ট্রাম্পের কয়েকটি মুসলিম দেশের নাগরিককে ভিসা না দেয়ার পরিকল্পনার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন এক ইরানি অভিনেত্রী৷ আর মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট নিয়েতো জানিয়েছেন, ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করবেন না৷ এরমধ্যেই অ্যামেরিকা গেছেন মে৷
বিজ্ঞাপন
বেশ সহজে ভোটের লড়াই জিতে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হয়ে গেলেও সময়টা ভালো যাচ্ছে না ডোনাল্ড ট্রাম্পের৷ শপথ নেয়ার দিন থেকেই শুরু হয় তাঁর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ৷ ওয়াশিংটনের ‘ওমেন'স মার্চ-'এ সমবেত হয় লাখো নারী৷ ‘নারীদের মিছিল'-এর সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করতে বিশ্ব জুড়ে আয়োজিত হয় ‘সিস্টার মার্চ'৷ তাতে অবশ্য ট্রাম্প নিজের অবস্থান থেকে সরেননি৷ বরং একটুও সময় নষ্ট না করে প্রেসিডেন্ট হবার পর থেকেই শুরু করেন নির্বাচনি অঙ্গীকার পূরণের পথে চলা৷ যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের নির্বাহী আদেশে সই করেন বুধবার৷ দাবি তোলেন, দেয়াল নির্মাণের অর্থ মেক্সিকোকেই দিতে হবে৷
মার্কিন-মেক্সিকান সীমান্তে কংক্রিটের দেয়াল?
মেক্সিকো সীমান্তে প্রাচীর তোলা হবে: মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট নিয়েতোর সঙ্গে সাক্ষাতের স্বল্প আগে টুইট করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ কিছুদূর ইস্পাতের বেড়া এখনই আছে৷ এবার কি কংক্রিটের দেয়াল তৈরি হবে?
ছবি: Reuters/J. L. Gonzalez
দেয়াল তৈরি ভালোই বোঝেন ট্রাম্প
‘‘আমি দেশের দক্ষিণ সীমান্তে একটি সুবিশাল দেয়াল তুলব; অন্য কেউ আমার মতো ভালো দেয়াল বানাতে পারে না৷ আর আমি মেক্সিকোকে দিয়ে এই দেয়াল তৈরির দাম দেওয়াব’’, নির্বাচনি প্রচার অভিযানে বলেছিলেন ট্রাম্প৷ এযাবৎ তিনি বিশেষ করে বহুতল ভবন আর হোটেল বানিয়েছেন৷ সীমান্তে প্রাকার তাঁর দশ-দফা অভিবাসন নীতির প্রথম দফা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/C. Torres
মাঝপথে থেমে যায় সেই দেয়াল
যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোর মধ্যে সীমান্তের দৈর্ঘ্য ৩,২০০ কিলোমিটার, তার মধ্যে ১,১০০ কিলোমিটার পথ জুড়ে ইতিমধ্যেই বেড়া তৈরি হয়েছে৷ যুক্তরাষ্ট্রের চারটি ও মেক্সিকোর ছয়টি প্রদেশ এই সীমান্ত বরাবর৷ মরুভূমি থেকে শুরু করে মহানগরীর মধ্যে দিয়ে গিয়েছে সেই সীমান্ত৷ এলাকাটি দুর্গম বলে মার্কিন নিউ মেক্সিকো রাজ্যে সীমান্তের একটি ক্ষুদ্র অংশ খোলা রাখা হয়েছে৷ অন্য অনেক জায়গায় সশস্ত্র সীমান্তরক্ষীরা টহল দিচ্ছে৷
ছবি: Reuters/M. Blake
অলঙ্ঘনীয়
মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে বছরে প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ বেআইনিভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেন, বলে অনুমান করা হয়৷ এই অভিবাসীদের অধিকাংশই আসেন মেক্সিকো থেকে৷ বেআইনিভাবে মার্কিন মুলুকে বাস করা খুব সহজ কাজ নয়৷ কিছু কিছু মেক্সিকানকে থাকতে দেওয়া হয়, কিন্তু তাদের পরিবারবর্গকে মেক্সিকো থেকে নিয়ে আসতে দেওয়া হয় না, অর্থাৎ ভিসা দেওয়া হয় না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Zepeda
শুধু একটু স্পর্শ...
