1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ট্যাগিং: রাজনৈতিক দমন-পীড়নে এক নির্মম ও প্রতারক অস্ত্র

রুমা মোদক
রুমা মোদক
৩০ নভেম্বর ২০২৪

সম্প্রতি রাজধানী ঢাকা কাঁপিয়ে দিলো অটোরিকশা চালকদের আন্দোলন। অটোরিকশা চালকদের আন্দোলন বা সমস্যা তিন মাসের নয়, বরং, আরো আগে থেকেই।

ট্যাগিংয়ের বাস্তবতা, রাজনৈতিক দমন-পীড়নে এ এক নির্মম ও প্রতারক অস্ত্রছবি: Rubel Karmaker/ZUMAPRESS/picture alliance

কখনো তলিয়ে দেখা হয়নি, কিন্তু এই ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিয়ে প্রশাসন আর চালকদের টানাহ্যাঁচড়া, লুকোচুরি চলছিল শুরু থেকেই। মোহম্মদপুর আল্লাহ করিম মসজিদ বাসস্ট্যান্ড থেকে নিত্য বাসযাত্রী আমি। চার রাস্তার মোড় একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট।

ঢাকা শহরের মে-জুন মাসে ট্রাফিক পুলিশ প্রায় দিনই মাইকিং করতো,অটোরিকশা চালকরা কেউ যেন গলি ছেড়ে রাজপথে না আসে। মে-জুন মাসে একদিন শুনতে পেলাম, জনৈক ট্রাফিক পুলিশ মাইকে বলছে, ‘‘সব অটোরিকশা চালকরা জামাত- শিবির। এলাকায় মামলা খেয়ে ঢাকা শহরে অটোরিকশা চালাচ্ছে। একবার ধরলে ছেড়ে দেয়া হবে না।''

দৃশ্যপট পালটে গেল মাস দুয়েক পরেই। সেপ্টেম্বরের এক সকালে ট্রাফিক পুলিশের মাইকিং শুনলাম, ‘‘এই অটোরিকশা চালকদের সবাই ফ্যাসিস্টের দোসর। গা ঢাকা দেয়ার জন্য অটোরিকশা নিয়ে রাস্তায় নেমেছে।''

আমি বারকয়েক তাকিয়ে চেনার চেষ্টা করলাম পুলিশটি একই ব্যক্তি কিনা। ঠিক শনাক্ত করতে পারলাম না।

এটি গল্প নয়। আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা।

বলছিলাম এই ট্যাগের বাস্তবতার কথা। এক রাতে যেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে হলে শ্লোগান উঠলো, তুমি কে আমি কে…রাজাকার, রাজাকার। জাতি স্পষ্টত কমে বেশিতে দুইভাগে বিভক্ত হয়ে গেল, তখন জামাত-শিবির ট্যাগিংয়ের দেড় দশক অতিক্রান্ত। ছাত্রদের স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এই ট্যাগিং গায়ে মেখে নেয়ার মাঝে তাৎক্ষণিক এক তীব্র ক্ষোভ আর প্রতিবাদ আবিষ্কার করা গিয়েছিল।

কিন্তু যে পরিচয় বাংলাদেশ নামের স্বাধীন সার্বভৌম একটি রাষ্ট্রের অভ্যুদয়ের চরম ও পরম গৌরবের বিরুদ্ধাচারণ করে সেই ট্যাগিং রাগে, ক্ষোভে,প্রতিবাদে ধারণ করাটা কতটা ঠিক বা বেঠিক সেই বিবেচনা ভবিষ্যতের ইতিহাসের বয়ানের জন্য তোলা থাক।

কিন্তু এই যে ট্যাগিংয়ের বাস্তবতা, রাজনৈতিক দমন-পীড়নে এ এক নির্মম ও প্রতারক অস্ত্র। আওয়ামী শাসনামলে ছিল বিএনপি-জামাত ট্যাগিং। কাদের ট্যাগিং দেয়া হতো? যাদের কর্মকাণ্ড শাসকদের পছন্দ হতো না,যাদের আবার আইনগতভাবে কোনো দোষেও দোষী সাব্যস্ত করা যেতো না তাদের জন্য সবচেয়ে সহজলভ্য ছিল এই ট্যাগিং।

ক্ষমতাবান ব্যক্তিও শত্রুস্থানীয় কাউকে ঘায়েল করার জন্য এই অস্ত্রই শান দিতো। এই অস্ত্রে জেল-জুলুম-গুম কিংবা ঘায়েল সবই সহজ হতো রাজনৈতিক অনুকূল পরিবেশের কারণে।

আগস্টে পরিস্থিতি পাল্টেছে। রাজনীতির উত্তর মেরু থেকে দক্ষিণ মেরুর যাত্রায় ‘'দায় ও দরদের রাষ্ট্র' কিংবা ইনক্লুসিভ সোসাইটির স্বপ্ন দেখানো হলেও বাস্তবে ট্যাগিংয়ের বাস্তবতার পরিবর্তন ঘটেনি, বরং আরো তীব্রতর হয়েছে। ফ্যাসিস্ট কিংবা ফ্যাসিস্টের দোসর বলে ট্যাগ দিতে এখন কেউ মুহূর্তমাত্র ভাবে না।

রাজনৈতিকভাবে তো বটেই,সামাজিক,সাংস্কৃতিক, এমনকি ব্যক্তিগত পর্যায়েও এই ট্যাগিং সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হয়ে উঠেছে প্রতিশোধপরায়ণতার, সুযোগ সন্ধানের, চাঁদাবাজির,দখলদারিত্বের।

এই ট্যাগিং এখন এক আতঙ্কের নাম।কোনো সত্য প্রচলিত বয়ানের বাইরে গেলেই এই ট্যাগিং আর ট্যাগিং সংক্রান্ত মবের ভয় গ্রাস করে আছে মানুষের স্বাভাবিক বাক প্রবণতা।

অভ্যুত্থান, সরকার পরিবর্তন আর সুন্দর কোন সমাজ বিনির্মাণ কখনোই সম্ভব নয় এই উদ্দেশ্য প্রণোদিত ট্যাগিংয়ের সংস্কৃতি বিদ্যমান থাকলে। আর এই ট্যাগিং ততোদিনই বিদ্যমান থাকবে যতোদিন উদ্দেশ্য সৎ না হয়।

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