ট্রান্সজেন্ডার নারীদের নিয়ে সাঁতার কর্তৃপক্ষের ভুল ধারণা
২২ জুন ২০২২
আন্তর্জাতিক সাঁতার ফেডারেশন (ফিনা) ট্রান্সজেন্ডার নারীদের নারী ক্যাটাগরি থেকে নিষিদ্ধ করেছে৷ এমন নিয়মের ফলে অনেক ট্রান্সজেন্ডার নারী সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারবেন না৷
বিজ্ঞাপন
কিন্তু এমন সিদ্ধান্তের ফলে সমাজে ট্রান্সজেন্ডার নারীরা আরো পিছিয়ে পড়বে এমন সম্ভাবনা তৈরি হয়৷
সাঁতার প্রতিযোগিতার নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিনা সম্প্রতি এই নিয়মটি চালু করে৷ এতে বলা হয়, বয়ঃসন্ধিকালে কখনো টেস্টোটেরনের পরিমাণ বেশি থাকলে সে ক্ষেত্রে ট্রান্সজেন্ডার নারীরা উচ্চ স্তরের প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারবেন না৷ এমন সিদ্ধান্তের ফলে অধিকাংশ ট্রান্সজেন্ডার নারীই প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার সুযোগ হারাবেন৷
তার আগে আন্তর্জাতিক রাগবি প্রতিযোগিতা থেকে ট্রান্সজেন্ডার নারীদের অংশগ্রহণ বিষয়ে একই নিয়ম আরোপ করা হয়৷
এ বিষয়ে বিশ্ব সাইক্লিং সংস্থাও অবশ্য বিধিনিষেধ আরোপ করেছে৷ গত সপ্তাহে সংস্থাটি ট্রান্সজেন্ডার নারীদের হরমোনের পরিমাণের সীমা অর্ধেক করেছে ৷
এসব মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন ধরনের ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ট্রান্সজেন্ডার নারীদের অংশগ্রহণের বিষয়ে বিভিন্ন নিয়মনীতি তৈরি করা হয়েছে৷
যদিও তথ্য-উপাত্ত বলছে, ট্রান্সজেন্ডার নারী ক্রীড়াবিদরা সিসজেন্ডার পুরুষদের সমতুল্য নয়৷ সিসজেন্ডার পুরুষ বলতে তাদের বুঝানো হয় যারা জন্মসূত্রে পুরুষ এবং নিজেদের পুরুষ বলে মনে করেন৷
হরমোনের চিকিৎসা কী?
লিঙ্গ নিশ্চয়তার হরমোন চিকিৎসা হলো যখন কোনো ট্রান্সজেন্ডার নারী ইস্ট্রোজেন পরিপূরকের মাধ্যমে তাদের হরমোন কমায়৷ এর লক্ষ্য হলো, ট্রান্সজেন্ডার নারীদের টেস্টোস্টেরনের পরিমাণ সিসজেন্ডার নারীদের পর্যায়ে নিয়ে আসা৷
এ ধরনের চিকিৎসা ব্যক্তির শারীরিক অস্বস্তি দূর করে এবং ট্রান্সজেন্ডার ক্রীড়াবিদদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়৷
যারা টেস্টোস্টেরনের পরিমাণ কমার চিকিৎসা নিয়েছেন তাদের সাধারণত লম্বা হাড়, শক্তিশালী পেশি এবং রক্তে অক্সিজেন সমৃদ্ধ হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বেশি থাকে৷
তবে টেস্টোস্টেরন কমানোর ফলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পেশি দুর্বল হয় এবং পেশি গঠনের সক্ষমতাও কমে যায়৷ তাছাড়া হিমোগ্লোবিনের ঘনত্বও সিসজেন্ডার নারীদের পর্যায়ে নামিয়ে নিয়ে আসে৷ আর ইস্ট্রোজেন সাপ্লিমেন্ট ট্রান্সজেন্ডার নারীদের শরীরের চর্বির পরিমাণ অনেক বাড়িয়ে দেয়৷
চর্বির কারণে শারীরিক চলাফেরায় সমস্যা হয়৷ আর শরীরের পেশি এর ঠিক বিপরীত কাজটি করে৷ ফলে, কোনো ব্যক্তির শরীরে চর্বির পরিমাণ যত কম তাদের ভাল ক্রীড়াবিদ হয়ে উঠার সুযোগ তত বেশি৷
