সিরীয় প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ মার্কিন নির্বাচনের পর তাঁর প্রথম প্রকাশ্য মন্তব্যে বলেছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনের আগের প্রতিশ্রুতি পালন করলে, ‘সন্ত্রাসীদের’ বিরুদ্ধে সংগ্রামে তিনি সিরিয়ার ‘স্বাভাবিক মিত্র’ হতে পারেন৷
বিজ্ঞাপন
পর্তুগালের আরটিপি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে আসাদ বলেন যে, ট্রাম্প তাঁর প্রাক-নির্বাচনি মনোভাবে অচল থাকবেন কিনা, সে বিষয়ে তিনি নিশ্চিত নন৷ ‘‘তিনি কী করবেন, সে বিষয়ে আমাদের পক্ষে কিছু বলা সম্ভব নয়, কিন্তু তিনি যদি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে চান, তাহলে স্বভাবতই আমরা মিত্র হব, স্বাভাবিক মিত্র, যেমনটি রাশিয়া, ইরান ও আরো অনেক দেশ হয়েছে,'' সাক্ষাৎকারে এমনটিই বলেছেন আসাদ৷
‘‘আমি বলব, এটা আশাজনক৷ কিন্তু উনি (ট্রাম্প) কি তা করতে পারবেন?’’ প্রশ্ন তোলেন আসাদ৷ ‘‘উনি কি ওদিকে এগোতে পারবেন? মার্কিন প্রশাসনের ভিতরে যে বিরূপ প্রবণতা আছে, যে মেইনস্ট্রিম মিডিয়া ওঁর বিরুদ্ধে ছিল, তাদের ব্যাপারে উনি কী করবেন?''
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে একটি আন্তর্জাতিক জোট সিরিয়া ও ইরাকে ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে বিমান হানা চালাচ্ছে৷ এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র সিরীয় বিদ্রোহীদেরও সাহায্য করছে৷ ডোনাল্ড ট্রাম্প কিন্তু গত মার্চ মাসেই নিউ ইয়র্ক টাইমসকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘‘আসাদ এবং (আইএস-এর) বিরুদ্ধে যুগপৎ যুদ্ধ করতে যাওয়ার পন্থা পাগলামি ও বোকামি৷’’ এছাড়া ট্রাম্প রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতিসাধনের কথাও বলেছেন৷
মার্কিন হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসে কিন্তু মঙ্গলবার একটি উভয়দলীয় প্রস্তাবে আসাদ সরকারের আর্থিক মদতকারীদের উপর চাপ সৃষ্টির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়৷ অন্য একটি বিলে ইরানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার মেয়াদ বাড়ানো হয়৷ সিরিয়া বিলটিতে স্টেট ডিপার্টমেন্টকে যুদ্ধাপরাধ সংক্রান্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করার অধিকার দেওয়া হয়েছে৷ দু'টি বিলই এরপর সেনেটে যাবে৷ তবে হাউসের রিপাবলিকান স্পিকার পল রায়ান তাঁর টুইটে বলেছেন, ‘‘রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটরা সিরীয় জনগণের বিরুদ্ধে একটানা বর্বরতার দরুণ আসাদ প্রশাসনকে বিচ্ছিন্ন করার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছে৷''
অন্যদিকে সিরিয়া যুদ্ধ বিষয়ে জাতিসংঘের বিশেষ মধ্যস্থতাকারী স্টাফান দে মিস্তুরা ব্রিটেনের ‘দ্য গার্ডিয়ান' পত্রিকাকে দেয়া একটি সাক্ষাৎকারে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, সংলাপের মাধ্যমে শান্তি অর্জনের পরিবর্তে আসাদ যদি সামরিকভাবে পুরোপুরি জয়ী হন, তাহলে সিরিয়া ও ইউরোপে সুন্নি সন্ত্রাসবাদের প্রকোপ বৃদ্ধি পাবে৷ এমনকি আসাদের সামরিক জয়ের ক্ষেত্রে সিরিয়ায় দীর্ঘমেয়াদি গেরিলা যুদ্ধের ভবিষ্যদ্বাণীও করেছেন দে মিস্তুরা৷