সীমান্তের বেড়া পরিবারদের আলাদা করে রাখে, বুকে জড়িয়ে না ধরে শুধু হাত ছুঁয়ে যেটুকু সান্নিধ্য, যেটুকু সান্ত্বনা পাওয়া যায়৷ ট্রাম্প যদি তাঁর নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত করেন, তাহলে ইস্পাতের বেড়ার ফাঁকটুকুও নিরেট কংক্রিট হয়ে যাবে৷
ছবি: picture-alliance/ZumaPress/J. West
অন্যায় সন্দেহ
‘‘মেক্সিকো যখন এদেশে মানুষ পাঠায়, তখন তাদের সেরা মানুষগুলোকে পাঠায় না’’, নির্বাচনি প্রচার অভিযানে বলেছিলেন ট্রাম্প৷ ‘‘ওরা এমন সব লোক পাঠায়, যাদের অনেক সমস্যা আছে৷ তারা ড্রাগস, অপরাধ, ধর্ষণ, এই সব নিয়ে আসে৷ তবে কিছু ভালো মানুষও আছে বলে আমি ধরে নিচ্ছি৷’’ ট্রাম্প বেআইনি অভিবাসীদের, অন্তত অপরাধীদের বহিষ্কার করতে চান৷ তবে সব হুমকি সত্ত্বেও বহু মেক্সিকান যুক্তরাষ্ট্রে আসার স্বপ্ন পরিত্যাগ করতে রাজি নন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/G. Bull
মরুভূমি, সীমান্ত, মৃত্যু
কিছু মানুষের সমৃদ্ধির স্বপ্ন শেষ হয় সীমান্তে: কিছু যান কারাগারে, অন্যরা প্রাণ হারান রক্ষীদের গুলিতে৷ মার্কিন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা বেড়ার ভিতর দিয়ে গুলি চালিয়েছেন, মিডিয়ায় যার তুমুল সমালোচনা হয়েছে৷ মেক্সিকোর ছ’জন নাগরিক এভাবে মারা যাওয়া সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট রক্ষীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি৷ ২০১৫ সালে মার্কিন সীমান্তরক্ষী বাহিনীর এক সদস্যের বিরুদ্ধে এক ফেডারাল কৌঁসুলি মামলা করেন৷
ছবি: Reuters/D.A. Garcia
বন্দুক হাতে জমির পাহারায়
মার্কিন খামারচাষি জিম চিল্টন তাঁর জমি পাহারা দিচ্ছেন৷ তাঁর দু’লাখ বর্গমিটার পরিধির খামারটি অ্যারিজোনা রাজ্যের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে, মেক্সিকোর সীমান্ত ঘেঁষে, মাঝে শুধু একটি কাঁটাতারের বেড়া৷ চিল্টন নিরাপত্তার দায়িত্ব নিজের হাতে নিয়েছেন, এমনকি মাঝেমধ্যে বন্দুক কাঁধে করতেও দ্বিধা করেন না৷
ছবি: Getty Images/AFP/F.J. Brown
বেড়া শেষ হয় সমুদ্রে
সান ডিয়েগোর ওটি মিজা সীমান্ত পারাপার কেন্দ্র থেকে প্রশান্ত মহাসাগর অবধি বেড়ার শেষ সাড়ে ২২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের অংশটিকে স্থানীয় লোকজন ঠাট্টা করে বলেন ‘তর্তিয়া ওয়াল’৷ তর্তিয়া হলো ‘স্প্যানিশ ওমলেট’৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Zepeda
8 ছবি1 | 8
সঙ্গে সঙ্গেই যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তের ওপার থেকেও আসে কড়া জবাব৷ প্রেসিডেন্ট এনরিকে পেনা নিয়েতো দেয়াল নির্মাণের অর্থ দেয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়ে জানান, মেক্সিকো এক কানাকড়িও দেবে না যুক্তরাষ্ট্রকে৷ আগামী ৩১ জানুয়ারি ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠেয় ট্রাম্প-নিয়েতো বৈঠকের ভবিষ্যত নিয়ে তখনই দেখা দিয়েছিল অনিশ্চয়তা৷ যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি দেশের প্রেসিডেন্ট হয়েও ট্রাম্প নিজেই বৈঠক বাতিলে বড় ভূমিকা রেখেছেন৷
টুইটারে ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, মেক্সিকো দেয়াল নির্মাণের টাকা না দিলে নিয়েতো চাইলে ৩১ জানুয়ারির বৈঠক বাতিল করতে পারেন৷ নিয়েতো তা-ই করেছেন, সরাসরিই জানিয়ে দিয়েছেন, ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা করতে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন না৷
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ইরান থেকেও এসেছে প্রতিবাদের প্রতীকী এক সিদ্ধান্ত৷ সে দেশের অভিনেত্রী তারানেহ আলিদোস্তি জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি অস্কারের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন না৷ তারানেহ অভিনীত ‘দ্য সেলসম্যান' ছবিটি এবার ‘বেস্ট ফরেন ফিল্ম' ক্যাটেগরিতে মনোনয়ন পেয়েছে৷
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মুখ খুললেন তারকারা
01:58
