রাজধানীর হাজারিবাগের ট্যানারির কারণে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে, যার অর্থমূল্য হাজার হাজার কোটি টাকা৷ ট্যানারির কারণে বুড়িগঙ্গা নদী ধ্বংস হয়ে গেছে৷ সেখানে মাছ হয় না৷ এমন সব বর্জ্য বুড়িগঙ্গায় যাচ্ছে, যা পরিবেশের জন্য ভয়ংকর৷
বিজ্ঞাপন
‘‘আগে যদিও বা সম্ভব ছিল, এখন আর হাজারিবাগে ট্যানারি রেখে বুড়িগঙ্গাকে বা পরিবেশ বাঁচানো সম্ভব নয়৷'' ডয়চে ভেলের সঙ্গে আলাপকালে এ কথাগুলো বলেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বা বাপা-র সাধারণ সম্পাদক ডা. আব্দুল মতিন৷
তিনি বলেন, ‘‘ট্যানারি সরানোর জন্য সরকারও প্রস্তুত নয়৷ সরকার শ্রমিকদের চলে যেতে বলছে, কিন্তু হেমায়েতপুরের ঐ জায়গাটা তো তৈরি করে দিতে হবে৷ না হলে তাঁরা গিয়ে করবেটা কী? এই শিল্পের সঙ্গে ৩০ হাজার শ্রমিক জড়িত৷ তাঁদেরও থাকার ব্যবস্থা করতে হবে৷ তাঁদের পরিবার-পরিজন নিয়ে তাঁরা কী করবে? সন্তানদের কোথায় পড়াবে সে ব্যবস্থাও তো করতে লাগবে৷''
ডয়চে ভেলে: হাজারিবাগে ট্যানারির কারণে যে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে সেই সম্পর্কে বলুন...৷
ডা. আব্দুল মতিন: ট্যানারি তো আসলে ‘লেদার প্রসেসিং' কারখানা৷ আর লেদার প্রসেসিং-এ যে কেমিক্যালগুলো ব্যবহার করা হয়, তা পানি ও মাটির জন্য খুবই ক্ষতিকর৷ প্রাণী বা মানুষের জন্য তো বটেই৷ পৃথিবীতে বিদ্যমান যেসব ক্ষতিকর কেমিক্যাল আছে তার সবই এর মধ্যে আছে৷ এমন আজে-বাজে কেমিক্যাল আছে, যা জনস্বার্থের জন্য খুবই ক্ষতিকর৷ পরিবেশের জন্যও অত্যন্ত ক্ষতিকর৷ হাজারিবাগে দু'শর মতো ট্যানারি আছে৷ এগুলির বর্জ্য সব বুড়িগঙ্গায় যাচ্ছে৷ ২০০৮ সালের একটা গবেষণা আছে, যাতে দেখা গেছে যে, ট্যানারির বর্জ্য পানি, মাটি ও পরিবেশের জন্য খুবই ক্ষতিকর৷ অর্থাৎ হাজারিবাগের এই ট্যানারি থেকে জনগণ দূষিত হচ্ছে, দূষণ হচ্ছে মাটি, পানি, বাতাসও৷
ড. আব্দুল মতিন
বাপা-র সর্বশেষ ২০১৩ সালের একটা হিসেবে দেখা গেছে, ট্যানারির কারণে পরিবেশের ক্ষতি ৪০০ কোটি টাকা৷ এটা একটু ব্যাখ্যা করবেন?
ক্ষতিকে এখানে নানাভাবে ধরা হয়েছে৷ ট্যানারির কারণে নদী বা নদীগুলো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে৷ এই ক্ষতির পরিমাণ হিসেব করাও কঠিন৷ আমার যতদূর মনে পড়ে, আমরা এটাকে ‘গ্রসলি' ধরেছিলাম৷ এই ৪০০ কোটি টাকার ক্ষতি খুব গুরুত্বপূর্ণ না৷ তবে এটা ‘লং টার্মে' নদীকে ধ্বংস করে দিচ্ছে৷ সেটা ধরলে এই ক্ষতির পরিমাণ হাজার হাজার কোটি টাকা৷ এই ৪০০ কোটি টাকার ক্ষতি ধরা হয়েছিল ইমিডিয়েটলি যে ক্ষতিটা হচ্ছে, যেমন ধরুন মাছ মারা যাচ্ছে, মাটি ‘পলিউটেড' হচ্ছে, ফসল নষ্ট হচ্ছে, পানি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে৷ তাই এই এলাকায় পানি কিন্তু কিনে খেতে হচ্ছে৷ তাছাড়া যে বিষাক্ত কেমিক্যাল নদীতে যাচ্ছে, সেটা আবার মানুষের শরীরেও আসছে৷ এতে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ায় তাঁরা কাজ করতে পারছেন না৷ শ্রমঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে৷ আসলে কিন্তু ক্ষতির পরিমাণ আরো অনেক বেশি৷ আমরা যেটা বলেছিলাম সেটা শুধুমাত্র একটা ‘বেসিক' ক্ষতির পরিমাণ৷
ট্যানারি সরানোর জন্য বাপা অনেকদিন ধরে আন্দোলন করছে, কিন্তু কাজ হচ্ছে না কেন?