এসি/এসিবি (ডিপিএ, এএফপি, এপি, রয়টার্স)
ডনাল্ড ট্রাম্প: ব্যবসায়ী থেকে প্রেসিডেন্ট
রিয়েল স্টেট ব্যবসায়ী, জনপ্রিয় বইয়ের লেখক এবং রিয়েলিটি টিভি স্টার হিসেবে পরিচিত ডনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট৷ হোয়াইট হাউজে নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পরিবার, সাম্রাজ্য
তিনি যাদের ভালোবাসেন তাদের নিয়ে তোলা ছবি৷ এখানে রয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্ত্রী মেলানিয়া, মেয়ে ইভানকা এবং টিফানি, ছেলে এরিক এবং ডোনাল্ড জুনিয়র এবং নাতি কাই ও ডোনাল্ড জন থ্রি৷ তাঁর তিন বড় সন্তান ট্রাম্প অরর্গানাইজেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মিলিয়নিয়ার থেকে বিলিয়নিয়ার
১৯৮৪ সালে তোলা এই ছবিতে দেখা যাচ্ছে নিউ জার্সির ট্রাম্প প্লাজায় হারাহ’স ক্যাসিনো উদ্বোধন করছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ এটা অন্যতম এক খাত যেখানে বিনিয়োগ করে বাপের টাকায় মিলিয়নিয়ার হওয়া ট্রাম্প নিজেকে বিলিয়নিয়ারে পরিণত করেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Images/M. Lederhandler
বাপের টাকায় ব্যবসা শুরু
রিয়েল স্টেট সাম্রাজ্যের শুরুটা ট্রাম্প করেছিলেন তাঁর বাবা ফ্রিডরিকের কাছ থেকে পাওয়া টাকা দিয়ে৷ তিনি তাঁর ছেলেকে শুরুতে এক মিলিয়ন মার্কিন ডলার দিয়েছিলেন৷ এবং তাঁর মৃত্যুর পর ট্রাম্প এবং তাঁর তিন ভাইবোন উত্তরাধিকার সূত্রে চার’শ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মালিক হন৷
ছবি: imago/ZUMA Press
একটি নামের মধ্যে কী আছে?
ডোনাল্ড ট্রাম্প আগ্রাসীভাবে বিভিন্ন খাতে অর্থ বিনিয়োগ করেছেন এবং মার্কেটের উত্থান পতনের অভিজ্ঞতা পেয়েছেন৷ নিউ ইয়র্ক সিটির ট্রাম্প টাওয়ার তাঁকে দীর্ঘমেয়াদে সাফল্য এনে দিয়েছে৷ ট্রাম্প বলেছেন, তাঁর সম্পদের পরিমাণ দশ বিলিয়ন মার্কিন ডলার৷ তবে কখনো তিনি তাঁর এই দাবির পক্ষে কোনো আর্থিক কাগজপত্র প্রকাশ করেননি৷ বিশেষজ্ঞদের ধারণা, তাঁর সম্পদের পরিমাণ তিনি যা বলেন তাঁর এক-তৃতীয়াংশ মাত্র৷
ছবি: Getty Images/D. Angerer
‘খুব ভালো, খুব স্মার্ট’
ট্রাম্প নিজের সম্পর্কে নিজেই বলেন একথা৷ তিনি সুপরিচিত সুপরিচিত ‘ওয়ার্টন স্কুল অফ দ্য ইউনিভার্সিটি অফ পেনসেলভেনিয়ায়’ লেখাপড়া করেছেন এবং স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/B.J. Harpaz
ক্যাপ্টেন ট্রাম্প
কলেজে পাঠানোর আগে ১৩ বছর বয়সে মিলিটারি অ্যাকাডেমিতে নিয়মানুবর্তিতা শেখাতে পাঠানো হয়েছিল ট্রাম্পকে৷ স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের আগেই একাডেমি থেকে একটি অফিসার’স ব়্যাংক অর্জন করেন তিনি৷ নির্বাচনি প্রচারাভিযানকালে তিনি জানান যে, তিনি স্কুলে কাঠামো এবং সামরিক সংস্কৃতি উপভোগ করেছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/
ভিয়েতনাম যাওয়ার বদলে গোড়ালির চিকিৎসা
