মার্কিন নির্বাচনে কে জয়ী হচ্ছেন তা এখনও পুরোপুরি স্পষ্ট নয়৷ খুব শিগগিরই এর মীমাংসা হচ্ছে না৷ ডয়চে ভেলের যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি কার্লা ব্লাইকার মার্কিন নির্বাচন নিয়ে তাঁর মতামত তুলে ধরছেন৷
বিজ্ঞাপন
মার্কিন নির্বাচনের রাতে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা যেমনটা পূর্বাভাস দিয়েছিলেন, ফলাফলে তারই আভাস পাওয়া যাচ্ছে৷ অর্থাৎ বুধবার পর্যন্ত বলার উপায় নেই যে চূড়ান্তভাবে কে জয়ী হচ্ছেন৷ পেনসিলভেনিয়াসহ তিনটি রাজ্যের ফলাফল এখনও কোন দিকে যাবে নিশ্চিত করে বলার উপায় নেই৷ ফলে অপেক্ষা দীর্ঘ হতে পারে৷ তবে দুই প্রার্থী তাদের সমর্থকদের ইতিবাচক আশ্বাস দিয়েছেন৷ জো বাইডেন বুধবার সকালে তাঁর হোম টাউন ডেলাওয়ারে সমর্খদের উদ্দেশে কথা বলেন৷ সেখানে তিনি বলেন, প্রত্যেকটা ভোট গণনা হওয়ার আগ পর্যন্ত তারা প্রতিযোগিতায় আছেন এবং এজন্য হয়ত অপেক্ষাটা দীর্ঘ হতে পারে৷
ফ্যাক্ট চেক: মার্কিন নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ
মার্কিন নির্বাচনের ফলাফল আসতে শুরু করার পর বুধবার থেকে এই নির্বাচনে জালিয়াতির নানা অভিযোগ ছড়িয়ে পড়েছে ইন্টারনেটে৷ ছবিঘরে দেখে নেয়া যাক এসব অভিযোগ এর পেছনে কতটুকু ভিত্তি রয়েছে৷
ছবি: Goran Tomasevic/Reuters
জালিয়াতির অভিযোগ
মার্কিন নির্বাচনের দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে ফলাফলে এগিয়ে আছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন৷ কিন্তু বুধবার থেকে এই নির্বাচনে জালিয়াতির নানা অভিযোগ ছড়িয়ে পড়েছে ইন্টারনেটে৷ এসব অভিযোগকারীর বেশির ভাগই ট্রাম্প এর সমর্থক৷
ছবি: Daniel Acker/REUTERS
ট্রাম্পের অভিযোগ
ট্রাম্প এবং তাঁর সমর্থকদের অভিযোগ, জালিয়াতি হয়েছে এবারের নির্বাচনে৷ বিশেষ করে ভোট গণনায়৷ তারা এর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবার কথাও ভাবছে৷ এক টুইটে ট্রাম্প অভিযোগ করেন, আমরা বড় ধরনের জয় পেতে যাচ্ছি, কিন্তু তারা নির্বাচন আমাদের কাছ থেকে চুরি করে নিয়ে যাবার চেষ্টা চালাচ্ছে৷
ছবি: Edgard Garrido/Reuters
ফ্যাক্ট চেক ১ : মিশিগানে বাইডেনের অবিশ্বাস্য জয়?
বুধবার সকালে হঠাৎ করে মিশিগানে বাইডেনের ভোট ১ লাখ ৩৮ হাজার বেড়ে যায়৷ এ নিয়ে শুরু হয় নানা অভিযোগ৷ আসলে এই ঘটনাটি ঘটে মিশিগানের এক নির্বাচন কর্মকর্তার ভুলের কারণে৷ তিনি ভুল করে একটি শূন্য বেশি বসিয়ে দিয়েছিলেন বাইডেনের ভোট গণনায়, কিন্তু ভুলটি ২০ মিনিটের মধ্যে শুধরে নেয়া হয়৷ তবে এই ভুলের খবর ছড়িয়ে পড়লে রিপাবলিকানরা জালিয়াতির অভিযোগ তোলে৷
ছবি: Angela Weiss/AFP
ফ্যাক্ট চেক ২: অ্যারিজোনার কলম বিভ্রাট
অ্যারিজোনায় ভোট দেয়ায় একটি বিশেষ কলম ব্যবহার করতে বাধ্য করা হচ্ছে ট্রাম্প সমর্থকদের, এরকম একটি অভিযোগও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে৷ তাদের অভিযোগ, এই বিশেষ কলম শুধু ট্রাম্প সমর্থকদেরই ব্যবহার করতে বাধ্য করা হচ্ছে, এবং এই কলম ব্যবহার করার ফলে ব্যালট পেপারটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে৷ কিন্তু নির্বাচনী কর্মকর্তারা বলেছেন, যেকোন ধরণের কলম ব্যবহার করে ভোট দিলে তা বৈধ ভোট হিসেবে বিবেচিত হবে৷
ছবি: Goran Tomasevic/REUTERS
ফ্যাক্ট চেক ৩: উইসকনসিনে মোট ভোটের চেয়ে বেশি ভোট প্রদান?
