরার আহমেদের বল মিড অনে থাকা ফিল্ডারের মাথার ওপর দিয়ে তুলে মারতে গিয়ে ৩৪ রান করা মুমিনুল ক্যাচ দেন সাইম আইয়ুবকে৷

বাকি পথটুকু সাকিব আল হাসানকে নিয়ে পাড়ি দেন মুশফিক৷ সাকিব ২১ ও মুশফিক অপরাজিত থাকেন ২২ রানে৷ আবরার আহমেদের বল কাভার দিয়ে বাউন্ডারিতে পাঠিয়ে জয় নিশ্চিত করেন সাকিব৷ তাতে বাংলাদেশ পায় পাকিস্তানের মাটিতে ঐতিহাসিক সিরিজ জয়৷

সংক্ষিপ্ত স্কোর

পাকিস্তান : ২৭৪ ও দ্বিতীয় ইনিংস ৪৬.৪ ওভারে ১৭২/১০ (সালমান ৪৭, রিজওয়ান ৪৩, মাসুদ ২৮; হাসান ৫/৪৩, নাহিদ ৪/৪৪)৷
বাংলাদেশ : ২৬২ ও দ্বিতীয় ইনিংস ৫৬ ওভারে ১৮৫/৪ (জাকির ৪০, নাজমুল ৩৮, মুমিনুল ৩৪; আবরার ১/৪০, হামজা ১/৪৬)৷
ফল : বাংলাদেশ ৬ উইকেটে জয়ী
সিরিজ : বাংলাদেশ ২-০তে জয়ী

ম্যান অফ দ্য ম্যাচ: লিটন দাস

ম্যান অফ দ্য সিরিজ: মেহেদী হাসান মিরাজ

রাহেনুর ইসলাম সাংবাদিক
স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