তারপরও চলচ্চিত্র জগতের সবচেয়ে সম্মানের এ পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে যোগ না দেবেন না কেন? কারণ ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ তারানেহ জানিয়েছেন, ট্রাম্প যে সম্প্রতি ইরান, ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়া এবং সোমালিয়াসহ কয়েকটি মুসলিম দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার ভিসা না দেয়ার প্রস্তাব রেখেছেন, তার প্রতিবাদেই এই সিদ্ধান্ত৷ ইরানের জনপ্রিয় অভিনেত্রী নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, ‘‘যে দেশ আমার দেশের মানুষকে সম্মান করে না, সেই দেশকে সম্মান করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়৷''
ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে এই পরিস্থিতিতেই যুক্তরাষ্ট্র সফরে গেছেন৷ শুক্রবার ফিলাডেলফিয়ায় রিপাবলিকান দলের সভায় ভাষণ দিয়েছেন তিনি৷ সেখানে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর রিপাবলিকান দলকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘‘পুটিনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন, তবে সতর্কও থাকুন৷’’ শুক্রবারই ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হওয়ার কথা৷
এসিবি/ডিজি (এপি,রয়টার্স, এএফপি, ডিপিএ)
প্রেসিডেন্ট হয়েই যা যা বললেন ট্রাম্প
যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের প্রথম ভাষণে জনতার প্রশংসা করেন ট্রাম্প৷ বলেন, ‘‘আজ ওয়াশিংটন থেকে ক্ষমতা তুলে দেয়া হচ্ছে আপনাদের হাতে৷’’
ছবি: Reuters/C. Barria
জনগণের হাতেই ক্ষমতা
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এই দিনটিকে স্মরণ করা হবে জনগণের জয় হিসেবে৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Loeb
বিক্ষোভ সত্ত্বেও ভিড়
ট্রাম্পের শপথগ্রহণের দিনেও যুক্তরাষ্ট্র শান্ত ছিল না৷ এমনকি ওয়াশিংটন ডিসিতেও প্রতিবাদ-বিক্ষোভ হয়েছে৷ তারপরও তাঁর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন লাখো মানুষ৷ ট্রাম্প তাঁদের সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন৷
ছবি: Reuters/K. Lamarque
সবার জন্য শিক্ষা, সুরক্ষা, চাকরি
প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের প্রথম ভাষণে সবার জন্য উন্নত শিক্ষা, নিরাপত্তা এবং কর্মসংস্থানের আশ্বাস দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷
ছবি: Getty Images/A. Wong
প্রেসিডেন্টের কাছে জনতাই সব
‘‘আপনার-আমার সবারই এক দেশ, আপনাদের সাফল্যই আমার সাফল্য, আপনাদের হৃদয়ই আমার হৃদয়৷’’
ছবি: Getty Images/AFP/M. Ralston
শুধু দেশের জন্য কাজ
ধনকুবের থেকে রাজনীতির ময়দানে এসেই রাষ্ট্রপ্রধান হয়ে যাওয়া ট্রাম্প বলেছেন, ‘‘এখন থেকে আমার লক্ষ্য শুধু দেশের ভবিষ্যৎ গড়া৷’’
ছবি: Reuters/L. Nicholson
‘ওবামা পরিবার ছিল চমৎকার’
ট্রাম্প ভাষণ শুরু করেছিলেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে ধন্যবাদ জানিয়ে৷ এ সময় ওবামা দম্পতির প্রশংসা করেছেন৷ ওবামা ও মিশেলের প্রশংসা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ওবামা পরিবার ছিল চমৎকার৷’’
ছবি: Reuters/B. Snyder
অ্যামেরিকায় উগ্রবাদীদের জায়গা নেই
‘‘অ্যামেরিকার মানুষের আর ভয়ের কারণ নেই৷’’ এ কথা বলে নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানান, উগ্রবাদী ইসলামপন্থিদের সমূলে উৎপাটন করা হবে৷
ছবি: Reuters/B. Snyder
দেখুন বড় স্বপ্ন
ট্রাম্প বলেন, ‘‘আমাদের এখন আগামীর পথে এগিয়ে যেতে হবে৷ বড় কাজের জন্য দেখতে হবে বড় স্বপ্ন৷’’
ছবি: Reuters/L. Nicholson
যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এক স্মরণীয় দিন
২০ জানুয়ারি, ২০১৭ – এই তারিখটিকে অ্যামেরিকা চিরকাল স্মরণ করবে বলেও মনে করেন ট্রাম্প৷
ছবি: Reuters/C. Barria
‘অ্যামেরিকা উইল বি গ্রেট এগেইন’
ট্রাম্প বলেন, ‘‘আজ থেকে এ দেশ চলবে নতুন দৃষ্টভঙ্গি নিয়ে আর তা হবে ‘অ্যামেরিকা প্রথম’৷’’ পাশাপাশি নির্বাচনি প্রচারাভিযানের সময় থেকে বলে আসা ‘আমরা আবার একসঙ্গে অ্যামেরিকাকে মহান জাতির উচ্চতায় নিয়ে যাবো’ অঙ্গিকারেরও পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি৷