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইনস্টাগ্রামে একজন অভিযোগ তোলেন যে উইসকনসিনে মোট রেজিস্টার্ড ভোটের চেয়ে বেশি ভোট দেয়া হয়েছে৷ কিন্তু নির্বাচন কর্মকর্তারা জানান, এই অভিযোগে তথ্যগত ভুল রয়েছে৷ কারণ, এই রাজ্যের নিয়ম অনুযায়ী, যেকোন ভোট প্রদানের যোগ্য ব্যক্তি ভোটের দিনেও রেজিস্টার্ড ভোটার হতে পারেন এবং ভোটার তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হতে পারেন৷ আসলে মোট ভোটারের পরিমাণ অভিযোগে উল্লেখিত ভোটার সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি৷
ছবি: Edgard Garrido/REUTERS
5 ছবি1 | 5
ফলাফল গণনা দীর্ঘ হওয়ার কারণ হলো৷ তিন পদ্ধতিতে ভোট নেয়া হয়েছে: ১. ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দান, নির্বাচনের আগেই ভোট দেয়া এবং মেইলের মাধ্যমে ভোট৷ পুরো প্রক্রিয়াটি গণতান্ত্রিক৷ অথচ ডনাল্ড ট্রাম্প এই পদ্ধতির বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলে বলেছেন ‘ভোট জালিয়াতি’ হয়েছে৷ কোন তথ্য প্রমাণ ছাড়াই বুধবার সকালে এ নিয়ে টুইট করেছেন তিনি৷ যদিও তার এই অবস্থানে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই৷
বুধবার সকালে দেয়া তার বক্তব্যে ট্রাম্প পেনসিলভেনিয়াসহ এমন সব রাজ্যে নিজের বিজয় ঘোষণা করেন, যেগুলোর সব ভোট গণনা হওয়া এখনও বাকি৷
যেসব ভোট এখনও গণনা বাকি, তার মধ্যে বেশিরভাগই পোস্টাল ভোট৷ বিশ্লেষকদের মতে, পোস্টাল ভোট বেশি দিয়েছেন ডেমোক্র্যাট সমর্থকরা৷ আর এ কারণেই ট্রাম্প চান না এই ভোটগুলো গণনা হোক৷ এ কারণেই ভোট গণনার প্রক্রিয়াকে জালিয়াতি বলে নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করেছেন ট্রাম্প৷ এমনকি সুপ্রিমকোর্টের দ্বারস্থ হবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি৷
লিবারেল ডেমোক্র্যাটরা কিন্তু জো বাইডেনের জয়ের ব্যাপারে একেবারে নিশ্চিত৷ তবে এটা ঠিক এতটা হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে এটা কল্পনাও করেননি তারা৷
ট্রাম্প এমন একজন প্রেসিডেন্ট যিনি মুসলিমদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিতে চান, যিনি অভিবাসী শিশুদের বাবা-মায়ের কাছ থেকে আলাদা করতে চান, যিনি মার্কিন মহিলা কংগ্রেস সদস্যের বিরুদ্ধে বর্ণবিদ্বেষী কথা বলেন, যিনি অভিশংসনের মুখোমুখি হয়েছেন, যার কারণে করোনায় ১০ লাখেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে...তালিকাটা আরও দীর্ঘ৷ তবে দুঃখের বিষয় হলো এরপরও অনেক অ্যামেরিকান ট্রাম্পকেই ভোট দিয়েছে৷
কার্লা ব্লাইকার/এপিবি
মার্কিন প্রেসিডেন্টের যেসব ক্ষমতা রয়েছে
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে অনেক ক্ষমতাবান মনে হলেও আসলে কিন্তু তার ক্ষমতা সীমিত৷ ছবিঘরে জেনে নিন কি কি ক্ষমতা রয়েছে তাদের৷
ছবি: Klaus Aßmann
মার্কিন সংবিধান
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের মেয়াদ চার বছর। কোন প্রেসিডেন্ট দুইবারের বেশি নির্বাচিত হতে পারেন না। প্রেসিডেন্ট সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে কাজ করেন এবং ফেডারেল প্রশাসন নিয়োগ করতে পারেন। যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস আইন প্রণয়ন করার পর সেই আইন প্রয়োগের দায়িত্বও প্রেসিডেন্টের।