কাজ যে হচ্ছে না, এটা ঠিক৷ তবে এর জন্য সরাসরি সরকারের কথা বলব না৷ আসলে এর নানা দিক আছে৷ ২০০৩ সালে ত্রিপাক্ষিক একটা চুক্তি হয়েছিল৷ সে অনুযায়ী, সরকারের যে দায়িত্ব ছিল সেটা তারা পালন করেনি৷ ওদের সঙ্গে টাকা-পয়সার একটা হিসেব নিয়ে ঘাপলা আছে৷ আগে ওরা বলেছিল সাড়ে ৭শ' কোটি টাকা লাগবে৷ এখন বলছে, ওদের ৫ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হবে৷ ওরা সরকারের কাছে এই টাকাটা চায়৷ সরকার ওদের টাকাও দিতে পারেনি, রাজিও করাতে পারেনি৷ তাই এটা ঝুলে আছে বহুদিন৷ আমি বলবো, এখানে সরকারের একটা ব্যর্থতা আছে৷ গত ১৩ বছরে যে সরকারই ক্ষমতায় ছিল, তারা দক্ষতার সঙ্গে এই সমস্যাটাকে ‘হ্যান্ডেল' করতে পারিনি৷ ফলে ওরা একটা সুযোগ পেয়ে গেছে৷ ওদের ক্ষতিটাকে যুক্তিসংগতভাবে বিবেচনায় নিয়ে সরকার যদি ঐ অর্থটা ‘পে' করে দিত, তাহলে তাদের বলার কিছু ছিল না৷ তাছাড়া কারখানা স্থানান্তরের জন্য হেমায়েতপুরের জায়গাটাও সরকার তৈরি করে দিতে পারিনি৷ আমরা একটা অনুষ্ঠান করে দেখেছি যে, সরকার আসলে প্রস্তুত নয়৷ এখন শ্রমিকরা ওখানে গেলেও কিছু করতে পারবে না৷ আবার দেখুন, মালিকপক্ষ কিন্তু জমিটা ঠিকই নিয়ে নিয়েছে৷ যত সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন, সেটা কিন্তু তাঁরা নিয়ে নিচ্ছেন৷ ২০০ কারখানার সঙ্গে ৩০ হাজার শ্রমিক জড়িত৷ ৩০ হাজার শ্রমিক যে ওখানে যাবে, তাঁদের থাকার কোনো ব্যবস্থা নেই৷ ওরা ওখানে গিয়ে ভাড়া থাকবে কোথায়? সন্তানদের পড়াবে কোথায়? কোনো ব্যবস্থাই যে সেখানে নেই৷
ট্যানারি শিল্পে স্বাস্থ্য ঝুঁকি
ক্রমেই হাজারিবাগের চামড়া শিল্পে দূষণের মাত্রা বাড়ছে৷ পরিবেশ দূষণ ছাড়াও ট্যানারি শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের রয়েছে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি৷ পানি ও বাতোসে রাসায়নিকের উপস্থিতির কারণে নানারকম অসুখে ভুগছেন এলাকার বাসিন্দারা৷
ছবি: DW
একটি ট্যানারির ভেতরের চিত্র
হাজারিবাগে কমপক্ষে ২০০টি ট্যানারি রয়েছে, যাতে ২৫ হাজারেরও বেশি শ্রমিক কাজ করেন৷ এ সব ট্যানারিতে চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে ব্যবহৃত হয় ক্রোম পাউডার, কপার সালফেট, সোডিয়াম, অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড, অ্যাসিড, ব্লিচিং পাউডারসহ নানারকম রাসায়নিক৷ শ্রমিকরা নিরাপত্তা সরঞ্জাম ছাড়া খালি হাত-পায়ে ঝুঁকিপূর্ণ এ কাজ করার ফলে চর্মরোগ তাঁদের নিত্যসাথী৷ এছাড়া রাসায়নিকের প্রভাবেও অন্যান্য রোগে ভোগেন নিম্ন আয়ের শ্রমিকরা৷
ছবি: DW
হুমকির মুখে শ্রমিকদের নিরাপত্তা
চামড়া শিল্পে কাজকরা এ সব শ্রমিকদের শতভাগই অশিক্ষিত৷ তাই এ শিল্পে কাজ করা শ্রমিকদের কাজের জন্য বেশিরভাগ ট্যানারিতেই নেই কোনো চুক্তিপত্র৷ ফলে নিম্ন আয়ের এ সব শ্রমিকদের পেশাগত নিরাপত্তাও মারাত্মক হুমকির মুখে৷