মিলিটারি শিক্ষা সত্ত্বেও ভিয়েতনাম যুদ্ধে যাননি ট্রাম্প৷ পড়াশোনা করার সময় তিনি চারবার কালহরণ করেছিলেন এবং গোড়ালির চিকিৎসার জন্য একবার বিরতি নিয়েছিলেন৷ ট্রাম্প হবেন প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট, যিনি দায়িত্ব গ্রহণের আগ অবধি কোনো সরকারি কার্যালয় বা সামরিক বাহিনীতে কাজ করেননি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
প্রথম স্ত্রী: ইভানা জেলনিউকোভা
১৯৭৭ সালে তৎকালীন চেকোস্লোভাকিয়ার ইভানা জেলনিউকোভাকে বিয়ে করেন ট্রাম্প৷ তাঁদের তিন সন্তান হয়৷ ডোনাল্ড জন জুনিয়র, ইভানকা মারি এবং এরিক ফ্রেডরিক৷ তবে বিবাহবহিভূর্ত সম্পর্কসহ নানা জটিলতায় ১৯৯০ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়৷ ইভানা হচ্ছেন সেই নারী, যিনি ট্রাম্পের ডাক নাম দিয়েছিলেন ‘দ্য ডোনাল্ড৷’
ছবি: Getty Images/AFP/Swerzey
দ্বিতীয় পরিবার
ট্রাম্প পরবর্তীতে তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী মার্লা ম্যাপলসকে বিয়ে করেন৷ ১৯৯৩ সালে তাঁদের মেয়ে টিফানির জন্ম দেন ম্যাপেলস৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/J. Minchillo
অন্য নারীদের সঙ্গে ট্রাম্প
ট্রাম্প সম্ভবত নিজের স্ত্রীর বদলে অন্য নারীদের সঙ্গে ছবি তুলতে ভালোবাসেন৷ তিনি প্রায়ই সুন্দরী প্রতিযোগিতায় যেতেন এবং তরুণী মডেলদের সঙ্গে ছবি তুলতেন৷ ১৯৯৬ থেকে ২০১৫ অবধি আয়োজিত সব ‘মিস ইউনিভার্স’ প্রতিযোগিতার একজন অংশীদার ছিলেন তিনি৷ নির্বাচনের আগে আগে এক অডিও প্রকাশ হয় যেখানে ট্রাম্প বলেছিলেন, তাঁর খ্যাতি তাঁকে কোনোরকম পরিণতির ভয় ছাড়াই মেয়েদের ‘গায়ে হাত দেয়ার’ সুযোগ করে দিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/K. Lemm
বাণিজ্য এবং বিনোদনের মিশ্রণ
ট্রাম্প জানতেন কীভাবে সাধারণ মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হয়৷ এই ছবিতে তাঁকে ‘ওয়ার্ল্ড রেসলিং এন্টারটেইনমেন্টের’ একটি শোতে দেখা যাচ্ছে৷ রিয়েলিটি টিভি শো ‘দ্য এপ্রেন্টিস’, যেখানে প্রার্থীদের নিয়োগ অথবা বাতিল করা হতো, ট্রাম্পকে খ্যাতি অর্জনে সহায়তা করেছে৷ শোতে ট্রাম্পের প্রিয় লাইন ছিলে, ‘ইউ আর ফায়ার্ড!’
ছবি: Getty Images/B. Pugliano
রাজনীতিতে ট্রাম্প
যদিও অতীতে রাজনীতির সঙ্গে তাঁর খুব কম যোগাযোগ ছিল, তারপরও ২০১৫ সালে সালের ১৬ জুলাই তিনি নিজেকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেন৷ রাজনৈতিক স্লোগান হিসেবে তিনি ব্যবহার করেছেন ‘মেক অ্যামেরিকা গ্রেট এগেইন৷’ নির্বাচনি প্রচারণা চালানোর সময় তিনি অভিবাসী, মুসলমান, নারী এবং তাঁর বিরুদ্ধে থাকা প্রত্যেককে অপমান করেছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Lane
ওয়াশিংটনের পথে
প্রেসিডেন্ট হিসেবেও হোয়াইট হাউসে একের পর এক বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন ট্রাম্প৷ ৷ সবশেষ তার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রকাশ করল সে দেশের সংসদের নিম্নকক্ষ। অ্যামেরিকার ইতিহাসে ট্রাম্পই তৃতীয় প্রেসিডেন্ট যাঁর বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্টের প্রস্তাব আনা হয়েছে।