ছবি: Klaus Aßmann
সরকারের প্রধান তিন শাখা
যুক্তরাষ্ট্রে সরকারের তিনটি প্রধান শাখা রয়েছে: বিচারবিভাগ, আইনপ্রনয়ন বিভাগ ও প্রশাসনিক বিভাগ। প্রেসিডেন্ট কোন অপরাধীকে ক্ষমা করতে পারেন এবং ফেডারেল বিচারক মনোনীত করতে পারেন, কিন্তু তা সেনেট থেকে অনুমোদিত হতে হয়। প্রেসিডেন্ট মন্ত্রিসভার সদস্য ও রাষ্ট্রদূতও নিয়োগ দিতে পারেন, কিন্তু এসব নিয়োগেও সেনেটের অনুমোদন লাগে। এভাবে যুক্তরাষ্ট্রে আইনপ্রণয়ন বিভাগ প্রশাসনিক বিভাগের ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণ করে।
ছবি: Klaus Aßmann
স্টেট অফ ইউনিয়নের ক্ষমতা
প্রেসিডেন্টকে কিছুদিন পরপর কংগ্রেসের কাছে রাষ্ট্র পরিচালনার বিষয়ে অবহিত করতে হয়। প্রেসিডেন্টের এই বক্তব্যকে ‘স্টেট অফ ইউনিয়ন’ বলা হয়।
ছবি: Klaus Aßmann
‘না’ বলতে মানা
প্রেসিডেন্ট কোন আইনে ভিটো দিতে পারেন, বা 'না' বলতে পারেন। কিন্তু যদি কংগ্রেসের দুই কক্ষ, সেনেট ও হাউজ অফ রিপ্রেজেন্টেটিভের দুই-তৃতীয়াংশ কোন আইন প্রণয়নের পক্ষে মত দেয় তাহলে প্রেসিডেন্টের ভিটো সত্ত্বেও আইন কার্যকর হতে পারে।
ছবি: Klaus Aßmann
পকেট ভিটো
কিন্তু মাঝেমাঝে প্রেসিডেন্ট কোন আইন প্রণয়নকে একটি কৌশলে আটকে রাখতে পারেন। এই কৌশলকে বলা হয় ‘পকেট ভিটো’। এর মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট কোন আইন নিজের কাছে আটকে রাখতে পারেন। এর ফলে কংগ্রেসে অনুমোদিত হলেও প্রেসিডেন্টের কাছে আটকে থাকার কারণে আইনটি কার্যকর হতে পারে না। এই আইনের মত অনেক বিষয়ে সংবিধান ও সুপ্রিম কোর্ট প্রেসিডেন্টের ক্ষমতাকে স্পষ্ট করে নির্ধারিত করেনি।
ছবি: Klaus Aßmann
নির্বাহী ক্ষমতা
প্রেসিডেন্টের আরেকটি বিখ্যাত ক্ষমতার নাম হচ্ছে ‘এক্সিকিউটিভ অর্ডার’ বা নির্বাহী ক্ষমতা। এর মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট সরকারি কর্মকর্তাদের কোন বিষয়ে নির্দেশ দিতে পারেন। কিন্তু তার মানে এই নয় প্রেসিডেন্ট যা খুশি তাই নির্দেশ দিতে পারেন। আদালত ইচ্ছে করলে এই নির্দেশ বাতিল করতে পারে অথবা কংগ্রেস এই নির্দেশের বিপরীতে আরেকটি আইন প্রণয়ন করতে পারে।
ছবি: Klaus Aßmann
চুক্তির ক্ষমতা
প্রেসিডেন্ট প্রয়োজন মনে করলে আরেকটি দেশের সাথে চুক্তি বাতিল করতে পারেন, কিন্তু সিনেটের দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থন লাগবে।
ছবি: Klaus Aßmann
সামরিক বাহিনীর প্রধান
প্রেসিডেন্ট কমান্ডার ইন চিফ বা সামরিক বাহিনীর প্রধান, কিন্তু যেকোন যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারে কংগ্রেস। তবে এই নিয়মটি পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। কারণ, কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়াও কিছু সময় প্রেসিডেন্ট সামরিক সংঘর্ষে সৈন্যদের অংশ নেবার অনুমোদন দিতে পারেন।
ছবি: Klaus Aßmann
অভিশংসন
প্রেসিডেন্ট যদি ক্ষমতার অপব্যবহার করেন বা কোন অপরাধ করেন, তবে হাউজ অভ রিপ্রেজেন্টিটিভ তাকে সরানোর জন্য ইমপিচমেন্ট বা অভিশংসন শুরু করতে পারেন।