ট্রান্সজেন্ডার নারীদের নারী হিসেবে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার নিষিদ্ধ করার যে যুক্তি দেওয়া হচ্ছে তা হলো, এই ক্রীড়াবিদদের শরীরে বয়সন্ধিকালীন সময়ে উচ্চমাত্রার টেস্টোস্টেরন ছিল৷
পরিসংখ্যানযাবলছে
ট্রান্সজেন্ডার নারীদের বিষয়ে যেকোনো সিদ্ধান্তই তাদের বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত ভিত্তিক হওয়া প্রয়োজন৷ কিন্তু এসকল ব্যক্তিদের ক্রীড়াক্ষেত্রে উপস্থিতি কম থাকায় তাদের বিষয়ে পরিসংখ্যানেরও যথেষ্ট ঘাটতি রযেছে৷
নেটফ্লিক্সে কমেডিয়ান ডেভ চ্যাপেল এর নতুন আয়োজন ‘দ্য ক্লোজার’ প্রচারের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছেন স্ট্রিমিং প্লাটফর্মটির কর্মীরাই৷ বুধবার তাদের কর্মবিরতির সমর্থনে যোগ দেন ট্রান্সজেন্ডারদের অধিকার নিয়ে সোচ্চার শিল্পীরাও৷
ছবি: MARIO ANZUONI/REUTERS
কর্মীদের কর্মবিরতি
বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের লস এঞ্জেলেসে নেটফ্লিক্সের ১৩ তলা সদর দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ করেছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরাই৷ নিজেদের কোন দাবি দাওয়া নয়, বরং ডেভ চ্যাপেল এর নতুন কমেডি শোতে ট্রান্সজেন্ডারদের অবমাননা করা হয়েছে এমন অভিযোগ তাদের৷ প্রতিবাদে বিক্ষোভকারীরা এদিন কর্মবিরতি পালন করেন৷
ছবি: MARIO ANZUONI/REUTERS
সংহতি
নেটফ্লিক্স কর্মীরা সবার প্রতি সংহতি প্রকাশের ডাক দিয়েছেন৷ তাতে যোগ দেন ট্রান্সজেন্ডারদের অধিকার নিয়ে সচেতন সাধারণ মানুষ, অধিকারকর্মী, শিল্পী, গণমাধ্যমকর্মীরাও৷
ছবি: Mario Anzuoni/REUTERS
‘হেইটফ্লিক্স’
প্রতিবাদকারীদের অভিযোগ বিশেষ কমেডি অনুষ্ঠান ‘দ্য ক্লোজার’-এ মজা করতে গিয়ে ডেভ চ্যাপেল ট্রান্সজেন্ডারদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়িয়েছেন৷ প্ল্যাকার্ডে তাই নেটফ্লিক্সের লোগোর আদলে ‘হেইটফ্লিক্স’ লিখে প্রতিবাদ জানান মার্কিন সাংবাদিক ডেভ ব্রিগস৷
ছবি: MARIO ANZUONI/REUTERS
ঘৃণা ও কৌতুকের সীমারেখা
সংহতি জানাতে আসেন গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ও আন্দোলনকর্মী অ্যাশলি মারি প্রেস্টন, অভিনেত্রী ব্লসম সি ব্রাউনসহ আরো অনেকে৷ ঘৃণা ও কৌতুকের মধ্যে সীমারেখা থাকা প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন তারা৷
ছবি: MARIO ANZUONI/REUTERS
প্রতিবাদের বিপক্ষে
তবে বিপক্ষে অবস্থানও রয়েছে অনেকের৷ নেটফ্লিক্সকর্মীদের প্রতিবাদের দিন তারা এসেছেন ডেভ চ্যাপেল ও তার কমেডি শো এর সমর্থনে৷ অনুষ্ঠানটি যাতে কোনভাবেই বন্ধ না করা হয় নেটফ্লিক্স কর্তৃপক্ষের কাছে সেই দাবি জানিয়েছেন তারা৷
ছবি: MARIO ANZUONI/REUTERS
পাশাপাশি অবস্থান
