মঙ্গলবার অ্যামেরিকার ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রাইমারি পর্বে আবার সাফল্যের মুখ দেখলেন জো বাইডেন৷ পূর্বাভাষ অনুযায়ী তিনি বার্নি সান্ডার্সকে পেছনে ফেলে জয়যাত্রা জারি রেখেছেন৷
বিজ্ঞাপন
চলতি বছর অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডনাল্ড ট্রাম্পকে চ্যালেঞ্জ করার দৌড়ে আরও এগিয়ে গেলেন প্রাক্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন৷ মঙ্গলবার ছ'টি রাজ্যে ভোটগ্রহণের পর বাইডেনের জয়যাত্রা নিয়ে তেমন কোনো সন্দেহ থাকছে না৷ বিশেষ করে মিশিগান রাজ্যে ভোটের বিচারে তাঁর জয়ের পর ডেমোক্র্যাটিক দলের মনোনয়নের পথে কার্যত আর কোনো বাধা থাকবে না৷ মিসিসিপি ও মিসৌরি রাজ্যেও শীর্ষে রয়েছেন বাইডেন৷ বাকি রাজ্যগুলির চিত্র এখনো স্পষ্ট নয়৷ তবে নর্থ ডাকোটা ও ওয়াশিংটন রাজ্যে সান্ডার্স জয়লাভ করতে পারেন৷ গণনার শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল জানা যাবে৷
মঙ্গলবারের প্রাইমারির পর উচ্ছ্বসিত বাইডেন এক ভাষণে বলেন, সপ্তাহখানেক আগেও তাঁর প্রার্থিতা নিয়ে অনেক বিশেষজ্ঞ ঘোর সংশয় প্রকাশ করেছিলেন৷ অথচ মরার বদলে যথেষ্ট প্রাণশক্তি দেখা যাচ্ছে৷ উল্লেখ্য, গত সপ্তাহে ‘সুপার টিউজডে' প্রাইমারি পর্বে বাইডেন ১৪টির মধ্যে ছ'টি রাজ্যে জয়লাভ করে অতীতের ব্যর্থতা মুছে ফেলতে পেরেছিলেন৷ সেই ধাক্কায় বার্নি সান্ডার্স ছাড়াদলের সব অবশিষ্ট প্রার্থী আসর ছেড়ে বিদায় নিয়েছেন৷
মিশিগান রাজ্যে পরাজয় মেনে নিলে বার্নি সান্ডার্সের পক্ষে মনোনয়নের দৌড়ে টিকে থাকা অত্যন্ত কঠিন হয়ে উঠবে৷ প্রথম দিকে নিজের জয়যাত্রা নিশ্চিত করতে পারলেও সুপার টিউজডে পর্বের পর তিনি বেশ কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন৷ ছ'টি রাজ্যে মোট ৩৫২ জন ডেলিগেটের মধ্যে যথেষ্ট সমর্থন না পেলে তাঁকেও সম্ভবত আসর ছেড়ে বিদায় নিতে হবে৷ এতকাল ব্যাপক সমর্থনের ঢেউয়ের পর এমন পরিস্থিতি সান্ডার্স শিবিরের জন্য বেশ বেদনাদায়ক হয়ে উঠছে৷
বাইডেনের আচমকা সাফল্যের পেছনে কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের পাশাপাশি মধ্যপন্থি ভোটারদের সমর্থন কাজ করছে৷ অন্যদিকে সান্ডার্স সমাজতন্ত্র-ঘেঁষা, বামপন্থি, প্রগতিশীল সংস্কারের প্রস্তাব সামনে রেখে কিছু সমর্থককে উদ্বুদ্ধ করতে পেরেছেন৷ দেশের স্বাস্থ্য পরিষেবা কাঠামোর ব্যাপক সংস্কার, জলবায়ু পরিবর্তনের কুপ্রভাব রুখতে সাহসি পদক্ষেপের প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি৷ কিন্তু এমন ‘ব়্যাডিকাল' মনোভাবের কারণে ডেমোক্র্যাট দলের সব সমর্থক তাঁর প্রতি আস্থা দেখাতে পারছেন না৷ বিভিন্ন জনমত সমীক্ষায় এমন চিত্র উঠে আসছে৷