ছবি: DW
আজও সচেতন নন শ্রমিকরা
ট্যানারিতে কাজ করা শ্রমিকদের বেশিরভাগই স্বাস্থ্য সচেতনও নন৷ তবে বড় ট্যানারি কারখানাগুলোতে কাজের পরিবেশ ভালো৷ পর্যাপ্ত নিরাপত্তা সরঞ্জামও রয়েছে এ সব ট্যানারিতে৷ তারপরও শ্রমিকরাই নাকি এ সব সরঞ্জাম ব্যবহার করতে চান না, অভিযোগ এমনটাই৷
ছবি: DW
‘দীপ নিভে গেছে মম...’
দীর্ঘ সময় ধরে যাঁরা ট্যানারি শিল্পে কাজ করেছেন, তাঁদের বেশিরভাগের জীবনপ্রদীপ ৫০ বছরেই নিভে গেছে৷
ছবি: DW
অকাল মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে চামড়া শিল্প
ট্যানারি শিল্পে কাজ করা শ্রমিকরা একরকম মৃত্যুকূপের বাসিন্দা৷ স্বাস্থ্য ঝুঁকি জেনেও বছরের পর বছর এ শিল্পে কাজ করে চলছেন বাংলাদেশের হাজার হাজার শ্রমিক৷
ছবি: DW
নেই কোনো স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা
ট্যানারি শিল্পে কাজ করা শ্রমিকদের বড় একটা অংশ কাজ করেন দৈনিক ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা৷ মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে কাজ করলেও এ সব শ্রমিকদের জন্য মালিকদের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যসেবার কোনো ব্যবস্থা নেই বললেই চলে৷
ছবি: DW
এলাকাবাসীরাও দূষণের কবলে
শুধু শ্রমিকরাই নন, ট্যানারি শিল্পের দূষণের ছোবলে আক্রান্ত হাজারিবাগ এলাকার কয়েক লাখ বাসিন্দা৷ এ বছরের মাঝামাঝি সময়ে হাজারিবাগ থেকে এ সব ট্যানারি শিল্প সাভারে স্থানান্তর হওয়ার কথা থাকলেও, এ খাতের সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন ‘‘নানান জটিলতার কারণে এ স্থানান্তর আগামী দু’বছরেও সম্ভব হবে না৷’’
ছবি: DW
শিশুশ্রম – এখনও বাস্তব হাজারিবাগে
দুঃখের খবর, তবুও এটাই সত্য৷ ট্যানারি শিল্পের শ্রমিকদের বড় একটা অংশ ১৮ বছরের কম বয়সি শিশু৷ শিশুদের মজুরি যেমন কম, তেমনই দুর্ঘটনার শিকার হলে তাদের কোনো ক্ষতিপূরণও দেওয়া হয় না৷
ছবি: DW
প্রতিদিন ৭৫ মেট্রিক টন কঠিন বর্জ্য!
হাজারিবাগের ২০০টি চামড়াশিল্প থেকে গড়ে প্রতিদিন ৭৫ মেট্রিক টন কঠিন বর্জ্য (লবণ, হাড়, চামড়ার বর্জ্য) নির্গত হয়৷ নির্গত হয় ২১ হাজার ৬০০ ঘনমিটার তরল বর্জ্য, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর৷ এই বর্জ্যের মধ্যে আছে ক্রোমিয়াম, সীসা, অ্যামোনিয়া, সালফিউরিক অ্যাসিড প্রভৃতি৷ কিন্তু কোনো কারখানাতেই এই বর্জ্য পরিশোধনের ব্যবস্থা নেই৷ ফলে এ সব বর্জ্য আশেপাশের জলাশয় দূষণ করা ছাড়াও গিয়ে মেশে বুড়িগঙ্গা ও ভূগর্ভের পানিতে৷
ছবি: DW
মৃত্যুকূপের বাসিন্দা নারীরাও
ট্যানারিতে কাজ করা শ্রমিকদের মধ্যে আছেন নারীরাও৷ ট্যানারির বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিকের প্রভাবে এ সব নারী শ্রমিকরাও আক্রান্ত হচ্ছেন নানা রোগে৷
ছবি: DW
10 ছবি1 | 10
বিশ্বের আর কোথাও কি ঢাকার হাজারিবাগের ট্যানারির মতো শিল্প কারখানা আছে?