পক্ষে ও বিপক্ষের আন্দোলকারীরা দাঁড়িয়েছিলেন পাশাপাশি৷ অনুষ্ঠানটির পক্ষের আন্দোলনকারীরা একে নিছক কৌতুক বলেই মনে করেন, আর কৌতুকের প্রতি নিজেদের পছন্দের কথাও তুলে ধরেন৷ তাদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দিতে দেখা যাচ্ছে নেটফ্লিক্স কর্মীদের কর্মবিরতিতে সংহতি জানাতে আসা অভিনেত্রী ব্লসম সি ব্রাউনকে৷
ছবি: MARIO ANZUONI/REUTERS
নেটফ্লিক্স যা বলছে
নেটফ্লিক্স কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কোন বিবৃতি দেয়নি৷ তবে প্রতিষ্ঠানটি চিফ কনটেনন্ট অফিসার টেড সারানডোস এনবিসি নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, কারো প্রতি শারীরিক হুমকি তৈরি করে এমন বক্তব্যকে তারা ক্ষতিকর হিসেবে বিবেচনা করেন৷ সেদিক থেকে ‘দ্য ক্লোজার’ হেইট স্পিচ বা ঘৃণা ছড়ানো বক্তব্যের মধ্যে পড়ে না৷
ছবি: Robyn Beck/AFP/AFP/Getty Images
7 ছবি1 | 7
২০২১ সালে আট জন ট্রান্সজেন্ডার নারী ও আটজন সিসজেন্ডার নারী ও পুরুষের একটি গবেষণায় বলা হয়, ট্রান্সজেন্ডার নারীদের শক্তি সিসি নারীদের মতো কম নয়৷ তবে আবার তা সিসজেন্ডার পুরুষদের মতে বেশিও নয়৷
কিন্তু গবেষণায় সিস নারী ও সিস পুরুষদের ফ্যাট-ফ্রি মাসের শক্তির অনুপাতে হিসেব করে দেখা গেছে যে তারা সমান৷ বিপরীতে, ট্রান্সজেন্ডার নারীদের শারীরিক শক্তি তাদের ফ্যাট-ফ্রি মাসের অনুপাতে হিসেব করে দেখা গেছে, তারা সিস নারী ও সিস পুরুষদের তুলনায় শতকরা ১৯ভাগ কম শক্তিশালী৷
এতদ্রুতসিদ্ধান্তনানেই
এমন পরিসংখ্যান দেখে বলা যায়, সিসজেন্ডার পুরুষ ও ট্রান্সজেন্ডার নারীরা কখনোই সমান নয়৷ যদিও আমার আশঙ্কা, ফিনার সিদ্ধান্তের মূল ভিত্তি ছিল এটি৷
ট্রান্সজেন্ডার নারীরা লিঙ্গ নিশ্চয়তার হরমোন চিকিৎসার আগে থেকেই মানসিকভাবে আলাদা থাকেন৷ তাছাড়াও তাদের বেলায় আরো অনেক সামাজিক ও মানসিক বিষয়ের প্রভাব রয়েছে৷
তাই আমার মনে হয়, ফিনার ওই সিদ্ধান্ত আসলে ত্রুটিপুর্ণ৷
আমার দৃঢ় বিশ্বাস, টেস্টোস্টেরন কমিয়ে আনা এবং সেই সঙ্গে ইস্ট্রোজেন সাপ্লিমেন্টের মাধ্যমে ক্রীড়াক্ষেত্রে নারীদের ক্যাটাগরি তৈরি করা উচিত৷
অবশ্য ফিনার এই সিদ্ধান্ত ভুল প্রমাণ করার এবং এ সিদ্ধান্ত কেন ভুল সে উত্তর দেওয়ার দায়িত্ব আমরা যারা এ বিষয়ে গবেষণা করছি তাদের৷ দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, গবেষণালব্ধ ফলাফল হাতে পেতে কয়েক মাস থেকে কয়েক বছর পর্যন্ত সময় লেগে যাবে৷
আর এমন প্রয়োজনীয় তথ্য হাতে পাওয়ার আগ পর্যন্ত চলুন আমরা ট্রান্সজেন্ডার নারী ক্রীড়াবিদদের দোষী করা থেকে বিরত থাকি৷ কেননা, তারা ইতিমধ্যেই সমাজে নানাভাবে বঞ্চিত হয়ে আসছে৷
ভোটে জিতে ইতিহাসের পাতায় দুই ট্র্র্যান্সজেন্ডার নারী
মাঝে মাঝে দু-একটা ব্যতিক্রমী ঘটনা উঠে এলেও জার্মান সমাজ যে এখনো অনেক মানবিক, সব মানুষের জন্যই যথেষ্ট উদার তা আবার বোঝা গেল টেসা গানসারার এবং নাইকে স্লাভিকের জয়ে৷ ছবিঘরে বিজয়ী দুই ট্র্যান্সজেন্ডার নারীর গল্প...