ব্যর্থতা সত্ত্বেও সান্ডার্স প্রাইমারি পর্বে টিকে থাকলে দুই প্রার্থীর মধ্যে কেউই প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারবেন না বলে অনুমান করা হচ্ছে৷ সে ক্ষেত্রে জুলাই মাসে ডেমোক্র্যাটিক দলের সম্মেলনে ডেলিগেটরা সংকটের মুখে পড়তে পারেন৷ তার উপর করোনা ভাইরাসের কারণে দুই প্রার্থীকেই বেশ কিছু জনসভা বাতিল করতে হচ্ছে৷ পরিস্থিতির উন্নতি না হলে তাঁদের পক্ষে প্রচার অভিযান চালিয়ে যাওয়া বেশ কঠিন হয়ে উঠবে৷ আগামী ১৫ই মার্চ পরবর্তী পর্যায়ে ভোটগ্রহণ পর্বে দুই প্রার্থীর মধ্যে আবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবার কথা৷ তার আগে টেলিভিশন বিতর্ক অনুষ্ঠানে স্টুডিওয় কোনো দর্শক রাখা হবে না৷
কে হবেন পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট
চলতি বছরই অনুষ্ঠিত হবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন৷ ডেমোক্রেটরা এরই মধ্যে নিজ দলের প্রার্থীতা পেতে লড়াই শুরু করেছেন৷
ছবি: Getty Images/S. Olson
মাইকেল বেনেট
৫৫ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদ বর্তমানে কলোরাডোর সিনেটর৷ প্রগতিশীল ডেমোক্রেট হিসেবে তার পরিচিতি রয়েছে৷ ২০১৩ সালের অভিবাসী আইন প্রণয়নের পেছনে যারা ভূমিকা রেখেছেন তিনি তাদের একজন৷ প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে গলা চড়ানোটাই নম্রভাষী এই রাজনীতিবিদের বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Bennett
জো বাইডেন
জো বাইডেন বা জোসেফ আর বাইডেন জুনিয়র৷ ওবামার শাসনামলের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট এ পর্যন্ত দুইবার প্রেসিডেন্ট হওয়ার লড়াইয়ে সামিল হয়েছেন৷ শেষবারের মত এই দৌড়ে নামার সুযোগ পাচ্ছেন ৭৭ বছর বয়সী ডেমোক্রেট৷
ছবি: picture-alliance/newscom/K. Dietsch
মাইকেল ব্লুমবার্গ
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার প্রতিযোগিতায় এরইমধ্যে আলোচিত হয়েছেন নিউ ইয়র্কের সাবেক মেয়র মাইকেল ব্লুমবার্গ৷ ট্রাম্পকে হারাতে ১০০ কোটি ডলার খরচে প্রস্তুত আছেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন এই বিলিওনেয়ার৷ গত অক্টোবরে রিপাবলিকান দলত্যাগ করে দুই যুগ পর আবারও ডেমোক্রেট শিবিরে ভিড়েছেন তিনি৷ তার বয়স ৭৭ বছর৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J. Locher
করি বুকার
ডেমোক্রেটদের মনোনয়নের দৌড়ে আছেন নিউ জার্সির সিনেটর ও নুয়ার্কের সাবেক মেয়র করি বুকারও৷ বৈষম্য দূরীকরণের ইস্যুকে তিনি সামনে নিয়ে এসেছেন৷ ভালবাসা, ঐক্য আর সাম্যের প্রচারও চালাচ্ছেন পঞ্চাশ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদ৷
ছবি: Reuters/L. Millis
পিট বুডিজেজ
নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে সর্বকনিষ্ঠ পিট বুডিজেজ৷ ইন্ডিয়ানার সাউথ বেন্ডের এই মেয়র সাবেক সামরিক কর্মকর্তা৷ বয়স মাত্র ৩৭ বছর৷ কিন্তু নির্বাচনের জন্য অর্থ সংগ্রহে এগিয়ে আছেন সবার চেয়ে৷ অর্থনীতি আর জলবায়ু তার প্রচারের মূল বিষয়৷
ছবি: Reuters/R. Mummey
জন ডেলানি
