ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনে যখন দুনিয়া সচকিত ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে প্রতিবাদ চলেছে, তখন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সুবিবেচিত বার্তা ও সেই সঙ্গে সাবধানবাণী বিপুল প্রশংসা কুড়িয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনে যখন দুনিয়া সচকিত ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে প্রতিবাদ চলেছে, তখন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সুবিবেচিত বার্তা ও সেই সঙ্গে সাবধানবাণী বিপুল প্রশংসা কুড়িয়েছে৷
সাধারণত ‘‘লিডার অফ দ্য ফ্রি ওয়ার্ল্ড'' বা ‘মুক্ত বিশ্বের নেতা' আখ্যাটি মার্কিন প্রেসিডেন্টের জন্যই তোলা থাকে৷ এবার সেটা টুইটারে বারংবার আঙ্গেলা ম্যার্কেল সম্পর্কে ব্যবহার করা হচ্ছে৷
বার্লিনের চ্যান্সেলারি থেকে করা মন্তব্যে ম্যার্কেল বলেছেন:
‘‘(সব মানুষের) জন্ম, গাত্রবর্ণ, ধর্ম, লিঙ্গ, যৌন প্রবণতা বা রাজনৈতিক মতামত নির্বিশেষে গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, আইনের শাসন ও মানবমর্যাদার মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধা জার্মানি ও অ্যামেরিকার মধ্যে যোগসূত্র৷ এই মূল্যবোধের ভিত্তিতে আমি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্টকে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার প্রস্তাব দিচ্ছি৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অংশীদারিত্ব জার্মানি বিদেশনীতির ভিত্তি ও ভবিষ্যতেও তাই থাকবে৷''
একটি সপ্রশংস টুইট বলছে, ‘‘আঙ্গেলা ম্যার্কেল হতাশ করেন না৷ তিনি স্পষ্টবক্তা; মর্যাদা ও সমানাধিকারকে ট্রাম্পের সঙ্গে সহযোগিতার পূর্বশর্ত করেছেন৷''
অন্যান্য টুইট বলছে:
- ‘‘ম্যার্কেলই একমাত্র নেতা যিনি ট্রাম্পকে অভিন্দন করার সময় তাঁর নিজের মূল্যবোধকে তুলে ধরেছেন'';
- ‘‘একজন প্রকৃত অভিজ্ঞ রাজনীতিক যে কেমন, আঙ্গেলা ম্যার্কেল তা আমাদের স্মরণ করিয়ে দিলেন'';
- ‘‘ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনের প্রতি সেরা প্রতিক্রিয়া''৷
ট্রাম্পের জয়ে বিশ্বের প্রতিক্রিয়া
প্রথমে বিমূঢ়তা, পরে পরিস্থিতি সামাল দেবার প্রচেষ্টা, এই ছিল ইউরোপের রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া, তবে দক্ষিণপন্থি মহল ট্রাম্পের জয়ে উৎসাহিত বোধ করছে৷ অপরদিকে মুসলিম দেশগুলিতে উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে৷
ছবি: Reuters/C. Allegri
মুসলিম দেশগুলিতে উদ্বেগ
পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া অথবা বাংলাদেশের মতো মুসলিম অধ্যুষিত দেশগুলিতে ট্রাম্পের এই জয় ইসলামি দুনিয়ার পক্ষে কী তাৎপর্য বহন করছে, তাই নিয়েই দুশ্চিন্তা৷ বিশেষ করে ট্রাম্প যে মুসলিমদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ করার হুমকি দিয়েছেন, তা নিয়ে অনেকে উদ্বিগ্ন কেননা অ্যামেরিকায় তাদের বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজন আছেন৷ এছাড়া ট্রাম্পের নীতি ইসলামি চরমপন্থিদের উসকে দিতে পারে, বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Indahono
বাংলাদেশ: আমন্ত্রণ
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, উভয়েই ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়েছেন৷ শেখ হাসিনা তাঁর পত্রে প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট ও তাঁর ফার্স্ট লেডিকে বাংলাদেশে এসে দেশের বিস্ময়কর উন্নয়ন দেখে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন৷ বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াও ট্রাম্পকে একটি বার্তা পাঠিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন৷
ছবি: imago/Xinhua
জার্মানি: ‘একটা বড় ধাক্কা’
জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী উর্সুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন ট্রাম্পের জয় নিশ্চিত হবার পর পরই টেলিভিশনে তাঁর প্রতিক্রিয়া হিসেবে একটা বড় ‘শক’ পাওয়ার কথা বলেন৷ অপরদিকে জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রাংক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার বলেছেন, ‘‘আমাদের (ট্রাম্পের জয়) মেনে নিতে হবে’’৷ তাঁর মতে আগামীতে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি আগের মতো ভবিষ্যৎবাচ্য থাকবে না৷
ছবি: Getty Images/AFP/T. Schwarz
ব্রিটেন: ‘বিশেষ সম্পর্ক’