জার্মানিতে সমকামী এবং অন্যদের অধিকার
জার্মানিতে সমকামিতা আইনি স্বীকৃতি পায় ১৯৬৯ সালে৷ সে বছরই সমকামিতাকে ‘অপরাধ’ বিবেচনা না করার পক্ষে রায় দেয় আদালত৷ এখন জার্মানিতে সম লিঙ্গের মানুষদের বিয়েও আইনসিদ্ধ৷ ২০১৭ সালে আদালত সম লিঙ্গের কাউকে জীবনসঙ্গী করতে আগ্রহীদের এ অধিকার দেয়৷
ছবি: imago images/S. Zeitz
উদারতায় ভাটা?
তবে অতি সম্প্রতি জার্মানিতে এক শ্রেণির মানুষের মধ্যে উগ্রতা বাড়ছে৷
পুলিশের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে জার্মানিতে এলজিবিটি+-দের বিরুদ্ধে হেটক্রাইম, অর্থাৎ ঘৃণাসূচক অপরাধ শতকরা ৩৮ ভাগ বেড়েছে৷
ছবি: picture-alliance/empics/J. Brady
ভোটারদের ‘সবুজ সংকেত’
তবে বাভারিয়া এবং নর্থ রাইন ওয়েস্টফালিয়ার ভোটাররা সব মানুষের অধিকারের প্রতিই শ্রদ্ধাশীল৷ তাই বাভারিয়া থেকে টেজা গানসারার আর নর্থ রাইন ওয়েস্টফালিয়া থেকে নাইকে স্লাভিক সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন৷ দুজনই গ্রিন পার্টির সদস্য৷ জার্মানিতে এই প্রথম কোনো ট্র্যান্সজেন্ডার নারী সংসদ সদস্য হলেন৷ এর আগে ক্রিস্টিয়ান শেঙ্ক নামের একজন বুন্ডেসটাগের সদস্য হলেও সংসদের মেয়াদ শেষেই নিজেকে তিনি পুরুষ ‘ঘোষণা’ করেন৷
‘এটা ট্র্যান্সজেন্ডারদের জয়’
রোববারের নির্বাচনে গ্রিন পার্টি তৃতীয় সফল দল হিসেবে উঠে আসে৷ ২০১৭ সালে যারা মাত্র ৮.৯ ভাগ ভোট পেয়েছিল সেই দল কিনা এবার পেয়েছে ১৪.৯ ভাগ ভোট৷ দলের এবং নিজের সাফল্যে গানসারার খুব খুশি৷ রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘‘এটা সবুজদের জন্য এবং ট্র্যান্সজেন্ডারদের অধিকার আন্দোলনের জন্য বড় এক ঐতিহাসিক জয়৷’ ৪৪ বছর বয়সি এই রাজনীতিবিদ ভোটযুদ্ধে আগেও জিতেছেন৷ ২০১৩ সালে বাভারিয়ার আঞ্চলিক সংসদের সদস্য হয়েছিলেন তিনি৷
ছবি: JOHN MACDOUGALL/AFP
স্লাভিকের প্রতিক্রিয়া
নির্বাচনে জেতার আনন্দ ইন্সটাগ্রামে স্লাভিক প্রকাশ করেছেন এভাবে, ‘‘এ তো রীতিমতো পাগলামো! আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না৷ তবে সত্যি কথা হলো, এক ঐতিহাসিক জয়ের মাধ্যমে আমি পরবর্তী বুন্ডেসটাগের সদস্য হতে চলেছি৷’’