গ্রিন কার্ডের আবেদনকারীদের অন্তত ৬০ দিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে দিতে চান না প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প৷ এর ফলে কী হবে? চলুন জেনে নেই৷
বিজ্ঞাপন
‘মার্কিন কর্মীদের রক্ষায়’ অভিবাসীদের গ্রিন কার্ড দেওয়া আপাতত বন্ধ রাখতে চান ট্রাম্প৷ গ্রিন কার্ড মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের অধিকার নিশ্চিত করে৷
কারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন?
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে চাচ্ছেন এমন বৈধ অভিবাসীরাই শুধুমাত্র এই নিষেধাজ্ঞার আওতাধীন হবেন৷ গ্রিন কার্ডধারীরা অ্যামেরিকায় স্থায়ীভাবে বসবাস ও কাজ করতে পারেন৷ এর ফলে তাদের একসময় মার্কিন নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করাও তাদের জন্য সহজ হয়৷
২০১৯ অর্থবছরে দশ লাখের মতো গ্রিন কার্ড ইস্যু করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যার অর্ধেকের মতো মার্কিন নাগরিকদের নিকট আত্মীয়স্বজন৷
ডনাল্ড ট্রাম্প: ব্যবসায়ী থেকে প্রেসিডেন্ট
রিয়েল স্টেট ব্যবসায়ী, জনপ্রিয় বইয়ের লেখক এবং রিয়েলিটি টিভি স্টার হিসেবে পরিচিত ডনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট৷ হোয়াইট হাউজে নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পরিবার, সাম্রাজ্য
তিনি যাদের ভালোবাসেন তাদের নিয়ে তোলা ছবি৷ এখানে রয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্ত্রী মেলানিয়া, মেয়ে ইভানকা এবং টিফানি, ছেলে এরিক এবং ডোনাল্ড জুনিয়র এবং নাতি কাই ও ডোনাল্ড জন থ্রি৷ তাঁর তিন বড় সন্তান ট্রাম্প অরর্গানাইজেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মিলিয়নিয়ার থেকে বিলিয়নিয়ার
১৯৮৪ সালে তোলা এই ছবিতে দেখা যাচ্ছে নিউ জার্সির ট্রাম্প প্লাজায় হারাহ’স ক্যাসিনো উদ্বোধন করছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ এটা অন্যতম এক খাত যেখানে বিনিয়োগ করে বাপের টাকায় মিলিয়নিয়ার হওয়া ট্রাম্প নিজেকে বিলিয়নিয়ারে পরিণত করেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Images/M. Lederhandler
বাপের টাকায় ব্যবসা শুরু
রিয়েল স্টেট সাম্রাজ্যের শুরুটা ট্রাম্প করেছিলেন তাঁর বাবা ফ্রিডরিকের কাছ থেকে পাওয়া টাকা দিয়ে৷ তিনি তাঁর ছেলেকে শুরুতে এক মিলিয়ন মার্কিন ডলার দিয়েছিলেন৷ এবং তাঁর মৃত্যুর পর ট্রাম্প এবং তাঁর তিন ভাইবোন উত্তরাধিকার সূত্রে চার’শ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মালিক হন৷
ছবি: imago/ZUMA Press
একটি নামের মধ্যে কী আছে?