আমার জানামতে নেই৷ তবে কলকারখানা তো সব শহরেই আছে৷ আগে যেগুলো হয়েছে, সেগুলো এখন স্থানান্তর করা হচ্ছে৷ নিশ্চিত করা হচ্ছে ‘এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট' বা ইটিপি৷ এখন ট্যানারিটা হেমায়েতপুরে চলে গেলেও, সেখানে যদি ইটিপি লাগানো না হয়, তবে ঐ এলাকার বংশী বা ধলেশ্বরী নদীও দূষিত হবে৷ আর সেটা হলে, সেই পানি আবারো ঘুরে-ফিরে বুড়িগঙ্গায় চলে আসবে৷ তাই সরকার যদি ‘হাইটেক' লোকজন ডেকে এনে এখানেই ইটিপির ব্যাবস্থা করতে পারতো, তাহলে হাজারিবাগে থাকলেও কোনো সমস্যা হতো না৷ এখন অবশ্য নদী সংকুচিত হয়ে গেছে৷ তাই এটা আর সম্ভব নয়৷ তার সঙ্গে সঙ্গে এটা জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ভয়াবহ ক্ষতি করছে৷
বুড়িগঙ্গা রক্ষায় উদ্যোগ আছে, সাফল্য নেই
যে নদীর তীরে বাংলাদেশের রাজধানীর অবস্থান, সেই নদীর অবস্থা ক্রমশ নাজুক থেকে নাজুকতর হচ্ছে৷ বিষাক্ত আবর্জনা মিশে ইতোমধ্যে নদীর পানি ধারণ করেছে কৃষ্ণবর্ণ, নদী পরিণত হয়েছে আবর্জনার ভাগাড়ে৷ এই নিয়ে আমাদের ছবিঘর৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিবর্ণ বুড়িগঙ্গা
যে বুড়িগঙ্গা এককালে ঢাকার রূপ বাড়িয়েছে, সেই বুড়িগঙ্গা আজ বড় বিবর্ণ৷ ঢাকা শহরের চাপ আর নিতে পাচ্ছে না এই নদী৷ রাজধানীর অধিকাংশ আবর্জনা গিয়ে পড়ছে বুড়িগঙ্গায়৷ ফলে নদীর পানি ধারণ করেছে কৃষ্ণবর্ণ৷ তবুও অত্যাচার থেমে নেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আবর্জনার ভাগাড়
বুড়িগঙ্গা এখন কার্যত আবর্জনার ভাগাড়৷ প্রতিদিন ঠিক কি পরিমাণ ময়লা, আবর্জনা বুড়িগঙ্গায় ফেলা হয় তার একেবারে সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া সম্ভব নয়৷ তবে পরিবেশ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার গৃহস্থালী ও কল-কারখানার সাত হাজার টনেরও বেশি বর্জ্যের ৬৩ ভাগ বিভিন্নভাবে বুড়িগঙ্গায় গিয়ে পড়ে৷
ছবি: AP
হাজারিবাগের আবর্জনার গন্তব্য বুড়িগঙ্গা
হাজারিবাগে অবস্থিত দু’শোর বেশি চামড়া কারখানা থেকে প্রতিদিন গড়ে ২২ হাজার ঘন লিটার দূষিত আবর্জনা বের হয়৷ এই আবর্জনায় হেক্সাভ্যালেন্ট ক্রোমিয়াম রয়েছে, যার কারণে ক্যানসার হতে পারে৷ অথচ এই সব বর্জ্যই বুড়িগঙ্গা নদীতে গিয়ে মেশে৷
ছবি: Blacksmith Institute
বার বার সময় নিচ্ছেন মালিকরা
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপা-র সমন্বয়কারী ইকবাল হাবিব সম্প্রতি ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ২০০৩ সালে হাইকোর্ট হাজারিবাগের চামড়া কারখানাগুলো সরিয়ে নিতে বলেছেন৷ এরপর সরকার এবং ট্যানারি মালিকরা মিলে অন্তত ১০ বার সময় নিয়েছে৷ এতে প্রমাণিত হয়, সরকার বা ট্যানারি মালিক কেউই এ ব্যাপারে আন্তরিক নয়৷