সাবেক কংগ্রেসম্যান ও ব্যবসায়ী জন ডেলানি৷ প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার জন্য মরিয়া তিনি৷ ২০১৭ সাল থেকেই এজন্য দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন৷ আইওয়ার প্রতিটি কাউন্টি এরইমধ্যে ভ্রমণ করেছেন তিনি৷ কিন্ত শেষ পর্যন্ত টিকিট পান কীনা সেটি দেখার বিষয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Bennett
তোলসি গ্যাবার্ড
২০১৬ সালের নির্বাচনে বার্নি স্যান্ডার্সকে সমর্থন দিয়েছিলেন তোলসি গ্যাবার্ড৷ ৩৮ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদ এবার নিজেই প্রার্থী হতে চাইছেন৷ পূর্বের সমকামী বিরোধী অবস্থানের জন্য এরই মধ্যে তিনি ক্ষমা চেয়েছেন৷ সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাসার আল আসাদের সঙ্গে বৈঠক করেও সমালোচিত হয়েছে৷ বিদেশে মার্কিন সামরিক আগ্রাসণের বিরুদ্ধে অবস্থান রয়েছে তার৷
ছবি: AFP
এমি ক্লোবুসার
৫৯ বছর বয়সী এমি ক্লোবুসার মিনেসোটার সিনেটর৷ মাদক, ঔষধসহ বিভিন্ন ইস্যুতে অবস্থান নিয়ে আলোচিত হয়েছেন তিনি৷ জো বাইডেনের পর উদারপন্থী ডেমোক্রেটদের মধ্যে তার জনপ্রিয়তাই সবচেয়ে বেশি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Souffle
ডেভাল পেট্রিক
মেসাচুসেটস এর সাবেক গভর্নরও লড়ছেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থী হতে৷ অ্যামেরিকার ইতিহাসের দ্বিতীয় কৃষ্ণাঙ্গ গভর্নর নির্বাচিত হন তিনি ২০০৬ সালে৷ সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার বন্ধু হিসেবে ডেভাল পেট্রিকের পরিচিতি রয়েছে৷
ছবি: AFP/Getty Images/S. Maturen
বার্নি স্যান্ডার্স
৭৮ বয়সী স্যান্ডার্স ২০১৬ সালেও লড়েছেন নির্বাচনের টিকেট পেতে৷ সেবার পিছিয়ে পড়েন হিলারির কাছে৷ তিনি নিজেকে ‘ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্ট’ হিসেবে অভিহিত করেন৷ সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা, বিনা পয়সায় পড়াশোনার প্রতিশ্রুতি নিয়ে নির্বাচনে লড়তে চান এই বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ৷
ছবি: AFP/F. J. Brown
টম স্টেয়ার
৬২ বছর বয়সী এই বিলিওনেয়ার জলবায়ু কর্মী হিসেবে নাম কুড়িয়েছেন৷ ট্রাম্পের ইমপিচমেন্টের পক্ষে তিনি কয়েক কোটি ডলার ব্যয় করে টিভি বিজ্ঞাপন প্রচার করেছেন৷
ছবি: Getty Images/A. Wong
এলিজাবেথ ওয়ারেন
ম্যাসাচুসেটসের সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন৷ হার্বার্ডের সাবেক অধ্যাপক তিনি৷ ৭০ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদও আছেন ডেমোক্রেটদের প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর দৌড়ে৷
ছবি: AFP/F. J. Brown
ডনাল্ড ট্রাম্প
রিপাবলিকান প্রার্থী হিসেবে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প যে আবারও নির্বাচনে লড়ছেন সেটি নিশ্চিত৷ তাকে চ্যালেঞ্জ জানাতে কে আসছেন ডেমোক্রেট শিবির থেকে সেটিই এখন দেখার বিষয়৷