ডোনাল্ড ট্রাম্প আগ্রাসীভাবে বিভিন্ন খাতে অর্থ বিনিয়োগ করেছেন এবং মার্কেটের উত্থান পতনের অভিজ্ঞতা পেয়েছেন৷ নিউ ইয়র্ক সিটির ট্রাম্প টাওয়ার তাঁকে দীর্ঘমেয়াদে সাফল্য এনে দিয়েছে৷ ট্রাম্প বলেছেন, তাঁর সম্পদের পরিমাণ দশ বিলিয়ন মার্কিন ডলার৷ তবে কখনো তিনি তাঁর এই দাবির পক্ষে কোনো আর্থিক কাগজপত্র প্রকাশ করেননি৷ বিশেষজ্ঞদের ধারণা, তাঁর সম্পদের পরিমাণ তিনি যা বলেন তাঁর এক-তৃতীয়াংশ মাত্র৷
ছবি: Getty Images/D. Angerer
‘খুব ভালো, খুব স্মার্ট’
ট্রাম্প নিজের সম্পর্কে নিজেই বলেন একথা৷ তিনি সুপরিচিত সুপরিচিত ‘ওয়ার্টন স্কুল অফ দ্য ইউনিভার্সিটি অফ পেনসেলভেনিয়ায়’ লেখাপড়া করেছেন এবং স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/B.J. Harpaz
ক্যাপ্টেন ট্রাম্প
কলেজে পাঠানোর আগে ১৩ বছর বয়সে মিলিটারি অ্যাকাডেমিতে নিয়মানুবর্তিতা শেখাতে পাঠানো হয়েছিল ট্রাম্পকে৷ স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের আগেই একাডেমি থেকে একটি অফিসার’স ব়্যাংক অর্জন করেন তিনি৷ নির্বাচনি প্রচারাভিযানকালে তিনি জানান যে, তিনি স্কুলে কাঠামো এবং সামরিক সংস্কৃতি উপভোগ করেছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/
ভিয়েতনাম যাওয়ার বদলে গোড়ালির চিকিৎসা
মিলিটারি শিক্ষা সত্ত্বেও ভিয়েতনাম যুদ্ধে যাননি ট্রাম্প৷ পড়াশোনা করার সময় তিনি চারবার কালহরণ করেছিলেন এবং গোড়ালির চিকিৎসার জন্য একবার বিরতি নিয়েছিলেন৷ ট্রাম্প হবেন প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট, যিনি দায়িত্ব গ্রহণের আগ অবধি কোনো সরকারি কার্যালয় বা সামরিক বাহিনীতে কাজ করেননি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
প্রথম স্ত্রী: ইভানা জেলনিউকোভা
১৯৭৭ সালে তৎকালীন চেকোস্লোভাকিয়ার ইভানা জেলনিউকোভাকে বিয়ে করেন ট্রাম্প৷ তাঁদের তিন সন্তান হয়৷ ডোনাল্ড জন জুনিয়র, ইভানকা মারি এবং এরিক ফ্রেডরিক৷ তবে বিবাহবহিভূর্ত সম্পর্কসহ নানা জটিলতায় ১৯৯০ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়৷ ইভানা হচ্ছেন সেই নারী, যিনি ট্রাম্পের ডাক নাম দিয়েছিলেন ‘দ্য ডোনাল্ড৷’
ছবি: Getty Images/AFP/Swerzey
দ্বিতীয় পরিবার
ট্রাম্প পরবর্তীতে তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী মার্লা ম্যাপলসকে বিয়ে করেন৷ ১৯৯৩ সালে তাঁদের মেয়ে টিফানির জন্ম দেন ম্যাপেলস৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/J. Minchillo
অন্য নারীদের সঙ্গে ট্রাম্প
ট্রাম্প সম্ভবত নিজের স্ত্রীর বদলে অন্য নারীদের সঙ্গে ছবি তুলতে ভালোবাসেন৷ তিনি প্রায়ই সুন্দরী প্রতিযোগিতায় যেতেন এবং তরুণী মডেলদের সঙ্গে ছবি তুলতেন৷ ১৯৯৬ থেকে ২০১৫ অবধি আয়োজিত সব ‘মিস ইউনিভার্স’ প্রতিযোগিতার একজন অংশীদার ছিলেন তিনি৷ নির্বাচনের আগে আগে এক অডিও প্রকাশ হয় যেখানে ট্রাম্প বলেছিলেন, তাঁর খ্যাতি তাঁকে কোনোরকম পরিণতির ভয় ছাড়াই মেয়েদের ‘গায়ে হাত দেয়ার’ সুযোগ করে দিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/K. Lemm
বাণিজ্য এবং বিনোদনের মিশ্রণ
ট্রাম্প জানতেন কীভাবে সাধারণ মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হয়৷ এই ছবিতে তাঁকে ‘ওয়ার্ল্ড রেসলিং এন্টারটেইনমেন্টের’ একটি শোতে দেখা যাচ্ছে৷ রিয়েলিটি টিভি শো ‘দ্য এপ্রেন্টিস’, যেখানে প্রার্থীদের নিয়োগ অথবা বাতিল করা হতো, ট্রাম্পকে খ্যাতি অর্জনে সহায়তা করেছে৷ শোতে ট্রাম্পের প্রিয় লাইন ছিলে, ‘ইউ আর ফায়ার্ড!’