ছবি: MUNIR UZ ZAMAN/AFP/Getty Images
ময়লা জলে কাপড় ধোয়া
বিষাক্ত বর্জ্য, তেল আর রাসায়নিক পদার্থ মিলে বুড়িগঙ্গা নদীর পানি কৃষ্ণবর্ণ ধারণ করেছে৷ তারপরও এই পানি ব্যবহার করা হচ্ছে ধোঁয়ামোছার কাজে৷ ছবিতে বুড়িগঙ্গার ময়লা জলে কাপড় পরিষ্কার করেছেন এক ধোপা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শীর্ণ বুড়িগঙ্গা
দখলের কারণেও শীর্ণ হয়ে গেছে বুড়িগঙ্গা৷ এই নদীর ৪ হাজার দখলদারকে ২০১০ সালের শুরুর দিকেই চিহ্নিত করে জেলা প্রশাসন৷ তবে চিহ্নিত হলেও অবৈধ দখলদারদের উদ্ধার অভিযান আজও গতি পায়নি৷
ছবি: dapd
গতি পাচ্ছে না পর্যটন
দূষিত পানি এবং দুর্গন্ধের কারণে বুড়িগঙ্গা নদী ভ্রমণ থেকেও বিরত থাকছেন পর্যটকরা৷ ফলে এখাত থেকে অর্থ উপার্জনের উপায় থাকলেও তা সম্ভব হচ্ছে না৷ পাশাপাশি রাজনৈতিক অস্থিরতাও বুড়িগঙ্গার মাঝিদের উপার্জনের উপর প্রভাব ফেলছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চল্লিশ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপা’র দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বুড়িগঙ্গার পানিতে এখন লেড ও ক্যাডমিয়ামসহ ৬ ধরনের বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ আছে৷ তা শুধু বুড়িগঙ্গা নয়, আশেপাশের ৫৬ কিলোমিটার নদীকে দূষিত করছে৷ আর এই দূষিত পানির কারণে ৪০ লাখ মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
8 ছবি1 | 8
তার মানে ট্যানারি হাজারিবাগে রেখে পরিবেশের ক্ষতি না করেই বুড়িগঙ্গাকে বাঁচানো যেত?
অবশ্যই যেত৷ যদি ভালো ইটিপি লাগানো যেত, তবে বর্জ্যগুলো তো আর বুড়িগঙ্গায় যেত না৷ সরকার বলছে, হাজারিবাগের ট্যানারিগুলো যে লোকেশনে বা যেভাবে গড়ে উঠেছে, তাতে ‘সেন্ট্রাল ইটিপি' লাগানো সম্ভব নয়৷ অবশ্য ‘সিঙ্গেল ইটিপি' লাগানো যেত৷ কিন্তু সেটা অত্যন্ত খরচসাপেক্ষ৷ কারখানার মালিকদের পক্ষে এটা ‘এফোর্ড' করা সম্ভব নয়৷ সাভারে যে যাচ্ছে, সেখানে কিন্তু চারটি ইটিপি লাগানো হচ্ছে৷ ২০০টি কারখানা এই চারটি ইটিপির মধ্যে থাকবে৷
তাহলে এখন আমাদের কী করা উচিত?
এখন সরকারের উচিত তার দায়িত্ব পালন করা৷ কারণ তারা প্রতীজ্ঞাবদ্ধ৷ ২০০৩ সালে সরকার চুক্তি করে৷ এরপর সরকার যখন চুক্তি ভঙ্গ করে তখন জনগণের পক্ষে চুক্তি মানার কোনো বাধ্যবাধকতা থাকে না৷ আসলে সরকার বলে যে তারা প্রস্তুত৷ কিন্তু তারা তো প্রস্তুত নয়৷ এখন সরকারের উচিত দক্ষতার সঙ্গে দ্রুত ঐ জায়গাটা তৈরি করা এবং মালিকদের ওখানে যেতে বাধ্য করা৷ দু'টোই দরকার৷ তাই সরকারকেও প্রস্তুত হতে হবে আর ওদেরকেও চাপ দিতে হবে৷