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়ে উভয় দেশের ‘‘বিশেষ সম্পর্কের’’ কথা বলেছেন৷ ‘‘আমরা বাণিজ্য, নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষায় আগের মতোই জোরালো ও ঘনিষ্ঠ অংশীদার থাকব’’, বলে মে তাঁর বিবৃতিতে মন্তব্য করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Rain
ভারত: ‘ভারতের প্রতি বন্ধুত্ব’
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে টুইটারে অভিনন্দন জানিয়েছে বলেছেন, ‘‘আপনি আপনার নির্বাচনি প্রচার অভিযানে ভারতের প্রতি যে বন্ধুত্ব দেখিয়েছেন, আমরা তা উপলব্ধি করি৷ ভারত-মার্কিন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে একটা নতুন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা আপনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবার আশা রাখি৷’’
ছবি: picture-alliance/Xinhua
ইসরায়েল: ‘প্রকৃত বন্ধু’
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ‘‘ইসরায়েল রাষ্ট্রের প্রকৃত বন্ধু’’ বলে অভিহিত করেছেন৷ অপরদিকে কট্টরপন্থি ইহুদি স্বদেশ দলের প্রধান শিক্ষামন্ত্রী নাফতালি বেনেট মন্তব্য করেছেন, ‘‘ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের ধারণার এখানেই অবসান৷’’ ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস একটি বিবৃতিতে ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, ‘‘তাঁর কর্মকালে শান্তি অর্জিত হবে’’, বলে আব্বাস আশা করেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Sultan
রাশিয়া: ‘গঠনমূলক সংলাপ’
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন ডেনাল্ড ট্রাম্পকে টেলিগ্রাম পাঠিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন৷ পুটিন একটি বিবৃতিতে বলেন, তিনি রুশ-মার্কিন সম্পর্ককে বর্তমান ‘‘সংকটপূর্ণ পরিস্থিতি’’ থেকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ট্রাম্পের সঙ্গে কাজ করার আশা রাখেন৷ মস্কো এবং ওয়াশিংটনের মধ্যে ‘‘গঠনমূলক সংলাপ’’ গড়ে উঠবে, বলে তাঁর আস্থা আছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M.Schreiber
ইউরোপীয় ইউনিয়ন: গভীর সম্পর্ক
ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিদেশনীতি বিষয়ক প্রধান ফেদেরিকা মোঘেরিনি একটি টুইটে বলেছেন যে, ইইউ-মার্কিন সম্পর্ক রাজনৈতিক পরিবর্তনের চেয়ে বেশি গভীর৷ আমরা একত্রে কাজ করে ইউরোপের শক্তি পুনরাবিষ্কার করব’’, লিখেছেন মোঘেরিনি৷ অপরদিকে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্ট মার্টিন শুলৎস ট্রাম্পকে ‘‘লক্ষ লক্ষ মার্কিনির ভয়ভীতির প্রতিনিধি’’ বলে অভিহিত করেছেন৷
ছবি: DW/B. Riegert
হাঙ্গেরি: ‘গণতন্ত্র আজও বেঁচে’
হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওর্বান ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়কে ‘‘দারুণ খবর’’ বলে অভিহিত করেছেন৷ এর থেকে বোঝা যায় যে, ‘‘গণতন্ত্র আজও বেঁচে’’৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে ইতিপূর্বে ওর্বানের সমালোচনা করা হয়েছে, তিনি হাঙ্গেরিতে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিকে দুর্বল করছেন বলে – পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিন্টনও যে সমালোচনায় যোগ দিয়েছিলেন৷ ওর্বান তাঁর ফেসবুক পেজে ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়েছেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/V. Simicek
9 ছবি1 | 9
অপরদিকে ট্রাম্পের নির্বাচন যে বিশ্বের রাজনৈতিক গঠনপ্রণালীকেই বদলে দেবার ক্ষমতা রাখে, সে বিষয়ে ওয়াশিংটনের ইউরোপীয় সহযোগীরা পুরোমাত্রায় সচেতন, বিশেষ করে যখন ট্রাম্প ইতিপূর্বে ন্যাটোর যৌথ প্রতিরক্ষার গ্যারান্টি নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন৷ যে কারণে ন্যাটোর নরওয়েজীয় প্রধান বলতে বাধ্য হয়েছেন যে, ট্রাম্প এভাবে নিরাপত্তার গ্যারান্টি বাতিল করতে পারেন না৷ অন্যদিকে ট্রাম্পের প্রদর্শিত পুটিন প্রীতির কারণে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলির চিন্তায় পড়েছে৷
ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মাথাব্যথা শুধু একটা নয়, অনেক: বাণিজ্যিক সম্পর্ক, জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত আলাপ-আলোচনা ও চুক্তি, রাশিয়া, এছাড়া ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ৷ এ সব ক্ষেত্রেই হয়ত ইউরোপকে তার নিজের পথ খুঁজে নিতে হবে, যদি ট্রাম্প অ্যামেরিকাকে সত্যিই বিশ্বরাজনীতির মঞ্চ থেকে সরিয়ে নেন৷ তবে ট্রাম্পের নির্বাচনে ব্রেক্সিট সমর্থকদের হর্ষটাও দেখবার মতো...