ছবি: Getty Images/B. Pugliano
রাজনীতিতে ট্রাম্প
যদিও অতীতে রাজনীতির সঙ্গে তাঁর খুব কম যোগাযোগ ছিল, তারপরও ২০১৫ সালে সালের ১৬ জুলাই তিনি নিজেকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেন৷ রাজনৈতিক স্লোগান হিসেবে তিনি ব্যবহার করেছেন ‘মেক অ্যামেরিকা গ্রেট এগেইন৷’ নির্বাচনি প্রচারণা চালানোর সময় তিনি অভিবাসী, মুসলমান, নারী এবং তাঁর বিরুদ্ধে থাকা প্রত্যেককে অপমান করেছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Lane
ওয়াশিংটনের পথে
প্রেসিডেন্ট হিসেবেও হোয়াইট হাউসে একের পর এক বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন ট্রাম্প৷ ৷ সবশেষ তার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রকাশ করল সে দেশের সংসদের নিম্নকক্ষ। অ্যামেরিকার ইতিহাসে ট্রাম্পই তৃতীয় প্রেসিডেন্ট যাঁর বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্টের প্রস্তাব আনা হয়েছে।
ছবি: Getty Images/AFP/M. Ngan
13 ছবি1 | 13
কারা আওতামুক্ত থাকবেন?
ডনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন যে তার নির্দেশনা এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি এবং এতে কিছুক্ষেত্রে ব্যতিক্রমও রাখা হবে৷ তবে, তিনি এই বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি৷ যদিও এই নির্দেশনার কারণে নতুন গ্রিন কার্ড দেয়া বন্ধ রাখবে দেশটির সরকার, কিন্তু যারা ইতোমধ্যে চাকুরি ও গ্রিন কার্ড পেয়েছেন, কিন্তু এখনো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছাননি, তাদের ক্ষেত্রে কী হবে সেটা এখনো নিশ্চিত নয়৷
তবে, ক্ষণস্থায়ী কর্মী, পর্যটক, ব্যবসায়িক কাজে ভ্রমণকারী, অস্থায়ী ভিসায় কাজ করা প্রশিক্ষিত কর্মীদের ক্ষেত্রে এই নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না৷ ট্রাম্প অবশ্য বলেছেন অভিবাসন সংক্রান্ত আরো কিছু নির্দেশনা পরবর্তীতে দেয়া হবে৷
কিন্তু ট্রাম্পের এই নির্বাহী আদেশ কি আইনসম্মত?
২০১৭ সালের জানুয়ারিতে দায়িত্ব গ্রহণের পর বেশ কয়েকবার অভিবাসীদের উপর নানা নিষেধাজ্ঞা আরোপের চেষ্টা করেছেন ডনাল্ড ট্রাম্প৷ ২০১৮ সালে মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট এক রায়ে বলেছে যে, নিরাপত্তা ঝুঁকি আছে মনে করলে বিদেশি নাগরিকদের সুনির্দিষ্ট কিছু গ্রুপকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ থেকে বিরত রাখতে পারেন ট্রাম্প৷
দেশটির ‘ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ন্যাশনালিটি অ্যাক্ট ১৯৬৫’ অনুসারেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর মনে হলে যে-কোনো বিদেশিকে দেশে প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে পারেন প্রেসিডেন্ট৷ তবে ট্রাম্পের এ ধরনের সিদ্ধান্ত অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিতর্ক সৃষ্টি করে এবং শেষমেষ তা আদালত অবধি গড়ায়৷
অতীতে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপের ক্ষেত্রে জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়টিকে সামনে এনে নিজের সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা বুঝিয়েছেন ট্রাম্প৷ তবে এবার কী বলবেন বলা মুশকিল৷